ভারতীয় ইনিংসকে টানলেন অক্ষর পটেল ও রবিচন্দ্রন অশ্বিন। দু’জনের শতরানের জুটিতে ম্যাচে ফিরল ভারত। ছবি: পিটিআই
এ ভাবেও ফিরে আসা যায়! দিনের প্রথম দু’ঘণ্টার খেলা দেখে মনে হয়েছিল, দ্বিতীয় দিনই খেলা নিজেদের কব্জায় নিয়ে নেবে অস্ট্রেলিয়া। চা বিরতির আগে বিরাট কোহলি আউট হওয়ার পরে সেই আশঙ্কা আরও বেড়েছিল। তখন কি কেউ ভেবেছিলেন, শেষ সেশনে ম্যাচে ফিরবে ভারত। নেপথ্যে দুই অলরাউন্ডারের শতরানের জুটি। অক্ষর পটেল ও রবিচন্দ্রন অশ্বিন দেখিয়ে দিলেন দিল্লির পিচে ঠিক কী ভাবে ব্যাট করতে হয়।
দিনের শুরুতে ভারতের ওপেনিং জুটি ভরসা দিয়েছিল ভারতকে। ভাল খেলছিলেন রোহিত শর্মা ও লোকেশ রাহুল। কিন্তু ঠিক যে ভাবে প্রথম টেস্টে রাহুল উইকেট দিয়েছিলেন সেই একই ভাবে এই টেস্টেও ১৭ রান করে আউট হয়ে গেলেন তিনি। পর পর দু’টেস্টে ব্যর্থ রাহুল। তৃতীয় টেস্টে রোহিতের সঙ্গে শুভমন গিলকে ওপেন করতে দেখলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।
রোহিত ভাল খেলছিলেন। কিন্তু ৩২ রানের মাথায় নেথান লায়নের সামান্য নিচু হয়ে আসা বলে লাইন মিস্ করে বোল্ড হয়ে গেলেন তিনি। নিজের শততম টেস্ট খেলতে নেমে ব্যর্থ চেতেশ্বর পুজারা। অস্ট্রেলিয়া এক বার রিভিউ না নেওয়ায় বেঁচে গেলেও তার কয়েক বল পরেই আউট হলেন তিনি। শততম টেস্টে খাতা খুলতে পারলেন না পুজারা।
কোহলি প্রথম থেকেই ছিলেন আক্রমণাত্মক। ঘরের মাঠে নিজের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে রান করছিলেন তিনি। তাঁকে সঙ্গ দেওয়ার চেষ্টা করেন শ্রেয়স আয়ার। কিন্তু শর্ট লেগে দাঁড়িয়ে থাকা পিটার হ্যান্ডসকম্বের দুরন্ত ক্যাচ তাঁকে সাজঘরে ফেরায়।
কোহলি-জাডেজা ভাল খেলছিলেন। দু’জনে মিলে দলের রানকে ১০০ পার করান। বড় শট মারার পাশাপাশি দৌড়ে অনেক রান নিচ্ছিলেন তাঁরা। ভারতীয় সমর্থকরা যেই একটু আশায় বুক বাঁধছিলেন তখনই ২৬ রানের মাথায় মারফির বলে আউট হলেন জাডেজা। ভারতকে সব থেকে বড় ধাক্কা দেন ম্যাথু কুনেম্যান। তাঁর বলে ৪৪ রানের মাথায় আউট হন কোহলি। তাঁর আউট নিয়ে অবশ্য বিতর্ক রয়েছে। আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত মানতে পারেননি কোহলি। সাজঘরে গিয়েও রাগ কমছিল না তাঁর। রান পাননি উইকেটরক্ষক শ্রীকর ভরত।
১৩৯ রানে ৭ উইকেট পড়ে গিয়েছিল ভারতের। মনে হচ্ছিল, প্রথম ইনিংসে বিশাল লিড নেবে অস্ট্রেলিয়া। কিন্তু অন্য কথা ভাবছিলেন অক্ষর ও অশ্বিন। ভারতের দুই অলরাউন্ডার ভয়ডরহীন ক্রিকেট খেললেন। দেখে মনে হল সম্পূর্ণ অন্য পিচে খেলছেন তাঁরা। পাল্টা আক্রমণের নীতি নিয়েছিলেন তাঁরা। দলের রানকে ধীরে ধীরে অস্ট্রেলিয়ার রানের কাছে নিয়ে যাচ্ছিলেন দুই ব্যাটার। শতরানের জুটি গড়লেন তাঁরা।
প্রথম টেস্টের পরে দ্বিতীয় টেস্টেও অর্ধশতরান করলেন অক্ষর। ইনিংসে তিনটি ছক্কা মারেন তিনি। কিন্তু শেষ দিকে আবার ম্যাচের মোড় ঘুরল। যখন দেখে মনে হচ্ছে ভারত এগিয়ে য়াবে তখনই কামাল করল দ্বিতীয় নতুন বল। প্রথমে ৩৭ রানের মাথায় অশ্বিন ও পরে ৭৪ রান করে অক্ষর আউট হলেন। তার পরে আর বেশি রান ওঠেনি। ২৬২ রানে শেষ হয় ভারতের প্রথম ইনিংস। অস্ট্রেলিয়ার থেকে ১ রান কম করে তারা।
অস্ট্রেলিয়ার বোলারদের মধ্যে নজর কাড়লেন লায়ন। ৫ উইকেট নিলেন তিনি। মারফি ২, কুনেম্যান ২ ও কামিন্স ১ উইকেট নিয়েছেন।
দ্বিতীয় দিনের শেষ দিকে ১২ ওভার ব্যাট করতে হয় অস্ট্রেলিয়াকে। ডেভিড ওয়ার্নার চোট পেয়ে ছিটকে যাওয়ায় উসমান খোয়াজার সঙ্গে ওপেন করেন ট্রাভিস হেড। প্রথম ইনিংসে রান করলেও দ্বিতীয় ইনিংসে মাত্র ৬ রান করে জাডেজার বলে আউট হয়ে গেলেন খোয়াজা। দ্বিতীয় দিনের শেষে অস্ট্রেলিয়ার রান ১ উইকেটে ৬১। হেড ৩৯ ও লাবুশেন ১৬ রান করে ক্রিজ়ে রয়েছেন। ভারতের থেকে ৬২ রানে এগিয়ে অস্ট্রেলিয়া।