উত্তর ও দক্ষিণ, পৃথিবীর দুই গোলার্ধেই লিওনার্ডকে খালি চোখে দেখা যাবে ডিসেম্বরের শেষ পর্যন্ত। ছবি- নাসার সৌজন্যে।
এই সুযোগ আর মিলবে না। ৮০ হাজার বছরের আগে আর পৃথিবীর কাছাকাছি আসার সম্ভাবনা নেই এই মহাজাগতিক আগন্তুকের।
সূর্যকে প্রদক্ষিণ করবে বলে পৃথিবীর কান ঘেঁষে কী গতিতে সেই আগন্তুক বেরিয়ে গিয়েছে ক’দিন আগে, তার ছবি ও ভিডিয়ো তুলেছে দু’টি মহাকাশযান। যারা এখন চোখে চোখে রাখছে সূর্যকে।
প্রদক্ষিণের পথে এই মহাজাগতিক আগন্তুক সূর্যের সবচেয়ে কাছে পৌঁছবে আগামী বছরের ৩ জানুয়ারি। তার পর তীব্র গতিতে সে রওনা হয়ে যাবে সৌরমণ্ডল ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়ার পথে।
ক্ষ্যাপাটে এই আগন্তুক ধূমকেতু লিওনার্ড ৮০ হাজার বছর পর পৃথিবীর সবচেয়ে কাছে এসেছিল গত ১২ ডিসেম্বর। সেই সময় পৃথিবী থেকে তার দূরত্ব ছিল ২ কোটি ১০ লক্ষ মাইল বা ৩ কোটি ৩৪ লক্ষ কিলোমিটার। সেই লিওনার্ড এখন সূর্য-মুখী। উত্তর ও দক্ষিণ, পৃথিবীর দুই গোলার্ধেই লিওনার্ডকে খালি চোখে দেখা যাবে ডিসেম্বরের শেষ পর্যন্ত।
আমেরিকার নৌবাহিনীর পাঠানো মহাকাশযান ‘সোলার অরবিটার হেলিওস্ফেরিক ইমেজার' (সোলোহাই) আর নাসার মহাকাশযান ‘স্টিরিও-এ’ রয়েছে এখন সূর্যের কাছাকাছি, সৌরমণ্ডলের নক্ষত্রকে পর্যবেক্ষণের জন্য। তাদেরই টেলিস্কোপিক ক্যামেরায় ধরা পড়েছে কী ভাবে পৃথিবীর কান ঘেঁষে বেরিয়ে যাচ্ছে লিওনার্ড। কী অসম্ভব তার গতি! যাচ্ছে সূর্যের কাছাকাছি। সেই সময় লিওনার্ড ছিল সূর্য আর ‘সোলোহাই’ মহাকাশযানের মাঝামাঝি জায়গায়। গ্যাস আর ধূলিকণায় ভরা ধূমকেতুর লেজটি তখন ছিল মহাকাশযানের ক্যামেরার দিকে। সূর্যের দিকে এগিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তার লেজটিও আকারে উত্তরোত্তর বড় হচ্ছে।
ফলে, এই মহাজাগতিক আগন্তুকের ছবি ও ভিডিয়ো তোলার কাজটা সহজতর হয়েছে মহাকাশযানের। ভিডিয়োয় দেখা যাচ্ছে, লিওনার্ডের গতিপথের পিছনে আকাশগঙ্গা ছায়াপথ। ছবির উপরের ডান দিকে দেখা যাচ্ছে সৌরমণ্ডলের দু’টি গ্রহ— বুধ আর শুক্র (যাকে আমরা 'শুকতারা' বলে জানি)-কে। বুধের চেয়ে শুক্রকে উজ্জ্বলতর দেখাচ্ছে। শুক্রকে সরে যেতে দেখা যাচ্ছে বাঁ দিক থেকে ডান দিকে।
ও দিকে, নাসার মহাকাশযান স্টিরিও-এ লিওনার্ডকে চোখে চোখে রাখছে নভেম্বর থেকে। পৃথিবীর কান ঘেঁষে বেরিয়ে লিওনার্ড সূর্য-মুখী হওয়ার পর সেও তুলেছে এই মহাজাগতিক আগন্তুকের ছবি ও ভিডিয়ো।
আমেরিকার আরিজোনার টাকসনে এ বছরের জানুয়ারিতে প্রথম লিওনার্ডের দেখা পান মাউন্ট লেমন অবজারভেটরির জ্যোতির্বিজ্ঞানী গ্রেগরি লিওনার্ড। তার নামেই নামকরণ করা হয় ধূমকেতুটির। যদিও জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের কাছে তার আদত নাম ‘সি/২০২১-এ১’।