মৃদু কোভিড রোগীদেরও মস্তিষ্কের ক্ষতি হয়। -প্রতীকী ছবি।
খুব মৃদু, এমনকি মাঝারি মানে আক্রান্ত হলেও কোভিড রোগীদের মস্তিষ্কে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন ঘটে। তাঁদের মস্তিষ্কের গ্রে ম্যাটার অংশটি স্বাভাবিকের চেয়ে দ্রুত হারে নষ্ট হয়ে যায়। ফলে, স্মরণশক্তি নষ্ট হয়। নষ্ট হয় ঘ্রাণশক্তি ও স্বাদক্ষমতা।
এই বিষয়ে অনেক বেশি সংখ্যক মানুষের উপর চালানো এই প্রথম কোনও গবেষণা এই উদ্বেগজনক তথ্য দিল। গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান গবেষণা পত্রিকা ‘নেচার’-এ। সোমবার।
কোভিডে আক্রান্ত হওয়ার পর মস্তিষ্কের এই পরিবর্তনগুলি স্থায়ী কি না, বা সেই পরিবর্তনগুলি কত দিন পর্যন্ত থাকে ইত্যাদি অবশ্য গবেষণায় খতিয়ে দেখা হয়নি। তাই গবেষকরা এ ব্যাপারে নিশ্চিত হতে পারেননি। তবে সেই বিষয়গুলি খতিয়ে দেখার জন্য পরবর্তী পর্যায়ের গবেষণার পথ এই গবেষণা খুলে দিতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ।
ব্রিটেনে ৫১ থেকে ৮১ বছর বয়সি ৭৮৫ জনের মস্তিষ্কের এমআরআই স্ক্যান করিয়েছেন গবেষকরা এই ফলাফলে পৌঁছতে। গড়ে ৩৮ মাস পরে তাঁদের সকলেরই মস্তিষ্কে আবার এমআরআই করানো হয়। পাশাপাশি করানো হয় তাঁদের ‘কগনিটিভ টেস্ট’ও (সচেতনতার মাত্রা মাপার পরীক্ষা)।
মূল গবেষক অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক গেনেলে দৌআউদ বলেছেন, ‘‘এই প্রথম কোনও গবেষণায় কোভিডে আক্রান্ত হওয়ার আগেও মস্তিষ্কের এমআরআই করিয়ে দেখা হয়েছে। এমনকি, যাঁরা কোনও দিনই কোভিডে আক্রান্ত হননি স্ক্যান করিয়ে দেখা হয়েছে তাঁদের মস্তিষ্কও। যাঁরা কোভিডে না হলেও শ্বাসকষ্টের অন্য কোনও রোগে আক্রান্ত হয়েছেন তাঁদেরও মস্তিষ্কের স্ক্যান করানো হয়েছে কোভিডে আক্রান্তদের সঙ্গে শ্বাসকষ্টের অন্যান্য রোগে আক্রান্তদের মস্তিষ্কের ফারাক বুঝতে।’’
সার্স-কোভ-২ ভাইরাসের সংক্রমণে যে মস্তিষ্কের কিছু ক্ষয়ক্ষতি হয়, আগের কয়েকটি গবেষণায় তার ইঙ্গিত মিলেছিল। জানা গিয়েছিল, ওই সংক্রমণে মস্তিষ্কের কোনও কোনও অংশের আকার আকৃতি বদলে যায়। প্রদাহ হয়।
কিন্তু যাঁদের কোভিড হয়নি কোনও দিন বা স্ক্যান করানোর পরে কোভিড হয়েছে বা যাঁরা শ্বাসকষ্টের অন্যান্য রোগে ভুগছেন এই প্রথম তাঁদের মস্তিষ্কেরও স্ক্যান করিয়ে গবেষণাটি চালানো হয়েছে। এখানেই এই গবেষণার অভিনবত্ব।
গবেষকরা দেখেছেন, খুব মৃদু বা মাঝারি ধরনের কোভিডে আক্রান্তদেরও মস্তিষ্কে পিরিফর্ম কর্টেক্স, অলফ্যাক্টরি টিউবিক্ল, অ্যান্টিরিয়র অলফ্যাক্টরি নিউক্লিয়াস অঞ্চলগুলির খুব ক্ষতি হয়। যাতে স্মৃতিশক্তি, ঘ্রাণশক্তি ও স্বাদ গ্রহণের ক্ষমতা হ্রাস পায়। তাঁদের মস্তিষ্কের সেরেবেলাম অংশ ক্ষয়ে যায় বলে তাঁদের সচেতনতার মাত্রাও কমে যায়।
সাধারণত, মধ্যবয়সিদের ফিবছরে গড়ে ০.২ শতাংশ হারে মস্তিষ্কের গ্রে ম্যাটারের ক্ষয় হয়। কিন্তু গবেষকরা দেখেছেন, কোভিডে আক্রান্তদের ক্ষেত্রে মস্তিষ্কে গ্রে ম্যাটারের ক্ষয়ের হার আরও বেড়ে যায়। হয় ০.৭ শতাংশ।
অস্ট্রেলিয়ার কার্টিন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক বিশিষ্ট স্নায়ুবিজ্ঞানী সারা হেলেওয়েল বলেছেন, ‘‘এটি অত্যন্ত উল্লেখযোগ্য গবেষণা।’’ তিনি নিজে এই গবেষকদলের সদস্য নন। সারা এ-ও বলেছেন, ‘‘এ বার দেখতে হবে কোভিড রোগীদের মস্তিষ্কের সেই পরিবর্তনগুলি স্থায়ী হয় কি না বা সেগুলির স্থায়িত্ব হয় কত দিনের। সেগুলি থেকে মস্তিষ্ককে আবার তার আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা যায় কি না।’’