HIV

এড্‌সের নয়া টিকা ৯৭ শতাংশ সফল মানুষের উপর পরীক্ষায়, বিরল প্রতিরোধী কোষের হদিশ

বিরল কোষগুলি এ়ড্‌সের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে মূল ভূমিকা নেয়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ এপ্রিল ২০২১ ১২:৫৩
Share:

এড্স‌-এর টিকা। - ফাইল ছবি।

কোভিড টিকা নিয়ে ভীতি ও সংশয়ের মধ্যেই সাড়া ফেলে দিল এড্‌স ভাইরাস এইচআইভি রোখার টিকার প্রথম মানুষের উপর পরীক্ষা বা হিউম্যান ট্রায়াল। যার সাফল্যের হার ৯৭ শতাংশ বলে দাবি গবেষকদের।

Advertisement

গবেষকদের দাবি, এইচআইভি রোখার এই টিকা মানুষের শরীরে অত্যন্ত বিরল একগুচ্ছ প্রতিরোধী কোষকে (‘ইমিউন সেল’) জাগিয়ে তুলতে ৯৭ শতাংশ ক্ষেত্রে সফল হয়েছে। দেহের স্বাভাবিক প্রতিরোধী ব্যবস্থার এই বিরল কোষগুলি মানুষের শরীরে এ়ড্‌স ভাইরাসের বিরুদ্ধে শক্তিশালী প্রতিরোধ গড়ে তুলতে মূল ভূমিকা নেয়।

এড্‌স রোখার এই নতুন টিকা যৌথ ভাবে বানিয়েছে আমেরিকার সান ডিয়েগোর ‘স্ক্রিপ্‌স রিসার্চ ইনস্টিটিউট’ এবং এইচআইভি টিকা প্রস্তুতকারী অলাভজনক সংস্থা ‘ইন্টারন্যাশনাল এড্‌স ভ্যাকসিন ইনিশিয়েটিভ (আইএভিআই)’-এর বিজ্ঞানীরা। মানুষের উপর পরীক্ষার প্রথম দফায় এই টিকা ৪৮ জনের উপর প্রয়োগ করা হয়েছে বলে স্ক্রিপ্‌স রিসার্চ ইনস্টিটিউটের তরফে বুধবার জানানো হয়েছে। গবেষণার ফলাফল ঘোষণা করা হয়েছে ইন্টারন্যাশনাল এড্‌স সোসাইটির ‘এইচআইভি রিসার্চ ফর প্রিভেনশন’ শীর্ষক ভার্চুয়াল সম্মেলনে।

Advertisement

স্ক্রিপ্‌স রিসার্চ ইনস্টিটিউট এ-ও জানিয়েছে, এই নতুন এড্‌স টিকা যাতে আরও তাড়াতাড়ি আরও বেশি পরিমাণে বানানো যায়, তার জন্য ‘মেসেঞ্জার আরএনএ (এমআরএনএ)’ প্রযুক্তির সাহায্য নেওয়ার কথা ভাবা হয়েছে। আর সেই প্রযুক্তিতে নতুন এ়ড্‌স টিকা বানাতে আমেরিকার টিকা প্রস্তুতকারী সংস্থা ‘মডার্না’-র সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হতে চলেছেন গবেষকরা। ঘটনাচক্রে, মডার্নাও কোভিড টিকা তৈরি করেছে সম্প্রতি।

গত শতাব্দীর আটের দশকে এইচআইভি (‘হিউম্যান ইমিউনোডেফিসিয়েন্সি ভাইরাস’) ভাইরাস আবিষ্কারের পরপরই ওই ভাইরাস রোখার কয়েকটি টিকা নিয়ে মানুষের উপর পরীক্ষা চালানো হয়। কখনও পরীক্ষা চালানো হয় দু’ধরনের এইচআইভি টিকার সমন্বয়ের মাধ্যমে। কিন্তু কোনও মানুষের উপর কোনও পরীক্ষার সাফল্যের হার ৩১ শতাংশের বেশি ছিল না। টিকাগুলির কার্যকারিতার মেয়াদও ১ বছরের বেশি হতে পারেনি। ফলে সেই টিকা বাজারে সার্বিক ভাবে চালু হওয়ার জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (‘হু’) বা কোনও আন্তর্জাতিক নিয়ন্ত্রক সংস্থারই ছাড়পত্র পায়নি।

এত দিন এইচআইভি টিকাগুলির সাফল্যের হার কেন এতটা কম ছিল? বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, ‘‘খুব দ্রুত নিজেদের বদলে ফেলা (‘ভেরি ফাস্ট মিউটেটিং’) এইচআইভি ভাইরাস মানুষের দেহের স্বাভাবিক প্রতিরোধ ব্যবস্থার একটি অংশকে সরাসরি আক্রমণ করে। একই সঙ্গে মানুষের দেহের প্রতিরোধ ব্যবস্থার অন্য অংশগুলিকেও দ্রুত অকেজো করে দিতে পারে। ফলে এইচআইভি ভাইরাস রোখার ক্ষেত্রে এত দিন কোনও টিকারই সাফল্যের হার তত বেশি হতে পারেনি।’’

যে কোনও ভাইরাসকে রোখার কাজটা করে মানুষের দেহের প্রতিরোধী ব্যবস্থার অ্যান্টিবডি প্রোটিনগুলি। তার জন্য মৃত ভাইরাস বা তাদের শরীরের অংশ দিয়ে বানানো টিকা প্রয়োগ করে মানুষের দেহের প্রতিরোধী ব্যবস্থার অ্যান্টিবডি প্রোটিনগুলিকে চেনানো হয় শত্রু ভাইরাসটি দেখতে কেমন, কী ভাবে সে আক্রমণ করে। কিন্তু এইচআইভি ভাইরাস মানুষের দেহের অ্যান্টিবডি প্রোটিনগুলিকে ধোঁকা দিতে খুবই ওস্তাদ। তাই তারা খুব দ্রুত নিজেদের রূপ বদলে ফেলে। যাতে মানুষের দেহের অ্যান্টিবডি প্রোটিনগুলি তাকে চিনতে, বুঝতে না পারে। তা হলেই তার কেল্লাফতে।

গবেষকদের কৃতিত্ব, তাঁরা নতুন টিকার প্রয়োগে মানুষের শরীরের প্রতিরোধী ব্যবস্থায় বিরল একগুচ্ছ কোষকে জাগিয়ে তুলতে পেরেছেন। এই কোষগুলি এইচআইভি ভাইরাসের স্পাইক প্রোটিনগুলিকে চিনে, বুঝে তাকে বেঁধে ফেলতে পারে। ঘটনা হল, এইচআইভি-র সব রকমের রূপেই স্পাইক প্রোটিনগুলি থাকে একই ধরনের। এই স্পাইক প্রোটিনগুলিকে ব্যবহার করেই এইচআইভি ঢুকে পড়ে মানুষের শরীরে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement