কলকাতা প্রিমিয়ার লিগ

পরীক্ষা করতে গিয়েই ডুবল ইস্টবেঙ্গল

লাল-হলুদের বহু সাফল্যের  সূত্রধর মুসার পরের মন্তব্যটি আরও ইঙ্গিতবাহী, ‘‘একটা দল হারতেই পারে। কিন্তু একজন ফুটবলারের মধ্যেও ‘খুনে মানসিকতা’ নেই, এটা খুবই খারাপ।’’

Advertisement

রতন চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ১০ অগস্ট ২০১৯ ০৩:৫৪
Share:

উৎসব: জয়ের নায়ক মর্গ্যানকে অভিনন্দন সতীর্থের। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

ইস্টবেঙ্গল ০ • জর্জ টেলিগ্রাফ ১

Advertisement

আলেসান্দ্রো মেনেন্দেসের দলের হার দেখে সুলে মুসা আক্ষেপ করছিলেন, ‘‘বহুদিন পরে আমার ক্লাব ইস্টবেঙ্গলের খেলা দেখলাম। কিন্তু দ্বিতীয় একজন মুসা-কে দেখতে পেলাম না।’’

ক্লাবের শতবর্ষ উপলক্ষে শহরে এসেছেন আশিয়ান কাপ জয়ী দলের অধিনায়ক। লাল-হলুদের বহু সাফল্যের সূত্রধর মুসার পরের মন্তব্যটি আরও ইঙ্গিতবাহী, ‘‘একটা দল হারতেই পারে। কিন্তু একজন ফুটবলারের মধ্যেও ‘খুনে মানসিকতা’ নেই, এটা খুবই খারাপ।’’

Advertisement

ডুরান্ড কাপে পরপর দু’ম্যাচে আট গোল করা পিন্টু মাহাতোরা লিগের প্রথম ম্যাচেই ধরাশায়ী। পড়শি মোহনবাগানের মতোই বিশ্রী খেলে হার। কলকাতা ফুটবলের ইতিহাসে কবে দুই প্রধানের হাল শুরুতে এ রকম হয়েছে তা বলতে পারছেন না কেউই। কিন্তু একটা বিষয়ে সবাই একমত, সাত-আট অথবা নয়ের দশকের মতো বড় দলকে ভয় না পাওয়ার ডাকাবুকো মনোভাব ফিরেছে ছোট ক্লাবগুলিতে। স্প্যানিশ কোচ, প্রতিপক্ষ শক্তিশালী , মাঠ ভর্তি আগুনে সমর্থক যে আর কোনও ‘এক্স ফ্যাক্টর’ নয়, সেটা শুক্রবার বিকেলে বুঝিয়ে দিয়ে গেল জর্জ টেলিগ্রাফ। টেলিগ্রাফের তারে ‘বিদ্যুৎস্পৃষ্ট’ ইস্টবেঙ্গল শুরুতে সেই যে মু্র্ছা গেল, নব্বই মিনিটে কোনও ওযুধ প্রয়োগ করে তার সংজ্ঞা ফেরাতে পারলেন না রিয়াল মাদ্রিদ ‘বি’ দলের প্রাক্তন কোচ।

বরং বলা যায়, লিগ নামক রসায়নাগারে আলেসান্দ্রোর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার ঝুঁকি শেষ পর্যন্ত বুমেরাং হল। ছোট দলের সফল কোচ হওয়ার সুযোগ করে দিল ইস্টবেঙ্গলের প্রাক্তনী রঞ্জন ভট্টাচার্যকে। ম্যাচের পরে তাঁর গলায় তাই যুদ্ধজয়ের উল্লাস, ‘‘গতবার জোর করে রেফারি হারিয়ে দিয়েছিলেন। কাঁদতে কাঁদতে বাড়ি ফিরেছিলাম। প্রতিশোধ নিলাম।’’ আর দিনের নায়ক জাস্টিস মর্গ্যানের মুখ থেকে বেরিয়েছে, ‘‘গতবারও ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে গোল করেছিলাম। তবে জিততে পারিনি। এ বার সেই লক্ষ্যে পৌঁছতে পেরেছি।’’ খেলার সংযুক্ত সময়ে গোল করার পর মর্গ্যানের সতীর্থরা যখন তাঁকে শুভেচ্ছা জানাতে দৌড়ে যাচ্ছেন, আলেসান্দ্রোর হাত তখন মাথায়। বসে পড়লেন রিজার্ভ বেঞ্চে সুভাষ-সুব্রত-সঞ্জয়রা কোচের চেয়ারে থাকলে এবং হারলে হয়তো এ দিনও ধুন্ধুমার বেধে যেত গ্যালারিতে। বিদেশি কোচেরা আসার পর ময়দানের আবহ বদলেছে। হার দেখেও গ্যালারিতে গান গেয়ে বাড়ি ফেরেন ‘উগ্র’ সমর্থকরা। ‘বুকে বারুদ’ নিয়েও তাঁরা সর্বংসহা। যাবতীয় ক্ষোভ আছড়ে পড়ে ফেসবুকে। এ দিনও পড়েছে। ম্যাচের পর আলেসান্দ্রো বলে দিয়েছেন, ‘‘ছয় গোলে জেতার পরের ম্যাচে এক গোলে হেরেছি, এটা তো খেলারই অঙ্গ। হতেই পারে। তবে ছেলেদের খেলায় খুশি। তিনটি গোলের সুযোগ পেয়েছিলাম। গোল করতে পারিনি। এটা তো আমার প্রস্তুতি টুনার্মেন্ট।’’ স্প্যানিশ কোচ কি দর্শন নিয়ে কলকাতা লিগ খেলছেন, সেটা তিনিই জানেন। তবে এটা ঘটনা যে, আলেসান্দ্রো এ দিন এক বঙ্গজ কোচের বুদ্ধির কাছে পর্যুদস্ত হয়েছেন। পিন্টু মাহাতোদের কপাল ভাল, জর্জের রাজু সাউয়ের বল ক্রসপিসে লেগে না ফিরলে এবং বাবলু ওঁরাওয়ের ব্যাকভলি অল্পের জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট না হলে আরও লজ্জায় পড়তেন মশালধারীরা।

মরসুমের তিনটি ম্যাচে তিন রকম রক্ষণ। তিন জন আলাদা গোলকিপারকে নামানো। অভিজ্ঞ ফুটবলারদের বসিয়ে রেখে শুভনীল ঘোষ, রোনাল্ডো অলিভিয়েরাদের নামিয়ে দেওয়া—বারবার এসব করতে গিয়েই আলেসান্দ্রো ডুবেছেন। বিপক্ষে ময়দানের তিন পোড় খাওয়া বিদেশি খেলছেন। আর তাঁর দলে মাত্র একজন, তাও আবার নড়বড়ে এক স্প্যানিশ মার্তি ক্রিসপি আছে জেনেও তিনি নামাননি লালরিনডিকা রালতের মতো তারকাকে। পিন্টুকে শুরুতে নামাননি। সুফলটা নিয়েছে জর্জ। আলেসান্দ্রো ৪-৩-৩ থেকে জেতার জন্য ৩-৫-২ তে ছক বদলানোর সঙ্গে সঙ্গেই পাল্টা ‘ওষুধ’ প্রয়োগ করেছেন জর্জ কোচ। রক্ষণ জমাট করে। মাদ্রিদের আলেসান্দ্রোকে এ দিন ডানলপের রঞ্জন বুঝিয়ে দিয়েছেন, কলকাতা লিগ হল চোরা বালি!

ইস্টবেঙ্গল: রক্ষিত দাগার, সামাদ আলি মল্লিক, মেহতাব সিংহ, মার্তি ক্রেসপি, মনোজ মহম্মদ, প্রকাশ সরকার (পিসি রোহলপুইয়া), শুভনীল ঘোষ (ব্র্যান্ডন ভানলালরেমডিকা), টোনবোম্বা নওরেম, বিদ্যাসাগর সিংহ, অভিজিৎ সরকার (পিন্টু মাহাতো), রোনাল্ডো অলিভিয়েরা।

জর্জ টেলিগ্রাফ: লাল্টু মণ্ডল, নবি হোসেন, ইচেজোনা, অসীম দে, মোহন সরকার, চিন্তা চন্দ্রশেখর রাও, রাজীব সাউ, বাবলু ওঁরাও, আয়ুস্মান চতুর্বেদী (তন্ময় ঘোষ), জোয়েল সানডে (রাজা আলি) (অরুণ সুরেশ), জাস্টিস মর্গ্যান।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement