Ravichandran Ashwin

আন্তর্জাতিক ক্রিকেট শুরু ওপেনার হিসাবে! জোরে বোলিং ছেড়ে স্পিনার হন ‘গবেষক’ অশ্বিন

সুভাষ গুপ্তে, বিনু মাঁকড়ের পর ভগবৎ চন্দ্রশেখর, বিষেণ সিংহ বেদী, সেখান থেকে অনিল কুম্বলে, হরভজন সিংহ হয়ে রবিচন্দ্রন অশ্বিন। যিনি গত ১৪ বছর ধরে ভারতীয় দলে খেলে সর্বকালের সেরাদের তালিকায় ঢুকে পড়েছেন।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৯:০২
Share:

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানালেন রবিচন্দ্রন অশ্বিন। ছবি: পিটিআই।

ভারতে কখনও স্পিনারের অভাব ছিল না। সুভাষ গুপ্তে, বিনু মাঁকড়ের পর ভগবৎ চন্দ্রশেখর, বিষেণ সিংহ বেদী, সেখান থেকে অনিল কুম্বলে, হরভজন সিংহ হয়ে রবিচন্দ্রন অশ্বিন। যিনি গত ১৪ বছর ধরে ভারতীয় দলে খেলে সর্বকালের সেরাদের তালিকায় ঢুকে পড়েছেন।

Advertisement

ক্রিকেট জীবনের শুরুটা যদিও স্পিনার হিসাবে হয়নি অশ্বিনের। ভারতের অনূর্ধ্ব-১৭ দলে তাঁর অভিষেক হয়েছিল ওপেনার হিসাবে। বয়সভিত্তিক আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ওপেনার হিসাবে শুরু করা অশ্বিন সে ভাবে সাফল্য পাননি। যে কারণে তাঁকে নীচের দিকে ব্যাট করতে পাঠানো হয়। শুধু ওপেনার ব্যাটার নন, অশ্বিন এক সময় মিডিয়াম পেস বোলিংও করেছেন। তবে শেষ পর্যন্ত স্পিনার হিসাবেই নিজের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করেন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নেন ৭৬৫টি উইকেট।

অশ্বিনের বাবা রবিচন্দ্রন ক্লাব ক্রিকেট খেলতেন। তিনি পেসার ছিলেন। যে কারণে অশ্বিনও শুরুতে পেস বোলিং করতেন। কেরিয়ারের শুরুতে তাঁর কোচ ছিলেন চন্দ্রশেখর রাও। পরে উচ্চশিক্ষার জন্য সেন্ট বেদে স্কুলে ভর্তি হওয়ার পর কোচ হিসাবে পান সিকে বিজয় কুমারকে। তিনিই অশ্বিনকে মিডিয়াম পেস বোলিং ছেড়ে স্পিনার হওয়ার উপদেশ দেন। যে বোলিং আরও ক্ষুরধার হয় সুনীল সুব্রহ্মণ্যমের হাত ধরে। প্রাক্তন ক্রিকেটার ডব্লিউভি রামনও অশ্বিনকে সাহায্য করেছিলেন।

Advertisement

স্পিন বোলিংকে শিল্পের পর্যায় নিয়ে গিয়েছেন অশ্বিন। বিভিন্ন ধরনের বল করার চেষ্টা করতেন। ক্যারম বল আবিষ্কার করেছিলেন গবেষক অশ্বিন। অফ স্পিনার হয়েও লেগ-ব্রেক বল করে চমকে দিতেন ব্যাটারদের। জীবনের প্রথম টেস্টে ৯ উইকেট নিয়ে ম্যাচের সেরা হয়েছিলেন। ৩৭ বার টেস্টে এক ইনিংসে পাঁচ উইকেট নিয়েছিলেন। চার বার একই টেস্টে শতরান এবং পাঁচ উইকেট নেওয়ার নজিরও আছে তাঁর। অশ্বিনকে অনেক সময়ই স্পিনের জাদুকর, শিল্পী বলা হয়ে থাকে। তবে তিনি অবশ্যই গবেষক। যিনি প্রতি মুহূর্তে ভাবতে থাকেন কোন ব্যাটার কোন বলে আউট হতে পারেন। ভেবে বার করেন নতুন ধরনের বল করার কায়দা, যা টেস্টে তাঁকে ৫৩৭টি উইকেট এনে দিয়েছে। বাংলার প্রাক্তন স্পিনার সৌরাশিস লাহিড়ী বললেন, “ভারতের ক্রিকেট ইতিহাসে সেরা দুই স্পিনার অনিল কুম্বলে এবং অশ্বিন। ও ম্যাচ উইনার। বিশ্ব ক্রিকেটেও সেরাদের সঙ্গে এক আসনে বসবে অশ্বিন। তবে ব্যাটিংয়ের জন্য কিছুটা এগিয়েও রাখব ওকে।”

এমন এক জন স্পিনারকে যদিও শেষ কয়েক বছরে বার বার বসতে হয়েছে। কখনও বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল ম্যাচে তাঁকে প্রথম একাদশের বাইরে থাকতে হয়েছে, কখনও আবার এক দিনের বিশ্বকাপে দলে ফিরিয়ে এনে খেলানো হয়েছে মাত্র একটি ম্যাচ। সাদা বলের ক্রিকেটে ২০১৭ সাল থেকে অনিয়মিত হতে শুরু করেন। ধীরে ধীরে দল থেকেই বাদ পড়ে যান। তবে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ বা এক দিনের বিশ্বকাপের আগে হঠাৎ করেই আবার দলে ফেরানো হয়েছে তাঁকে। অশ্বিনকে ভারতীয় দল অবজ্ঞা করলেও উপেক্ষা করতে পারেনি। শেষ পর্যন্ত সিরিজ়ের মাঝেই দল ছাড়লেন অশ্বিন। ছাড়লেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটও।

সাজঘরে বিরাট কোহলিকে অবসর নেওয়ার কথা জানাচ্ছেন রবিচন্দ্রন অশ্বিন। ছবি: এক্স।

অশ্বিনের হঠাৎ অবসর নেওয়া যদিও মানতে পারছেন না সুনীল গাওস্কর। ব্রিসবেন টেস্ট বুধবার শেষ হয়। ড্র হয়ে যায় ম্যাচটি। বুধবার সকালেই জল্পনা শুরু হয়েছিল অশ্বিনের অবসর নিয়ে। ম্যাচ শেষে সাংবাদিক বৈঠকে নিজেই অবসর ঘোষণা করেন তিনি। কিন্তু সেই সিদ্ধান্ত মানতে পারছেন না গাওস্কর। তিনি বলেন, “অশ্বিন বলতে পারত যে, এই সিরিজ়ের পর আর ভারতের হয়ে খেলব না। ২০১৪-১৫ মরসুমে মহেন্দ্র সিংহ ধোনি এই রকম করেছিল। তৃতীয় টেস্টের পর অবসর নিয়েছিল। সিরিজ়ের মাঝখানে সরে দাঁড়ালে দলে এক জন ক্রিকেটার কমে যায়। নির্বাচকেরা তো সফরে একটা পরিকল্পনা করে দল পাঠিয়েছেন। কেউ চোট পেলে রিজার্ভ থেকে কাউকে দলে নেওয়া যায়। সিডনিতে স্পিনারেরা সাহায্য পায়। সেখানে ভারত দু’জন স্পিনার খেলানোর কথা ভাবতেই পারে। সেখানে অশ্বিন খেলার সুযোগ পেতেই পারত। জানি না যদিও মেলবোর্নের পিচ কেমন হবে। কিন্তু সিরিজ়ের শেষে অবসর নেয় ক্রিকেটারেরা। সিরিজ়ের মাঝে অবসর নেওয়াটা সচরাচর দেখা যায় না।”

ক্রিকেট কেরিয়ারে বহু সাফল্য পেলেও অশ্বিনের দেশের বাইরে সাফল্য ঘরের মাঠের তুলনায় অনেকটাই কম। টেস্টে ৫৩৭টি উইকেট নেওয়া অশ্বিন বিদেশের মাটিতে মাত্র ১৫৪টি উইকেট নিয়েছেন। উপমহাদেশের বাইরে অশ্বিনের বোলিং গড় ৩০-এর উপরে। ব্যতিক্রম শুধু ওয়েস্ট ইন্ডিজ়। সেখানে ৬ টেস্টে ৩২টি উইকেট নিয়েছেন অশ্বিন। গড় ১৯.৩৪। দেশের মাটিতেও (২১.৫৭) এত ভাল গড় নেই অশ্বিনের। তবে তাঁর বিদেশের মাটিতে সফল না-হওয়ার দাবি মানতে পারছেন না ইংরেজ স্পিনার গ্রেম সোয়ান। তিনি বলেন, “২০১৮ সালে ও যখন ইংল্যান্ডে এল, তখন প্রথম টেস্টে দারুণ বল করেছিল। কিন্তু সাউদাম্পটন টেস্টের আগে চোট পেয়ে গেল। ফলে, সমস্যায় পড়ল। সত্যি বলতে, ইংলিশ কন্ডিশনে লোকে যা ভাবে বা যতটা কৃতিত্ব দেয়, তার চেয়ে অনেক ভাল বোলার অশ্বিন।”

অশ্বিনকে সম্মান জানিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার স্পিনার নাথান লায়নও। তিনি বলেন, “অশ্বিনের জন্য সম্মান ছাড়া আর কিছু জানানোর নেই। মাঠে এবং মাঠের বাইরে এত বছর ধরে অশ্বিন যে ভাবে নিজেকে তৈরি করেছে, তা অবিশ্বাস্য। আমাদের অনেক সময়ই মতবিরোধ হয়েছে। কিন্তু অশ্বিনের সঙ্গে ক্রিকেট নিয়ে আলোচনা করার মজাই আলাদা।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement