East Bengal

ইস্টবেঙ্গলে খেলতেই আবার জন্মাতে চাই

ভারতীয় ফুটবলে তাঁর আবির্ভাব লাল-হলুদ জার্সি পরেই। কে ভুলতে পারবে ডায়মন্ড ম্যাচে তাঁর শাসন! স্মৃতির সরণি ধরে ভাইচুং ভুটিয়া...

Advertisement

ভাইচুং ভুটিয়া

কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ জুলাই ২০১৯ ১৯:৪৯
Share:

গুরু-শিষ্য: কোচ সুভাষ ভৌমিকের সঙ্গে শতবর্ষের অনুষ্ঠানে অ্যালভিটো ডি কুনহা এবং ভাইচুং ভুটিয়া। নিজস্ব চিত্র

আমার দুই জন্মদাতা! বাবা-মা আমাকে পৃথিবীর আলো দেখিয়েছেন। আর ফুটবলার ভাইচুং ভুটিয়াকে জন্ম দিয়েছে ইস্টবেঙ্গল ক্লাব।

Advertisement

সিকিমের অখ্যাত তিনকিতাম গ্রাম থেকে ভারতীয় ফুটবলের মূল স্রোতে আসতে পেরেছিলাম লাল-হলুদ জার্সির জন্যই। আমার তখন বয়স চোদ্দো কি পনেরো। গ্যাংটকে অনূর্ধ্ব-১৬ ফুটবলারদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য শিবির করেছিল ভারতীয় স্টেট ব্যাঙ্ক। কোচিংয়ের দায়িত্বে ছিলেন ভাস্কর গঙ্গোপাধ্যায় ও সুরজিৎ সেনগুপ্ত। ওঁরাই আমাকে নেওয়ার জন্য পরামর্শ দেন ইস্টবেঙ্গলকে। যদিও লাল-হলুদ শিবিরের কেউ আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেননি। ওঁরা হয়তো দেখতে চেয়েছিলেন, আমি সত্যিই লাল-হলুদ জার্সি গায়ে খেলার যোগ্য কি না। ফুটবলে আমার ‘গডফাদার’ কর্মা আঙ্কেল (ভুটিয়া) বলেছিলেন, সামনেই সিকিম গভর্নরস কাপ। তোমাকে নিজের সেরাটা দিতে হবে। সে-বছর ওই প্রতিযোগিতায় মহমেডান, মোহনবাগান, টিসকো-র মতো শক্তিশালী দল ছিল। আমি অসাধারণ খেলেছিলাম। মোহনবাগানের বিরুদ্ধে দুর্ভাগ্যবশত টাইব্রেকারে হেরে যাই। সিকিম গভর্নরস কাপের পারফরম্যান্স আমার জীবন বদলে দিয়েছিল। প্রতিযোগিতা শেষ হওয়ার পরেই ইস্টবেঙ্গল আমাকে খেলার প্রস্তাব দেয়। আমার মনে হচ্ছিল, স্বপ্ন দেখছি। বিশ্বাসই করতে পারছিলাম না। আসলে ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগানের মতো ক্লাবে খেলার স্বপ্ন সব ফুটবলারই দেখে। তাই অত বড় ক্লাব থেকে ডাক পাওয়া আমার মতো ষোলো ছুঁইছুঁই একটা ছেলের কাছে ছিল অবিশ্বাস্য। প্রচণ্ড উত্তেজিত ছিলাম। মন চাইছিল, তক্ষুনি লাল-হলুদ জার্সি গায়ে মাঠে নেমে পড়ি। কখনও মনে হয়নি যে, আমি ব্যর্থ হব।

ভয়টা পেলাম কলকাতায় পা দিয়ে। ব্যর্থ হওয়ার আশঙ্কায় নয়। কলকাতা শহরের ব্যস্ততা দেখে। কর্মা আঙ্কেলের সঙ্গে কলকাতায় পৌঁছেই চমকে গেলাম। এত মানুষ, এত গাড়ি আগে কখনও দেখিনি। এখনও স্পষ্ট মনে আছে, ক্লাবের এক কর্তা তাঁর নাগেরবাজারের বাড়িতে আমাকে রেখেছিলেন। পরের দিন সকালে ইস্টবেঙ্গল মাঠে অনুশীলন। নাগেরবাজার থেকে ট্যাক্সিতে ময়দানের ক্লাবতাঁবুতে পৌঁছলাম। প্রথম দিন বলে আমি একটু আগেই গিয়েছিলাম। সুনসান ক্লাবতাঁবু। ফাঁকা ড্রেসিংরুমে মাত্র দু’জন। চিমা ওকোরি ও ক্রিস্টোফার মাঠে নামার জন্য তৈরি হচ্ছে। সেই সময় চিমা ছিল আমার নায়ক। সিকিম গভর্নরস কাপে ওর খেলা দেখে ভক্ত হয়ে গিয়েছিলাম। সেই চিমাকে এ ভাবে সামনে দেখে বাগ্‌রুদ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। ওরা কিন্তু প্রথম দিনেই আমাকে আপন করে নিয়েছিল। কলকাতা ময়দানে কী ভাবে সফল হতে হয়, তার পরামর্শ দেওয়ার পাশাপাশি দারুণ উৎসাহ দিয়েছিল। ওদের কাছেই পেশাদারির প্রথম পাঠ নিলাম।

Advertisement

বাড়তি অনুশীলন করার জন্যই সকলের আগে ক্লাবে চলে আসত চিমা ও ক্রিস্টোফার। নিজেদের অনুশীলন শেষ করে বাকিদের সঙ্গে যোগ দিত। প্রথম দিনেই শিখে নিলাম, সফল হওয়ার লড়াইটা আমাকে একাই করতে হবে। তার জন্য বাড়তি পরিশ্রম করতে হবে। চিমা-ক্রিস্টোফারের দেখানো রাস্তায় হাঁটতে শুরু করলাম। ক্লাবের অনুশীলন শেষ হয়ে যাওয়ার পরেও মাঠে পড়ে থাকতাম। আসলে সেই সময় অনুশীলনের পরে আমার একটাই কাজ ছিল, বাড়িতে ফিরে বিশ্রাম নেওয়া। তাই কোনও তাড়া ছিল না। সবাই চলে যাওয়ার পরে একা একা অনুশীলন করতাম। ভুলত্রুটি শুধরে নিয়ে নিজেকে আরও ক্ষুরধার করার চেষ্টা করতাম। কারণ, ইস্টবেঙ্গল তখন দুর্ধর্ষ দল। চিমা ছাড়াও ফরোয়ার্ডে কুলজিৎ সিংহ ছিল। বুঝে গিয়েছিলাম, দলে সুযোগ পেলে আমাকে বাড়তি কিছু করে দেখাতেই হবে।

সেই সময় ইস্টবেঙ্গলের কোচ ছিলেন শ্যামল ঘোষ। মনে আছে, প্রথম দিন ফুটবলারদের দু’দলে ভাগ করে অনুশীলন ম্যাচ খেলিয়েছিলেন। যত দূর মনে পড়ে, আমি একটা গোলও করেছিলাম। তবে প্র্যাক্টিস শেষ হওয়ার পরে কোচ কী বলেছিলেন, তা এত দিন পরে মনে করতে পারছি না। অনুশীলনে নিয়মিত গোল করছি। সবাই আমার খেলার প্রশংসা করছেন। অথচ লাল-হলুদ জার্সি গায়ে ম্যাচ খেলার স্বপ্ন অধরাই থেকে যাচ্ছে। কবে সুযোগ পাব, কোচকে তা জিজ্ঞেস করার সাহস ছিল না। অপেক্ষা করতে থাকলাম। অবশেষে সুযোগ এল অল এয়ারলাইন্স গোল্ড কাপে। প্রতিপক্ষ সম্ভবত ছিল বাংলাদেশের ভিক্টোরিয়া স্পোর্টিং ক্লাব। দ্বিতীয়ার্ধে আমাকে নামালেন কোচ। ইস্টবেঙ্গলের জার্সিতে অভিষেক ম্যাচেই গোল করলাম। সেই সময় আমাদের দল তিন অথবা চার গোলে এগিয়ে ছিল। শেষ গোলটা আমার পা থেকেই এল। আমার ডার্বিতে অভিষেকও সেই এয়ারলাইন্স কাপে। যদিও মোহনবাগানের বিরুদ্ধে প্রথম ম্যাচে গোল পাইনি।

ইস্টবেঙ্গলের মতো ক্লাবের হয়ে মাঠে নামার সুযোগ পেয়েছি। তার উপরে প্রথম ম্যাচেই গোল। সমর্থকদের বাঁধনহারা উল্লাস। অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছিল। অভিষেক ম্যাচে গোল করলেও প্রথম দলে জায়গা হল না। কারণটা অবশ্য অন্য। আমার বয়স কম ছিল বলেই কোচ আমাকে পরিবর্ত হিসেবে নামাতেন। যাতে আমি ধীরে ধীরে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারি। বিশ্বের সব কোচই জুনিয়রদের এ ভাবে তৈরি করেন।

আমি অবশ্য ইস্টবেঙ্গলে খুব দ্রুত মানিয়ে নিয়েছিলাম। তার অন্যতম কারণ ছিল ক্লাবের পরিবেশ। ষোলো বছর বয়সে বাড়ি, বাবা-মা, বন্ধুদের ছেড়ে এত দূরে এ-রকম অন্য পরিবেশে থাকা একেবারেই সহজ নয়। কিন্তু ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের কোচ। ফুটবলার, কর্মকর্তা থেকে কর্মী— আমাকে যে-ভাবে আপন করে নিয়েছিলেন, মনেই হত না যে, বাড়ি থেকে এত দূরে রয়েছি। ক্লাবটাকেই নিজের বাড়ি বলে মনে হত।

ইস্টবেঙ্গলের শতবর্ষে পল্টুদা (দীপক দাস) ও বৌদির কথা খুব মনে পড়ছে। অনুশীলনের পরে আমাকে নিজের বাড়িতে নিয়ে যেতেন পল্টুদা। বৌদিকে রান্না করে খাওয়াতেন। তার পরে গাড়ি করে আমাকে ক্লাবের দেওয়া ফ্ল্যাটে পৌঁছে দিতেন। এই আন্তরিকতা, ভালবাসা অন্য কোনও ক্লাবে পাইনি।

আর এক জনের কথা খুব মনে পড়েছে। তিনি শঙ্কর পিল্লাই। ফুটবলারেরা ‘বাবা’ বলে ডাকতেন। উনিও সন্তানস্নেহে আমাদের আগলে রাখতেন। বর্ষাকালে কলকাতার মাঠের কী অবস্থা হয়, তার কোনও ধারণাই ছিল না। ছোট স্পাইকের বুট পরে মাঠে নেমে দেখলাম, দাঁড়াতেই পারছি না। দৌড়তে গেলেই পড়ে যাচ্ছি। এক দিন অনুশীলনের পরে শঙ্করবাবা আমাকে নিয়ে সোজা ময়দান মার্কেটে গেলেন। নাগরাজের বুট তখন খুব জনপ্রিয়। অধিকাংশ তারকা ওই বুট পরে খেলত। শঙ্করবাবা দোকানে গিয়ে আমাকে দেখিয়ে বললেন, ‘‘ওর পায়ের মাপ নাও। বড় স্পাইকের বুট লাগবে। তাড়াতাড়ি বানিয়ে দেবে।’’ সেই সময় এত কড়াকড়ি ছিল না। কাঠের মধ্যে পেরেক ঠুকে স্পাইক বানানো হত। এখন অবশ্য এই ধরনের বুট পরে খেলা নিষিদ্ধ হয়ে গিয়েছে। নতুন বুট পরে মাঠে নামার পরে দেখলাম, কোনও সমস্যা হচ্ছে না। আর পড়েও যাচ্ছি না। আনন্দে শঙ্করবাবাকে জড়িয়ে ধরেছিলাম। বলতে কোনও দ্বিধা নেই, মাঠের কর্মী হলেও ফুটবল সম্পর্কে অগাধ জ্ঞান ছিল শঙ্করবাবার।

কলকাতায় আসার পর থেকেই ডার্বির অনেক কাহিনি শুনছিলাম। অনেক অনেক তারকা ফুটবলারেরাও নাকি এই বিশেষ ম্যাচটার আগে উদ্বেগে থাকতেন। আমি ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগান দুই ক্লাবের হয়ে অসংখ্য ডার্বি খেলেছি। তবু উদ্বেগহীনই থেকেছি। হয়তো কলকাতায় বড় হইনি বলেই সে-রকম চাপ কখনও অনুভব করিনি। মাত্র এক বারই অন্য রকম অনুভূতি হয়েছিল।

১৯৯৭ সালের ১৩ জুলাই। ফেডারেশন কাপের সেমিফাইনাল। আমার ফুটবলের সব চেয়ে স্মরণীয় ম্যাচ। আসিয়ান কাপে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার চেয়েও সাতানব্বইয়ের সেই ডার্বিকে আমি এগিয়ে রাখব। ইস্টবেঙ্গলে আমাদের কোচ ছিলেন প্রদীপকুমার (পিকে) বন্দ্যোপাধ্যায়। মোহনবাগানের দায়িত্বে প্রয়াত অমল দত্ত। সে-বছর মোহনবাগান অসাধারণ খেলছিল। অমল দত্তের ডায়মন্ড সিস্টেম আলোড়ন ফেলে দিয়েছিল ভারতীয় ফুটবলে। সেমিফাইনালে মোহনবাগানের সামনে পড়লাম আমরা। সবাই ধরে নিল, ইস্টবেঙ্গল হারবে। তার উপরে মোহনবাগান কোচের উপেক্ষা। স্যামি ওমোলো, সোসো ও আমাকে আক্রমণ করলেন অমল দত্ত। আমার নাম দিলেন ‘চুংচুং’। ওমোলোকে ডাকলেন ‘ওমলেট’ বলে। ‘শসা’ বললেন সোসোকে। জবাব দিলেন পিকে বন্দ্যোপাধ্যায়ও। দুই কিংবদন্তি কোচের বাগ্‌যুদ্ধে উত্তপ্ত হয়ে উঠল আবহ। প্রতিজ্ঞা করলাম, মাঠেই এর জবাব দেব। এখনও ১৩ জুলাইয়ের প্রত্যেকটা মুহূর্ত মনে আছে।

ম্যাচের আগে যুবভারতীতে আমাদের ড্রেসিংরুমের আবহটাও বদলে গিয়েছিল। গ্যালারিতে দর্শকেরা চিৎকার করছেন। কিন্তু আমাদের ড্রেসিংরুমে সেই সময় একটা পিন পড়লেও যেন শব্দ শোনা যেত। একেবারে থমথমে পরিবেশ। কেউ কথা বলছে না। একেবারে ঝড়ের আগের আবহ। যে-প্রদীপদা তাঁর বিখ্যাত ভোকাল টনিকে ফুটবলারদের তাতিয়ে দিতেন বলে শুনেছিলাম, তিনিও সে-দিন খুব কম কথা বলেছিলেন মাঠে নামার আগে। তার পরের ঘটনা তো ইতিহাস। হিরের দর্প চূর্ণ করে ৪-১ জিতেছিলাম আমরা। হ্যাটট্রিক করেছিলাম আমি। আমার ফুটবল জীবনের সেরা ডার্বি। বড় ম্যাচে প্রথম হ্যাটট্রিক। লাল-হলুদ সমর্থকেরা আনন্দে কেউ কাঁদছিল। কেউ চিৎকার করছিল। কেউ কেউ আবার লাল-হলুদ পতাকা নিয়ে দৌড়চ্ছিল। এর আগেও অনেক ডার্বি জিতেছি। কিন্তু ফেডারেশন কাপ সেমিফাইনালের সেই ম্যাচটা সব কিছু ছাপিয়ে গিয়েছিল। বাইপাসে যান চলাচল স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল। সমর্থকদের ভালবাসা প্রায় অত্যাচারের পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছিল। ইস্টবেঙ্গলের সৌজন্যেই আমার ইলিশ-প্রেম। ডার্বিতে গোল করলেই বাড়িতে ফুল, মিষ্টি, ইলিশ মাছ পাঠাতেন ক্লাবের কর্তারা, সমর্থকেরা। আমাদের কুক দারুণ রান্না করতেন ইলিশ মাছের বিভিন্ন পদ। আমার অবশ্য সব চেয়ে প্রিয় সর্ষেবাটা ইলিশ। এখনও সুযোগ পেলে খাই।

এর পরেই থাকবে আসিয়ান কাপ। এ বারেও কেউ ভাবেনি যে, ইস্টবেঙ্গল চ্যাম্পিয়ন হবে। কোচ সুভাষ ভৌমিক কিন্তু প্রথম থেকেই দারুণ আত্মবিশ্বাসী ছিলেন। ওঁর আত্মবিশ্বাসটা আমাদের মধ্যেও সঞ্চারিত হয়েছিল। প্রথম ম্যাচে বেক তেরো সাসানা-র বিরুদ্ধে ০-১ হেরে গিয়েও তাতে চিড় ধরেনি। দু’দিন পরে ফিলিপিন্স আর্মিকে ৬-০ চূর্ণ করে দুর্দান্ত ভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছিলাম আমরা। আমি একাই পাঁচটি গোল করেছিলাম। একটি গোল করেছিল মহেশ (গাউলি)। এ বার কোয়ার্টার ফাইনালে আমাদের প্রতিপক্ষ ইন্দোনেশিয়ার পারসিতা তানজেরাং। ২-১ জিতলাম আমরা। কিন্তু জয়ের উচ্ছ্বাস ম্লান হয়ে গিয়েছিল দেবজিৎ ঘোষকে নিয়ে উদ্বেগে। মাথায় মারাত্মক আঘাত পেয়ে মাঠেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলে দেবজিৎ। ওকে দ্রুত অ্যাম্বুল্যান্সে করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ায় প্রাণে বেঁচে যায়। ম্যাচের পরে আমরা ওকে দেখতে গিয়েছিলাম। তখন অবশ্য ও সুস্থ। বলল, সেমিফাইনাল ও ফাইনালে খেলবে। অবিশ্বাস্য আত্মবিশ্বাস। ডাক্তারেরা অবশ্য দেবজিৎকে খেলার অনুমতি দেননি। আমরা শপথ নিলাম, দেবজিতের জন্যই সেমিফাইনালে ইন্দোনেশিয়ার পেত্রোকিমা পুত্রার বিরুদ্ধে জিততে হবে। কিন্তু শুরুতেই গোল খেয়ে পিছিয়ে পড়লাম। দ্বিতীয়ার্ধে গোল করে সমতা ফেরালাম। ম্যাচ গড়াল টাইব্রেকারে। অবিশ্বাস্য খেলল আমাদের গোলরক্ষক সন্দীপ নন্দী। ৭-৬ জিতে ফাইনালে উঠলাম। প্রতিপক্ষ ফের বেক তেরো সাসানা। বিশ্বাস করুন, আমরা মনে মনে ওদেরই চাইছিলাম। প্রথম ম্যাচে বেক তেরোর কাছে হারের যন্ত্রণাটা কেউ ভুলতে পারিনি। অবশেষে আমাদের প্রার্থনা সফল হল।

আসিয়ান কাপের ফাইনালে বেক তেরোকে দাঁড়াতেই দিইনি। ম্যাচ শুরু হওয়ার ২০ মিনিটের মধ্যেই গোল করে আমাদের এগিয়ে দিয়েছিল মাইক ওকোরো। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে গোল করলাম আমি। বেক তেরো একটা গোল করল। কিন্তু ফের অ্যালভিটো অসাধারণ গোল করে ৩-০ করে দেয়। এর পরে আর ওরা ঘুরে দাঁড়াতে পারিনি। সে-দিন জাকার্তার মাঠেও দেখেছিলাম আনন্দে শিশুর মতে কাঁদছেন ইস্টবেঙ্গল সমর্থকেরা। কলকাতায় ফিরে যা দেখলাম, তা বর্ণনা করার ভাষা নেই।

রাত প্রায় সাড়ে ১০টা নাগাদ কলকাতায় পৌঁছলাম আমরা। বৃষ্টি উপেক্ষা করে বিমানবন্দরের বাইরে অপেক্ষা করছে হাজার হাজার সমর্থক। বিমানবন্দরের বাইরে এক দিকে মঞ্চ তৈরি করা হয়েছিল আমাদের সংবর্ধনা দেওয়ার জন্য। অবশ্য সে-রাতে পুরো ভিআইপি রোডটাই সংবর্ধনা-মঞ্চে পরিণত হয়েছিল। বিমানবন্দর থেকে উল্টোডাঙার মোড় পৌঁছতে কয়েক ঘণ্টা লেগে গিয়েছিল। ক্লাবের প্রতি ভালবাসা ও আবেগ যে কোন স্তরে পৌঁছতে পারে, তা উপলব্ধি করলাম।

এই সব কারণেই আর এক বার জন্মাতে চাই ইস্টবেঙ্গলে খেলার জন্য।

(সাক্ষাৎকার: শুভজিৎ মজুমদার)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement