প্রথম টেস্টে ২০৩ রানে জয়। দ্বিতীয় টেস্টে ইনিংস ও ১৩৭ রানে জয়। তৃতীয় টেস্টে ইনিংস ও ২০২ রানে জয়। বিশাখাপত্তনম, পুণে ও রাঁচী। টানা তিন টেস্টে বিরাট কোহালির দল রীতিমতো দুরমুশ করে হারাল দক্ষিণ আফ্রিকাকে। ৩-০ জয়ের সঙ্গে গড়ল নানা রেকর্ডও।
ঘরের মাঠে টানা ১১ টেস্ট সিরিজ জিতলেন কোহালিরা। যা শুরু হয়েছিল ২০১৩ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে জয়ের মাধ্যমে। সেই সিরিজে অস্ট্রেলিয়াকে ৪-০ হারিয়েছিল মহেন্দ্র সিংহ ধোনির দল। চেন্নাই, হায়দরাবাদ, মোহালি ও নয়াদিল্লিতে জয় আসে যথাক্রমে আট উইকেট, ইনিংস ও ১৩৫ রান, ছয় উইকেট ও ছয় উইকেটে।
২০১৩ সালেই ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ২-০ হারায় ভারত। সচিন তেন্ডুলকরের শেষ টেস্ট সিরিজ এটি। ইডেনে প্রথম টেস্টে ইনিংস ও ৫১ রানে জেতে ভারত। ওয়াংখেড়েয় দ্বিতীয় টেস্টে ইনিংস ও ১২৬ রানে আসে জয়। সেই সিরিজেই অভিষেক ঘটে রোহিত শর্মা ও মহম্মদ শামির।
২০১৫ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে চার টেস্টের সিরিজ ৩-০ জেতে ভারত। মুম্বই, নাগপুর ও নয়াদিল্লিতে জয় আসে যথাক্রমে ১০৮ রান, ১২৪ রান ও ৩৩৭ রানে। বেঙ্গালুরু টেস্ট ড্র হয়। সেই সফরের করুণ স্মৃতি এ বারের সফরেও তাড়া করেছে দু’প্লেসিদের।
২০১৬ সালে নিউজিল্যান্ডকে ঘরের মাঠে টেস্ট সিরিজে ৩-০ হারায় ভারত। কানপুরে প্রথম টেস্টে জয় আসে ১৯৭ রানে। কলকাতায় দ্বিতীয় টেস্টে জয় আসে ১৭৮ রানে। ইনদওরে সিরিজের তৃতীয় টেস্টে ৩২১ রানে জয় আসে।
২০১৬ সালেই ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে পাঁচ টেস্টের সিরিজ ৪-০ জেতে টিম ইন্ডিয়া। রাজকোটে প্রথম টেস্ট ড্র হয়। তারপর বিশাখাপত্তনম, মোহালি, মুম্বই ও চেন্নাইয়ে জয় আসে যথাক্রমে ২৪৬ রান, আট উইকেট, ইনিংস ও ৩৬ রান এবং ইনিংস ও ৭৫ রানে।
২০১৭ সালে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে সিরিজের একমাত্র টেস্টে হায়দরাবাদে ২০৮ রানে জেতে ভারত। ২০৪ রান করার সুবাদে ম্যাচের সেরা হন ভারত অধিনায়ক বিরাট কোহালি। চতুর্থ ইনিংসে জেতার জন্য ৪৫৯ করতে হত বাংলাদেশকে। সফরকারী দল তোলে ২৫০।
২০১৭ সালেই অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে চার টেস্টের সিরিজে ভারত জেতে ২-১ ফলে। পুণেয় প্রথম টেস্ট ৩৩৩ রানে জিতেছিল অস্ট্রেলিয়া। তার পর বেঙ্গালুরুতে ৭৫ রানে জেতে ভারত। ড্র হয় রাঁচী টেস্ট। ধর্মশালায় চতুর্থ টেস্টে আট উইকেটে আসে জয়। সিরিজ দখল করে ভারত।
২০১৭ সালেই শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে তিন টেস্টের সিরিজ ১-০ ফলে জেতে ভারত। ইডেনে প্রথম টেস্ট ড্র হয়। নাগপুরে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্ট ইনিংস ও ২৩৯ রানে জিতে সিরিজে এগিয়ে যায় ভারত। নয়াদিল্লিতে সিরিজের শেষ টেস্টের ফয়সালা হয়নি।
২০১৮ সালে আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে সিরিজের একমাত্র টেস্টে ইনিংস ও ২৬২ রানে জিতেছিল ভারত। প্রথমে ব্যাট করে ৪৭৪ তোলে ভারত। আফগানিস্তানের প্রথম ইনিংস ১০৯ রানে শেষ হয়। ফলো অনের পর দ্বিতীয় ইনিংস শেষ হয় ১০৩ রানে।
২০১৮ সালেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে দুই টেস্টের সিরিজ ২-০ জেতে ভারত। রাজকোটে প্রথম টেস্টে জয় আসে ইনিংস ও ২৭২ রানে। হায়দরাবাদে দ্বিতীয় টেস্টে জয় আসে ১০ উইকেটে। তারপর সদ্য দক্ষিণ আফ্রিকাকে ৩-০ হারিয়ে ঘরের মাঠে টানা ১১ টেস্ট সিরিজ জিতল ভারত।
ঘরের মাঠে এই সময়ের মধ্যে ভারত খেলেছে ৩৩ টেস্ট। তার মধ্যে হেরেছে একটিতে। ২০১৭ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে পুণেয়। সেই টেস্ট স্টিভ স্মিথের অসাধারণ ব্যাটিংয়ের জন্য চিহ্নিত। আইসিসি সেই টেস্টের বাইশ গজকে ‘পুওর’ রেটিং দিয়েছিল।
২০১৩ সাল থেকে ধরলে ঘরের মাঠে ভারত জিতেছে ২৬ টেস্ট। হেরেছ মাত্র একটিতে। যা সেরা। এই সময়ে অস্ট্রেলিয়া ঘরের মাঠে জিতেছে ২৩ টেস্ট। হেরেছে চারটিতে। এই সময়ে বিশ্বের বাকি সব দল ঘরের মাঠে অন্তত চার টেস্টে হেরেছে। একমাত্র কোহালিরা হেরেছেন একটি মাত্র টেস্টে।
এর আগে ভারতের বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজে দক্ষিণ আফ্রিকা কোনও বার ফলো অন করেনি। যা ঘটল সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে। পুণে টেস্টের পর রাঁচীতেও ফের প্রোটিয়াদের ফলো অন করিয়েছে ভারত। টানা দ্বিতীয় টেস্টে দক্ষিণ আফ্রিকা ফলো অন করেছে এই সিরিজে।
এই সিরিজে টানা দুই টেস্টে ইনিংসে হেরেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। এমন শেষ বার ঘটেছিল ১৯৩৫-৩৬ মরসুমে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে। এত বছর পর ফের টানা দুই টেস্টে ফলো অন করল প্রোটিয়ারা। উমেশ যাদব ও মহম্মদ শামি, দুই পেসার নজর কাড়লেন রাঁচীতে। দু’জনেই নিলেন পাঁচটি করে উইকেট।
প্রথম ভারতীয় অধিনায়ক হিসেবে বিরাট কোহালি হোয়াইটওয়াশ করলেন দক্ষিণ আফ্রিকাকে। একইসঙ্গে প্রোটিয়াদের বিরুদ্ধে কোহালির নেতৃত্বে ৭০ শতাংশ টেস্ট জিতল ভারত। আগের সব অধিনায়কের নেতৃত্বে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ভারতের জেতার হার ছিল মাত্র ২৪.১৪ শতাংশ।
বিরাট কোহালির নেতৃত্বে এই নিয়ে তিন বার বিপক্ষকে টেস্ট সিরিজে হোয়াইটওয়াশ করল ভারত। প্রথম বার ঘটেছিল ২০১৬ সালে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ঘরের মাঠে। তারপর ২০১৭ সালে শ্রীলঙ্কায়। আর এ বার ঘরের মাঠে প্রোটিয়াদের বিরুদ্ধে। সার্বিক ভাবে এটা ভারতের ষষ্ঠ হোয়াইটওয়াশ।