গুজরাতে স্ত্রীর বিরুদ্ধে হেনস্থার অভিযোগ তুলে আত্মঘাতী স্বামী। —প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র।
বেঙ্গালুরুর ইঞ্জিনিয়ার অতুল সুভাষের মৃত্যু, তাঁর সুইসাইড নোট এবং মৃত্যুর আগের ভিডিয়োবার্তা সারা দেশকে নাড়িয়ে দিয়েছিল। দিল্লিতেও অনুরূপ ঘটনা ঘটেছিল সম্প্রতি। এ বার তেমন আরও একটি ঘটনা প্রকাশ্যে এল গুজরাতেও। সেখানেও এক যুবক তাঁর স্ত্রীর বিরুদ্ধে হেনস্থার অভিযোগ তুলে আত্মঘাতী হলেন। মৃত্যুর আগে রেকর্ড করে গেলেন ভিডিয়ো। সেখানেই জানিয়ে গেলেন, স্ত্রীর বিরুদ্ধে তাঁর কী কী অভিযোগ।
গুজরাতের বোটাদ জেলার বাসিন্দা সুরেশ সতদিয়া। ৩০ ডিসেম্বর নিজের ঘর থেকে তাঁর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করা হয়। প্রথমে তাঁর এই আত্মহত্যার কারণ স্পষ্ট ছিল না পরিবারের কারও কাছে। স্ত্রী জয়া সতদিয়ার সঙ্গে দীর্ঘ ১৭ বছরের দাম্পত্য তাঁর। তাঁদের দুই কন্যা এবং দুই পুত্র রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে যুবকের শেষকৃত্য সম্পন্ন করে তাঁর মোবাইলে একটি ভিডিয়ো খুঁজে পান পরিবারের সদস্যেরা। সেখানেই মৃত্যুর আগে শেষ বার্তা রেকর্ড করে গিয়েছিলেন সুরেশ। ওই ভিডিয়ো হাতে পেয়ে পুলিশের দ্বারস্থ হন তাঁর বাবা।
ভিডিয়োতে স্ত্রীর বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ এনেছেন সুরেশ। তাঁকে কাঁদতে দেখা গিয়েছে। কাঁদতে কাঁদতে তিনি বলেছেন, ‘‘ও আমাকে ঠকিয়েছে। ও কোনও দিন আমার ছিল না। কোনও দিন আমার সন্তানদের জন্যও ও ছিল না। ও আমাকে মরতে বাধ্য করত। ওকে তোমরা শাস্তি দিও। এমন শাস্তি দিও, যা ও সারা জীবন মনে রাখবে।’’ এই ভিডিয়োটি রেকর্ড করে কাউকে পাঠাননি যুবক। ফোনেই রেখে দিয়েছিলেন।
যুবকের বাবার অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ অভিযুক্ত মহিলাকে আটক করেছে। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তাঁর বিরুদ্ধে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার ধারায় মামলা রুজুও করা হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৭ বছরের দাম্পত্যে বার বার সুরেশের সঙ্গে অশান্তি হত তাঁর স্ত্রীর। নানা বিষয়কে কেন্দ্র করে তাঁরা ঝগড়া করতেন। কথায় কথায় মহিলা বাপের বাড়িতে চলে যেতেন বলে অভিযোগ। কিছু দিন আগেও তেমনই এক ঝগড়ার পর বাপের বাড়িতে চলে গিয়েছিলেন সুরেশের স্ত্রী। সুরেশ সেখান থেকে তাঁকে ফিরিয়ে আনতেও গিয়েছিলেন। কিন্তু মহিলা ফেরেননি। তার পরেই বাড়ি ফিরে সুরেশ আত্মঘাতী হন। ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।
গত বছর ডিসেম্বরে বেঙ্গালুরুর ইঞ্জিনিয়ার অতুলের দেহ উদ্ধার হয় তাঁর ফ্ল্যাট থেকে। ২৪ পাতার সুইসাইড নোট লিখেছিলেন তিনি। রেকর্ড করেছিলেন দেড় ঘণ্টার ভিডিয়ো। স্ত্রী নিকিতা এবং শ্বশুরবাড়ির লোকজনের বিরুদ্ধে দিনের পর দিন হেনস্থা, মিথ্যা মামলার অভিযোগ তোলেন অতুল। তাঁর পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে নিকিতা, তাঁর মা এবং ভাইকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। শনিবার তাঁরা জামিন পেয়েছেন। অতুলের পর অনুরূপ ঘটনা ঘটে দিল্লিতেও। ক্যাফে মালিক পুনীত খুরানাও স্ত্রীর বিরুদ্ধে হেনস্থার অভিযোগ তুলে আত্মঘাতী হন। অভিযোগ, পুনীতের ব্যবসার ভাগ চেয়ে দিনের পর দিন তাঁকে স্ত্রী এবং স্ত্রীর পরিবারের লোকজন হেনস্থা করেছেন। এমনকি, মরার জন্য তাঁকে উস্কানিও দেওয়া হত। ৫৯ মিনিটের একটি ভিডিয়ো রেকর্ড করে আত্মঘাতী হয়েছেন পুনীত।