দ্বিতীয় ইনিংসে ভাল ব্যাট করছেন বিরাট কোহলি। ছবি: পিটিআই
তৃতীয় দিনের শেষে ভারতীয় সমর্থকদের মনে কিছুটা হলেও আশা জাগিয়ে তুলেছিলেন রবীন্দ্র জাডেজা। অস্ট্রেলিয়ার টপ অর্ডার তখন সাজঘরে ফিরে গিয়েছে। চতুর্থ দিনের শুরুটা ভাল করতে পারলে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ জেতার সম্ভাবনা তৈরি হত ভারতের। কিন্তু চতুর্থ দিন অস্ট্রেলিয়ার মিডল ও লোয়ার অর্ডার ভারতকে খেলা থেকে দূরে নিয়ে গেল। চতুর্থ ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে লড়ছে ভারতীয় দল। তাদের স্বপ্ন বেঁচে রয়েছে বিরাট কোহলি ও অজিঙ্ক রাহানের ব্যাটে। ম্যাচ জিততে এখনও ২৮০ রান করতে হবে ভারতকে। অন্য দিকে অস্ট্রেলিয়ার জিততে দরকার ৭ উইকেট।
চতুর্থ দিনের শুরুতেই ৪১ রানের মাথায় মার্নাশ লাবুশেনকে আউট করে অস্ট্রেলিয়াকে ধাক্কা দেন উমেশ যাদব। প্রথম ইনিংসে উইকেট না পেলেও দ্বিতীয় ইনিংসে ভাল বল করলেন উমেশ। লাবুশেনের পরে দ্রুত আরও ২-৩টি উইকেট হারালে চাপে পড়ত অস্ট্রেলিয়া। কিন্তু সেই সময়ে দলকে সামলে নিলেন ক্যামেরন গ্রিন ও অ্যালেক্স ক্যারে। অর্ধশতরানের জুটি গড়লেন তাঁরা। গ্রিন ২৫ রানে আউট হওয়ার পরে ক্যারেকে সঙ্গ দিলেন মিচেল স্টার্ক। আরও একটি অর্ধশতরানের জুটি হল। এই দুই জুটিই ভারতকে পিছিয়ে দিল। স্টার্ক ৪১ রান করে আউট হন। চা বিরতির আগে ৮ উইকেটে ২৭০ রানে ডিক্লেয়ার করে অস্ট্রেলিয়া। ক্যারে ৬৬ রানে অপরাজিত থাকেন। ভারতের সামনে ৪৪৪ রানের লক্ষ্য দেয় অস্ট্রেলিয়া।
লক্ষ্য কঠিন থাকলেও ভারত শুরুটা বেশ ভাল করেছিল। ড্রয়ের জন্য না খেলে নিজেদের শট খেলছিলেন ভারতের দুই ওপেনার রোহিত শর্মা ও শুভমন গিল। অনেক দিন পরে রোহিতকে দেখে ভাল লাগছিল। নিজের স্বাভাবিক খেলা খেলছিলেন তিনি। চা বিরতির ঠিক আগেই ১৮ রান করে আউট হন শুভমন। তাঁর আউট নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। স্কট বোলান্ডের বল শুভমনের ব্যাটে লেগে স্লিপে যায়। গ্রিন এক হাতে সেই বল ধরেন। কিন্তু বল মাটি ছুঁয়েছিল কি না তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। যদিও তৃতীয় আম্পায়ার মনে করেন বলের নীচে ছিল গ্রিনের আঙুল। তাই আউট দেন। রোহিত এই সিদ্ধান্ত নিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করেন। ওভালের দর্শকরাও ক্ষোভ দেখান।
দ্বিতীয় উইকেটে রোহিতের সঙ্গে জুটি বাঁধেন চেতেশ্বর পুজারা। চা বিরতির পরে দ্রুত রান উঠছিল। রোহিতের পাশাপাশি পুজারাকেও ভাল দেখাচ্ছিল। কিন্তু নেথান লায়ন বল করতে এসেই সেই জুটি ভাঙেন। ৪৩ রানের মাথায় রোহিতকে আউট করেন তিনি। লায়নের বল রোহিতের প্যাডে লাগে। আম্পায়ার আউট দেন। রিভিউ নিয়েও বাঁচতে পারেননি ভারত অধিনায়ক। পরের ওভারে নিজের উইকেট ছুড়ে দিয়ে আসেন পুজারা। প্যাট কামিন্সের বলে আপারকাট মারতে গিয়ে ২৭ রানের মাথায় আউট হন তিনি।
ভারতের ইনিংসকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব গিয়ে পড়ে দলের দুই অভিজ্ঞ ব্যাটার কোহলি ও রাহানের উপর। ৩ উইকেট পড়ে গেলেও রানের গতি কমাননি তাঁরা। অতিরিক্ত রক্ষণাত্মক ব্যাটিংও করেননি। বল দেখে খেলছিলেন। স্কোরবোর্ড সচল রাখছিলেন। অযথা তাড়াহুড়ো করতে যাননি।
পিচ থেকে খুব একটা সাহায্য পাচ্ছিলেন না বোলাররা। সেটা কাজে লাগান ভারতের দুই ব্যাটার। তাঁদের প্রথম লক্ষ্য ছিল চতুর্থ দিনের শেষ পর্যন্ত খেলা। সেটা করতে সফল দুই ব্যাটার। সব রকম চেষ্টা করেও এই জুটিকে ভাঙতে পারেননি কামিন্সরা। ৭১ রানের জুটি গড়েন তাঁরা। চতুর্থ দিনের শেষে ভারতের রান ৩ উইকেটে ১৬৪। বিরাট ৪৪ ও রাহানে ২০ রান করে ব্যাট করছেন।
পিচ নিয়ে অসন্তোষ ভারতের
ওভালের পিচ নিয়ে খুশি নয় ভারত। দলের অলরাউন্ডার শার্দূল ঠাকুর বলেছেন, “এ বারের পিচটা আলাদা। গত বার যখন এই পিচে খেলেছিলাম আমরা জানতাম আকাশে মেঘ থাকলে বল নড়াচড়া করবে। সে বার খেলা যত এগিয়েছিল, ততই ব্যাটিং সহায়ক পিচ হয়ে গিয়েছিল। এ বার সেটা হচ্ছে না। বৃহস্পতিবার, শুক্রবার বল ওঠানামা করেছে।” ভারতীয় অলরাউন্ডার আরও বলেন, “পিচ অনেকটাই পাল্টে গিয়েছে। অদ্ভুত জায়গা থেকে বল বাউন্স করছিল। হাতে রান ছিল না বেশি, ছ’উইকেট পড়ে গিয়েছিল। কঠিন সময়ে ব্যাট করতে নেমেছিলাম। খুব বেশি টেস্ট খেলার অভিজ্ঞতাও নেই আমার। নিজেকে বলেছিলাম, এটাই টেস্ট ক্রিকেট, এখানে এমনই হয়।”
পঞ্চম দিন বৃষ্টির সম্ভাবনা
ওভালে চতুর্থ দিনে বৃষ্টির সম্ভাবনা থাকলেও হয়নি। পঞ্চম দিনও বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। আবহাওয়ার পূর্বাভাস বলছে, রবিবার সকালে ৪০ শতাংশ সম্ভাবনা রয়েছে বৃষ্টির। ম্যাচের সময়ও বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে ২০ শতাংশ। কিন্তু তাতে খেলা ভেস্তে যাওয়ার সম্ভাবনা কম। কারণ, সোমবার রিজার্ভ দিন হিসাবে রয়েছে। তাই পঞ্চম দিন খেলায় ব্যাঘাত হলেও আরও এক দিন সময় রয়েছে।