রবিবার অস্ট্রেলিয়ার খোয়াজাকে (ছবিতে নেই) আউট করে উত্তেজিত হয়ে পড়ে ছিলেন রবিনসন (বাঁদিক থেকে তৃতীয়)। ছবি: আইসিসি।
এ বারের অ্যাশেজ সিরিজ়ের প্রথম থেকেই তৈরি হচ্ছে একের পর এক বিতর্ক। ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়ার ২২ গজের লড়াই ছাপিয়ে যেগুলি উঠে আসছে ক্রিকেট বিশেষজ্ঞ বা সমর্থকদের আলোচনায়। ইংল্যান্ডের মইন আলি, অলি রবিনসনের মতো বিতর্কে জড়িয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার স্টিভ স্মিথও।
ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়া লড়াই শুধু ক্রিকেটের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না। ক্রিকেটারেরা চেষ্টা করেন নানা ভাবে প্রতিপক্ষকে বিরক্ত করতে বা তাঁদের মনঃসংযোগ নষ্ট করতে। তা থেকে তৈরি হয় বিতর্ক। আবার কোনও ক্রিকেটারের ব্যক্তিগত ভুল থেকেও বিতর্ক তৈরি হয়। এ বারের অ্যাশেজে এর মধ্যেই একাধিক বিতর্ক তৈরি হয়েছে।
বল বিকৃতি বিতর্ক
সব থেকে বড় বিতর্কে জড়িয়েছেন প্রায় দু’বছর পর অবসর ভেঙে টেস্ট ক্রিকেটে ফেরা মইন আলি। তাঁর বিরুদ্ধে বল বিকৃত করার চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। শনিবার অস্ট্রেলিয়ার ইনিংসের ৮৯তম ওভারের সময় বাউন্ডারি লাইনের পাশে মইনকে দেখা যায় বলে কিছু একটা মাখাচ্ছেন। বলে তিনি কী মাখাচ্ছিলেন তা সঠিক ভাবে বোঝা যায়নি টেলিভিশনের ক্যামেরায়। বিষয়টি নজর এড়ায়নি ম্যাচ রেফারি অ্যান্ডি পাইক্রফটের। তিনি ম্যাচের পর ডেকে পাঠান মইনকে। ম্যাচ রেফারির সামনে অপরাধ স্বীকার করে নেন ইংল্যান্ডের পাক বংশোদ্ভূত অলরাউন্ডার। মইন জানিয়েছেন, হাত শুকনো রাখার জন্য তিনি সাদা রঙের ক্রিম ব্যবহার করেছেন। তাঁর দাবি, ক্রিমটি বলের উপর কৃত্রিম পদার্থ হিসাবে ব্যবহার করেননি। বলের অবস্থা পরিবর্তনের চেষ্টা করেননি। তাঁর এই যুক্তিতে সন্তুষ্ট হতে পারেননি ম্যাচ রেফারি। কারণ মইন নিশ্চিত করতে পারেননি যে, সেই ক্রিম তিনি শুধু নিজের আঙুলেই ব্যবহার করেছেন। আইসিসির নিয়ম অনুযায়ী, কৃত্রিম ভাবে খেলার বলের অবস্থা বা আকার পরিবর্তন করা যায় না। এ জন্য মইনের ম্যাচ ফির ২৫ শতাংশ জরিমানা করেছে আইসিসি।
গালি বিতর্ক
বিতর্কে জড়িয়েছেন ইংল্যান্ডের জোরে বোলার রবিনসনও। রবিবার অস্ট্রেলিয়ার ওপেনার উসমান খোয়াজাকে আউট করেন তিনি। শতরানকারী খোয়াজাকে আউট করার পর তাঁর দিকে আগ্রাসী মেজাজে ছুটে যান রবিনসন। অস্ট্রেলীয় ওপেনারকে গালিগালাজ করেন। ক্রিকেট মহলে খোয়াজা ভদ্র, শান্ত স্বভাবের বলে পরিচিত। তাঁর মতো ক্রিকেটারের প্রতি রবিনসনের ওই আচরণ নজর এড়ায়নি দু’দলের ক্রিকেটার, ধারাভাষ্যকার এবং ক্রিকেটপ্রেমীদের। পরিস্থিতি সামলাতে খোয়াজার পিঠ চাপড়ে দিয়ে তাঁর ইনিংসের প্রশংসা করেন ইংল্যান্ড অধিনায়ক বেন স্টেকস। তাতে অবশ্য রবিনসন সমালোচনার হাত থেকে রেহাই পাননি। তাঁর আচরণকে বিদ্বেষমূলক বলে মনে করেছেন ক্রিকেটপ্রেমীদের একাংশ।
প্রতারণা বিতর্ক
বিতর্কে জড়িয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার সহ-অধিনায়ক স্মিথও। তাঁর ক্রিকেটীয় সততা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ক্রিকেটপ্রেমীদের একাংশ। ঘটনাটি রবিবার ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় ইনিংসের সপ্তম ওভারের প্রথম বলে। বোলার ছিলেন অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক প্যাট কামিন্স। ব্যাটার ছিলেন ইংল্যান্ডের জ্যাক ক্রলি। অফ স্টাম্পের বাইরে পড়া কামিন্সের বলের কাছে ব্যাট নিয়ে গেলেও সংযোগ করতে পারেননি ক্রলি। ব্যাটের খুব কাছ দিয়ে চলে যায় উইকেটরক্ষক অ্যালেক্স ক্যারির হাতে। ক্যাচ আউটের জন্য অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটারেরা আবেদন করলেও উচ্ছ্বাস দেখা যায়নি ক্যারির মধ্যে। স্লিপে ফিল্ডিং করছিলেন স্মিথ। তাঁর উচ্ছ্বাস ছিল কিছুটা বেশি। তিনি সবাইকে বোঝানোর চেষ্টা করেন ক্যাচ আউট হয়েছেন। মাঠের আম্পায়ার অস্ট্রেলীয়দের আউটের আবেদনে সাড়া না দেওয়ায় কিছুটা বিস্ময় প্রকাশ করেন স্মিথ। পরে টেলিভিশন রিপ্লেতেও দেখা গিয়েছে আউট ছিলেন না ক্রলি। স্মিথের এই আচরণ নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন। ২০১৮ সালে ‘স্যান্ড পেপার’ কাণ্ডে জড়িয়ে পড়া স্মিথ প্রতারণার চেষ্টা করেছেন বলে অভিযোগ ইংল্যান্ডের ক্রিকেটপ্রেমীদের।
ডিক্লেয়ার বিতর্ক
বিতর্ক তৈরি হয়েছে ইংল্যান্ডের প্রথম ইনিংস ডিক্লেয়ার করা নিয়েও। বার্মিংহাম টেস্টের প্রথম দিন ৮ উইকেটে ৩৯৩ রান তুলে ইনিংস ছেড়ে দেন স্টোকস। দিনের শেষে ৪ ওভার ব্যাট করতে হয় অস্ট্রেলিয়াকে। ইংল্যান্ডের এই সিদ্ধান্ত নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন। দু’ভাগ ইংল্যান্ডের প্রাক্তন অধিনায়কেরা। কেভিন পিটারসেনের প্রশ্ন, ৪০০ রান তোলার মনস্তাত্ত্বিক সুবিধা নেওয়ার সুযোগ পেয়েও কেন কাজে লাগালেন না স্টোকসেরা? আবার মাইকেল ভনের মতে ঠিকই করেছে ইংল্যান্ড। কারণ, সারা দিন ফিল্ডিং করার পর প্যাড, হেলমেট পরে মাঠে নামাটাই অত্যন্ত বিরক্তিকর ব্যাটারদের কাছে।
অ্যাশেজ সিরিজের প্রথম তিন দিনেই অন্তত চারটি বিতর্ক তৈরি হয়েছে। ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়ার টেস্ট সিরিজ় জেতার জন্য মরিয়া থাকে দু’দলই। এই সিরিজ় ক্রিকেট ছাপিয়ে দু’দেশের কাছে সম্মানের লড়াই। তাই ছোট বিষয় নিয়েও বিতর্ক তৈরি হয় অনেক সময়।