কার্বন ডাই-অক্সাইডের নির্গমন কেন এত বাড়ল? -ফাইল ছবি।
অতিমারিও সংযম শেখাতে পারেনি। রাষ্ট্রপুঞ্জের বারবার হুঁশিয়ারিতেও কাজ হয়নি।
শুধু গত বছরেই সারা বিশ্বে যে পরিমাণে বাতাসে বিষ মিশিয়েছে সভ্যতা, তা একটি সর্বকালীন রেকর্ড। অতিমারির আগের বছরগুলিতেও কখনও বাৎসরিক এই পরিমাণে বিষাক্ত কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাসের নির্গমন হয়নি। যা হয়েছে ২০২১-এ।
আন্তর্জাতিক শক্তি এজেন্সি (আইইএ)-র রিপোর্টে মঙ্গলবার এই উদ্বেগজনক খবর দেওয়া হয়েছে। রিপোর্টে জানানো হয়েছে, শুধু ২০২১ সালেই বিশ্বে বিষাক্ত কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাসের নির্গমনের হার বেড়েছে ছয় শতাংশ। আগের বছরগুলির তুলনায় গত বছরে বিশ্বে তিন হাজার ৬৩০ কোটি মেট্রিক টন ওজনের বেশি কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাস বাতাসে মিশেছে। যা একটি সর্বকালীন রেকর্ড।
কেন হঠাৎ এই ভাবে বেড়ে গেল কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাসের নির্গমন? তার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে আইইএ-র রিপোর্ট জানিয়েছে, অতিমারি শুরুর পর দেশে দেশে লকডাউন জারি হওয়ায় আর তা দীর্ঘমেয়াদি হওয়ায় গোটা বিশ্বের অর্থনীতির যে নাভিশ্বাস উঠে গিয়েছিল, তার থেকে দ্রুত রক্ষা পাওয়ার লক্ষ্যে কয়লা পুড়িয়ে জ্বালানি তৈরি করে শিল্পক্ষেত্রগুলির থমকানো রথের চাকা গড়ানোর চেষ্টা হয়েছে। দেশগুলি সে জন্য যে যত পারে কয়লা উত্তোলন করেছে ও পুড়িয়েছে। কয়লা পোড়ানোয় বাড়তি উৎসাহ জুগিয়েছে বিশ্বে ২০২০ সালের শেষ দিক থেকেই প্রাকৃতিক গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি। যা জীবাশ্ম জ্বালানিকে আরও বেশি পরিমাণে কয়লা-নির্ভর করে তুলেছে। যা বিশ্ব পরিবেশের পক্ষে আরও বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে শুধু একটি বছরেই সর্বকালীন রেকর্ড মাত্রার কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাস নির্গমনের মাধ্যমে।
আইইএ-র রিপোর্টে এও বলা হয়েছে, ‘‘গত বছরেই বিশ্বে সবচেয়ে বেশি পরিমাণে বেড়েছে অপ্রচলিত শক্তির ব্যবহারও।’’ তবু তার পরেও দেশগুলির অতিমারিতে মুখ থুবড়ে পড়া অর্থনীতিকে চাঙ্গা করে তোলার মরিয়া চেষ্টা মূলত কয়লা-নির্ভর জ্বালানির উপর বিশ্বাস রাখায় বাতাসে কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গমনের মাত্রা সর্বকালীন রেকর্ড গড়তে পেরেছে।
রিপোর্ট জানিয়েছে, এই রেকর্ডের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি সহায়ক হয়েছে চিন। ২০১৯ সাল থেকে ২০২১ সালের মধ্যে শুধু চিনের জন্যই ৭৫ কোটি মেট্রিক টন কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাস বেশি মিশেছে বাতাসে। আর ২০২১ সালে শুধু চিনেই কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাসের নির্গমন বেড়েছে ১১ কোটি ৯০ লক্ষ মেট্রিক টন। বিশ্বের ৩৩ শতাংশ।
তা যে অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে গিয়েই হয়েছে, আইইএ-র রিপোর্টে সেই ইঙ্গিতও মিলেছে। বলা হয়েছে, ‘‘অর্থনীতিতে সমৃদ্ধ প্রধান দেশগুলির মধ্যে একমাত্র চিনেরই আর্থিক বৃদ্ধি হয়েছে ২০২০ এবং ২০২১ সালে। এই দুই বছরে চিনে যে পরিমাণে বেড়েছে কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গমনের পরিমাণ, তা গোটা বিশ্বে সেই হার ওই সময়ে যে হারে কমেছে তার অনেক বেশি।’’