সিডনিতে মহম্মদ সিরাজদের উদ্দেশে গ্যালারি থেকে উড়ে আসা বর্ণবিদ্বেষী মন্তব্যেই থেমে থাকছে না অস্ট্রেলিয়া সফর ঘিরে বিতর্ক। এ বার আর অশ্বিন আরও মারাত্মক অভিযোগ তুলেছেন। নিজের ইউটিউব চ্যানেলে ফিল্ডিং কোচ আর শ্রীধরের সঙ্গে কথোপকথনে অশ্বিন জানিয়েছেন, সিডনিতে লিফ্টের ভিতরে অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটারেরা থাকলে, তাঁদের ঢুকতে দেওয়া হত না। অশ্বিন বলছেন, ‘‘আমরা সিডনি পৌঁছনো মাত্র কঠোরতম সব নিষেধাজ্ঞা আমাদের উপরে চাপিয়ে দেওয়া হয়। কার্যত বন্দি করে ফেলা হয় আমাদের। খুব অবাক করার মতো একটা অভিজ্ঞতাও হয়েছিল আমাদের। অস্ট্রেলীয় খেলোয়াড়েরা যখন লিফ্টের ভিতরে থাকত, আমাদের প্রবেশ করতে দেওয়া হত না।’’ তারকা অফস্পিনার যোগ করছেন, ‘‘ঘটনাটা খুব বিস্মিত করার মতো। দু’টো দলই তো একই জৈব সুরক্ষা বলয়ে ছিল। সত্যি কথা বলতে কী, আমাদের সকলকেই খুব অবাক করেছিল এই নিষেধাজ্ঞা।’’ অশ্বিন জানিয়েছেন, বিশেষ করে সিডনিতে যে রকম আচরণ তাঁদের সঙ্গে করা হচ্ছিল, তাতে ভারতীয় ক্রিকেটারদের খুবই খারাপ লেগেছিল। প্রসঙ্গত, সিডনিতেই টেস্ট ম্যাচ চলার মধ্যে গ্যালারি থেকে বর্ণবিদ্বেষী মন্তব্য করা হয় সিরাজ, যশপ্রীত বুমরাদের উদ্দেশে। তা নিয়ে আম্পায়ারদের কাছে, ম্যাচ রেফারির কাছে অভিযোগও জানায় ভারতীয় দল। অস্ট্রেলীয় ক্রিকেট বোর্ড তদন্ত শুরু করেছে জানালেও ভারতীয় দল ফিরে এসেছে, সিরিজ শেষ হয়ে গিয়েছে, তবু সিডনির ঘটনা নিয়ে কোনও রকম পদক্ষেপের কথা তারা ঘোষণা করেনি। দোষীদের শাস্তি দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে অস্ট্রেলীয় বোর্ড। কিন্তু সত্যিই দেওয়া হল কি? এখনও অজানা।
এর মধ্যেই অশ্বিনের ফাঁস করা তথ্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মোড় নিতে পারে। কোনও দেশেই এ ভাবে পৃথকীকরণ করা যায় না, লিফ্টে আয়োজক দেশের ক্রিকেটারেরা থাকলে অতিথি দেশের সদস্যদের ঢুকতে দেওয়া হবে না। এর দু’রকম প্রতিফলন হতে পারে। প্রথমত, বর্ণবৈষম্যমূলক পদক্ষেপ কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে। দক্ষিণ আফ্রিকায় এই বৈষম্য ছিল বলেই তাদের দীর্ঘ সময়ের জন্য আন্তর্জাতিক সব খেলাধুলো থেকে নির্বাসিত করা হয়েছিল। অশ্বিন স্পষ্ট বলেছেন, ‘‘এ রকম কিছু যে ঘটতে পারে, তা আমরা ভাবতেও পারিনি। সত্যিই আমাদের সকলের খুব খারাপ লেগেছিল। আমরা একই জায়গায়, একই বলয়ের মধ্যে আছি। অথচ, একই সঙ্গে লিফ্ট ব্যবহার করতে পারব না? এই ব্যাপারটা হজম করাই খুব কঠিন ছিল।’’ ভারতীয় অফস্পিনার এর আগে অভিযোগ করেছিলেন, বরাবর সিডনিতে বর্ণবৈষম্যের ছাপ দেখেছেন। আগে কখনও তা বলতে পারেননি। অশ্বিনের ফাঁস করা তথ্যের ভিত্তিতে ভারতীয় বোর্ডের আসরে নামা উচিত বলেও অনেকে মনে করছেন। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, জয় শাহরা এ ব্যাপারে উদ্যোগ নেন কি না, তা দেখার। অশ্বিন আরও বলেছেন, ‘‘মেলবোর্নে প্রচুর নাটক হল। অস্ট্রেলিয়ায় যখন আমরা এসেছিলাম, তখন কিন্তু বলা হয়েছিল ইতিমধ্যেই আমরা আইপিএলের জৈব সুরক্ষা বলয়ে থেকে এসেছি। তাই খুব কঠোর নিভৃতবাসে থাকতে হবে না। ১৪ দিনের নিভৃতবাসের পরে আমরা কফি পান করতে যেতে পারি, সিনেমা দেখতে যেতে পারি, বাইরে যাওয়ার উপরে কোনও নিষেধাজ্ঞা ছিল না। সে রকমই আমাদের বলা হয়েছিল।’’ কিন্তু দ্রুত পরিস্থিতি পাল্টে যেতে থাকে মেলবোর্নে ভারত জেতার পরে। অশ্বিনের কথায়, ‘‘সিরিজ ১-১ হতেই সব কিছু পাল্টে গেল। তখনই আমাদের বলে দেওয়া হল, হোটেলের ঘর থেকে নড়াচড়া করা যাবে না। অনন্তকাল ধরে কী করে হোটেলের ঘরে বন্দি থাকা সম্ভব? আমি অস্ট্রেলিয়াতে পরিবার নিয়ে গিয়েছিলাম। আমার বাচ্চারা কান ঝালাপালা করে দিচ্ছিল বাইরে বেরোবে বলে। সেই সময়টা সত্যিই খুব কঠিন ছিল আমাদের জন্য।’’
সিডনিতেই ৪০ ওভারের উপরে ব্যাট করে অশ্বিন এবং হনুমা বিহারী হারা ম্যাচ ড্র করে দেন। অশ্বিনের মতে, অস্ট্রেলিয়া সিডনিতে শেষ দিনে রণনীতিটা ধরতেই পারেনি। ‘‘আমি পা নাড়াতে পারছিলাম না। আর বিহারী শরীরে আঘাত পেয়েও দাঁড়িয়ে ছিল। দু’জনেই চোট নিয়ে লড়ছিলাম। অস্ট্রেলিয়া আমাদের দুর্বলতার জায়গাটা ধরতেই পারেনি। ওরা যদি আমাকে সামনে পা বাড়িয়ে খেলানোর চেষ্টা করত, হয়তো ক্যাচ দিয়ে আউট হয়ে যেতে পারতাম। তার বদলে ভয় পাওয়ানোর জন্য ক্রমাগত শর্ট বল করে গেল।’’ যোগ করছেন, ‘‘ওদের এই রণনীতিতে হিতে বিপরীত হল। যত আমাদের শরীরে বল লাগছিল, তত আমাদের জেদ, প্রতিজ্ঞা বাড়ছিল। ভিতরে ভিতরে ততই আরও শক্ত হচ্ছিলাম আমি। নিজেকে বলছিলাম, আর কত মারবে ওরা আমাকে? মারুক না। এর সঙ্গে টিম পেন উইকেটের পিছন থেকে কথা বলতে শুরু করল। আমি আর বিহারী সেই সময়ে বলাবলি করতে শুরু করি যে, অস্ট্রেলিয়া নকশাটা হারিয়ে ফেলছে।”