পূর্বসূরি জন এফ কেনেডি, আর পরের জন রিচার্ড নিক্সন। কেচ্ছার দুই প্রবাদপুরুষের মাঝের সময়টিতে মার্কিন প্রেসিডেন্টের চেয়ার সামলেছিলেন লিন্ডন বি জনসন (এলবিজে)। ১৯৬৩ থেকে ১৯৬৯। কেনেডি বা নিক্সনের কেচ্ছার অভিঘাত আরও ব্যাপক হলেও, যদি বিষয়ের কথা ধরতে হয়, তা হলে তাঁরা কল্কে পাবেন না জনসনের কেচ্ছার কাছে। বলা যেতে পারে, সে কেচ্ছার কেন্দ্রে ছিল এলবিজে-র ‘পৌরুষ’। পৌরুষ মানে, পেশিশক্তি নয়। পুরুষাঙ্গ!
নিজের যৌনাঙ্গটি নিয়ে যারপরনাই অবসেস্ড ছিলেন এলবিজে। সাধের অঙ্গটির নাম রেখেছিলেন ‘জাম্বো’। তাঁর প্রিয় উচ্চারণই ছিল, ‘এত বড় আর কিছু কোনও দিনও দেখেছেন না কি মশাই?’ প্রিয় অভ্যাসও ছিল প্রকাশ্যে মূত্রত্যাগ। এর মধ্যে প্রধানতম জায়গাটিই নাকি হোয়াইট হাউসের পার্কিং লট। কোন সিকিউরিটির ঘাড়ে ক’টা মাথা যে খোদ প্রেসিডেন্টকে আটকায়! অফিসেও বাথরুমে ঢুকে পারতপক্ষে দরজা বন্ধ করতেন না। সেখান থেকেই গুরুত্বপূর্ণ সব ডিকটেশন দিতেন। তার পর কথা চালাতে চালাতেই বেরিয়ে আসতেন, স্মার্টলি। জিপার-টিপার না টেনেই! এমনকী, এ কথাও শোনা যায়, তাঁর এক কামরার গোপন অফিসটিতে ছিল না কোনও ওয়াশরুম। বেসিনটিকেই ব্যবহার করতেন। আর এ সবই ছিল সহকর্মীদের সামনে, পুরুষ-মহিলা নির্বিশেষে।
পরিভাষায় এই যৌন দেখানেপনাকে বলে ‘এগজিবিশনিজ্ম’ বা ‘প্রদর্শনকাম’। এলবিজে-র এ হেন অভ্যাসের কথা এত বছর পর হেঁয়ালির মোড়কে ফের তুলে আনলেন আর এক প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ। গত ১০ এপ্রিল টেক্সাসের ‘এলবিজে প্রেসিডেনশিয়াল লাইব্রেরি’-তে চলছিল গুরুগম্ভীর সিভিল রাইট্স সামিট। বলতে উঠেছেন বুশ। বক্তৃতার শুরুতেই হাসির রোল! ‘প্রাক্তন প্রেসিডেন্টরা তাঁদের লাইব্রেরির তুলনা করতেন সেই ভাবে, যে ভাবে অন্য পুরুষেরা আর এক জনের সঙ্গে তুলনা করেন তাঁদের ইয়ের... মানে...!’ ছোট্ট একটা পজ দিয়ে বুশ বললেন, ‘অবাক লাগে, এলবিজে ব্যাপারটা ‘হ্যান্ডল’ করত কী করে!’ হয়তো ‘প্রাইভেট’ শব্দটিতেই বিশ্বাস ছিল না এলবিজে-র। এক বার নাকি এক সাংবাদিক তাঁকে নাগাড়ে একই প্রশ্ন করে যাচ্ছিলেন, ভিয়েতনামে কেন মার্কিন সেনা পাঠানো হয়েছে? বিরক্ত এলবিজে আর থাকতে না পেরে অবশেষে তাঁর পুরুষাঙ্গটি বের করে বলেন, ‘এই যো, এই জন্য!’ পুরুষ সহকর্মীদের তো বটেই, এমনকী অন্য দেশের আমন্ত্রিত নেতৃত্বকেও প্রায়ই টলটলে পুলে নগ্নস্নানের জন্য আহ্বান জানাতেন তিনি। লোকে বলে, আসলে কোনও কূটনৈতিক আলোচনার ঠিক আগেই যৌন আধিপত্য দেখিয়ে স্নায়ুর লড়াইটা পুরোদস্তুর জিতে নিতে চাইতেন। তাঁর এ সব প্রবণতাকে তাই হয়তো নিছক নোংরামি না বলে, ফরাসি দার্শনিক জাক দেরিদা-র ভাষায় বলা যায়, লিঙ্গসর্বস্ববাদ। উত্তর-আধুনিকতার আলোয় পুরুষতন্ত্রকে ধরতে গিয়ে এই শব্দটা বানিয়েছেন দেরিদা: ‘ফ্যালোগোসেন্ট্রিজম’। ‘ফ্যালাস’ আর ‘লোগোসেন্ট্রিজম’-এর চমৎকার কম্বো।
শুধু শুকনো পুরুষতন্ত্রের দেখনদারিতেই অবশ্য আটকে থাকেননি এলবিজে। নারীসঙ্গেও তিনি ছিলেন ঘোর আসক্ত। কেনেডির প্রতি তাঁর ঈর্ষাও সে কারণে ছিল সর্বজনবিদিত। বেশ রেলা ভরেই তিনি বলতেন— কেনেডি উদ্দেশ্য নিয়ে যত জন মহিলার সঙ্গে সংসর্গ করেছেন, তাঁর সঙ্গে স্রেফ ঘটনাচক্রেই তার চেয়ে বেশি মহিলার সম্পক্কো হয়েছে। শোনা যায়, অযোগ্যতা সত্ত্বেও বিশেষ উদ্দেশ্যে বহু সুন্দরীকে তিনি তাঁর অফিসে নিযুক্ত করেছিলেন। এক বার তো অফিসের মধ্যেই এমনই এক মহিলা সহকর্মীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ অবস্থায় স্ত্রীর কাছে ধরা পড়ে যান। তা নিয়ে বিস্তর জলঘোলা হওয়ার পরেও অবশ্য তিনি বদলাননি। কেবল তাঁর অফিসে একটি ‘buzzer’ লাগানোর বন্দোবস্ত করেন। এর পর স্ত্রী কখনও অফিসের সিঁড়িতে পা রাখলেই সহমর্মী ও সহকর্মীরা যেটি বাজিয়ে তাঁকে সতর্ক করে দিতেন! তবে এলবিজে-র মৃত্যুর পর তাঁর স্ত্রী-ই বুঝিয়ে দিয়েছিলেন পুরুষটির সার কথা— ‘আমার স্বামী মানুষকে ভালবাসতেন। সব মানুষকে। আর বিশ্বের অর্ধেক মানুষ তো মহিলাই!’
susnatoc@gmail.com