হার্দিক পাণ্ড্য। —ফাইল চিত্র।
শেষ ওভারে বল হাতে ভারতকে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জিতিয়ে ট্রফি হাতে মুম্বই বিমানবন্দরে নেমেছিলেন তিনি। ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে সংবর্ধনার আগে যখন ভারতীয় দল মাঠে নামছে, তখনও তাঁর হাতেই ছিল বিশ্বকাপ ট্রফি। ওয়াংখেড়ের গ্যালারি চিৎকার করেছিল তাঁর নাম ধরে। অথচ তিন সপ্তাহ পরে বদলে গিয়েছে ছবিটা। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারতের সহ-অধিনায়ক হার্দিক পাণ্ড্য অধিনায়ক হতে পারেননি। রোহিত শর্মা অবসর নেওয়ার পরে নতুন অধিনায়ক করা হয়েছে সূর্যকুমার যাদবকে। এই সূর্য আবার আইপিএলে হার্দিকের নেতৃত্বে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সেই খেলেন। তার পরেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছেন, জাতীয় দলের পরে কি এ বার আইপিএলে মুম্বইয়ের নেতৃত্বও হারাবেন হার্দিক?
কেন হার্দিকের বদলে সূর্যকে অধিনায়ক করা হয়েছে তার জবাব দিয়েছেন ভারতের নির্বাচক প্রধান অজিত আগরকর। শ্রীলঙ্কা সিরিজ় খেলতে দল উড়ে যাওয়ার আগে মুম্বইয়ে সাংবাদিক বৈঠকে তিনি বলেন, “আমরা এক দিনে অধিনায়ক নির্বাচক করিনি। অনেক দিন ধরে আলোচনা হয়েছে। সাজঘর থেকে খবর নিয়েছি। তার পরেই নতুন অধিনায়ক হিসাবে সূর্যকে ভেবেছি।” আগরকরের এই কথায় প্রশ্ন উঠছে, তবে কি সাজঘরে হার্দিকের ভাবমূর্তি খুব একটা ভাল নয়? সতীর্থদের সঙ্গে কি তাঁর সম্পর্ক খারাপ? সেই জন্যই কি সূর্যকে বেশির ভাগ ক্রিকেটার অধিনায়ক হিসাবে দেখতে চেয়েছেন? সে বিষয়ে অবশ্য স্পষ্ট করে কিছু জানাননি আগরকর। তবে তিনি এ কথা স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে, ২০২৬ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের কথা ভেবেই সূর্যকে অধিনায়ক করা হয়েছে। আগরকর বলেন, “আমাদের হাতে সময় আছে। পরের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ দু’বছর পরে। আশা করি সূর্য ভাল ভাবে নেতৃত্ব দেবে।” পাশাপাশি হার্দিকের চোট পাওয়ার প্রবণতার কথাও টেনে এনেছেন আগরকর। তিনি বলেন, “হার্দিক দলের খুব গুরুত্বপূর্ণ ক্রিকেটার। কিন্তু ওর ফিটনেসের সমস্যা আছে। ও খুব চোটপ্রবণ। সূর্য অধিনায়ক হওয়ার যোগ্য। ওর ক্রিকেটের মস্তিষ্ক ভাল। আশা করছি ওকে প্রায় সব ম্যাচেই পাওয়া যাবে।”
নির্বাচকদের এই সিদ্ধান্ত হার্দিককে আরও সমস্যার মধ্যে ফেলেছে। কারণ, মুম্বই ইন্ডিয়ান্স আইপিএলের অন্যতম সফল ফ্র্যাঞ্চাইজ়ি। তাদের অধিনায়ক থাকতে গেলে সফল হতে হবে। জাতীয় দলের অধিনায়ক থাকার পরেও শুধুমাত্র গত কয়েক মরসুমে ট্রফি জিততে না পারায় রোহিতকেও সরিয়ে দিতে ভাবেনি তারা। সেই রোহিত দেশকে বিশ্বকাপ জিতিয়েছেন। সেখানে হার্দিকের সাফল্য এমন কিছু নয়। তাই হার্দিককে সরাতে হলে কি বেশি কিছু ভাববে তারা? প্রশ্ন উঠছে।
গত মরসুমের আইপিএলের আগে রাতারাতি গুজরাত টাইটান্স থেকে হার্দিককে কেনে মুম্বই। তাঁকে অধিনায়ক করা হয়। গুজরাতকে এক বার চ্যাম্পিয়ন ও এক বার রানার্স করেছিলেন হার্দিক। সেই কারণেই হয়তো তাঁকে অধিনায়ক করা হয়েছিল। কিন্তু মুম্বইয়ে হার্দিক ব্যর্থ। তিনি অধিনায়ক হওয়ার পরে শোনা গিয়েছে, মুম্বইয়ের সাজঘর দু’ভাগে ভাগ হয়ে গিয়েছে। অনেক ক্রিকেটার হার্দিককে পছন্দ করেন না বলে খবর। উল্টো দিকে মুম্বইয়ের তরুণ ক্রিকেটারদের মধ্যে সূর্যের গ্রহণযোগ্যতা যথেষ্ট।
হার্দিককে আরও সমস্যায় ফেলেছে আগামী মরসুমের বড় নিলাম। ছোট নিলামে অনেক বেশি ক্রিকেটার ধরে রাখতে পারে দলগুলি। কিন্তু এত দিন বড় নিলামের আগে মাত্র চার জনকে ধরে রাখতে পারত তারা। তার মধ্যে এক জন বিদেশি ক্রিকেটারকে ধরে রাখা যেত। এ বার অবশ্য কত জন ক্রিকেটার ধরে রাখা যাবে তা জানায়নি আইপিএলের গভর্নিং কমিটি। যদি চার জনকে ধরে রাখা যায়, তা হলে সমস্যা হতে পারে হার্দিকের। কারণ, মুম্বইয়ের দলে রোহিত, সূর্যের পাশাপাশি যশপ্রীত বুমরা রয়েছেন। রোহিত মুম্বইকে পাঁচ বার জিতিয়েছেন। তাঁর মতো অভিজ্ঞ ক্রিকেটারের থাকা গুরুত্বপূর্ণ। সূর্য এই মুহূর্তে ভারতের সেরা টি-টোয়েন্টি ব্যাটার। দেশের অধিনায়ক হয়েছেন তিনি। আর বুমরাকে বিশ্বের সেরা বোলার বলছেন বিশেষজ্ঞেরা। তাঁকে ছাড়ার কোনও প্রশ্নই নেই। এ বার মুম্বই যদি এক জন বিদেশি ক্রিকেটার ধরে রাখার কথা ভাবে তা হলে হার্দিককে ছেড়ে দেওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি।
মুম্বইয়ের মতো ফ্র্যাঞ্চাইজ়ি সাধারণত ভবিষ্যতের কথা ভেবে দল তৈরি করে। আগরকর ও গম্ভীরের কথা থেকে স্পষ্ট, অন্তত পরের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ পর্যন্ত সূর্য অধিনায়ক থাকবেন। তিনি যদি মুম্বইয়ে থাকতে চান, তা হলে অধিনায়ক হওয়ার দাবি জানাতেই পারেন। ঠিক যেমন গুজরাত থেকে মুম্বইয়ে যাওয়ার সময় হার্দিকের শর্ত ছিল যে, তাঁকে অধিনায়ক করতে হবে। সেই শর্ত মানতে গিয়ে রোহিতকে সরিয়েছিল মুম্বই। এ বার যদি সূর্যও সেই দাবি করেন, তা হলে হার্দিককে সরতে হতে পারে। মুম্বই শিবিরের বেশির ভাগ ক্রিকেটারের সঙ্গে হার্দিকের সম্পর্ক ভাল নয় বলে খবর। এই ধরনের ক্রিকেটারের উপর ফ্র্যাঞ্চাইজ়ি কতটা ভরসা দেখাবে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।
হার্দিকের আরও একটা সমস্যা তাঁর চোটপ্রবণতা। দলের অধিনায়ক চোট পেলে সমস্যা হয় দলের। হার্দিকের বদলে সূর্যকে অধিনায়ক করার নেপথ্যে এই যুক্তিও দিয়েছেন আগরকর। মুম্বইয়ের কাজ খানিকটা সহজ করে দিয়েছেন তিনি। এই একই যুক্তি তাঁর বিরুদ্ধে সেখানেও উঠতে পারে। গুজরাতে হার্দিক কাজ করতেন আশিস নেহরার সঙ্গে। নেহরা দলকে আগলে রাখেন। বড় দাদার মতো সকলের সঙ্গে মেশেন। মুম্বইয়ের কোচ মার্ক বাউচার তেমন নন। তিনি পেশাদার। যে সাফল্য দেবে, তাঁকে মাথায় তুলে রাখবেন। যে দেবে না, তাঁকে সরিয়ে দিতে দু’বার ভাববেন না। রোহিতের পরে হার্দিক ভারতের টি-টোয়েন্টি দলের অধিনায়ক হলে হয়তো এই প্রশ্নগুলি উঠত না। হার্দিকের বলার থাকত যে, তিনি জাতীয় দলের অধিনায়ক। কিন্তু এখন আর সেটা বলার উপায় নেই তাঁর। তবে কি এ বার আইপিএলেও সাধারণ ক্রিকেটার হিসাবে মুম্বই বা অন্য কোনও দলে খেলতে দেখা যাবে হার্দিককে? একটা ইঙ্গিত কিন্তু পাওয়া যাচ্ছে।