Omicron

Omicron: মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডিগুলির অনেককেই ধোঁকা দিচ্ছে ওমিক্রন, দু’একটিকে পারছে না, জানাল গবেষণা

কোন কোন মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডিকে ওমিক্রন ধোঁকা দিতে পারছে আর কোন কোনগুলিকে বোকা বানাতে পারছে না এই গবেষণায় সেগুলিকেও আলাদা আলাদা ভাবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ জানুয়ারি ২০২২ ১২:৪৮
Share:

ওমিক্রন বোকা বানাচ্ছে মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডিকেও! -ফাইল ছবি।

গবেষণাগারে বানানো বহু মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডিকেই ধোঁকা দিতে পারছে ওমিক্রন। নিজের স্পাইক প্রোটিনের বিভিন্ন অংশ খুব অল্প সময়ের মধ্যে এত বার বদলে নিয়েছে ওমিক্রন যে, মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডিগুলি শত্রুকে চিনতে পারছে না। ফলে, তাকে কোষের ভিতরে ঢুকে পড়তে বাধা দিতে পারছে না। তাই ওমিক্রনের সংক্রমণও অনেক ক্ষেত্রে ভয়াবহ হয়ে উঠছে। যদিও এই উদ্বেগজনক পরিস্থিতিতে আশার খবর এটুকুই যে, গবেষণাগারে বানানো কয়েকটি মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডিকে কিন্তু ধোঁকা দিতে পারছে না ওমিক্রন। সেই মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডিগুলি ওমিক্রনকে ঠিকঠাক ভাবে চিনে নিতে পারছে। সেই সব ক্ষেত্রে করোনাভাইরাসের এই নতুন রূপটি (‘ভেরিয়্যান্ট’) আর মানব দেহকোষের ভিতরে ঢুকতে পারছে না। সংক্রমণও ভয়াবহ হয়ে উঠছে না।

Advertisement

সাম্প্রতিক একটি গবেষণা এই খবর দিয়েছে। কোন কোন মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডিকে ওমিক্রন ধোঁকা দিতে পারছে আর কোন কোনগুলিকে বোকা বানাতে পারছে না এই গবেষণায় সেগুলিকেও আলাদা আলাদা ভাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। তাই বিশেষজ্ঞদের একাংশ মনে করছেন, ওমিক্রনের সংক্রমণ ভয়াবহ পর্যায়ে পৌঁছতে কোন কোন মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডির ওষুধ কার্যকর হবে এই গবেষণার ফলাফল তা আগেভাগে বুঝতে সাহায্য করতে পারে আগামী দিনে।

গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান গবেষণা পত্রিকা ‘নেচার মেডিসিন’-এ। গবেষণাপত্রটি পিয়ার রিভিউ করেছেন বিশেষজ্ঞদেরই একাংশ। তবে অন্য বিশেষজ্ঞরা এও জানিয়েছেন, এই ধরনের বহু গবেষণা হচ্ছে। কোনও একটি গবেষণার ফলাফল যা জানাচ্ছে অনেক ক্ষেত্রেই অন্য গবেষণার ফলাফলে তার বিপরীত ছবি বেরিয়ে আসছে। অল্প সময়ে কাজ করতে গিয়ে করোনা নিয়ে গবেষণার মান অন্য গবেষণার মানের চেয়েও কিছুটা নেমে গিয়েছে। অনেক সময় পিয়ার রিভিউ হওয়া কোনও গবেষণাপত্র নিয়েও তাই বিতর্ক দানা বাঁধছে। এই গবেষণার ফলাফল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (‘হু’) বা আমেরিকার ‘সেন্টার্স ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি)’ অনুমোদন করেছে কি না তা এখনও জানা যায়নি।

Advertisement

করোনাভাইরাস-সহ যে কোনও ভাইরাসের সংক্রমণের নির্দিষ্ট সময় পর মানবদেহের স্বাভাবিক প্রতিরোধ ব্যবস্থা বহিরাগত শত্রুকে চিনে নেওয়া ও তার বিরুদ্ধে লড়াই চালানোর জন্য অ্যান্টিবডি তৈরি করে। তারা সময়ের অভিজ্ঞতায় বুঝে নেয় কে বা কারা শত্রু, তাদের বিরুদ্ধে কী ভাবে লড়তে হবে। কোভিড টিকার মতো ভাইরাস, ব্যাক্টেরিয়া বা ছত্রাকের যে কোনও সংক্রমণ রুখতে যে সব টিকা দেওয়া হয় তাদের লক্ষ্য, কম সময়ের মধ্যে শরীরের স্বাভাবিক প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করে তোলা। যাতে সেই ব্যবস্থা আরও কম সময়ে সেই শত্রুকে চিনতে, বুঝে নিতে পারে। তাদের বিরুদ্ধে লড়াই চালানোর জন্য আরও বেশি পরিমাণে অ্যান্টিবডি তৈরি করতে পারে। সংক্রমণের পর স্বাভাবিক ভাবেই হোক বা টিকার মাধ্যমে, মানবশরীরে এই অ্যান্টিবডি তৈরি হওয়ার প্রক্রিয়া কিছুটা সময়সাপেক্ষ।

যে সময়টা খরচ করতে হয় না মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডিগুলি ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে মানবশরীরে ঢুকিয়ে দিলে। বহিরাগত শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াই চালানোর জন্য মানবদেহ তখন অ্যান্টিবডি পেয়ে যায় হাতেগরম অবস্থায়। এই সব মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডিগুলি তৈরি করা হয় গবেষণাগারে। এর আগে বিভিন্ন ধরনের ক্যানসারের সংক্রমণ রুখতেও মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডির ব্যবহার হয়েছে। তা অনেক ক্ষেত্রে ফলপ্রসূও হয়েছে।

গত দু’বছরের অতিমারি পর্বে এমআরএনএ-সহ বিভিন্ন পদ্ধতিতে কোভিড টিকা উদ্ভাবনের পাশাপাশি করোনাভাইরাসের বিভিন্ন রূপের স্পাইক প্রোটিনের মিউটেশনগুলি দেখে, বুঝে তাদের চিনতে পারার ক্ষমতাসম্পন্ন নানা ধরনের মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডি বানানো হয়েছে গবেষণাগারে। মানবশরীরে তাদের প্রয়োগ করার জন্য নানা ধরনের ওষুধও বানিয়েছে বিশ্বের কয়েকটি ওষুধ সংস্থা। ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে মানবশরীরে ঢুকিয়ে দেওয়া হয় সেই ওষুধ। বেশির ভাগ ইঞ্জেকশনই দেওয়া হয় মানবদেহের ধমনীতে। তাই এই ইঞ্জেকশনগুলির বেশির ভাগই ‘ইন্ট্রাভেনাস’। ব্যাতিক্রমও আছে। কোনও ক্ষেত্রে কোভিড সংক্রমণ রুখতে বা তা যাতে ভয়াবহ পর্যায়ে না পৌঁছয় তার জন্য মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডি মানবশরীরে ঢুকিয়ে দেওয়া হয় মাংসপেশিতে ইঞ্জেকশন দিয়ে। সেই ইঞ্জেকশন হয় ‘ইন্ট্রামাসকুলার’।

মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডি মানবদেহে ঢুকিয়ে দেওয়ার জন্য কখনও একক ভাবে কোনও ওষুধ ব্যবহার করা হয়েছে। আবার কখনও সংক্রমণ যাতে ভয়াবহ পর্যায়ে পৌঁছে না যায়, তার জন্য মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডির দু'টি বা তিনটি ওষুধকেও ব্যবহার করা হয়েছে কোভিড রোগীদের চিকিৎসায়। ক্যানসারের কেমোথেরাপি বা ইমিউনোথেরাপিতে যেমন পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন ওষুধ প্রয়োগ করা হয়। কখনও একক ভাবে। কখনও যৌথ ভাবে।

মিসৌরির সেন্ট লুইসে ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব মেডিসিনের গবেষকদের নেতৃত্বে হওয়া এই গবেষণায় বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, ভ্যানডারবল্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিক্যাল সেন্টারের গবেষকরা যে মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডি তৈরি করেছেন আর তা নিয়ে আমেরিকার ওষুধ সংস্থা অ্যাস্ট্রাজেনেকা যে ওষুধ বানিয়েছে (বাজারে পরিচিত ‘এভুশেল্ড’ নামে), সেটি করোনাভাইরাসের অন্য রূপগুলিকে যতটা চিনতে পারছে, তাদের সংক্রমণ রুখতে পারছে ওমিক্রনকে চেনা ও তাকে রোখার ব্যাপারে সেই সক্ষমতা কিছুটা কমে গিয়েছে। মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডির এই ওষুধটিকেই একমাত্র মাংসপেশিতে ইঞ্জেকশন করে দেওয়া হচ্ছে কোভিড রোগীদের। ওষুধ সংস্থা ‘ভির বায়োট‌েকনোলজি’-র বানানো মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডি কিন্তু তার চেয়ে বেশি চিনতে পারছে ওমিক্রনকে। ফলে, সংক্রমণ রুখতে সক্ষম হচ্ছে। আবার সেলট্রিয়ন, এলি লিলি বা রেজিনেরন-এর মতো ওষুধ সংস্থাগুলি কোভিড চিকিৎসার জন্য যে মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডিগুলি বানিয়েছে তারা ওমিক্রনকে চিনতে পারছে না বললেই হয়। ফলে, ওই সব মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডি দিয়ে বানানো ওষুধগুলি ওমিক্রনের সংক্রমণ রুখতে পারছে না, তা ভয়াবহ হয়ে ওঠার ক্ষেত্রে ততটা বাধা দিতে পারছে না।

গবেষকরা অবশ্য ওমিক্রন প্রতিরোধে এই মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডিগুলির কার্যক্ষমতা কোনও কোভিড রোগীর উপর প্রয়োগ করে দেখেননি। তাঁরা গবেষণাগারে কালচার করা কোষের উপর পরীক্ষা করে দেখেছেন। ফলে, কোভিড রোগীদের ক্ষেত্রে এই ফলাফলের তারতম্য হওয়ার সম্ভাবনা যে শূন্য, তা-ও বলা যায় না, জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ।

মূল গবেষক ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব মেডিসিনের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক মিশেল ডায়মন্ড বলেছেন, ‘‘ওমিক্রন খুব অল্প সময়ের মধ্যে স্পাইক প্রোটিনের বিভিন্ন অংশের ৩০টিরও বেশি মিউটেশন ঘটিয়েছে। সেই অংশগুলিকে বদলে ফেলেছে। ফলে, মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডি দিয়ে বহু ওষুধ ওমিক্রনের সংক্রমণ ততটা রুখতে পারছে না। কোনও ওষুধ সফল হচ্ছে, কোনও ওষুধ কার্যকর হচ্ছে না।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement