Coronavirus

তাড়াহুড়োর প্রতিষেধকে চিন্তা বিস্তর

এই মুহূর্তে বিশ্বে পাঁচটি প্রতিষেধক মানবদেহে প্রয়োগের পর্যায়ে রয়েছে।

Advertisement

দেবাশিস ঘড়াই

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০২০ ০৪:০০
Share:

ছবি রয়টার্স।

তাড়াহুড়োর ফল কী হতে পারে? অতিরিক্ত তাড়াহুড়ো সমস্যার সমাধান করতে গিয়ে গোটা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলবে না তো? নোভেল করোনাভাইরাসের প্রতিষেধক নিয়ে এই প্রশ্নই এখন ঘুরপাক খাচ্ছে গবেষক-বিজ্ঞানী মহলে।

Advertisement

এই মুহূর্তে বিশ্বে পাঁচটি প্রতিষেধক মানবদেহে প্রয়োগের পর্যায়ে রয়েছে। বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, কোনও প্রতিষেধক তৈরির ক্ষেত্রে গোড়ায় ‘অ্যানিম্যাল মডেল’ বা পশুদেহের উপরে তা প্রয়োগ করা হয়। তা সফল হলে প্রথমে কয়েক জন সুস্থ মানুষের উপরে তার কার্যকারিতা দেখা হয়। যাকে বলে ‘ফেজ় ওয়ান ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল’। যদি দেখা যায় তা-ও সফল হয়েছে, তখন ‘ফেজ়-টু ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল’-এ কয়েকটি গোষ্ঠীর উপরে সেই প্রতিষেধক প্রয়োগ করা হয়। এই ধাপ সফল হলে ‘ফেজ় থ্রি ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল’-এ আরও বেশি সংখ্যক জনগোষ্ঠীর উপরে তা প্রয়োগ করা হয়।

‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউশনাল র‌্যাঙ্কিং ফ্রেমওয়ার্ক’ অনুযায়ী সারা দেশের মেডিক্যাল কলেজগুলির মধ্যে দ্বিতীয় স্থানে থাকা চণ্ডীগড়ের ‘পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ’-এর ইমিউনোপ্যাথোলজি বিভাগের প্রফেসর সুনীল কে অরোরা বলছেন, ‘‘যে কোনও প্রতিষেধকের কার্যকারিতা তো গুরুত্বপূর্ণ বটেই, তার চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হল সেটি কতটা নিরাপদ, তা যাচাই করে নেওয়া। কারণ, একটি প্রতিষেধক প্রয়োগের পরে সেটি রোগের ক্ষেত্রে কোনও কাজ নাও করতে পারে। কিন্তু তার পরিবর্তে প্রতিষেধকের ক্ষতিকারক দিক হিসেবে শরীরে নতুন রোগ জন্ম নেওয়ার ঝুঁকিও থেকে যায়। তাই সব দিক থেকে সাবধানতা অবলম্বন করা জরুরি। সেই কারণেই ‘ফেজ় ওয়ান ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল’-এ দেখে নেওয়া হয় সংশ্লিষ্ট টিকা নিরাপদ কি না।’’

Advertisement

আরও পড়ুন: প্রাণী-দেহে প্রতিষেধক পরীক্ষা দেশেও

কী ধরনের শারীরিক ক্ষতি হতে পারে? অরোরার কথায়, ‘‘আগাম বলা কঠিন। ক্যানসার হতে পারে। কোনও অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উপরেও খারাপ প্রভাব পড়তে পারে। আরও অনেক কিছু হতে পারে, যার কোনও ধারণাই এখনও আমাদের নেই।’’

২০০২ এবং ২০১২ সালে যথাক্রমে করোনোভাইরাস সার্স ও করোনাভাইরাস মার্স-এর প্রকোপ দেখা দিলেও ওই দুই রোগের প্রতিষেধক এখনও গবেষণার পর্যায়ে রয়েছে বলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) জানিয়েছে। হু-র গবেষকদের একাংশ মনে করাচ্ছেন যে, ‘কোঅর্ডিনেটেড গ্লোবাল রিসার্চ রোডম্যাপ’-এ কোভিড-১৯ সংক্রমণজনিত পরীক্ষা ও গবেষণার জন্য আগামী ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময় ধরা হয়েছে। অর্থাৎ, ধরে নেওয়া যেতে পারে কোভিড-১৯ সংক্রমণজনিত তথ্য সংগ্রহ ও তা বিশ্লেষণের জন্য কমপক্ষে ওই সময়টুকু দরকার। অন্তত আগের দু’টি করোনা-সংক্রমণ সেই শিক্ষাই দিয়েছে। গবেষকদের একাংশ এ-ও বলছেন, তাও ধরা যাক, প্রতিষেধক তৈরি হল। কিন্তু প্রতিষেধক তৈরি এবং তার কার্যকারিতার বিষয়টি সম্পূর্ণ আলাদা।

আরও পড়ুন: সেপ্টেম্বরে কি মিলবে ভ্যাকসিন, ফাইনালে অক্সফোর্ড

‘অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল সায়েন্সেস’-এর বায়োটেকনোলজি বিভাগের প্রাক্তন প্রধান, ইমিউনোলজিস্ট ইন্দিরা নাথ বলছেন, ‘‘প্রতিষেধক প্রয়োগের ক্ষেত্রে যে ধাপগুলি রয়েছে, মহামারির সময়ে সেই ধাপগুলির জন্য বরাদ্দ সময় কমানো যেতে পারে। কিন্তু যে কোনও প্রতিষেধকেই কার্যকারিতা বুঝতে ন্যূনতম সময় দরকার। তাড়াহুড়োয় তা হয় না।’’ ‘ইন্ডিয়ান ইমিউনোলজি সোসাইটি’-র সদস্য অরিন্দম ভট্টাচার্যের কথায়, ‘‘এমন কোম্পানিও প্রতিষেধক তৈরিতে নেমে পড়েছে, যাদের সেই অর্থে কোনও ভাইরোলজিস্টই নেই! শুধু আর্থিক মুনাফা লোটার জন্য তারা নেমে পড়েছে। যার ফলাফল ভয়াবহ হতে পারে। অবশ্য অক্সফোর্ড ইউনির্ভাসিটির বিষয়টা আলাদা। ওদের ক্ষেত্রে ভরসা রাখা যায়। কিন্তু তার পরেও প্রতিষেধক সফল হল কি না, তা এখনই বোঝা সম্ভব নয়।’’

গবেষক-বিজ্ঞানীদের একাংশ জানাচ্ছেন, সারা বিশ্বে এই মুহূর্তে ‘ক্রিটিক্যাল’ অবস্থায় রয়েছেন তিন শতাংশের মতো রোগী। উল্টো দিকে প্রায় সাত লক্ষ মানুষ কোভিড-১৯ সংক্রমণের পরেও সুস্থ হয়েছেন। অর্থাৎ, তাঁদের নিজস্ব প্রতিরোধ ক্ষমতাই এ ক্ষেত্রে কাজ করেছে। ফলে একটা অংশের মধ্যে কোভিড-১৯-এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ‘ইমিউনিটি’ তৈরি হয়ে গিয়েছে। প্রতিষেধক গবেষণার ক্ষেত্রে এই বিষয়টিও মাথায় রাখা জরুরি বলে মনে করছেন তাঁরা। ‘মাইক্রোবায়োলজিস্টস সোসাইটি অব ইন্ডিয়া’-র প্রেসিডেন্ট এ এম দেশমুখ জানাচ্ছেন, এই মুহূর্তে যা পরিস্থিতি, তাতে সব ধাপে সফল হলেও প্রতিষেধক তৈরিতে কমপক্ষে আরও ন’মাস লাগার কথা। কিন্তু তখন প্রতিষেধক লাগবে কি না, সেটা বড় প্রশ্ন। কারণ, তত দিনে জনসংখ্যার একটা গোষ্ঠীর মধ্যে প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয়ে যাবে। জন হপকিনস ইউনিভার্সিটির পোস্ট ডক্টরাল ফেলো তথা কেন্দ্রীয় সরকারের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রকের অধীন বায়োটেকনোলজি বিভাগের ‘ট্রানস্লেশনাল হেলথ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি ইনস্টিটিউট’-এর অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর নিশীথ আগরওয়ালের কথায়, ‘‘সংক্রমণের প্রেক্ষিতে অ্যানিম্যাল মডেলের জন্য হয়তো প্রতিষেধক প্রয়োগের পর্যাপ্ত সময় নেই। কিন্তু তা হলেও প্রতিষেধক পরীক্ষার ক্ষেত্রে মানুষের স্বাস্থ্য-নিরাপত্তার দিকটা সবথেকে আগে গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। সেটাকে অগ্রাহ্য করলে কিছুতেই হবে না।’’

(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement