খুব ছোট ড্রপলেটেও থাকে প্রচুর করোনাভাইরাস। -ফাইল ছবি।
হাঁচি, কাশির ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র ড্রপলেটে থাকা করোনাভাইরাসই অন্য কাউকে কোভিডে সংক্রমিত করার পক্ষে যথেষ্ট। অন্য এক জনকে সংক্রমিত করার জন্য কোনও কোভিড আক্রান্তের হাঁচি, কাশির ড্রপলেটের আকার বড় না হলেও হয়। খুব ছোট ড্রপলেটেও প্রচুর পরিমাণে থাকতে পারে করোনাভাইরাস।
ইম্পিরিয়াল কলেজ লন্ডনের বিজ্ঞানীদের সাম্প্রতিক একটি গবেষণা এই খবর দিয়েছে। গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান গবেষণা পত্রিকা ‘নেচার মেডিসিন’-এ। শুক্রবার।
গবেষকরা পরীক্ষাটি চালিয়েছেন একেবারে সুস্থ, কোনও দিন কোভিডে আক্রান্ত হননি এমন ৩৬ জন স্বেচ্ছাসেবকের উপর। তাঁদের শরীরে ঢোকানো হয় জীবন্ত ভাইরাস।
মানবশরীরে ঢোকার পর থেকে করোনাভাইরাস কোন কোন কোষগুলিকে আশ্রয়ের জন্য বেছে নেয়, কী ভাবে আক্রমণ করে ফুসফুস, পাকস্থলী, অগ্নাশয়ের কোষগুলিকে, কী ভাবে সংক্রমণের জন্য সাহায্য নেয় রক্তপ্রবাহের, তা আগাগোড়া বুঝতে এই প্রথম সুস্থ মানুষের দেহে জীবন্ত ভাইরাস ঢুকিয়ে সে সব পরীক্ষা করা হল। যা মানবদেহে ঢোকার পর করোনাভাইরাসের যাবতীয় কলাকৌশলকে এই প্রথম সার্বিক ভাবে তুলে ধরল বিজ্ঞানীদের সামনে।
ইম্পিরিয়াল কলেজ লন্ডনের বিজ্ঞানীদের এই গবেষণা আগামী দিনে কোভিডের আরও কার্যকরী নতুন নতুন ওষুধ আবিষ্কারের কাজ সহজতর করে তুলল বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ।
গবেষকরা দেখেছেন, অন্যকে সংক্রমিত করার জন্য আক্রান্তের হাঁচি, কাশির ড্রপলেটের ব্যাস ১০ মাইক্রন (এক মাইক্রন বলতে বোঝায় এক মিলিমিটারের এক হাজার ভাগের এক ভাগ) হলেই যথেষ্ট।
গবেষকরা এও দেখেছেন, মানবশরীরে ঢোকার পর সংক্রমণ ছড়াতে খুব বেশি সময় নেয় না করোনাভাইরাস। শরীরে ঢোকার দু’দিনের মধ্যেই মানবকোষ ঢুকে নিজেকে ভেঙে ফেলে। তার ভিতরের প্রোটিনগুলিকে বার করে ফেলে দ্রুত বংশবৃদ্ধির জন্য। আর নিঃশ্বাসের সঙ্গে বেরিয়ে এসে তারা অন্যকে সংক্রমিত করতেও শুরু করে, যখন প্রথম যাঁর শরীরে ঢুকেছিল তাঁর তেমন কোনও উপসর্গই দেখা যায়নি।
যে ৩৬ জন স্বেচ্ছাসেবীর উপর এই পরীক্ষা চালিয়েছেন গবেষকরা তাঁদের বয়স ১৮ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে। গবেষকরা দেখেছেন, স্বেচ্ছাসেবীদের অর্ধেকই কোনও উপসর্গ দেখা দেওয়ার আগেই সংক্রমিত হয়ে পড়েছেন। মানবশরীরে ঢোকার সাড়ে ছয় দিন থেকে ১২ দিনের মধ্যে করোনাভাইরাস দেহে ঢুকে কী কী করে সেই সবই এই প্রথম বিশদে পরীক্ষা করে দেখলেন বিজ্ঞানীরা।
যার সুযোগ এর আগে বিজ্ঞানীদের সামনে আসেনি। কোভিডের কোনও টিকাই জীবন্ত ভাইরাস ব্যবহার করেনি। তা হয় মৃত বা ভাইরাসের ক্ষুদ্র দেহাংশ দিয়ে বানানো হয়েছে।
তাই বিশেষজ্ঞদের একাংশের বক্তব্য, এই গবেষণা আগামী দিনে কোভিডের চিকিৎসায় অনেক বেশি কার্যকরী নতুন নতুন ওষুধ আবিষ্কারের পথ খুলে দিতে পারে।