লিয়োনেল মেসি। ছবি রয়টার্স
দিনটা ছিল ১৭ অগস্ট, ২০০৫। বুদাপেস্টে হাঙ্গেরির বিরুদ্ধে প্রদর্শনী ম্যাচে খেলতে নেমেছিল আর্জেন্তিনা। তিনি ছিলেন না প্রথম একাদশে। একদম শেষের দিকে কোচ জোসে পেকেরম্যান তাঁকে নামানোর সিদ্ধান্ত নিলেন। মাঠে ছিলেন সাকুল্যে ১ মিনিট ৩২ সেকেন্ড। তিন বার বল ধরেছিলেন। ইতিহাস রচনার প্রথম ধাপ ছিল ওটাই।
সে দিনের সেই ঝাঁকড়াচুলো লিয়োনেল মেসিই আজ আর্জেন্তিনার অন্যতম সেরা ফুটবলার, যাঁকে ঘিরে দীর্ঘদিন পর আন্তর্জাতিক ট্রফি জেতার স্বপ্ন দেখছে আর্জেন্তিনা। মঙ্গলবার ভোরে প্যারাগুয়ের বিরুদ্ধে যিনি দেশের হয়ে সর্বোচ্চ ম্যাচ খেলার নজির স্পর্শ করতে চলেছেন। শীর্ষে রয়েছেন হেভিয়ার মাসচেরোনা। তাঁকে ছোঁবেন মেসি।
কিছুদিন আগে জর্জে ভালদানো এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, “গত ১৫ বছরে আর্জেন্তিনা ফুটবলে ওর থেকে বেশি প্রভাব কেউ ফেলতে পারেনি।” শুধু ভালদানো কেন, আর্জেন্তিনার প্রাক্তন এবং বর্তমান অনেক ফুটবলারই একবাক্যে দলে মেসির প্রভাব স্বীকার করে নিয়েছেন। কোচ যায়-আসে। কিন্তু মেসি দলের মধ্যমণি হয়ে রয়েছেন গত ১৫ বছর ধরে। শতাব্দীর সেরা দলে তিনি রয়েছেন। তাঁকে ঘিরেই দলের স্বপ্ন।
সেই মেসির স্বপ্ন অবশ্য একটাই, দেশের হয়ে আন্তর্জাতিক ট্রফি জেতা। কারণ, ফুটবলজীবনের সব থেকে বড় ধাক্কাগুলি তিনি খেয়েছেন দেশের জার্সি পরেই। চারটি বিশ্বকাপ এবং ছ’টি কোপা আমেরিকা তাঁকে খালি হাতে ফিরিয়েছে। ২০১৪ বিশ্বকাপে হার। ২০১৫ এবং ২০১৬ কোপা আমেরিকায় পরপর দু’বার ফাইনালে হার। শেষ বার তো কেঁদেই ফেলেছিলেন। ম্যাচের পর ক্ষোভে, অভিমানে বলে ফেলেছিলেন, নীল-সাদা জার্সিতে শেষ ম্যাচ খেলে ফেলেছেন। কিন্তু দেশের হয়ে ট্রফি জেতার তীব্র খিদে মেটেনি। ফিরে এসেছেন কিছুদিন পরেই।
আর্জেন্তিনার হয়ে সব থেকে বেশি দিন ধরে খেলার নজির দিয়েগো মারাদোনার। ১৭ বছর ৩ মাস ২৯ দিন ধরে খেলেছেন জাতীয় দলের জার্সি গায়ে। তবে নির্বাসিত থাকায় ১৯৯০-এর জুলাই থেকে ১৯৯৩-এর অক্টোবর পর্যন্ত খেলেননি। মারাদোনাকে ছুঁতে কিছুটা সময় এখনও লাগবে মেসির। তবে কাতার বিশ্বকাপে পেরিয়ে যাবেন নিশ্চিত।
দেশের হয়ে খেতাব জেতা তাঁর কাছে কতটা গুরুত্বপূর্ণ, তা বোঝা যাবে তাঁর একটি সাক্ষাৎকার পড়লেই। মেসি বলেছেন, “পরিসংখ্যান নিয়ে ভাববেন বিশেষজ্ঞরা। আমি শুধু দেশের হয়ে খেতাব জিততে চাই। কখনও রেকর্ডের পিছনে ছুটি না। একটা বিশ্বকাপের বিনিময়ে সমস্ত রেকর্ড দিয়ে দিতে রাজি।” ষষ্ঠবার ফিফার বর্ষসেরা পুরস্কার নিতে এসেও মেসি জানিয়েছিলেন, একটা বিশ্বকাপের বদলে তিনি ছ’টি বর্ষসেরা পুরস্কার দিয়ে দিতে রাজি।
গত বার ব্রাজিলের কাছে সেমিফাইনালে হেরে বিদায় নিতে হয়েছিল। ঘরের মাঠে এবারও কোপা জেতার দাবিদার ব্রাজিলই। মেসির স্বপ্নপূরণ হবে কি না, সময়ই বলবে।