ট্রেন্ট বোল্ট
সদ্য সমাপ্ত সীমিত ওভারের সিরিজে দেখা যায়নি তাঁদের দ্বৈরথ। বিশ্বের অন্যতম সেরা বাঁ হাতি পেসার বনাম সর্বকালের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যানের লড়াই। কিন্তু টেস্টে মুখোমুখি হতে চলেছেন দু’জন। ওয়েলিংটনেই দেখা যাবে বিরাট কোহালি বনাম ট্রেন্ট বোল্টের লড়াই। যার আগে নিউজ়িল্যান্ডের পেসার সতর্ক করে দিলেন ভারত অধিনায়ক কোহালিকে।
চোট সারিয়ে আবার টেস্ট দলে ফিরে এসেছেন বোল্ট। আর এসেই হুঙ্কার দিচ্ছেন বাঁ হাতি পেসার। চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেওয়ার ঢংয়ে বলে দিলেন, কোহালির উইকেট পাওয়ার জন্য মুখিয়ে আছেন তিনি।
হাত ভাঙার কারণে ছ’সপ্তাহ ক্রিকেটের বাইরে ছিলেন বোল্ট। সপ্তাহখানেক হল ক্লাব ক্রিকেট খেলা শুরু করেছেন। ভারতের বিরুদ্ধে টেস্ট দলেও ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছে তাঁকে। মঙ্গলবার ওয়েলিংটনে পা দিয়েই বোল্ট বলেছেন, ‘‘কোহালিদের মতো ব্যাটসম্যানকে আউট করার জন্যই আমি ক্রিকেট খেলি। সেরাদের বিরুদ্ধে নিজের পরীক্ষা নিতে আমি সব সময় মুখিয়ে থাকি। এটাই আমাকে প্রেরণা জোগায় ভাল খেলার জন্য। কোহালির বিরুদ্ধে বল করতে রীতিমতো মুখিয়ে আছি। ওর উইকেটটা নেওয়ার আর তর সইছে না।’’
টেস্ট ক্রিকেটে কোহালিকে এখনও পর্যন্ত ২১৭ বল করেছেন বোল্ট। আউট করেছেন দু’বার। কোহালি রান করেছেন ১৩৩, স্ট্রাইক রেট ৬১.২৯। ভারত অধিনায়কের প্রশংসা করে এই বাঁ হাতি পেসার এ-ও বলেছেন, ‘‘কোনও সন্দেহ নেই কোহালি অসাধারণ ক্রিকেটার। সবাই জানে ও কত ভাল।’’ তবে গত বছর বিশ্বকাপে ভারতের সেমিফাইনালে হারের পিছনে বোল্টের বড় ভূমিকা ছিল। কোহালিকে এক রানে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন তিনি।
কেন ভয়ঙ্কর বোল্ট
• নতুন বলে দারুণ বল করেন। আগে শুধু ডান হাতি ব্যাটসম্যানের ইনসুইংই বেশি করাতেন, এখন আউটসুইংও যোগ করেছেন।
• বোল্টের বিপজ্জনক অস্ত্র ডানহাতির ইনসুইং, অর্থাৎ ভিতরে আসা বল। এবং হাতে আছে মারণ লেট সুইং। এই ধরনের বলেই গত বছর বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে বিরাট কোহালিকে এলবিডব্লিউ করেন।
• বাঁ হাতি পেসারের কোণ তৈরি করে ব্যাটসম্যানদের সমস্যায় ফেলতে ওস্তাদ বোল্ট। কিংবদন্তি ওয়াসিম আক্রমের পরে বোলিং ক্রিজকে এত সুন্দর ভাবে ব্যবহার করতে দেখা যায়নি কোনও বাঁ হাতিকে।
• ভারতের সমস্যা আরও বেশি কারণ, প্রথম পাঁচ-ছয় ব্যাটসম্যানের সকলে ডান হাতি। একমাত্র বাঁ হাতি ব্যাটসম্যান ঋষভ পন্থ, তা-ও যদি তিনি প্রথম দলে থাকেন। অথবা জাডেজাকে যদি খেলানো হয়। কিন্তু দু’জনেই নামেন পরে।
• ওয়েলিংটনে প্রথম টেস্ট, যেখানে খুব জোরে হাওয়া বইতে থাকে। বিশ্বের সব চেয়ে ‘উইন্ডি’ শহরগুলোর একটি। বোল্টের সুইং বোলিংয়ের জন্য মোক্ষম কেন্দ্র।
• গোটা ভারতেই এখন বাঁ হাতি পেসারের আকাল। কোহালিদের দলে কেউ নেই। বাঁ হাতি পেসারকে খেলার অভ্যাস না থাকা বিপক্ষে যেতে পারে।
কেন বিরাটই জবাব
• বাঁ হাতি পেসারদের বিরুদ্ধে দুর্দান্ত রেকর্ড কোহালির। বিশ্বকাপে বোল্টের শিকার হলেও খুব কমই তাঁর উইকেট পেয়েছেন বাঁ হাতি পেসারেরা। অস্ট্রেলিয়ায় মিচেল জনসনকে পিটিয়ে চার টেস্টে চারটি সেঞ্চুরি করেছিলেন।
• কোহালির এমন সাফল্যের কারণ, তাঁর কব্জি-নির্ভর এবং শক্তিশালী লেগ সাইড ব্যাটিং। ‘বটম হ্যান্ড’ অর্থাৎ তাঁর ক্ষেত্রে ডান হাত বেশি ব্যবহার করেন বলে ভিতরে আসা ডেলিভারিতে বেশি স্বাচ্ছন্দে থাকেন।
• ভারত অধিনায়কের প্রধান চ্যালেঞ্জ অফস্টাম্প থেকে বেরিয়ে যাওয়া আউটসুইং বল। ইংল্যান্ডে অ্যান্ডারসন যে কারণে আতঙ্ক ছিলেন। শেষ ইংল্যান্ড সফরে সেই ত্রুটিও সারিয়ে ফেলেন তিনি। বোল্ট যদি আউটসুইং মেশাতে না পারেন, বিরাটকে সমস্যায় ফেলা কঠিন হবে।
অন্য ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের মতো আগে থেকে পা বাড়িয়ে দেওয়ার রোগ নেই কোহালির। অজিঙ্ক রাহানেরও এই বদভ্যাস নেই। তাই বাঁ হাতি বোল্টের বিরুদ্ধে এই দু’জনের সম্ভাবনা অন্যদের চেয়ে ভাল।
শেষ টেস্ট সিরিজে অস্ট্রেলিয়ার কাছে ০-৩ উড়ে গিয়েছিল নিউজ়িল্যান্ড। ভারতও কিন্তু কঠিন পরীক্ষা হতে চলেছে কেন উইলিয়ামসনের দলের কাছে। ভারতীয় দলের প্রশংসা করে বোল্ট বলেছেন, ‘‘ভারত খুব ভাল একটা দল। আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে ওরা বাকিদের থেকে অনেক এগিয়ে। ওদের খুব পরিষ্কার ধারণা আছে নিজেদের পরিকল্পনা কাজে লাগানোর ব্যাপারে। অস্ট্রেলিয়ায় আমাদের খুব খারাপ ফল হয়েছিল। দেখতে হবে, সেই ধাক্কা কাটিয়ে আমরা ঘুরে দাঁড়াতে পারলাম কি না।’’
ওয়েলিংটনের বেসিন রিজার্ভ স্টেডিয়ামের পিচে পেসাররা সাহায্য পাবেন বলেই মনে করা হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে বোল্টের সুইং কিন্তু বিপক্ষ ব্যাটসম্যানদের চাপে রাখতে পারে। বোল্টের কথায়, ‘‘আমি একটা ভাল উইকেটের জন্য নিজেকে তৈরি রাখছি। সাধারণত এখানকার উইকেট খুব ভাল হয় এবং পুরো পাঁচ দিনই খেলা গড়ায়। এই মাঠে খেলতে আমি খুবই পছন্দ করি।’’
৬৫ টেস্টে ২৫৬ উইকেটের মালিক বোল্টকে মাঠের বাইরে বসে দেখতে হয়েছে টি-টোয়েন্টি সিরিজে ভারতের কাছে তাঁর দলের ০-৫ হার। তবে যে ভাবে ওয়ান ডে সিরিজে নিউজ়িল্যান্ড ৩-০ ফলে উড়িয়ে দিয়েছে কোহালিদের, তা দেখে তৃপ্ত এই পেসার। তিনি বলেছেন, ‘‘গত ছ’সপ্তাহে কী ঘটেছে, তা ভুলে যেতে চাই। এ বার মাঠে নেমে নিজের সেরাটা দিতে হবে।’’
নিজের চোট নিয়ে বাঁ হাতি বোল্টের প্রতিক্রিয়া, ‘‘কোনও একটা হাত যদি ভাঙারই হয়, তবে সেটা ডান হাত হওয়াই ভাল। হাত ভাঙার আগে বোঝা যায় না যে, হাতের প্রয়োজন কতটা।’’ ক্লাব ক্রিকেটে বল করতে কোনও সমস্যা হয়নি বোল্টের। আট ওভার বল করেছিলেন তিনি। যদিও বোল্ট সামান্য চিন্তায় আছেন ক্যাচিং নিয়ে। তাঁর মন্তব্য, ‘‘সব কিছুই ঠিকঠাক চলেছে। তবে ক্যাচ ধরাটাই আসল ব্যাপার হবে।’’ ক্রিকেট থেকে দূরে থাকার যন্ত্রণার মধ্যেই অবশ্য ভাল খবর এসেছে বোল্ট পরিবারে। দ্বিতীয় সন্তানের বাবা হয়েছেন এই পেসার। ‘‘দ্বিতীয় ছেলের বাবা হলাম সপ্তাহ দুয়েক আগে। ক্রিকেট থেকে দূরে থাকলেও সময়টা খারাপ কাটেনি তাই,’’ বলেছেন তিনি।