প্রত্যয়ী: ইডেনে নতুন পরীক্ষার জন্য তৈরি পুজারা। ফাইল চিত্র
ইডেনে দিনরাতের টেস্ট খেলতে নেমে পড়ার জন্য ছটফট করছেন চেতেশ্বর পুজারা। ভারতীয় দলের নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যান মেনে নিচ্ছেন, দেশের প্রথম গোলাপি বলে টেস্ট তাঁদের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ হতে যাচ্ছে। একই সঙ্গে মনে করছেন, সেই অগ্নিপরীক্ষার জন্য ভারতীয় দলের দুরন্ত ব্যাটিং বিভাগ তৈরিও থাকবে।
তিন বছর আগে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় যখন বোর্ডের টেকনিক্যাল কমিটির চেয়ারম্যান, গোলাপি বলে দলীপ ট্রফি হয়েছিল। সেই টুর্নামেন্টে পুজারাই সব চেয়ে বেশি রান করেছিলেন। মোট ৪৫৩ রানের মধ্যে ছিল একটি বড় ডাবল সেঞ্চুরিও (২৫৬ নট আউট)। বোর্ড প্রেসিডেন্ট হয়েই রাতারাতি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডকে রাজি করিয়ে ইডেনে ২২ নভেম্বর থেকে দেশের মাঠে প্রথম দিনরাতের টেস্ট আয়োজন করতে চলেছেন সৌরভ। পিটিআই-কে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, ‘‘খুব উত্তেজক একটা ম্যাচ হতে যাচ্ছে। আমি আগে যে গোলাপি বলে ম্যাচ খেলেছিলাম, সেটা ছিল প্রথম শ্রেণির। এটা টেস্ট। আমি নিশ্চিত, প্রত্যেক ক্রিকেটারই খুব উত্তেজিত।’’
অতীত অভিজ্ঞতা থেকে পুজারার মনে হয়েছে, গোধূলি লগ্নে গোলাপি বল দেখতে অসুবিধা হতে পারে। ‘‘ওই সময়টাতে বল ঠিক মতো দেখাটা চ্যালেঞ্জ হতে পারে। কিন্তু যত খেলব, তত মানিয়ে নিতে পারব। অভিজ্ঞতা একটা বড় ব্যাপার।’’ ২০১৭-’১৮ মরসুমে পুজারাই অভিযোগ জানিয়েছিলেন, নৈশালোকে গোলাপি বল দেখতে সমস্যা হচ্ছে। তবে সেই বাধা দূর করে এখন তিনি অনেক বেশি তৈরি। বলছেন, ‘‘প্রত্যেক ধরনের বলেরই নিজস্ব চ্যালেঞ্জ আছে। যত আমরা খেলব, তত অভিজ্ঞতা অর্জন করব। সমস্যা কাটিয়ে উঠতে পারব।’’ যোগ করছেন, ‘‘মনে হয় না, লাল বলের থেকে গোলাপি বলে খুব বিশাল কিছু তারতম্য করতে হবে। এটা ঠিক যে, নৈশালোকে অন্য রকম চ্যালেঞ্জ থাকবে। কিন্তু আসল হচ্ছে, দ্রুত মানিয়ে নেওয়া। ফর্ম্যাটটা আমাদের চেনা। পাঁচ দিনের টেস্ট ম্যাচ খেলছি, তাই খুব তারতম্য হবে বলে মনে হয় না। কয়েকটা দিনরাতের টেস্ট খেললেই বুঝে যাব, কতটা কী অদলবদল করতে হবে।’’ পুজারা ছাড়া এই ভারতীয় দলে গোলাপি বলে খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে মায়াঙ্ক আগরওয়াল, ঋষভ পন্থ, কুলদীপ যাদব, মহম্মদ শামি এবং ঋদ্ধিমান সাহার। দলের মধ্যে গোলাপি বল নিয়ে কী রকম আলোচনা চলছে? পুজারা বলেছেন, ‘‘আমাদের কোনও সমস্যা নেই। অনেকেই দলীপ ট্রফিতে গোলাপি বলে খেলেছে। যারা খেলেনি, তাদের নতুন অভিজ্ঞতা হতে চলেছে।’’
গোলাপি বলে রাতের দিকে বোলারদের জন্য পরিস্থিতি খুবই কঠিন হয়ে উঠতে পারে বলে অনেকের মনে হচ্ছে। জনপ্রিয় মত হচ্ছে, স্পিনারেরা খুব বেশি সুবিধা পান না গোলাপি বলে। ইডেনে যদি শিশির পড়ে তা হলে বল গ্রিপ করতেও সমস্যায় পড়বেন বোলাররা। পুজারা বলছেন, ‘‘লাল বলে টেস্ট খেলার সময় আমরা যেমন দেখেছি, তার চেয়ে কিছু তফাত ঘটতে পারে। কখন বোলাররা সাহায্য পাবে, সেটা বলা যায় না। যত আমরা খেলব, তত এ সব বিষয় পরিষ্কার হবে।’’
ভারতের মাটিতে প্রথম দিনরাতের টেস্টের আসর বসছে ঐতিহাসিক ইডেনে। যদিও অস্ট্রেলিয়া প্রথম গোলাপি বলে দিনরাতের টেস্ট খেলেছে চার বছর আগে নিউজ়িল্যান্ডের বিরুদ্ধে। ভারতীয় দল এত দিন তার বিরোধিতা করেছে। অ্যাডিলেডে প্রথাগত দিনরাতের টেস্ট খেলেননি বিরাট কোহালিরা। কিন্তু বোর্ড প্রেসিডেন্ট হয়েই অধিনায়ক কোহালির সঙ্গে বৈঠকে তাঁকে রাজি করিয়েছেন সৌরভ। যদিও পুজারা জানেন না, টেস্ট ক্রিকেটকে বাঁচানোর সেরা পথ এটাই কি না। ‘‘একটা উদ্যোগ শুরু হয়েছে। সময় বলবে। আমাদের দিক থেকে একই রকম চেষ্টা থাকবে টেস্ট জেতার। টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের দৌড়ে সর্বোচ্চ পয়েন্ট সংগ্রহ করা খুব গুরুত্বপূর্ণ। লাল বল হোক কী গোলাপি, জিততে হলে ভাল খেলতেই হবে।’’