পাঠানো হচ্ছে মহাকাশযান ‘আদিত্য এলওয়ান’। আর ফের চাঁদের মাটি ছোঁয়ার বাসনা নিয়ে রওনা হবে চন্দ্রযান-৩।-ফাইল ছবি।
স্বাধীনতা প্রাপ্তির ৭৫তম বর্ষপুর্তিতে একই সঙ্গে সূর্য আর চাঁদের দিকে এ বছর হাত বাড়াচ্ছে ভারত।
ভারতের প্রথম সৌর অভিযানে পাঠানো হচ্ছে মহাকাশযান ‘আদিত্য এলওয়ান’। আর ফের চাঁদের মাটি ছোঁয়ার বাসনা নিয়ে রওনা হবে চন্দ্রযান-৩।
মহাকাশে যারা ভারতের এই দু’টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অভিযানকে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত নজরে রাখবে সেই ‘ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি (এসা)’-র তরফে এ খবর দেওয়া হয়েছে। এসা জানিয়েছে, অস্ট্রেলিয়া, আর্জেন্টিনা, স্পেনে বসানো তাদের ডিপ স্পেস নেটওয়ার্কের অ্যান্টেনাগুলির মাধ্যমে মহাকাশে এই দু’টি মহাকাশযানের অভিযানের প্রতিটি মুহূর্তের উপর নজর রাখা হবে। নজর রাখা হবে তাদের গতিবিধির উপর। কখন কোন সময়ে মহাকাশযানগুলিকে কী গতিবেগে ছোটাতে হবে কোন পথ ধরে কী ভাবে পৌঁছতে হবে নির্ভুল গন্তব্যে, তা আগাম জানিয়ে দেবে এই ডিপ স্পেস নেটওয়ার্কই। শুধু তা-ই নয়, মহাকাশ থেকে এই দুটি মহাকাশযানের পাঠানো যাবতীয় তথ্য, ছবি ও সিগন্যাল যাতে নির্বিঘ্নে পৌঁছতে পারে গ্রাউন্ড কন্ট্রোলে তার উপরেও নজর রাখবে ডিপ স্পেস নেটওয়ার্কের অ্যান্টেনাগুলি। এ ব্যাপারে ভারতের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরো-র সঙ্গে এসা-র চুক্তি হয়েছে।
এসা-র তরফে জানানো হয়েছে, ভারতের স্বাধীনতা প্রাপ্তির মাস অগস্টেই চন্দ্রযান-৩ উৎক্ষেপণের কথা ভেবে রেখেছে ইসরো। আর ভারতের প্রথম সৌর অভিযান আদিত্য এলওয়ান-এর উৎক্ষেপণ হওয়ার কথা এ বছরের অক্টোবর কি নভেম্বরে।
এসা-র সার্ভিস ম্যানেজার এবং ইসরো-র তরফে এসা-র লিয়াঁজো অফিসার রমেশ চেল্লাথুরাই বলেছেন, ‘‘এই নজরদারি ছাড়া মহাকাশে কোনও লক্ষ্যেই নির্ভুল ভাবে পৌঁছনো সম্ভব হয় না কোনও মহাকাশযানের।’’
ল্যান্ডার ‘বিক্রম’-কে চাঁদের পিঠে নামাতে গিয়ে ব্যর্থ হয়েছিল ইসরো-র চন্দ্রযান-২ মহাকাশযান। ২০১৯ সালের ৬ সেপ্টেম্বর। সেই অভিযানে পাঠানো অরবিটরটি এখনও চাঁদকে প্রদক্ষিণ করে চলেছে। তাই এ বারের অভিযানে ইসরো আর কোনও অরবিটার পাঠাবে না চাঁদের কক্ষপথে। চাঁদের মাটিতে নামতে কক্ষপথে থাকা চন্দ্রযান-২ এর অরবিটারেরই সাহায্য নেবে এ বার চন্দ্রযান-৩ এর সঙ্গে যাওয়া ল্যান্ডার আর তার ভিতরে থাকা রোভার। চাঁদের মাটিতে নেমে গবেষণা চালাবে দু’সপ্তাহ। যার জন্য এসা-র পাশাপাশি নাসার ডিপ স্পেস নেটওয়ার্কেরও সাহায্য নেবে ইসরো।
এসা-র এই সেই ডিপ স্পেস নেটওয়ার্ক। ছবি- এসা-র সৌজন্যে।
রমেশ এও জানিয়েছেন, আদিত্য এলওয়ান-কে পাঠানো হবে সূর্য ও পৃথিবীর মাঝে প্রথম ‘ল্যাগরাঞ্জে পয়েন্ট (এলওয়ান)’-এ। সৌর ঝড়, করোনাল মাস ইজেকশানের মতো ঘটনাগুলি সূর্যে কী ভাবে ঘটে, কোথায় সেগুলির উৎপত্তিস্থল তা জানা-বোঝার জন্যই ভারতের এই প্রথম সৌর অভিযান। পৃথিবীর যে দিকে সূর্য থাকবে সেই দিকেই থাকবে এই মহাকাশযান। তাই পৃথিবীর প্রদক্ষিণের সময় কোনও গ্রাউন্ড স্টেশন থেকেই এই মহাকাশযানটিকে সব সময় দেখা সম্ভব হবে না। সে ব্যাপারেই সাহায্য করবে এসা-র ডিপ স্পেস নেটওয়ার্ক।
প্রসঙ্গত, ল্যাগরাঞ্জে পয়েন্ট সূর্য ও পৃথিবীর মধ্যে এমন একটি জায়গা (এমন মোট পাঁচটি জায়গা রয়েছে) যেখানে কোনও মহাকাশযানের উপর পৃথিবী ও সূর্যের অভিকর্ষ বল, দুইই কার্যকর হবে। ফলে, এমন অবস্থানে থাকলে ছোটা বা কাজকর্ম চালানোর জন্য অনেক কম পরিমাণ জ্বালানি খরচ করতে হয় কোনও মহাকাশযানকে।