বিরল সম্মান বাঙালির। অধ্যাপক সুমন্ত্র চট্টোপাধ্যায়। -নিজস্ব চিত্র।
বাঙালি পেল এক দুর্লভ সম্মান। ইউরোপীয় জোটের (ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন বা ‘ইইউ’) বাইরে থাকা দেশের এক বিজ্ঞানীকে বিরল সম্মান জানাল ‘ইউরোপিয়ান মলিকিউলার বায়োলজি অর্গানাইজেশন (ইএমবিও অথবা এমবো)’। জীববিজ্ঞানে তাঁর আজীবন অবদানের জন্য।
বেঙ্গালুরুর ‘ন্যাশনাল সেন্টার ফর বায়োলজিক্যাল সায়েন্সেস (এনসিবিএস)’-এর সিনিয়র প্রফেসর ও ‘সেন্টার ফর ব্রেন ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড রিপেয়ার’-এর অধিকর্তা অধ্যাপক সুমন্ত্র চট্টোপাধ্যায়কে অ্যাসোসিয়েট সদস্য করা হল এমবোর। সুমন্ত্রই প্রথম বাঙালি এবং ভারতের প্রথম স্নায়ুবিজ্ঞানী, যিনি এই সম্মান পেলেন।
ভারত থেকে এই সম্মান এর আগে পেয়েছেন আর মাত্র ৪ জন বিজ্ঞানী। যাঁদের মধ্যে অন্যতম প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর প্রিন্সিপাল সায়েন্টিফিক অ্যাডভাইসর কে বিজয়রাঘবন। গত ৫৭ বছরে এমবো-র ১৮০০-রও বেশি সদস্যের মধ্যে রয়েছেন ৮৮ জন নোবেলজয়ী বিজ্ঞানী।
মঙ্গলবার ভারতীয় সময় বিকেল সাড়ে ৫টায় জার্মানির হাইডেলবার্গে এমবোর এ বছরের নতুন সদস্যদের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। নতুন ৬৩ জন সদস্যই নিজ নিজ ক্ষেত্রে অগ্রণী বিজ্ঞানী। ইউরোপ ও ইউরোপের বাইরের মোট ২৫টি দেশ থেকে বেছে নেওয়া হয়েছে এই বিজ্ঞানীদের। যাঁদের মধ্যে ৫২ জন ইউরোপীয় বিজ্ঞানী হয়েছেন এমবোর পূর্ণ সদস্য। ইউরোপের ৮টি দেশ থেকে।
আর এ বছরে এমবোর নতুন অ্যাসোসিয়েট সদস্য হয়েছেন ১১ জন, ইউরোপের বাইরের ৭টি দেশ থেকে। যাদের মধ্যে রয়েছে, ভারত, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, চিলে, সিঙ্গাপুর ও আমেরিকা।
১১ জনের অ্যাসোসিয়েট সদস্যদের তালিকায় প্রথমেই রয়েছে ভারতীয় স্নায়ুবিজ্ঞানী সুমন্ত্রের নাম। বিজ্ঞানে অবদানের জন্য সুমন্ত্রের দেশ ও বিদেশের স্বীকৃতি অবশ্য এই প্রথম নয়। ২০১৭-য় সুমন্ত্র নির্বাচিত সদস্য হন ‘ডানা অ্যালায়েন্স ফর ব্রায়ান ইনিশিয়েটিভস’-এর।
আরও পড়ুন- ব্ল্যাক হোল থেকে আলোর ঝলক দেখল নাসা, মিলল আরও এক বার্তাবাহক
আরও পড়ুন- ভারতে কেন কোভিড-মৃত্যু তুলনায় কম, আলো ফেলল ৪ বাঙালির গবেষণা
হাইডেলবার্গ থেকে এমবো-র অধিকর্তা মারিয়া লেপ্টিন বলেছেন, ‘‘নতুন সদস্যদের প্রত্যেকেই ইউরোপ ও গোটা বিশ্বে জীববিজ্ঞানের গবেষণার অগ্রগতিতে উল্লেখযোগ্য স্বাক্ষর রেখেছেন। আমাদের আশা, আগামী দিনে তাঁরা বিশ্বে জীববিজ্ঞানের গবেষণায় প্রতিভা অন্বেষণ, নতুন নতুন ভাবনা সৃষ্টি ও গবেষণার মান উন্নয়নে সহায়তা করবেন।’’
বেঙ্গালুরু থেকে ‘আনন্দবাজার ডিজিটাল’কে এ দিন সুমন্ত্র বললেন, ‘‘এই সম্মান পেয়ে আমি খুশি। গত ২২ বছর ধরে আমার ল্যাবরেটরিতে কাজ করেছেন প্রতিভাবান ভারতীয় ছাত্রছাত্রীরা, পোস্ট ডক্টরাল গবেষকরাও। এটা তাঁদেরই কঠিন পরিশ্রম ও সাফল্যের স্বীকৃতি।’’
আদ্যোপান্ত রসিক ও তুখোড় অনুভূতিপ্রবণ মানুষ সুমন্ত্র (যাকে সকলেই এক ডাকে চেনেন ‘সোনা’ নামে) আজীবন গবেষণা করেছেন ভয় নিয়ে। চাপ (‘স্ট্রেস’), অনুভূতি (‘ইমোশন’) ও স্মৃতি (‘মেমরি’) নিয়ে। কাজ করেছেন ‘পোস্ট ট্রম্যাটিক ডিসঅর্ডার নিয়ে (পিটিএসডি)’ নিয়ে। পথপ্রদর্শক গবেষণায় অনেক জটিল রহস্যের জট খুলে ‘সোনা’ দেখিয়েছেন, দীর্ঘ দিনের চাপ কী ভাবে ধীরে ধীর আমাদের মস্তিষ্কের অ্যামিগডালার চেহারা, চরিত্র, আচার, আচরণ বদলে দেয়।
শান্তিনিকেতনের সোনাই প্রথম দেখিয়েছিলেন, আমাদের মস্তিষ্কের হিপোক্যাম্পাস ও প্রিফন্ট্রাল কর্টেক্সে চাপের জন্য যে ক্ষয়ক্ষতি হয়, তার থেকে কতটা আলাদা দীর্ঘ দিনের চাপে অ্যামিগডালার পরিবর্তন। অ্যামিগডালাই আমাদের মস্তিষ্কের যাবতীয় অনুভূতির প্রাণকেন্দ্র।
সম্প্রতি অটিজমের উপর আলো ফেলেছেন শান্তিনিকেতনের সোনা। স্টেম সেল থেকে মস্তিষ্কের কোষ (‘ব্রেন সেল’) তৈরি করে সেখানেই এখন কাজ করে চলেছেন সুমন্ত্র।
এমবোর স্বীকৃতি এই সব পথপ্রদর্শক গবেষণাকেই সম্মান জানাল।