যৌন কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত হয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার টিম পেন। তাঁর ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর তিনি অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়কের পদ থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন।
তাঁর ঘটনাটি ২০১৭ সালের। তখন ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার এক মহিলা কর্মীকে অশ্লীল ছবি ও ম্যাসেজ পাঠিয়েছিলেন পেন।
ওই মহিলা অভিযোগ করার পর ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া তদন্ত করে। তারপর থেকে ব্যাপারটি সংশ্লিষ্ট প্রায় সব মহল থেকে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। প্রায় সাড়ে তিন বছর পরে বিষয়টি জানাজানি হয়ে যাচ্ছে দেখে পদত্যাগ করেন পেন।
ক্রিকেটে যৌন কেলেঙ্কারির ঘটনা এই প্রথম নয়। এর আগেও বহু নামী-দামী ক্রিকেটার এরকম ঘটনায় জড়িয়েছেন।
অস্ট্রেলিয়ারই শেন ওয়ার্ন এই তালিকায় শীর্ষে থাকবেন। ব্রিটিশ নার্স ডনা রাইট থেকে শুরু করে ২০০৬ সালে ইংল্যান্ডের কাউন্টি ক্রিকেটে হ্যাম্পশায়ার-মিডলসেক্স ম্যাচের আগের দিন দুই মডেলের সঙ্গে যৌনতা, একাধিক বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক, ২০১১ সালে আইপিএল-এ স্টেডিয়ামে প্রকাশ্যে তৎকালীন বান্ধবী এলিজাবেথ হারলেকে চুম্বন, ওয়ার্ন সবই ঘটিয়েছেন।
এই ব্যাপারে ওয়ার্নের সঙ্গে যিনি পাল্লা দিতে পারেন, তিন ক্রিস গেল। ওয়েস্ট ইন্ডিজের এই ব্যাটার মাঠে যেরকম ঝড় তোলেন, মাঠের বাইরেও তাই। ২০১২ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কার হোটেলের ঘরে তিন ব্রিটিশ মহিলার সঙ্গে তাঁকে দেখা যায়। ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের দেহরক্ষী পুলিশ ডেকে তিন মহিলাকে তাদের হাতে তুলে দেন। গেল বেঁচে যান।
টেলিভিশনে সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে অস্ট্রেলীয় উপস্থাপক মেল ম্যাকললিনকে প্রকাশ্যেই ঘুরতে যাওয়ার প্রস্তাব দেন। কিছু অশালীন মন্তব্যও করেন। আর এক মহিলা সাংবাদিক শার্লট এডওয়ার্ডসের সঙ্গেও একই কীর্তি করেন গেল।
২০১৫ সালের বিশ্বকাপে এক মহিলা কর্মী গেলের বিরুদ্ধে ইচ্ছাকৃত ভাবে যৌনাঙ্গ দেখানোর অভিযোগ করেন।
ইংল্যান্ডের প্রাক্তন ক্রিকেটার ইয়ান বথামের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে, তিনি এক অস্ট্রেলীয় পরিচারিকার সঙ্গে যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হয়েছেন। মিস বার্বাডো়জ লিনডি ফিল্ডের সঙ্গেও বথামের যৌন কেলেঙ্কারি প্রকাশ্যে আসে।
টেলিভিশন শো ‘বিগ ব্রাদার’-এর তারকা ভ্যানেসা নিমো অভিযোগ করেন ইংল্যান্ডের প্রাক্তন ক্রিকেটার কেভিন পিটারসেন তাঁকে ব্যবহার করেছেন। মনে করা হয়, পিটারসেনের সঙ্গে সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার পরে রাগে নিমো এই অভিযোগ করেন।
মহিলা মহলে শাহিদ আফ্রিদির জনপ্রিয়তা তুঙ্গে। একবার তাঁর কেলেঙ্কারি ফাঁস হয়ে যায়। সিঙ্গাপুরে একটি প্রতিযোগিতা খেলতে পাকিস্তান দলের সঙ্গে রওনা হওয়ার আগে করাচির একটি হোটেলের ঘরে বেশ কয়েকজন মহিলার সঙ্গে আফ্রিদিকে পাওয়া যায়। সঙ্গে ছিলেন পাকিস্তানের আরও দুই ক্রিকেটার হাসান রাজা এবং আতিক-উজ-জামান। তিনজনকেই পরের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির দল থেকে বাদ দেওয়া হয়।
বাকি ক্রিকেটাররা ধরা পড়ে গেলেও হার্শেল গিবসকে ধরা পড়তে হয়নি। দক্ষিণ আফ্রিকার এই প্রাক্তন ক্রিকেটার আত্মজীবনী ‘টু দ্য পয়েন্ট’-এ নিজেই সব গড়গড় করে বলে দিয়েছেন। ১৯৯৯ বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ম্যাচের আগে হোটেলের ঘরে মহিলা কর্মীর সঙ্গে কী হয়েছিল, তা গিবসের বই পড়লেই জানা যাবে।
নিউজিল্যান্ডের জোরে বোলার ড্যারিল টাফির বিরুদ্ধেও যৌন কেলেঙ্কারির অভিযোগ ওঠে। ২০০৫ সালে ক্রাইস্টচার্চে ২৩ বছরের এক মহিলা কর্মীর সঙ্গে টাফির যৌন সম্পর্কের ছবি ফাঁস হয়। কিন্তু এই ঘটনা পরে ধামাচাপা পড়ে যায়।
লাটভিয়ার মডেল জেলিনা কুলতিয়াসোভার সঙ্গে অবৈধ সম্পর্কে জড়ান দক্ষিণ আফ্রিকার জোরে বোলার আন্দ্রে নেল। কিন্তু তিনি যে বিবাহিত, তা ওই মহিলাকে জানাননি। মহিলা নিজেই এই তথ্য খুঁজে বার করেন। নেলের সঙ্গে সম্পর্কের কথা ফাঁস করে দেন।
২০০৫ সালে গোটা ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের বিরুদ্ধে যৌন কেলেঙ্কারির অভিযোগ ওঠে। সে বার অস্ট্রেলিয়া সফরে ছ’টির মধ্যে পাঁচটি ম্যাচে হারতে হয় ওয়েস্ট ইন্ডিজকে। দলের স্পনসর ‘ডিজিসেল’ রেগে আগুন হয়ে যায়। তাদের কর্তা হোটেলের ঘরে ক্রিকেটারদের যৌন সম্পর্কের কথা ফাঁস করেন।
সেই বছর একই অভিযোগ ওঠে শ্রীলঙ্কা দলের বিরুদ্ধেও। শ্রীলঙ্কা পুলিশ একটি পতিতালয়ে হানা দেয়। জানা যায়, সেটি চলে শুধু ক্রিকেটারদের জন্যই। ১০ বছর ধরে সেখানে জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের যাতায়াত। এক পুলিশকর্মী ক্রিকেটার সেজে সেখানে গিয়ে গোটা ব্যাপারটি ধরে ফেলেন। আট মহিলাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
শুধু ক্রিকেটাররাই নন, বাদ যাননি আম্পায়ারও। পাকিস্তানের আম্পায়ার আসাদ রউফের বিরুদ্ধে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হওয়ার অভিযোগ ওঠে। ২১ বছরের এক ভারতীয় মডেল লিনা কপুর এই অভিযোগ করেন। দু’জনের একাধিক ছবিও প্রকাশ্যে আসে।