২০১৪ সালে দীর্ঘ দিনের বান্ধবী ইপ্সা জামওয়ালকে বিয়ে করেন অনির্বাণ। এখন ফ্লোরিডার পাম বিচ গার্ডেন্সের বাসিন্দা তিনি। বাংলা, হিন্দি, পঞ্জাবি ও ইংরেজিতে স্বচ্ছন্দে কথা বলতে পারেন। তবে বাড়িতে বাংলাতেই কথা বলেন। দীর্ঘ দিন বিদেশে থেকেও শিকড় ধরে রেখেছেন তিনি।
২০১৬ রিও অলিম্পিক্সেও খেলার সুযোগ পান অনির্বাণ। ফাইল চিত্র।
ইতিহাস তৈরি করেছেন বাংলার গলফার অনির্বাণ লাহিড়ি। বিশ্বের সব থেকে দামি প্রতিযোগিতা আমেরিকার প্লেয়ার্স চ্যাম্পিনশিপে রানার্স হয়েছেন। অল্পের জন্য চ্যাম্পিয়ন হওয়া হয়নি। পুরস্কার হিসেবে পেয়েছেন প্রায় ১৬ কোটি টাকা। অনির্বাণের গলফের সঙ্গে পরিচয় বাবার হাত ধরে। ছোটবেলায় গলফ কোর্সে যেতেন বাবার সঙ্গে। সেখান থেকেই ধীরে ধীরে এই খেলার প্রতি ভালবাসা তৈরি হয়।
বাঙালি হলেও অনির্বাণের জন্ম মহারাষ্ট্রের পুণেতে। বাবা তুষার লাহিড়ি সেনাবাহিনীর চিকিৎসক ছিলেন। অবসর সময়ে গলফ খেলতেন। সেখানে বাবার সঙ্গে যেতেন অনির্বাণ। গলফের বল কুড়োতেন। সন্ধ্যায় বাড়ি ফেরার আগে ১৫ মিনিট খেলা বরাদ্দ ছিল তাঁর। সে ভাবেই প্রথম গলফের সঙ্গে পরিচয় অনির্বাণের। ধীরে ধীরে খেলার প্রতি ভালবাসা জন্মায়। অনেক অল্প বয়সেই ঠিক করে নেন গলফকেই পেশা করবেন। সেই শুরু।
২০০৮ সালে প্রথম এশীয় ট্যুরে যোগ দেন অনির্বাণ। ২০১১ সালে প্রথম জয় পান তিনি। প্যানাসনিক ওপেন খেতাব জেতার পরের বছরই জেতেন সেল-এসবিআই ওপেন। ২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৫ সালেও এশীয় ট্যুরে জেতেন অনির্বাণ। ২০০৯ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে ভারতের পেশাদার গলফ ট্যুরে ১২টি প্রতিযোগিতা জেতেন এই বাঙালি গলফার। ২০১৪ সালের মার্চ মাসে বিশ্বের গলফ র্যাঙ্কিংয়ে প্রথম বার সেরা ১০০-র মধ্যে ঢোকেন অনির্বাণ।
২০১৫ সালে ইউরোপীয় ট্যুরে যোগ দেন। সেই বছরই মালয়েশিয়ান ওপেন ও হিরো ইন্ডিয়ান ওপেনে চ্যাম্পিয়ন হন। এই দুই জয়ের ফলে গলফারদের ক্রমতালিকায় প্রথম ৫০-এর মধ্যে ঢুকে পড়েন তিনি। ২০১৫ সালের মাস্টার্স প্রতিযোগিতায় খেলার সুযোগ পান অনির্বাণ। জীব মিলখা সিংহ ও অর্জুন অটওয়ালের পরে তিনি তৃতীয় ভারতীয় যিনি এই প্রতিযোগিতায় খেলার সুযোগ পেয়েছেন।
২০১৫ সালেই প্রথম বার পিজিএ (প্রফেশনাল গলফার্স অ্যাসোসিয়েশন অব আমেরিকা) ট্যুরে খেলা শুরু করেন অনির্বাণ। তার পর থেকে গত সাত বছর তিনি শুধু এশীয় ও পিজিএ ট্যুর খেলছেন। কিন্তু পিজিএ ট্যুরে এর আগে ভাল ফল করতে পারেননি তিনি। এ বার পারলেন। পার-৩ এইট অবস্থায় তাঁর শট লক্ষ্যভ্রষ্ট না হলে সেরার শিরোপা পেতেন তিনি।
এর মধ্যেই ২০১৪ সালে দীর্ঘ দিনের বান্ধবী ইপ্সা জামওয়ালকে বিয়ে করেন অনির্বাণ। এখন ফ্লোরিডার পাম বিচ গার্ডেন্সের বাসিন্দা তিনি। বাংলা, হিন্দি, পঞ্জাবি ও ইংরেজিতে স্বচ্ছন্দে কথা বলতে পারেন। তবে বাড়িতে বাংলাতেই কথা বলেন। দীর্ঘ দিন বিদেশে থেকেও শিকড় ধরে রেখেছেন তিনি।
২০১৬ রিও অলিম্পিক্সেও খেলার সুযোগ পান অনির্বাণ। কিন্তু ভাল ফল করতে পারেননি। গত কয়েকটি বছর ভাল যায়নি তাঁর। তবে অনুশীলন করে গিয়েছেন। তার ফলও পেয়েছেন। নইলে যে প্রতিযোগিতায় টাইগার উডস, গ্রেগ নরম্যানের মতো বিখ্যাত গলফাররা চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন সেখানে রানার্স হওয়া কিন্তু মোটেই সহজ নয়।