মহাকাশের চলচ্চিত্রের তিন কুশীলব। জুলিয়া পেরেসলিড (বাঁ দিক থেকে), ক্লিম শেপোঙ্কো ও অ্যান্টন স্কাপলেরভ। ছবি- টুইটারের সৌজন্যে।
‘গ্র্যাভিটি’ বা ‘ইন্টারস্টেলার’ নয়। নয় হলিউডে বানানো কোনও কল্পবিজ্ঞানভিত্তিক চলচ্চিত্র।
এ বার চলচ্চিত্রের শ্যুটিং হতে চলেছে মহাকাশেই। ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৪০০ কিলোমিটার উচ্চতায় পৃথিবীকে নানা কক্ষপথে প্রদক্ষিণ করতে করতে। এই প্রথম।
মনুষ্যত্বের রং মহাকাশের চলচ্চিত্রে
সেই চলচ্চিত্রের বিষয়বস্তুও হবে কল্পবিজ্ঞানের ফিল্মের চেয়ে অনেক বেশি বাস্তব। যাতে কল্পনার রং থাকলেও মহাকাশের বাস্তবতার ভিতটা হবে অনেক বেশি শক্তপোক্ত। কোনও যুদ্ধ-টুদ্ধ নয়। থাকবে মাটির গন্ধ। মনুষ্যত্বের রং।
মহাকাশে প্রথম পাড়ি দিয়েছিলেন সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের মহাকাশচারী ইউরি গ্যাগারিন। ‘ভোস্তক-১’ মহাকাশযানে চেপে ১৯৬১-র ১২ এপ্রিল পৃথিবীকে এক বার প্রদক্ষিণ করেছিলেন। তার ৭০ বছরের মাথায় এ বার মহাকাশে প্রথম চলচ্চিত্রের শ্যুটিং করতেও যাচ্ছেন রুশরাই। চার জন। ‘সয়ুজ এমএস-১৯’ মহাকাশযানে চেপে।
পাইলটকে বাদ দিয়ে সেই মহাকাশযানে যাচ্ছেন বিশিষ্ট রুশ অভিনেত্রী জুলিয়া পেরেসলিড। মঞ্চ, টেলিভিশন আর পূর্ণদৈর্ঘ্যের চলচ্চিত্র, সর্বত্রই যাঁর পরিচিতি। তাঁর সঙ্গে যাচ্ছেন নামজাদা রুশ পরিচালক অভিনেতা ক্লিম শিপেঙ্কো। চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য মহাকাশে পাড়ি জমাচ্ছেন রুশ অভিনেতা অ্যান্টন স্কাপলেরভও। যিনি মহাকাশচারীও বটে।
সেই চলচ্চিত্রের পরিচালক ও অন্যতম অভিনেতা ক্লিম শিপেঙ্কো মস্কোয় এক সাংবাদিক বৈঠকে শুক্রবার বলেছেন, “আগামী ৫ অক্টোবর কাজাখস্তানের বৈকানুর কসমোড্রোম থেকে আমাদের ৪ জনকে নিয়ে মহাকাশে রওনা হবে ভোস্তক-১ মহাকাশযান। পৌঁছবে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে। সেখানেই হবে মহাকাশে চলচ্চিত্রের প্রথম কোনও শ্যুটিং।”
চলচ্চিত্রের বিষয়বস্তু কী?
শিপেঙ্কো জানিয়েছেন, সেই চলচ্চিত্রের নাম ‘চ্যালেঞ্জ’। রুশ ভাষায় ‘ভাইজভ্’। গল্পে কোনও স্পেস ওয়ার বা মহাকাশ যুদ্ধের ছিটেফোঁটাও নেই হলিউডে বানানো আর সব কল্পবিজ্ঞানভিত্তিক চলচ্চিত্রের মতো। বরং সেই চলচ্চিত্রে থাকছে মাটির গন্ধ। মনুষ্যত্বের রং। এক সাধারণ মানুষকে নিয়েই গল্প। যিনি পেশায় একজন চিকিৎসক। কোনও দিন স্বপ্নেও ভাবেননি যাবেন মহাকাশে। সেই তাঁকেই হঠাৎ মহাকাশে যাওয়ার সুযোগ দেওয়া হল। বলা হল, চাইলে যেতে পারেন আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে। রাজি হয়ে গেলেন সেই চিকিৎসক। গিয়ে তিনিই মহাকাশ স্টেশনে থাকা এক মহাকাশচারীর জীবন বাঁচিয়ে দিলেন। কী ভাবে, তা নিয়েই টানটান গল্প। সঙ্গে মহাকাশ স্টেশনের ভরশূন্য অবস্থায় থাকার স্বাভাবিকতা।
পরিচালকের উচ্চতা, অভিনেত্রী ভিন্ন রূপেও
অভিনেত্রী জুলিয়া জানিয়েছেন শ্যুটিংয়ের সময় ও তার আগে-পরে তিনিই হবেন নিজের মেক-আপ আর্টিস্ট ও কস্টিউম ডিজাইনার।
তবে মূল সমস্যা পরিচালক অভিনেতা ক্লিম শিপেঙ্কোর উচ্চতা। তিনি ৬ ফুট ২ ইঞ্চির। এই উচ্চতা নিয়ে মহাকাশযানে চলচ্চিত্রের পরিচালনা ও অভিনয়ে তাঁর যাতে কোনও অসুবিধা না হয় তার জন্য প্রশিক্ষণ নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন শিপেঙ্কো।
এও জানিয়েছেন, তাঁর লাল গ্রহ মঙ্গলে গিয়েও চলচ্চিত্রের শ্যুটিং করার ইচ্ছা রয়েছে।