ফিরে-দেখা: ভারতের বিরুদ্ধে অনেক ম্যাচ খেলেছেন লুইস।
একটা সময় ইংল্যান্ড ক্রিকেট মহলে তাঁকে ইয়ান বোথামের উত্তরসূরি হিসেবে দেখা হত। ১৯৯৬ সালে লর্ডসে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের অভিষেক টেস্টে ইংল্যান্ডের হয়ে বোলিং ওপেন করেছিলেন তিনি। সেই টেস্টেই সচিন তেন্ডুলকরের স্টাম্প ছিটকে দেওয়া থেকে রাহুল দ্রাবিড়ের অভিষেক ইনিংস ৯৫ রানে থামিয়ে দেওয়ার পিছনে ছিলেন ওই একজনই— ক্রিস লুইস।
ইংল্যান্ডের অলরাউন্ডার।
কিন্তু বাইশ গজে ঝকঝকে পারফরম্যান্স থাকলেও অবসরের পরে অন্ধকারে ডুবে গিয়েছিল লুইসের জীবন। ১৯৯০ থেকে ১৯৯৮ সালের মধ্যে ইংল্যান্ডের হয়ে ৩২ টেস্ট ও ৫৩ ওয়ান ডে খেলা এই ক্রিকেটার ২০০৮ সালে গ্যাটউইক বিমানবন্দরে ফলের কৌটোর মধ্যে ‘লিকুইড কোকেন’ চোরাচালান করতে গিয়ে ধরা পড়েন। যার পরে তাঁর ১৩ বছরের কারাদণ্ড হয়। অবশ্য সাড়ে ছ’বছরের কারাবাসের পরে ২০১৫ সালেই মুক্তি পেয়ে যান তিনি। কিন্তু সেই অন্ধকার জীবন এখনও তাড়া করে ফেরে লুইসকে। ভোলেননি, জেলে যাওয়ার পরে কোনও সতীর্থ ক্রিকেটার কখনও তাঁকে ফোন করেননি। একমাত্র কঠিন মানসিকতার জন্যই বেরিয়ে আসতে পেরেছিলেন সেই অন্ধকার জীবন থেকে। লুইস এখন নিজের জীবনকে অন্য রাস্তা নিয়ে গিয়েছেন। তিনি দেশজুড়ে ক্রিকেটারদের সঙ্গে কথা বলেন। বোঝান, অবসরের পরে কী করা উচিত।
কেন ও রকম কাণ্ড ঘটিয়েছিলেন প্রাক্তন ইংল্যান্ড পেসার? লুইসের কথায়, অর্থাভাবে। অবসরের পরে পার্টি করেই নিজের যাবতীয় অর্থ উড়িয়ে দেন তিনি। ‘‘আমার কাছে তখন কোনও অর্থই ছিল না। এমনকি বাসের টিকিট কেনার পয়সাও নয়। পার্টি করে সব উড়িয়ে দিয়েছিলাম,’’ স্বীকার করেছেন লুইস। যখন বিচারপতি কারাদণ্ডের কথা শোনাচ্ছিলেন, তখন কী মনে হচ্ছিল? ব্রিটিশ প্রচারমাধ্যমকে লুইস বলেছেন, ‘‘চোখের সামনে অন্ধকার দেখছিলাম। আমার কাছে ১৩ বছরটা তখন ২৫ বছর কী ১০০ বছরের মতো লাগছিল।’’ লুইস স্বীকার করেছেন, এক বার আত্মহত্যার কথা মনে হয়েছিল তাঁর। তবে পরে বুঝেছিলেন, নিজেকে শেষ করে দেওয়াটা কোনও বিকল্প পথ নয়।
ভারতীয় ক্রিকেটের সঙ্গে লুইসের নামটা যেন কোথাও না কোথাও জড়িয়ে গিয়েছে। লুইসের ক্রিকেট জীবনের একমাত্র সেঞ্চুরি এসেছে ভারতের বিরুদ্ধেই। চেন্নাইয়ে, ১৯৯৩ সালে। কারাবাসের ওই দিনগুলো কাটিয়েছিলেন কী ভাবে? লুইস বলেছেন, ‘‘ক্রিকেটে আমার যে হার-না-মানা মনোভাব ছিল, জীবনেও সেটাই আমার মন্ত্র ছিল। জেলের অন্ধকার জীবনেও তাই আমি আশা ছাড়িনি।’’