পড়াশোনায় বরাবর ভাল। বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি নিয়ে উচ্চশিক্ষার পর গবেষণার কাজেও হাত লাগিয়েছিলেন। সেই সোনার কেরিয়ার ছেড়ে রাতারাতি দুষ্টু ওয়েবসাইটের তারকা হয়ে উঠলেন তরুণী! এখন তিনি আয় করছেন কোটিতে।
গবেষণা ছেড়ে অন্য দুনিয়ায় পা রাখা ওই তরুণীর নাম জ়ারা দার। আগে গবেষণার সঙ্গে যুক্ত থাকলেও বর্তমানে তিনি দুষ্টু তারকাদের এক জনপ্রিয় ওয়েবসাইটের কন্টেন্ট ক্রিয়েটর।
জ়ারা আমেরিকার টেক্সাসের বাসিন্দা। যদিও তাঁর নামের জন্য অনেকেই তাঁকে অন্য দেশের নাগরিক বলে মনে করেন। তবে তিনি স্পষ্ট জানিয়েছেন, তাঁর জন্ম আমেরিকাতেই। টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটার বিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর করেছেন জ়ারা। এর পর বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, ইঞ্জিনিয়ারিং এবং গণিত নিয়ে গবেষণার কাজে হাত লাগান তিনি।
জ়ারা এক জন পরিচিত ইউটিউবারও বটে। তাঁর চ্যানেলে সাবস্ক্রাইবারের সংখ্যা এক লক্ষেরও বেশি। মূলত বিভিন্ন গাণিতিক সমাধান, মেশিন লার্নিং এবং নিউরাল নেটওয়ার্ক সংক্রান্ত ভিডিয়ো তিনি নিজের চ্যানেলে আপলোড করতেন। তবে এখন জ়ারা দুষ্টু ওয়েবসাইটের জন্য ‘কন্টেন্ট’ তৈরিতে মন দিয়েছেন।
সাহসী সিদ্ধান্ত নিয়ে যে কেরিয়ার গড়ার পথে তিনি এগিয়েছেন, তার ঝক্কি যে অনেক, তা ভাল মতোই জানেন জ়ারা। তবে ওই কেরিয়ারে যে ‘ইতিবাচক’ দিক রয়েছে, সে কথাও জানিয়েছেন।
জ়ারা জানিয়েছেন, ওই দুষ্টু ওয়েবসাইটে ছবি এবং ভিডিয়ো বানিয়ে ১০ লক্ষ ডলারেরও (ভারতীয় মুদ্রায় সাড়ে আট কোটি টাকার বেশি) বেশি উপার্জন করেছেন তিনি।
ওই উপার্জন থেকে ইতিমধ্যেই একটি বিলাসবহুল গাড়ি কিনে ফেলেছেন তিনি। শীঘ্রই তিনি একটি বাড়ি কেনার পরিকল্পনা করছেন বলেও জানিয়েছেন।
কিন্তু গবেষণা ছেড়ে দুষ্টু ওয়েবসাইটে কাজ করার কথা কেন ভেবেছিলেন জ়ারা? কেন অধ্যাপক হওয়ার সুযোগ ছেড়েছিলেন? উত্তরে জ়ারা জানিয়েছেন, অধ্যাপকেরা টাকা উপার্জন করলেও তাঁদের কাজে কোনও উত্তেজনা নেই।
গবেষণায় মন দেওয়ার পরিবর্তে বেশির ভাগ অধ্যাপক তাঁদের অনেক সময় তহবিল সুরক্ষিত করতে ব্যয় করেন বলেও মন্তব্য করেছেন জ়ারা। আর সে কারণেই নাকি সাহসী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি।
তবে জ়ারা এ-ও স্বীকার করেছেন, কেরিয়ারে বদল এনে আদৌ তিনি ঠিক করেছেন কি না, সেই চিন্তা মাঝেমধ্যেই তাঁর মাথায় ঘুরপাক খায়। বিশেষ করে তিনি যখন তাঁর গবেষণার সঙ্গে যুক্ত বন্ধুদের অগ্রগতি দেখেন।
জ়ারা তাঁর ইউটিউব চ্যানেলে সে কথা জানিয়েওছেন। ‘পিএইচডি ড্রপআউট টু ওনলি ফ্যানস মডেল’ শিরোনামের ভিডিয়োয় জ়ারা বলেছেন, “আমি পিএইচডি ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে অনেক বার কেঁদেছি। এটা খুব কঠিন সিদ্ধান্ত ছিল। আমি খুব দুঃখ পেয়েছিলাম। কারণ দুষ্টু ওয়েবাসাইটে কন্টেন্ট ক্রিয়েটার হওয়া কোনও কেরিয়ার নয়। এটা অনেকটা জুয়া খেলার মতো।’’
জ়ারার কথায়, ‘‘মাঝেমধ্যেই ভাবি, আমি সঠিক পথ বেছে নিয়েছি কি না। যখন লিঙ্কডইন খুলি এবং আমার বয়সিদের কাজকর্ম দেখি, তখন বুঝতে পারি কয়েক জন কত এগিয়ে গিয়েছে। ঈর্ষাও অনুভব করি ওদের দেখে।’’
পাশাপাশি জ়ারা জানিয়েছেন, তিনি যাঁদের চেনেন তাঁদের অনেকে বড় বড় চাকরি করলেও নিজেদের কর্মক্ষেত্র নিয়ে খুশি নন। সব সময় নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন তাঁরা। তবে তাঁর ক্ষেত্রে তেমন সমস্যা নেই।
জ়ারার দাবি, তিনি এ সবের ঊর্ধ্বে। তাঁকে কোনও নিয়ম মেনে চলতে হয় না। পরিবর্তে, তিনি এমন সব জিনিসে সময় দিতে পারেন, যাতে তাঁর বিপুল আগ্রহ রয়েছে। নিজস্ব ব্র্যান্ড তৈরিতে মনোযোগ দিতে পারছেন বলেও জ়ারা জানিয়েছেন।
জ়ারা বলেন, ‘‘আমার আয়ও কম নয়। ১০ লক্ষ ডলারের বেশি উপার্জন করেছি। সেই টাকায় পরিবারের ঋণ শোধ করেছি। নিজে গাড়ি কিনেছি। এ বার বাড়ি কেনার ইচ্ছা রয়েছে।’’ এ সব ছাড়া অন্য জায়গাতেও বিনিয়োগ রয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
স্বাধীনতা উপভোগ করার পাশাপাশি ভয়ও পান জ়ারা। সে কথা তিনি নিজেই জানিয়েছেন। জ়ারা জানিয়েছেন, কখনও তিনি উচ্চাকাঙ্ক্ষী হতে চান না। পরিবর্তে নতুন লক্ষ্যে পৌঁছনোর সাহস রাখতে চান, অনুপ্রাণিত হতে চান।