সেটা ২০১৯-এর পুজোর সময়। শতাব্দীর ভয়ঙ্করতম অতিমারি তখনও ভবিষ্যতের গর্ভে। শোনা গেল, কলকাতার কয়েকটি বারোয়ারি পুজো গাঁটছড়া বেঁধেছে কোনও এক কোম্পানির সঙ্গে। দর্শন, পুষ্পাঞ্জলি আর প্রণামীর ব্যবস্থা হয়েছে আন্তর্জালের মাধ্যমেও। ভারতের বেশ কিছু বিখ্যাত তীর্থস্থান, যেমন তিরুমালা তিরুপতি কিংবা সিদ্ধিবিনায়ক গণপতি মন্দিরে অবশ্য এমন ব্যবস্থা অনেক আগে থেকেই। আর দুর্গাপুজোকেও আন্তর্জালের দুনিয়ায় বেঁধে ফেলার প্রচেষ্টা একটু একটু করে শুরু হয়েছে অনেক আগে। আসল কথা, প্রযুক্তির সঙ্গে পুজোর মেলবন্ধনের প্রয়াস এসেছে সময়ের নিয়মেই, অতিমারির তাড়না ছাড়াই। এবং এর অসীম সম্ভাবনার কথা মাথায় রেখেই। তিলোত্তমার কল্লোলিত ভিড়ে ঘুরে-বেড়াতে যারা শারীরিক ভাবে অসমর্থ, এবং সেই সঙ্গে অগণিত প্রবাসী আর অনাবাসীদের কথা ভেবেই নিঃসন্দেহে এই ভার্চুয়াল পুজোর অবতারণা। যেমন নব্বইয়ের দশকে কলকাতা দূরদর্শনের ‘পূজা-পরিক্রমা’-র চাহিদা ছিল অসাধারণ। যাঁরা ঠাকুর দেখতে বেরোতে পারেন না, তাঁদের জন্য ওই অনুষ্ঠান ছিল বিন্দুতে সিন্ধুদর্শন। অনেকটা যেন তারই প্রযুক্তিগত পরিবর্তন আজকের ভার্চুয়াল পুজো। প্রয়াসটা মন্দ ঠেকেনি তখন। তবে এই ডিজিটাল বিপ্লব যে কোভিড-অতিমারির সৌজন্যে অতি দ্রুত হয়ে উঠবে বাধ্যবাধকতা, শিগগিরই যে তা বাঙালির পুজোর ইতিহাসে এক পাকাপাকি পরিবর্তন-বিন্দু হিসেবে চিহ্নিত হবে, তা জানা ছিল না তখনও।
আসলে স্বাভাবিক সঞ্চালনের সহজ এবং অনুমানযোগ্য রৈখিক পথ ছেড়ে বাঙালির দুর্গাপুজোর বহিরঙ্গ, আয়োজন, ব্যাপ্তি এবং পরিবেশনার রূপরেখা বদলেছে বার বার। সমাজ-জীবনের নানা ঐতিহাসিক টানাপড়েনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে। বাঙালির মননে দুর্গা সম্পৃক্ত হয়েছেন জনজীবনের প্রতিটি ক্রান্তিকালে। আসলে ‘মা যাহা হইবেন’, তা-ই তো দুর্গার রূপ। সেই ভাবধারাতেই এক কালে বিবেকানন্দ, অরবিন্দ, বিপিনচন্দ্ররা সামাজিক এবং দেশাত্মবোধের প্রেক্ষিতে নতুন রূপ দিয়েছেন দুর্গার। অবন ঠাকুর দুর্গাকে গড়ে তুলেছেন ‘ভারতমাতা’ হিসেবে।
বাড়ির পুজোর পরিধি ছেড়ে সার্বিক গণ-উৎসব হয়ে উঠতে দুর্গাপুজোর অনেকটা সময় লেগেছে। ‘বারো ইয়ার’ মিলে ‘বারোয়ারি’ পুজোর সূচনার ইতিবৃত্ত সোয়া দু’শতকেরও বেশি পুরনো। তবু ‘বারোয়ারি’ থেকে ‘সর্বজনীন’ হয়ে ওঠাটা তো আর এক দিনে হয়নি। সামাজিক-রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক পরিমণ্ডলে গভীর সঙ্কটই সমাজ-জীবনের সর্বক্ষেত্রে নিয়ে আসে পরিবর্তন, যা ভবিষ্যতের দিকচিহ্ন নির্দেশ করে অভিযোজনের অদম্য তাড়নায়। তেমন ভাবেই একশো বছর আগে, গত শতকের বিশের দশকের গোড়ার দিকে সর্বজনীন পুজোর বিস্তার শুরু হয় বাংলায়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের অভিঘাত আর স্প্যানিশ ফ্লু-র পরবর্তী সেই সময়ে গোটা পৃথিবীর সঙ্গে বঙ্গসমাজ আর অর্থনীতিও প্রবল বিধ্বস্ত। যুদ্ধ এবং অতিমারির সঙ্গে সর্বজনীন পুজোর রূপবিন্যাসের সম্পর্ক নিয়ে বিস্তারিত গবেষণার অবকাশ রয়েছে নিশ্চয়ই। আবার দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ, বাংলার মন্বন্তর, ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের তীব্রতা এবং স্বাধীনতা ও দেশভাগ দুর্গাপুজোকে সার্বিক ভাবে সর্বজনীন পুজোর ছাঁচে ফেলেছিল ১৯৩৯-৪৭ সালের অশান্ত সময়সীমায়। বহু সংখ্যক যৌথ পরিবার ভেঙে যায় সেই ভঙ্গুর সময়কালে। অনেকেরই বাড়ির পুজো করার সামর্থ্যে টান ধরে। সামাজিক, ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক রূপরেখাও বদলে যায় অনেকটাই। তার পর স্বাধীনতার পর নানা টানাপড়েনের মধ্য দিয়ে বাংলার পুজো এগোয় সময়ের ছন্দে। প্রতিমা, প্যান্ডেল, আলোর রোশনাই এ সবের মধ্যে সৃষ্টির নির্ঝর আর সঙ্গে প্রতিযোগিতার আবহ পুজোকে করে তোলে আরও মোহময়।
পুজো আয়োজনের রেখচিত্রের পরবর্তী পরিবর্তন-বিন্দু সম্ভবত নব্বইয়ের দশকে, যার ফলশ্রুতিতে পুজো আর জনগণের যৌথ প্রয়াস থাকল না। জনসাধারণের চাঁদার উপর নির্ভরশীলতা কাটিয়ে আজ বারোয়ারি পুজোর ৯০-৯৫ শতাংশ খরচই যে আসে কর্পোরেট দুনিয়া থেকে, সেই অমোঘ বদলটা নব্বইয়ের দশকে ভারতের অর্থনীতির ‘মনমোহিনী’ মুক্তির অনিবার্য ফলশ্রুতি। আসলে যে কোনও সঙ্কটের সময়পর্বে, দেশ ও দশের ক্রান্তিকালেই খুলে যায় নতুন কোনও রত্নগুহার দুয়ার। ইতিহাস সে কথাই বলে। পুজোও তার ব্যতিক্রম নয়— ‘চিচিং ফাঁক’ মন্ত্রটা শুধু ঠিকঠাক বলা চাই।
এর তিন দশক পরে, গত বছরে এল দুনিয়া-কাঁপানো এক অতিমারি। কোভিড অতিমারি কিন্তু আমাদের দুনিয়াকে আন্তর্জালের নাগপাশে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে এক বিমূর্ত বাস্তবতার মোড়কে পুরে দিতে পেরেছে অনেকটাই। অফিস-আদালত, স্কুল-কলেজের ক্লাস, বিজ়নেস মিটিং, ভোটের প্রচার, চিকিৎসা, এমনকি কফি হাউসের আড্ডাও আজ আন্তর্জালের অচ্ছেদ্য-বন্ধনে জড়িয়ে গিয়েছে। বাঙালির পুজোও যে এই বিমূর্ত অস্তিত্বের জালে কমবেশি ধরা দেবে, তা তাই এক রকম ভবিতব্য হিসেবেই ধরা গিয়েছিল।
দুনিয়া লন্ডভন্ড করে দেওয়া অতিমারিতে দেশ-বিদেশে বাতিল হয়েছে অজস্র অনুষ্ঠান, নয়তো সংঘটিত হয়েছে ক্ষুদ্রতর মাত্রায়। অলিম্পিক্স পিছিয়েছে এক বছর, ভ্যাটিকানের ইস্টার হয়েছে জনসমাগম ছাড়াই। বাতিল হয়েছে স্পেনের পাম্পলোনায় ষাঁড়ের দৌড়ের বাৎসরিক উৎসব, সান ফারমিন। মিউনিখের বচ্ছরকার অক্টোবরফেস্টও বাতিল— নেই মস্ত তাঁবুতে কোলাহল আর তেষট্টি লক্ষ টুরিস্ট, বাভারিয়ার বিয়ার তৈরির ব্যবসার সঙ্গে ধুঁকছে তাদের অর্থনীতিও। এর মাঝেই কিন্তু তৈরি হয়ে গেল ভার্চুয়াল অক্টোবরফেস্ট উদ্যাপনের নানা মাধ্যম। আন্তর্জালে সরাসরি উৎসবে সংযুক্ত হওয়ার সুযোগ। রীতিমতো খরচ করে লোকে টিকিট কিনেছে এই ভার্চুয়াল অক্টোবরফেস্ট উপভোগ করতে। এ ভাবেই দুনিয়ার এক বিরাট অংশে ভার্চুয়াল ক্রিসমাসের আয়োজন হয়েছে গত বছর। এই সঙ্কটকালে বাঙালির পুজোকেও যে ভার্চুয়াল হয়ে উঠতে হত, তাতে আর আশ্চর্য কী!
ভার্চুয়াল রিয়্যালিটির প্রসঙ্গে উঠে আসবেই মার্কিন কল্পবিজ্ঞান লেখক স্ট্যানলি জি ওয়ায়েনবাম-এর ছিয়াশি বছর আগে লেখা গল্প ‘পিগম্যালিয়ন্স স্পেক্ট্যাকল্স’-এর কথা। গল্পটিতে ধরা পড়েছে এক কাল্পনিক বিমূর্ত দুনিয়ার বিস্তারিত কিন্তু পরিপাটি মডেল। সেখানে অ্যালবার্ট লুডউইগ নামে এক বামন অধ্যাপক তৈরি করেন এমন এক চশমা, যা দৃশ্য এবং শব্দ-সহ চলচ্চিত্রের আবেশ আনতে সক্ষম। লুডউইগ সেই সঙ্গে তাতে যোগ করতে চেয়েছেন স্বাদ, গন্ধ এবং স্পর্শের অনুভূতিও। বাস্তব আর স্বপ্ন সেখানে মিলেমিশে একাকার, কল্পলোকের ছায়াদের সঙ্গে চলে কথাবার্তা, আর আমরাও যেন হয়ে উঠি গল্পেরই চরিত্র। গল্পটা যেন আর পর্দায় আটকে থাকে না, স্বপ্ন যেন হয়ে ওঠে বাস্তব। ওয়ায়েনবামের এই গল্পটা ভার্চুয়াল রিয়্যালিটির এক বিস্ময়কর নিখুঁত বর্ণনা— বিমূর্ত বাস্তবতার ইতিহাসে এক মাইলস্টোন। আজকের দিনের দশক-পুরনো ‘অকুলাস রিফ্ট’-এর মতো ভার্চুয়াল রিয়্যালিটি হেডসেট কিংবা ২০১৬-র হাই কোয়ালিটি ভার্চুয়াল রিয়্যালিটি দেখাতে পারা ‘গুগ্ল ডেড্রিম’ যা অবিশ্বাস্য ভাবে ভার্চুয়াল রিয়্যালিটির সঙ্গে মিলিয়ে দিতে পারে আমাদের অস্তিত্বকে, তার পুরোটাই যেন লুডউইগের সেই ম্যাজিক চশমার অনুষঙ্গ। পিগম্যালিয়নের চশমাই যেন ভবিষ্যৎ দুনিয়ার ভার্চুয়াল রিয়্যালিটির টেমপ্লেট।
কোভিডের প্রেক্ষাপটে গত বছর থেকেই পুজোয় নজিরবিহীন সতর্কতা, মণ্ডপে প্রবেশে নিয়ন্ত্রণ। করোনাকালে তাই কলকাতার বড় পুজোগুলিকে অনেকখানি ভার্চুয়াল হয়ে উঠতেই হত নিজেদের প্রকাশ করার স্বার্থে। সে কারণেই কোথাও প্যান্ডেলের বাইরে মস্ত স্ক্রিনে পুজোর সম্প্রচার, কোথাও সোশ্যাল মিডিয়ায় অথবা আন্তর্জালের সাহায্যে প্রতিমা দর্শন, পুষ্পাঞ্জলি, সরাসরি পুজোর অডিয়ো-ভিসুয়াল, সন্ধ্যার সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান কিংবা উপভোক্তার দরজায় পুজোর ভোগ পৌঁছে দেওয়া যে ‘নিউ নর্মাল’ হয়ে উঠবে, সেটা জানাই ছিল। পুরোটাই প্রচলিত প্রযুক্তির হাত ধরে।
আসলে ‘অক্টোবরফেস্ট’-এর মতো বিয়ারের উৎসবের পরিমণ্ডল ভার্চুয়ালি নির্মাণ যত কঠিন, ততটাই সহজ রিয়ো কার্নিভাল কিংবা কলকাতার পুজোর জাঁকজমককে ভার্চুয়াল রিয়েলিটির দুনিয়ায় সম্পৃক্ত করা। যদিও প্রায় বিশ লক্ষ টুরিস্ট বাদ পড়ায় রিয়ো কার্নিভালের অর্থনীতি অনেকখানিই ফিকে, তবু পুজো বাঙালিদের নিয়ে অনেকটাই স্বয়ংসম্পূর্ণ। এর সঙ্গে আবার পুজোর প্যান্ডেলের শিল্পকীর্তি, প্রতিমার শৈলী, মোহময়ী আলোর জাদু আন্তর্জালে ছড়িয়ে দেওয়া সম্ভব সহজেই, যাতে বাড়িতে বসেই বাস্তব আর স্বপ্নের মিশেলে অনেক বেশি মানুষ হয়ে উঠতে পারেন পুজোর কলকাতার চরিত্র।
সে পথ ধরেই ২০২০-তেই অন্তত কয়েকশো পুজো, তার মণ্ডপ, সাজসজ্জা, রোশনাই-সহ তরঙ্গায়িত হয়েছে বিমূর্ত ডিজিটাল দুনিয়ায়। অ্যাপ এবং সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে হয়েছে সরাসরি সম্প্রচার। অনেক ক্ষেত্রে ৩৬০ ডিগ্রি ভার্চুয়াল টুরের মধ্য দিয়ে। সেই সঙ্গে ঘটে গিয়েছে আর এক অনিবার্য যুগান্তকারী পরিবর্তন। এই পুজোগুলি পৌঁছে গিয়েছে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক স্তরেও। অনেক পুজোই এমন আয়োজন করেছে যে, ভার্চুয়াল রিয়্যালিটি বক্সের মাধ্যমে প্যান্ডেলের ভিতরে থাকার, হাঁটার, তার শিল্প-সৌন্দর্য দেখার অনুভূতিও পাবেন দর্শনার্থীরা। কিছু কিছু ক্ষেত্রে পুজোর বাস্তবতার অভিজ্ঞতা দিতে নেওয়া হয়েছে সাবস্ক্রিপশনও। তবে, এটাও ঠিক যে, পুজোর বিমূর্ত রূপ প্রযুক্তির সৌকর্যে স্বপ্ন আর বাস্তবের মিশেল ঘটিয়ে সার্বিক ভাবে পিগম্যালিয়নের চশমা হয়ে ওঠেনি এখনও।
অতিমারির মেঘ কেটে গেলে আগামী দিনেও পুজোর এই ডিজিটাল সম্প্রচার কার্যকরী থাকতে বাধ্য প্রবাসী এবং অসমর্থদের মধ্যে। এর বাণিজ্যিক সম্ভাবনাও তাই অনেকটাই। তাই পুজোর দুনিয়ায় ডিজিটাল বিপ্লব যে ক্রমেই ব্যাপকতর হতে চলেছে, সে বিষয়ে সন্দেহ নেই বললেই চলে। তবে এর একটা উল্টো দিকও আছে। কোভিডকাল দেখিয়ে দিয়েছে আমাদের সমাজে ইন্টারনেটের ব্যাপ্তির সীমাবদ্ধতা। দেখিয়ে দিয়েছে কত মানুষের কাছে আজও নেই প্রয়োজনীয় ইন্টারনেট সংযোগ। তবু, আগামী দিনে পুজোর অর্থনীতিতে ডিজিটাল পুজো বড়সড় জায়গা নিতে চলেছে নিঃসন্দেহে। অ্যালবার্ট লুডউইগের চশমা ক্রমেই অনেকখানি দখল নিতে পারে পুজোর চাকচিক্য আর তার অর্থনীতির।
ঐতিহাসিক ভাবেই যুদ্ধ ও দাঙ্গায়, দুর্ভিক্ষ এবং মারিতে, বন্যা কিংবা খরায়, অর্থনৈতিক মন্দা আর বিপর্যয়ের মধ্য দিয়েই এক শতক ধরে বারোয়ারি দুর্গাপুজো হয়ে উঠেছে বঙ্গজীবনের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। অতিমারি, মহাযুদ্ধ, ধ্বংসাত্মক দুর্ভিক্ষ, স্বাধীনতা ও দেশভাগের মতো কিংবা জাতির জীবনপ্রবাহ বদলে দেওয়া অর্থনৈতিক উদারীকরণের মতো ঘটনা ক্রমশ বদলাতে থাকা পুজোর বহিরঙ্গে পাকাপাকি পরিবর্তন-বিন্দু। যাই হোক, মহাযুদ্ধ ও মন্বন্তরের প্রেক্ষাপটে ১৯৪৬-এর শারদীয়া আনন্দবাজার পত্রিকার সম্পাদকীয়তে লেখা হয়েছিল, “আলো আবার ফুটিবে। অসুরের উপদ্রবমুক্ত বঙ্গের অঙ্গনতলে অভয়া আবার তাঁহার সন্তান দলকে কোলে করিয়া বসিবেন।” করোনা-কালের চরম সঙ্কট-মুহূর্তকেও পার করব আমরা। কোনও এক অদূর ভবিষ্যতে পুজোর সময়কালে প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে আবার নামবে জনস্রোতের ঢল। পুজোর অর্থনীতি, শিল্প-সৌকর্য, তার প্রতিযোগিতা, তার মায়াবী উচ্ছ্বাস আবার দখল নেবে আমাদের সমাজ-জীবনের। তবে পরিবর্তনের ইতিবৃত্তে লুডউইগের ম্যাজিক চশমা পুজোর যে বিমূর্ত আবেশ ছড়িয়ে দিল বিশ্বময়, তাও সম্ভবত এক পাকাপাকি বদল। পুজোর কলকাতার ভিড়, ভিড় দেখতে ভিড়, মণ্ডপের শিল্পসাজ, ধূপ-ধুনো-ভোগের খিচুড়ির সুবাস, আলোর ম্যাজিক, প্রাণ-মাতানো খাবারের গন্ধ, আর প্রাণের স্পন্দন— এ সবের অভাবের সুরটুকু যদিও বাজবে ভার্চুয়াল দুনিয়ায়।