প্রণতি নায়েক। —ফাইল ছবি।
এশিয়ান গেমসে জোড়া পদকের সামনে বাংলার প্রণতি নায়েক। মহিলাদের জিমন্যাস্টিক্সে ভল্ট এবং অল রাউন্ড বিভাগের ফাইনালে উঠেছেন তিনি। এ বারের এশিয়ান গেমসে জিমন্যাস্টিক্সে তিনিই ভারতের একমাত্র প্রতিযোগী।
সাবডিভিশন ৩-এ প্রণতি সেরা আট জনের মধ্যে ষষ্ঠ স্থানে থেকে ভল্টের ফাইনালে ওঠেন। তাঁর মোট পয়েন্ট ১২.৭১৬। অল রাউন্ড বিভাগে যে ১৮ জন ফাইনালে উঠেছেন, তাঁদের মধ্যেও জায়গা করে নেন প্রণতি। ফাইনাল আগামী বুধবার। ভল্টে প্রথম বারে ১২.৮৬৬ স্কোর করেন প্রণতি। পরের বারে তাঁর পয়েন্ট হয় ১২.৫৬৬। এর ফলে ১২.৭১৬ গড় করে তিনি ফাইনালে ওঠেন।
উত্তর কোরিয়ার অ্যান চাংগক ১৩.৮৩৩ পয়েন্ট করে প্রথম হন। দ্বিতীয় স্থানে তাঁরই সতীর্থ কিম সংহিউং। তাঁর স্কোর ১৩.৫৮৩। জাপানের কোহানে উশিহোকু (১৩.৪৪৯) তৃতীয়, চিনের ইউ লিনমিন (১৩.৩৮৩) চতুর্থ, উজ়বেকিস্তানের ওকসানা ওহুসোভিতিনা (১২.৯৪৯) পঞ্চম স্থানে শেষ করেন। এর পরেই জায়গা করে নেন প্রণতি।
প্রণতির মা প্রতিমা এবং বাবা শ্রীমন্ত। —ফাইল ছবি।
অল রাউন্ড বিভাগে ২৩ নম্বর স্থানে থেকেও ফাইনালে উঠে যান প্রণতি। কারণ, প্রতিযোগিতার নিয়ম অনুযায়ী একটি বিভাগে একটি দেশ থেকে সর্বাধিক দু’জন জিমন্যাস্ট ফাইনালে উঠতে পারেন। এর ফলে চিন, জাপান, উত্তর কোরিয়া, চাইনিজ তাইপেয়ি, দক্ষিণ কোরিয়ার এক জন করে প্রতিযোগী বাদ হয়ে যান। ফলে ফাইনালে জায়গা করে নেন প্রণতি।
বাংলার এই প্রতিযোগী ভল্টে ১২.৮৬৬, ব্যালান্স বিমে ১১.২৩৩, আনইভেন বারসে ১০.৩০০ এবং ফ্লোরে ৯.৮৩৩ স্কোর করেন।
ফাইনালের প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছেন মেদিনীপুর জেলার পিংলার মেয়ে। সোমবার সকালে ভল্টের ফাইনালে ওঠার পরেই ৯টা নাগাদ ফোন করেন পিংলায়। বাবা শ্রীমন্ত এবং মা প্রতিমার সাথে কথা হয় প্রণতির। শ্রীমন্ত বাবু আনন্দবাজার অনলাইনকে বললেন, ‘‘মেয়ে ফোন করেছিল। ওকে বলেছি চূড়ান্ত প্রতিযোগিতার দিকে মনোযোগ দিতে বলেছি। ও জানিয়েছে প্রথম বা দ্বিতীয় স্থানের মধ্যে থাকার চেষ্টা করবে। আমরা আশাবাদী, বাংলার একমাত্র প্রতিনিধি হিসেবে যেন ওখানে দেশের মুখ উজ্জ্বল করে প্রণতি।’’
পশ্চিম মেদিনীপুরের পিংলা ব্লকের করকাই চককৃষ্ণদাস গ্রামের মেয়ে প্রণতি। মা প্রতিমা বললেন, “ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনার সঙ্গে সঙ্গে খেলাতেও মন ছিল প্রণতির। ওর সেজ মামী ভর্তি করে দিয়েছিল জিমন্যাস্টিক্সে। আমি গর্বিত যে ও এত দূর পৌঁছতে পেরেছে।”
বাবা বললেন, “অভাবের সংসারে ঠিক মতো খাবার দিতে পারিনি। তার পরেও যে ও এত দূর যেতে পেরেছে, আমি তাতেই গর্বিত। দেশের নাম উজ্জ্বল করুক ও।” মেয়ের হার না মানা জেদে ভরসা আছে শ্রীমন্তের। ভাল কিছু করে দেখাবেন প্রণতি, এমনটাই আশা তাঁর। শ্রীমন্ত বলেন, “ফোনে কথা হয় ওর সঙ্গে। ঠিক মতো অনুশীলন করার কথা বলেছি।’’
বাবা পেশায় বাসের চালক হলেও কয়েক বছর হল সেই কাজ তিনি আর করেন না। মা গৃহবধূ। প্রণতিরা তিন বোন।