(বাঁদিকে) হরজাস সিংহ এবং হরকিরাত বাজওয়া। ছবি: সংগৃহীত।
উদয় সাহারানেরা ফাইনালে না পারলেও অস্ট্রেলিয়ার বিশ্বজয়ে থাকল ভারতীয় ছোঁয়া। কারণ ছোটদের বিশ্বকাপজয়ী দলে ছিলেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত দুই ক্রিকেটার। হরজাস সিংহ এবং হরকিরাত বাজওয়া।
অস্ট্রেলিয়ার অনূর্ধ্ব ১৯ দলের দুই সর্দারজি নজর কেড়েছেন ভারতীয় ক্রিকেটপ্রেমীদের। বিশেষ করে হরজাস। রবিবারের ফাইনালে হরজাসের ৫৫ রানের ইনিংসের সুবাদেই ভারতের সামনে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছিল অসিরা। হরজাসের জন্ম ২০০৫ সালে সিডনিতে। ২০০০ সালে তাঁর বাবা চণ্ডীগড় থেকে পাকাপাকি ভাবে অস্ট্রেলিয়ায় চলে গিয়েছিলেন। জন্মসূত্রে অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক হরজাস। আট বছর বয়সে ক্রিকেট শেখা শুরু তাঁর। সিডনির রিভেসবি ওয়াকার্স ক্রিকেট ক্লাবে খেলে শুরু করেছিলেন। বাবা-মায়ের সঙ্গে সিডনিতে থাকেন হরজাস। পরিবারের অন্যরা অবশ্য চণ্ডীগড়ের বাসিন্দা।
ছেলের খেলায় বাধা দেননি বাবা-মা। তাঁরা উৎসাহই দিয়েছেন সব সময়। হরজাসের বাবা ছিলেন রাজ্য বক্সিং চ্যাম্পিয়ন। মা ছিলেন রাজ্য স্তরের লং জাম্পার। ছোটদের বিশ্বকাপে সুযোগ পাওয়ার পর অস্ট্রেলিয়ার বাঁহাতি ব্যাটার বলেছিলেন, ‘‘চণ্ডীগড় এবং অমৃতসরে আমার পরিবারের অনেকে থাকেন। তাঁদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে। চণ্ডীগড়ের সেক্টর ৪৪ ডি-তে আমাদের বাড়ি রয়েছে। সেখানে কাকা থাকেন। ২০১৫ সালে শেষ বার ভারতে গিয়েছি। ক্রিকেটকে পেশা হিসাবে নেওয়ার পর আর সময় বের করতে পারিনি।’’ বিশ্বকাপে সাতটি ম্যাচই খেলেছেন অস্ট্রেলিয়ার হয়ে। আগের ছ’টি ম্যাচে তাঁর সংগ্রহ ছিল মোট ৪৯ রান। সাফল্য না পেলেও তাঁর উপর আস্থা রেখেছিল অস্ট্রেলিয়া। রবিবার ফাইনালে সেই আস্থার মর্যাদা দিয়েছেন তিনি।
হরকিরাতের জন্ম অবশ্য ভারতেই। আদতে মোহালির বাসিন্দা তাঁর পরিবার। ২০১২ তাঁর বাবা অস্ট্রেলিয়ায় চলে যান কাজের সন্ধানে। মেলবোর্নে ট্যাক্সি চালান তিনি। মেলবোর্নের স্থানীয় একটি ক্লাবে সাত বছর বয়সে ক্রিকেট শেখা শুরু তাঁর। ২০২০ সালের অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপেও অস্ট্রেলিয়া দলে ছিলেন অফ স্পিনার। হরকিরাতকে ক্রিকেট খেলায় উৎসাহ দিয়েছেন মূলত তাঁর কাকা। প্রথাগত ক্রিকেট শেখার আগে বাড়ির পিছনের বাগানে চেলা কাঠকে ব্যাট বানিয়ে কাকার সঙ্গে খেলা শুরু তাঁর। পরে কাকাই উদ্যোগ নিয়ে তাঁকে ভর্তি করিয়ে দিয়েছিলেন বাড়ির কাছের একটি ক্লাবে। শুরুতে ব্যাট করতে ভালবাসলেও মেলবোর্নের ক্লাবের কোচেরাই আবিষ্কার করেন তাঁর প্রতিভা। কোচদের পরামর্শে এবং প্রশিক্ষণে অফস্পিনার হয়ে উঠেছেন তিনি। এ বারের বিশ্বকাপে দু’টি ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েছেন। জ়িম্বাবোয়ের বিরুদ্ধে ১৫ রানে ৪ উইকেট নেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজ়ের বিরুদ্ধে অবশ্য বল করার সুযোগ পাননি।
হরকিরাত এবং হরজাস দু’জনেই চান অস্ট্রেলিয়ার হয়ে টেস্ট খেলতে। ভারতের সঙ্গে বা পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ থাকলেও অস্ট্রেলিয়াই দু’জনের কাছে নিজের দেশ। ছোটদের বিশ্বকাপ জয়ে অস্ট্রেলিয়ার সাফল্যে অবদান রাখতে পেরে তাঁরা খুশি।