Skin Disease

Butterfly Children Disease: প্রজাপতির পাখনার মতো আর ঝরে পড়বে না ত্বক, শিশুদের বিরল রোগ নিরাময়ের দিশা মিলল

গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে নেচার মেডিসিন-এ। এই পদ্ধতি ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালেও সসম্মানে উত্তীর্ণ হয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ এপ্রিল ২০২২ ১৫:০৯
Share:

প্রজাপতির পাখনার মতো স্পর্শ করলেই ত্বকের অংশগুলি ঝুরঝুর করে ঝরে পড়ে এই রোগে। -ফাইল ছবি।

ফোস্কা পড়ার পর প্রজাপতির পাখনার মতো স্পর্শ করলেই ঝুরঝুর করে ঝরে পড়ে ত্বকের নানা অংশ। শিশুদের প্রায় দুরারোগ্য এই চর্মরোগ এ বার সারানো সম্ভব হবে। জেলি বা আঠার মতো বিশেষ ভাবে তৈরি একটি ‘জেল’-এর মাধ্যমে।

জেলটি বানিয়েছেন আমেরিকার স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা। গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান গবেষণা পত্রিকা ‘নেচার মেডিসিন’-এ। গত ১ এপ্রিল। এই পদ্ধতি ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালেও সসম্মানে উত্তীর্ণ হয়েছে।

জিনগত কারণে বংশানুক্রমে পাওয়া শিশুদের এই রোগটির নাম চিকিৎসাবিজ্ঞানের পরিভাষায়, ‘এপিডার্মোলিসিস বুলোসা (ইবি)’। এই রোগে শিশুদের হাতে, পায়ে, গাত্রত্বকের যেখানে সেখানে ফোস্কা পড়ে। সেই অংশটি খুব জ্বালা করে। তার পর প্রজাপতির পাখনার মতো স্পর্শ করলেই সেই অংশগুলি ঝুরঝুর করে ঝরে পড়ে। তাই একে ‘বাটারফ্লাই চিলড্রেন ডিজিজ’-ও বলা হয়।

এই রোগ পুরোপুরি সারানোর কোনও ওষুধ ছিল না বাজারে এতদিন। ছিল না কোনও চিকিৎসাপদ্ধতিও। এই রোগ মৃদু পর্যায়ের হলে অনেক সময় বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ধীরে ধীরে সেরে যায়। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বাটারফ্লাই চিলড্রেন ডিজিজ সারানো যায় না। ধীরে ধীরে তা মৃত্যুরও কারণ হয়ে ওঠে।

এই রোগ সারাতে স্টেম সেলের ব্যবহার হয় কোথাও কোথাও। কিন্তু তার জন্য ত্বকের গ্র্যাফটিং করাতে হয়। যা অত্যন্ত ব্যয়সাপেক্ষ। এই চিকিৎসার জন্য শিশুকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয়। শিশুকে হাসপাতালে রাখতেও হয় বেশ কিছু দিন। তার পরেও এই রোগ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পুরোপুরি সারানো সম্ভব হয় না।

স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের বানানো এই জেল শুধু যে সেই রোগের চিকিৎসার ব্যয় অনেক কমাতে পারল তা-ই নয়, চিকিৎসাপদ্ধতিকেও সরলতর করে তুলল, মনে করছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ।

Advertisement

এই জেল-এর মাধ্যমে বিশেষ একটি জিন ঢুকিয়ে দেওয়া হবে রোগগ্রস্ত শিশুর ত্বকের ভিতরে। সেই জিনটি রোগগ্রস্ত শিশুর শরীরে ঢুকে তার দেহে থাকা আর একটি জিনকে জাগিয়ে তুলবে। বলা যায়, তার ঘুম ভাঙিয়ে দেবে। রোগগ্রস্ত শিশুর শরীরের সেই জিনটিই তৈরি করে ‘সি-৭’ নামের একটি ‘কোলাজেন’। যার মধ্যে বিশেষ একটি প্রোটিনের অভাব থাকে বলেই শিশুদের ওই রোগ হয়। অথচ ত্বকের বাইরের স্তরের কোষগুলির গঠনে এই কোলাজেনের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই সেই কোলাজেনের মধ্যে যে বিশেষ প্রোটিনের অভাবের জন্য শিশুরা এই প্রায় দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত হয় জেল-এর মাধ্যমে তাদের শরীরে আর একটি জিন ঢুকিয়ে সেই প্রোটিনের অভাব পূরণ করা হবে। তার ফলে, কোলাজেনটির ঘুম ভাঙবে। তা আরও ত্বকের একেবারে বাইরের স্তরের কোষগুলিকে শক্তপোক্ত ভাবে গড়ে তুলতে পারবে। তাতে ত্বকের বিভিন্ন অংশের ভঙ্গুরতা কমবে। ত্বকের বিভিন্ন অংশ আর প্রজাপতির পাখনার মতো সামান্য স্পর্শেই ঝরে পড়বে না।

এর আগেও শিশুদের এই প্রায় দুরারোগ্য রোগের চিকিৎসায় এমন ধরনের কয়েকটি পদ্ধতি প্রয়োগের চেষ্টা চালিয়েছিলেন বিজ্ঞানীরা। কিন্তু সেই পদ্ধতিগুলির কোনওটিই ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে সফল হয়নি। এ বারই প্রথম ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে সফল হল স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভাবিত চিকিৎসাপদ্ধতি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement