পঞ্চবাণ: ময়দান কাঁপাতে তৈরি মেয়েরা। ছবি: সুজিত মাহাতো
জঙ্গলমহলের জয়পুর কলেজ মাঠ থেকে সটান কলকাতা ময়দান। বহু বাধা টপকে কঠোর পরিশ্রম করে ইস্টবেঙ্গলের মহিলা ফুটবল দলে সুযোগ পেলেন পুরুলিয়ার পাঁচ তরুণী: সোনামণি মাহাতো, প্রিয়াঙ্কা মাহাতো, ঝর্না মাহাতো, রিনা মাহাতো ও নিকিতা বাউরি। আজ, রবিবার কলকাতায় নামছেন ‘খেঁদাটাঁড় মহিলা ফুটবল ক্লাব’ থেকে উঠে আসা ওই পাঁচ তরুণী।
পুলিশের ‘জঙ্গলমহল কাপ’-এর মহিলা ফুটবলের সুবাদেই পুরুলিয়ার প্রত্যন্ত এলাকার বহু তরুণীর জীবনে প্রথম ফুটবল ছোঁয়া। তারপর ফুটবলের প্রেমে পড়ে ঘাম ঝরানো। তাঁদের মধ্যে থেকে ওই পাঁচ মেয়ের ইস্টবেঙ্গলের সুযোগকে বড় সাফল্য বলে মনে করছেন পুরুলিয়ার জেলা পুলিশ সুপার এস সেলভামুরুগান। তিনি বলেন, ‘‘আশা করি, পুরুলিয়ার মতো তাঁরা কলকাতার ময়দানও দাপাবেন। অন্যদেরও অনুপ্রেরণা দেবেন।’’
পাঁচ বছর আগেও অবশ্য ছবিটা এমন ছিল না। খেঁদাটাঁড় ফুটবল ক্লাবের কর্মকর্তা জগন্নাথ বাগদি জানান, খেঁদাটাঁড় গ্রামের চার-পাঁচটি মেয়ে এলাকার ছেলেদের সঙ্গে ফুটবল খেলত। তা নিয়ে অবশ্য কম কথা শুনতে হয়নি। সেই সময়ে জয়পুর থানার আইসি সুবীর বাগ জানান, জেলা পুলিশের উদ্যোগে জঙ্গলমহল ফুটবল টুর্নামেন্ট শুরু হচ্ছে। সে জন্য জয়পুর থানার মহিলাদের দল গড়তে হবে। জগন্নাথবাবুর কথায়, ‘‘দল গড়ার মতো এত মেয়ে পাব কোথায়? সেই সময়ে খেঁদাটাঁড়ের মহিলা ফুটবলার শীলা বাগদি এলাকার মেয়েদের বুঝিয়ে মাঠে টেনে আনে।’’
সেই শুরু। শীলার নেতৃত্বে জঙ্গলমহল কাপে প্রথমবারেই চ্যাম্পিয়ন জয়পুর। কিন্তু টুর্নামেন্টের পরেও দলটাকে ভাঙতে দেননি জগন্নাথবাবুরা। পাশে থাকে জয়পুর থানা। কেউ ছয়, কেউ এগারো কিলোমিটার পথ সাইকেল চালিয়ে জয়পুর কলেজ মাঠে ফুটবলের অনুশীলনে আসতে শুরু করে। সাফল্যও মেলে। পরপর জঙ্গলমহল কাপ ও কন্যাশ্রী কাপে জেলা চ্যাম্পিয়নের শিরোপা আসে।
ইতিমধ্যেই শীলা কলকাতা পুলিশের মহিলা ফুটবল দলে সুযোগ পেয়েছেন। গত সপ্তাহে খেঁদাটাঁড় মহিলা ক্লাবের কয়েকজন তরুণী ইস্টবেঙ্গলের মহিলা ফুটবল দলের ট্রায়ালে ডাক পান। ইস্টবেঙ্গল মহিলা ফুটবল দলের প্রশিক্ষক প্রতিমা বিশ্বাস বলেন, ‘‘পুরুলিয়ার মেয়েদের মধ্যে প্রতিভা রয়েছে। ওদের মধ্যে পাঁচ জনকে আমরা নির্বাচন করেছি।’’
সোনামণি ও প্রিয়াঙ্কার বাড়ি জয়পুরের কুসুমটিকরি গ্রামে, ঝর্না গুঞ্জা গ্রামের, রিনা সিন্দরি গ্রামের আর নিকিতা ফরেস্ট মোড়ের বাসিন্দা। চার জন দরিদ্র পরিবারের। কেউ উচ্চ মাধ্যমিকের পড়ুয়া, কেউ কলেজের প্রথম বর্ষে পড়েন। ওই তরুণীদের কথায়, ‘‘অনেক কষ্টে এত দূরে এসেছি। ইস্টবেঙ্গলে নিজেদের সেরাটাই দেব।’’