শিল্পীর কল্পনায় জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ। ছবি সৌজন্যে- নাসা।
আরও গভীরে পৌঁছে ব্রহ্মাণ্ডকে চেনা, জানার জন্য মহাকাশে হাব্ল-এর চেয়েও এ বার অনেক গুণ বেশি শক্তিশালী টেলিস্কোপ পাঠাচ্ছে নাসা। তার নাম— জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ (জেডব্লিউএসটি)।
নাসা জানিয়েছে, আগামী ২২ ডিসেম্বর নতুন শক্তিশালী টেলিস্কোপ মহাকাশে পাড়ি জমাবে ‘আরিয়েন ৫ ইসিএ’ রকেটে চেপে। অত্যন্ত শক্তিশালী সেই রকেট উৎক্ষেপণ করা হবে দক্ষিণ আমেরিকার ফরাসি গায়ানা থেকে।
এর আগে এই উৎক্ষেপণের কথা ছিল আগামী ১৮ ডিসেম্বরে। কিন্তু প্রায় শেষ মুহূর্তে আরিয়েন ৫ ইসিএ রকেটের একেবারে উপরের স্তরে (‘আপার স্টেজ’) কিছু যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেওয়ায় নাসা গত ২২ নভেম্বর ঘোষণা করেছিল, পূর্বনির্ধারিত সূচিতে (১৮ ডিসেম্বর) মহাকাশে রওনা করানো যাবে না জেমস ওয়েব টেলিস্কোপকে। কবে সেই উৎক্ষেপণ হবে তা পরে জানানো হবে।
হাব্ল থেকে জেমস ওয়েব: তিনটি দশক
৩১ বছর আগে ১৯৯০ সালের ২৪ এপ্রিল নাসা মহাকাশ পর্যবেক্ষণের জন্য পাঠিয়েছিল হাব্ল স্পেস টেলিস্কোপ। তার পর গত তিন দশকে মহাকাশবিজ্ঞান খুব দ্রুত গতিতে এগিয়ে গিয়েছে। এগিয়ে চলেছে। তাই ব্রহ্মাণ্ডের আরও গভীরে গিয়ে পর্যবেক্ষণ জরুরি হয়ে উঠেছে।
তারই জন্য বানানো হয়েছে জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ। মহাকাশের এই খুব শক্তিশালী টেলিস্কোপটি বানাতে নাসার সঙ্গে হাত মিলিয়েছে ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি (এসা) এবং কানাডিয়ান স্পেস এজেন্সি (সিএসএ)। টেলিস্কোপটিকে যে রকেটে চাপিয়ে পাঠানো হবে মহাকাশে, সেই আরিয়েন ৫ ইসিএ রকেটটি বানিয়েছে ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি। এটি অত্যন্ত শক্তিশালী রকেট।
জেমস ওয়েবই হবে মহাকাশ দেখার প্রধান চোখ
বিশেষজ্ঞদের ধারণা, আগামী অন্তত এক দশক ধরে এই জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপই হবে নাসা, এসা, সিএসএ, ইসরো, জাক্সা (জাপানের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা), রসকসমস (রুশ মহাকাশ গবেষণা সংস্থা)-এর মহাকাশ পর্যবেক্ষণ ও গবেষণার প্রধান অবলম্বন। নাসার ভাষায়, ‘প্রিমিয়ার অবজারভেটরি ইন স্পেস’। মহাকাশে প্রধান পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র।
জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ। মহাকাশে পেরতে হবে ১৫ লক্ষ কিলোমিটার পথ গন্তব্যে পৌঁছতে।
পাড়ি দিতে হবে ১৫ লক্ষ কিলোমিটার, মহাকাশে
নাসা জানিয়েছে, মহাকাশে যে জায়গায় এই অবলোহিত রশ্মির টেলিস্কোপটিকে বসানো হবে সেই জায়গাটি পৃথিবী থেকে ১০ লক্ষ মাইল বা ১৫ লক্ষ কিলোমিটার দূরে। উৎক্ষেপণের পর সেই পথ পাড়ি দিতে জেমস ওয়েব টেলিস্কোপের এক মাস সময় লাগবে। সবকিছু ঠিকঠাক চললে। সেখানে পৌঁছে তার আয়নাগুলি ও সানশিল্ড খুলতে ও অন্যান্য যন্ত্র চালু করতে লাগবে আরও অন্তত মাসছয়েক সময়।
কোন কোন যন্ত্র রয়েছে জেমস ওয়েবে
বিজ্ঞান গবেষণার জন্য এই টেলিস্কোপে রয়েছে মূলত ছয়টি যন্ত্র। ‘নিয়ার-ইনফ্রারেড ক্যামেরা (নিরক্যাম)’, ‘নিয়ার-ইনফ্রারেড স্পেকট্রোগ্রাফ (নিরস্পেক)’, ‘মিড-ইনফ্রারেড ইনস্ট্রুমেন্ট (মিরি)’, ‘নিয়ার-ইনফ্রারেড ইমেজার (নিনফি)’, ‘স্লিটলেস স্পেকট্রোগ্রাফ (নিরিস)’ এবং ‘ফাইন গাইডেন্স সেন্সর (এফজিএস)’।
কী কী দেখবে, খুঁজবে জেমস ওয়েব
নাসা জানিয়েছে, এই টেলিস্কোপ প্রায় ১৪০০ কোটি বছর আগে বিগ ব্যাং বা মহা-বিস্ফোরণের পর থেকে এখনকার সময় পর্যন্ত বিভিন্ন মহাজাগতিক বস্তু, তাদের উৎপত্তি ও বিকাশ ও ধ্বংসের বহু ঘটনা পর্যবেক্ষণ করতে পারবে। যা ব্রহ্মাণ্ডের অনেক অজানা তথ্য বিজ্ঞানীদের জানাতে পারবে।
এই টেলিস্কোপ সৌরমণ্ডলের জন্মের দিনগুলির কথাও জানতে পারবে। জানতে পারবে ভিন নক্ষত্রদের মুলুকে প্রাণের পক্ষে টিকে থাকার পরিবেশ রয়েছে কি না। থাকলে কতটা। এমনকি, বিগ ব্যাংয়ের দীর্ঘ সময় পর প্রথম প্রজন্মের ছায়াপথগুলি কী ভাবে তৈরি হয়েছিল, সেই ইতিহাসও বিজ্ঞানীদের জানতে প্রধান হাতিয়ার হয়ে উঠবে জেমস ওয়েব টেলিস্কোপই, জানিয়েছে নাসা।