প্লাসেন্টাই গর্ভস্থ ভ্রূণকে জড়িয়ে রাখে বলে করোনাভাইরাসের সংক্রমণে অন্তঃসত্ত্বাদের মৃত শিশু প্রসবের আশঙ্কা অনেক গুণ বেড়ে যায়।-ফাইল ছবি।
কোভিডে সংক্রমিত অন্তঃসত্ত্বাদের জরায়ুর ভিতরে থাকা প্লাসেন্টায় ঢুকে পড়ে করোনাভাইরাস। তার পর তা দ্রুত প্লাসেন্টাকে নষ্ট করে দেয়। তার ফলে মৃত শিশু প্রসবের আশঙ্কা অনেক গুণ বেড়ে যায়।
সাম্প্রতিক একটি গবেষণা এই খবর দিয়েছে। আমেরিকা-সহ ১২টি দেশের বিজ্ঞানীদের এই গবেষণার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান গবেষণা পত্রিকা ‘আর্কাইভস অব প্যাথোলজি অ্যান্ড ল্যাবরেটরি মেডিসিন’-এ। বৃহস্পতিবার।
প্লাসেন্টাই গর্ভস্থ ভ্রূণকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে রাখে বলে করোনাভাইরাসের সংক্রমণে অন্তঃসত্ত্বাদের মৃত শিশু প্রসবের সম্ভাবনা অনেক গুণ বেড়ে যায়। প্লাসেন্টার মাধ্যমে প্রসূতির রক্তে থাকা অক্সিজেন ও অন্যান্য পুষ্টিরস গর্ভস্থ ভ্রূণের ভিতরে ঢোকে। প্রসূতির রক্তপ্রবাহের মাধ্যমেই করোনাভাইরাস প্লাসেন্টায় পৌঁছয়।
গবেষকরা কোভিডে সংক্রমিত মহিলাদের প্রসবের পর ৬৪টি মৃত শিশুর প্লাসেন্টা ও অটোপ্সির কলাগুলি পরীক্ষা করেছেন। প্রসবের অল্প সময়ের মধ্যেই মৃত চারটি সদ্যোজাতেরও প্লাসেন্টা ও অটোপ্সির কলাগুলি পরীক্ষা করে দেখেছেন গবেষকরা। সেই সব পরীক্ষা সূত্রেই গবেষণার এই ফলাফল। পরীক্ষা যে সব প্রসূতির উপর চালানো হয়েছে সংক্রমণের আগে তাঁদের কেউই টিকা নেননি।
গবেষকদলের সদস্য নন তবে আমেরিকার নর্থওয়েস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেইনবার্গ স্কুল অব মেডিসিনের বিশেষজ্ঞ প্যাথোলজিস্ট জেফ্রি গোল্ডস্টিন বলেছেন, ‘‘কোভিডে সংক্রমিত অন্তঃসত্ত্বাদের একের পর এক মৃত শিশু প্রসবের ঘটনার জন্য জরায়ুতে সংক্রমণের চেয়েও যে বেশি দায়ী প্লাসেন্টার ক্ষয়ক্ষতি। এই গবেষণার ফলাফল সেই ধারণার ভিত্তিকে জোরদার করল।’’
এর আগের বিভিন্ন গবেষণার ফলাফল জানিয়েছিল, অন্য অন্তঃসত্ত্বাদের চেয়ে কোভিডে সংক্রমিত অন্তঃসত্ত্বাদের মৃত শিশু প্রসবের আশঙ্কা অনেক বেশি। সেটা কেন, তার কারণ স্পষ্ট ভাবে এত দিন বোঝা যাচ্ছিল না। বিজ্ঞানীদের একাংশের ধারণা ছিল, তার কারণ হতে পারে শিশু মাতৃগর্ভে থাকার সময় প্রসূতির জরায়ুতে সংক্রমণ। এই গবেষণা জানাল, তার চেয়েও বেশি বিপজ্জনক করোনাভাইরাসের জন্য প্লাসেন্টার ক্ষয়ক্ষতি।
মূল গবেষক আটলান্টার বিশেষজ্ঞ প্যাথোলজিস্ট ডেভিড শোয়ার্ৎজ বলেছেন, ‘‘ভাইরাস, ব্যাক্টেরিয়া বা ছত্রাকের অন্যান্য সংক্রমণের ক্ষেত্রেও আগে দেখা গিয়েছে, মাতৃগর্ভে ভ্রূণকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে থাকা প্লাসেন্টার প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়। সেটা করোনাভাইরাসের সংক্রমণেও হয় কি না, আমরা দেখতে চেয়েছিলাম। দেখা গিয়েছে, কোভিডে সংক্রমিত ৯০ শতাংশ অন্তঃসত্ত্বারই জরায়ুর ভিতরে থাকা প্লাসেন্টার প্রচুর ক্ষতি করে করোনাভাইরাস। তার ফলেই মৃত শিশু জন্মের আশঙ্কা বহু গুণ বেড়ে যায়।’’
প্লাসেন্টার সেই ক্ষয়ক্ষতি বোঝা গিয়েছে কী ভাবে?
সুস্থ, স্বাভাবিক প্লাসেন্টার কলাগুলি হয় লাল রঙের। সেগুলিকে খুব তরতাজা দেখতে লাগে। সেগুলি হয় স্পঞ্জের মতো তুলতুলে। কিন্তু কোভিডে সংক্রমিত অন্তঃসত্ত্বার জরায়ুর প্লাসেন্টা করোনাভাইরাসের হানাদারিতে খুব শক্ত হয়ে যায়। তার স্থিতিস্থাপকতা (‘ইলাস্টিসিটি’) একেবারেই নষ্ট হয়ে যায়। প্লাসেন্টা আর স্পঞ্জের মতো তুলতুলে থাকে না। তার রঙও কিছুটা কালচে হয়ে যায়। কলাগুলি আর জীবন্ত থাকে না বলে।
গবেষকরা দেখেছেন, অন্তঃসত্ত্বার উচ্চ রক্তচাপ, দীর্ঘ দিনের নানা ধরনের শারীরিক জটিলতা কোভিডে সংক্রমিতের মৃত শিশু প্রসবের আশঙ্কা আরও বাড়িয়ে দেয়।
তবে গবেষকদের আশা, কোভিড টিকা নেওয়া থাকলে অন্তঃসত্ত্বার এই সমস্যা থেকে মুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা কিছুটা বেড়ে যায়। মৃত শিশু প্রসবের আশঙ্কা কমে।