হার্দিক পাণ্ড্য। —ফাইল চিত্র।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের জন্য ভারতের দল বাছতে গিয়ে সব থেকে বড় সমস্যা হল অলরাউন্ডার নিয়ে। ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড গত আইপিএল থেকে ইমপ্যাক্ট প্লেয়ার নিয়ম নিয়ে এসেছে। শুরু থেকেই বলছিলাম যে, এই নিয়ম অলরাউন্ডারদের জন্য বিপদ ডেকে আনবে। কিছু দিন আগে ভারতীয় দলের অধিনায়ক রোহিত শর্মাও সে কথাই বলছিল। আর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে তাই ভারতের সব থেকে বড় সমস্যা ওই অলরাউন্ডার জায়গাটি নিয়েই।
আইপিএল শুরুর আগে হার্দিক পাণ্ড্যকেই অলরাউন্ডার হিসাবে ভাবা হচ্ছিল। কিন্তু এ বারের আইপিএলে যে ফর্মে হার্দিক রয়েছে তাতে দলে জায়গা পাওয়াই উচিত নয়। হার্দিককে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দলে রাখা হলে দলেরই ক্ষতি হবে। এত বছরে হার্দিক খুব বেশি ম্যাচ একার হাতে জেতাতে পারেনি। বল হাতে উইকেট নিতে পারছে না। রান দিচ্ছে। ব্যাট হাতে রান পাচ্ছে না। রান পেলেও খুব মন্থর ইনিংস খেলছে। এমন একজন অলরাউন্ডারকে দলে রেখে কোনও উপকার হবে না।
সেই জায়গায় শিবম দুবেকে নিয়ে যাওয়া উচিত। চেন্নাই সুপার কিংসের হয়ে ব্যাট হাতে দুরন্ত ফর্মে রয়েছে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে ইমপ্যাক্ট প্লেয়ার নিয়মের কারণে ওকে দিয়ে চেন্নাই বল করাচ্ছে না। ফলে আইপিএলে বল করতে দেখা যায়নি দুবেকে। ঘরোয়া ক্রিকেটে ও অবশ্য বল করে। নির্বাচকেরা নিশ্চয়ই দল বাছার সময় সেই কথা মাথায় রাখবেন।
ইমপ্যাক্ট প্লেয়ার নিয়মটাই বদলে দেওয়া উচিত। না হলে আগামী দিনে ভারত অলরাউন্ডার পাবে না। আইপিএলকে জনপ্রিয় করে তুলতে গিয়ে দেশের ক্ষতি করে ফেলছে বোর্ড। সেটা এ বারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দল বাছতে গিয়েই বোঝা যাচ্ছে। আইপিএলে একাধিক অলরাউন্ডার শুধু ব্যাটার অথবা বোলার হিসাবে খেলছে। এর ফলে নির্বাচকদের দল বাছতে সমস্যায় পড়তে হবে। তা বলে যদি হার্দিককে নিয়ে যাওয়া হয়, সেটা হবে সব থেকে বড় ভুল।
অলরাউন্ডার নিয়ে চিন্তা থাকলেও উইকেটরক্ষণ নিয়ে আর কোনও চিন্তা নেই। সব সমস্যার সমাধান করে দিয়েছে ঋষভ পন্থ। গাড়ি দুর্ঘটনার পর যে ভাবে ও ক্রিকেটে ফিরে এসেছে তাতে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দলে ওর না থাকাটাই অবাক করা সিদ্ধান্ত হবে। উইকেটরক্ষক হিসাবে ভারতীয় দলে প্রথম নামটা পন্থেরই হওয়া উচিত। সেই সঙ্গে সঞ্জু স্যামসনকেও দলে নেওয়া হোক। যে ফর্মে রয়েছে তাতে সঞ্জুকে বাদ দেওয়া অন্যায় হবে। বরং এই দলে লোকেশ রাহুলের জায়গা নেই।
ভারতীয় দলের ওপেনিং জায়গায় কিন্তু বিরাট ভিড়। সেটাও চিন্তার কারণ। রোহিত শর্মার সঙ্গে ওপেন করবে কে? যশস্বী জয়সওয়াল ভাল ক্রিকেটার। টেস্টে রান করেছে। তবে আমি বলব টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে রোহিতের সঙ্গী হিসাবে নেওয়া হোক রুতুরাজ গায়কোয়াড়কে। যশস্বী দলে থাকুক তৃতীয় ওপেনার হিসাবে। আইপিএলে এখনও পর্যন্ত ৯ ম্যাচে ৪৪৭ রান করেছে রুতুরাজ। একটি শতরান করেছে। স্ট্রাইক রেট ১৪৯.৫০। সেখানে ৯ ম্যাচে যশস্বী করেছে ২৪৯ রান। ধারাবাহিকতার অভাব রয়েছে যশস্বীর। কিন্তু ও ভাল ক্রিকেটার। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দলে তাই অবশ্যই রাখা উচিত ওকে।
গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
ভারতের মূল সমস্যা হবে পেস বিভাগ বেছে নেওয়ার সময়। মহম্মদ শামির চোট বড় ধাক্কা। সেই সঙ্গে আইপিএলে আকাশ দীপকে না খেলানোটাও ক্ষতি হল। আকাশ দারুণ ফর্মে ছিল। বাংলার হয়ে বল করল। ভারতের হয়ে ভাল খেলল। সেই পেসারকে বসিয়ে রাখল রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু। যশ দয়ালকে খেলিয়ে যাচ্ছে। ও রান দিচ্ছে। তা-ও আকাশকে খেলাচ্ছে না। আইপিএলে আকাশ খেললে অবশ্যই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে জায়গা করে নিত। কিন্তু সেটা হল না। তাই যশপ্রীত বুমরার সঙ্গী বাছতে সমস্যা হতে পারে নির্বাচকদের।
অনেকেই মনে করছেন মহম্মদ সিরাজকে বাদ দেওয়া উচিত। কিন্তু ও ভাল বোলার। অভিজ্ঞতা আছে। একটা আইপিএল খারাপ গিয়েছে বলে বিশ্বকাপের দল থেকে সিরাজকে বাদ দেওয়া উচিত হবে না। কিন্তু ওর ফর্মে না থাকা অবশ্যই ভারতীয় দলের কাছে চিন্তার কারণ। তবুও আমি সিরাজকেই দলে রাখব। সেই সঙ্গে পঞ্জাবের আরশদীপ সিংহ। উইকেট পাচ্ছে ও। তাই এই তিন জনের বিশ্বকাপে অবশ্যই যাওয়া উচিত। সেই সঙ্গে সন্দীপ শর্মাকেও দলে রাখা হোক। ভারতের হয়ে মাত্র দু’টি ম্যাচ খেলেছে ও। কিন্তু বিশ্বকাপে সন্দীপকে দলে নেওয়া উচিত। চার ম্যাচে আটটি উইকেট তুলে নিয়েছে। সেই সঙ্গে রানও আটকে রাখে। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে সন্দীপ খুব কার্যকরী বোলার। ওকে নেওয়া যেতেই পারে।
কয়েক জনের দলে থাকা নিয়ে কোনও প্রশ্ন ওঠার কথা নয়। বিরাট কোহলি, সূর্যকুমার যাদব, রবীন্দ্র জাডেজার মতো ক্রিকেটার থাকবেই। তাদের বাদ দেওয়ার কোনও প্রশ্নই নেই। তবে স্পিন বিভাগে জাডেজা এবং কুলদীপ যাদবের সঙ্গে যুজবেন্দ্র চহালকে দলে রাখা উচিত। কেন ওকে বাদ দেওয়া হয়, আমি জানি না। কিন্তু এ বারের আইপিএলে দারুণ ফর্মে রয়েছে চহাল। তাই বিশ্বকাপে ওকে অবশ্যই দলে রাখা উচিত।