নবজাতককে নিয়ে সস্ত্রীক রাহানে। টুইটার
নতুন বছরে রিচার্ড হ্যাডলির দেশে নতুন অভিযানে জোরালো হাওয়ার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়াটাই বড় পরীক্ষা হতে যাচ্ছে বলে মনে করছেন অজিঙ্ক রাহানের। বিশেষ করে ওয়েলিংটন এবং ক্রাইস্টচার্চে যে রকম জোরে হাওয়া চলে, তার মোকাবিলা করা বড় চ্যালেঞ্জ হতে পারে ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের সামনে।
ফেব্রুয়ারিতেই নিউজ়িল্যান্ডে দু’টি টেস্ট ম্যাচ খেলবে ভারত। এই দু’টি টেস্ট হবে ওয়েলিংটন (২১-২৫ ফেব্রুয়ারি) এবং ক্রাইস্টচার্চে ((২৯ ফেব্রুয়ারি থেকে ৪ মার্চ)। তার আগে বিরাট কোহালির দল পাঁচটি টি-টোয়েন্টি এবং তিনটি ওয়ান ডে ম্যাচও খেলবে। সংবাদসংস্থা পিটিআই-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে রাহানে বলেছেন, ‘‘আমরা নিউজিল্যান্ডে খেলেছি ২০১৪ সালে। সেই অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, ওখানে খুব জোরালো হাওয়া বইতে থাকে। তার বিরুদ্ধে মানিয়ে নেওয়া বড় চ্যালেঞ্জ। দ্রুত পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার উপর অনেক কিছু নির্ভর করবে।’’ রাহানের আরও পর্যবেক্ষণ, ‘‘হাওয়া দেয় বলেই বল দু’দিকেই বেশি নড়াচড়া করবে। তার জন্য তৈরি থাকতে হবে আমাদের।’’
পুরনো সফরের অভিজ্ঞতা থেকে যে হাওয়ার সঙ্গে লড়াই করার প্রস্তুতি নিতে হবে, তা নিয়েও সংশয় থাকছে না ভারতীয় টেস্ট সহ-অধিনায়কের। বলছেন, ‘‘শেষ সফরে আমরা ওয়েলিংটনে খেলেছিলাম। ক্রাইস্টচার্চে অনেক দিন পরে খেলব আবার। পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়াটাই বড় পরীক্ষা হতে যাচ্ছে।’’ নিউজিল্যান্ডের বোলারদের মধ্যে বাঁ হাতি নীল ওয়্যাগনারকে আলাদা করে চিহ্নিত করছেন রাহানে। সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ভয়ঙ্কর হয়েছিলেন বাঁ হাতি ফাস্ট বোলার। যাঁর বাউন্সার এখন বিশ্বসেরা বলে মনে করা হচ্ছে। রাহানে বলছেন, ‘‘শেষ সিরিজেও ওয়্যাগনার দারুণ বল করেছে (চার টেস্টে ২৭ উইকেট তোলেন)। তবে এক জনকে নিয়ে ভাবলে তো আর চলবে না। ব্যাটিং গ্রুপ হিসেবে আমাদের সব বোলারকেই সমান গুরুত্ব দিতে হবে, সম্মান দেখাতে হবে।’’ যোগ করছেন, ‘‘নিউজিল্যান্ড ঘরের মাঠে খেলবে। নিজেদের দেশের পরিবেশ ওদের চেনা। আমাদের কিন্তু নিজেদের স্বভাবসিদ্ধ খেলাকে বিসর্জন দিলে চলবে না।’’
এখন পর্যন্ত ৬৩ টেস্টে ৪১১২ রান করা ডান হাতি মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যানের মনে হচ্ছে, ক্রিজের বাইরে দাঁড়ালে ফল পাওয়া যেতে পারে। কারণ, দুই বাঁ হাতি ট্রেন্ট বোল্ট এবং নীল ওয়্যাগনার দু’জনেই ভিতরের দিকে বল আনতে পারেন। এবং, ভারতীয় ব্যাটিং লাইন-আপে প্রায় সকলেই ডান হাতি, তাই দুই বাঁ হাতি পেসারের আরও ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠার সম্ভাবনা। রাহানের কথা শুনে মনে হচ্ছে, কী ভাবে বোল্টদের সামলাবেন তা নিয়ে চিন্তাভাবনা শুরু করেই দিয়েছেন। ‘‘এক-এক ধরনের বোলিং সামলানোর জন্য এক-এক রকম পন্থা নিতে হয়। প্রত্যেকের ধরন আলাদা,’’ বিশ্লেষণ করে চলেন রাহানে, ‘‘কেউ কেউ সুইং বোলিং সামলানোর জন্য ক্রিজের বাইরে দাঁড়াতে পছন্দ করে। কেউ আবার ক্রিজের ভিতরে অনেকটা ঢুকে দাঁড়ায়। কেউ মিডল স্টাম্প গার্ড নেয়, কেউ লেগ স্টাম্প গার্ড। আমার মনে হয়, প্রত্যেকের উচিত নিজের শক্তির উপর বিশ্বাস রেখে এগিয়ে চলা।’’
নিউজিল্যান্ডে যতটা সম্ভব শরীরের কাছ থেকে খেলাটাও খুব দরকার হবে বলে মনে হচ্ছে রাহানের। ‘‘প্রাথমিক ব্যাপারগুলোর উপর জোর দিতেই হবে। খুব বেশি টেকনিক নিয়ে ভাবতে গেলে সমস্যা আরও বেড়ে যেতে পারে। যতটা সম্ভব শরীরের কাছ থেকে খেলতে হবে, যতটা সম্ভব দেরিতে খেলতে হবে। মনে রাখতে হবে নিউজিল্যান্ডে গতি ও বাউন্স দু’টোই অন্য রকম হবে।’’ নিউজিল্যান্ডে সিনিয়র দলের সফরের আগেই ভারতীয় ‘এ’ দল যাচ্ছে। মহড়া সেরে নেওয়ার জন্য সেই দলের সঙ্গে যাবেন রাহানেও।
নতুন বোর্ড প্রেসিডেন্ট সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় এবং জাতীয় অ্যাকাডেমির প্রধান রাহুল দ্রাবিড় মিলে ভারতীয় ক্রিকেটকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে যাবেন বলে মন্তব্য করেছেন রাহানে। ‘‘দাদা (সৌরভ) এবং রাহুল ভাইয়ের একযোগে কাজ করাটা ভারতীয় ক্রিকেটকে অন্য রকম রাস্তায় নিয়ে যাবে,’’ মনে হচ্ছে তাঁর। ২০১৪-তে তরুণ ভারতীয় দল নিউজিল্যান্ডে গিয়ে ০-১ ফলে টেস্ট সিরিজ হেরে ফেরে। সেই সফর থেকে অনেক কিছুই তাঁরা শিখেছেন বলে রাহানের দাবি। বলছেন, ‘‘খুব তরুণ একটা দল সে বার গিয়েছিল নিউজিল্যান্ডে। আমরা অনেক কিছু শিখেছি সেই সফর থেকে। ওখান থেকেই টেস্টে বিশ্বের এক নম্বর হওয়ার যাত্রা শুরু হয় আমাদের। ওই সময়ে আমরা ছয় বা সাত নম্বর ছিলাম।’’
অধিনায়ক বিরাট কোহালি এবং কোচ রবি শাস্ত্রীও খুব বন্ধুত্বপূর্ণ এবং চনমনে ড্রেসিংরুম তৈরি করেছেন বলে মন্তব্য করেন রাহানে। ‘‘আমরা মজা করতে ভালবাসি। তা বলে ক্রিকেট নিয়ে হাল্কা দেওয়ার কোনও ব্যাপার নেই। সকলে মিলে দারুণ ড্রেসিংরুম পরিবেশ তৈরি করার চেষ্টা করি আমরা,’’ বলছেন ভারতীয় মিডল অর্ডার ব্যাটিংয়ের অন্যতম প্রধান স্তম্ভ।