FIFA World Cup Qatar 2022

কাতার কার্নিভাল

আজ ফুটবল বিশ্বকাপের উদ্বোধন। এ বার কাতার মাতাবেন কে? ব্রাজিলের ভিনিসিয়াস জুনিয়র? নাকি শেষ  বিশ্বকাপে বাজিমাত করবেন মেসি, রোনাল্ডোদের কেউ? কে হবেন ফুটবলের নতুন আরব্য রজনীর নায়ক?

Advertisement
সুমিত ঘোষ  শেষ আপডেট: ২০ নভেম্বর ২০২২ ০৬:৩৭
Share:

বারো বছর আগের এক রাত। স্থান সুইটজ়ারল্যান্ডের জ়ুরিখ। ফুটবলের নিয়ামক সংস্থার দফতর যেখানে। ফিফার সর্বময় কর্তার দিকে তখন নজর সারা বিশ্বের। এইমাত্র তিনি রাশিয়ার নাম ঘোষণা করলেন ২০১৮ বিশ্বকাপের কেন্দ্র হিসেবে। এর পরে ২০২২। উৎকণ্ঠা, উত্তেজনা নিয়ে টিভির পর্দায় চোখ সকলের। সর্বময় কর্তা পড়ে চললেন দাবিদারদের নাম। অস্ট্রেলিয়া, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, কাতার ও আমেরিকা। এর পরেই অস্কার পুরস্কারের মতো ঘোষণা— “২০২২ বিশ্বকাপ আয়োজনের অধিকার জিতেছে কাতার।”

Advertisement

লিয়োনেল মেসির বাঁ পায়ের ফ্রি-কিক নয়। ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর পাখির মতো শূন্যে ভেসে উঠে হেড নয়। গ্যারিঞ্চাকে মনে করানো নেমারের ড্রিবল নয়। এমবাপের চিতার মতো দৌড় নয়। বিশ্বকাপের আগে সবচেয়ে বেশি রিপ্লে হয়েছে ব্লাটারের এই ভিডিয়োর। বোধনের মহালগ্নেও যা থামার লক্ষণ নেই।

ব্লাটারের ঘোষণার সময় তক্ষুনি-তক্ষুনি জানা না গেলেও ক্রমশ ঢাকনা সরে উদয় হতে থাকে বিশ্বকাপ ফুটবল ইতিহাসের সবচেয়ে বড় কেলেঙ্কারির। আমেরিকার ‘ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিস’ তির নিক্ষেপ করে— ব্লাটার এবং ফিফার শীর্ষকর্তাদের ঘুষ দিয়ে বিশ্বকাপ আয়োজনের বরাত জিতেছে রাশিয়া ও কাতার। তার পরেই শুরু হয়ে যায় তীব্র তরজা। পশ্চিম এশিয়ার এক ছোট্ট দেশ কী ভাবে বিশ্বকাপের মতো ‘গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’ আয়োজনের দায়িত্ব পেয়ে গেল? কাতারের জনসংখ্যা সব মিলিয়ে হবে ২.৫ মিলিয়ন অর্থাৎ ২ কোটি ৫০ লক্ষ। আমেরিকার শুধু শিকাগো শহরেই সেই পরিমাণ মানুষ থাকে। তা হলে আমেরিকা না পেয়ে কী করে কাতার পেল? যাদের ইতিহাস বেদুইনদের, ফুটবলের নয়! বিশ্বমানের কোনও ফুটবল স্টেডিয়াম নেই! মানবাধিকার নিয়ে যাদের রেকর্ড খুব খারাপ। অভিবাসী শ্রমিক নির্যাতন নিয়ে লাগাতার রিপোর্ট জমা পড়ছে। সমকামীদের স্বাধীনতা নেই, ইচ্ছেমতো প্রেম নিবেদনটুকুও করতে পারেন না! মরুভূমির প্রচণ্ড দাবদাহে কী ভাবে ফুটবল ম্যাচ হবে?

Advertisement

কাতারে-কাতারে প্রশ্ন। ২০২২ বিশ্বকাপের ঘোষণা যিনি সে দিন জ়ুরিখে দাঁড়িয়ে করেছিলেন, তাঁর নাম? সেপ ব্লাটার। এক সময় ফিফার অবিসংবাদী শাসক। এখন দুর্নীতির দায়ে নির্বাসিত। ভয়ঙ্কর সব আর্থিক কেলেঙ্কারির অভিযোগে বিদ্ধ। জেল খাটলেও অবাক হওয়ার নেই। ব্লাটারের সঙ্গে দুর্নীতির জালে ধরা পড়েন এক কিংবদন্তি ফুটবলারও। যাঁর দেশ গত বারের বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন এবং এ বারও অন্যতম প্রধান ফেভারিট হিসেবে নামবে। ফ্রান্সের মিশেল প্লাতিনি। অভিযোগ, ব্লাটার-প্লাতিনিরা হাত মিলিয়ে, ঘুষ নিয়ে একের পর এক বিশ্বমানের ইভেন্ট বিক্রি করে গিয়েছেন। ফিফা সম্মেলনে উৎকোচ হিসেবে কোটি কোটি টাকা উড়ত। এত বড় দুই নাম ফুটবল দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ায় আরও বেশি ক্ষতবিক্ষত হয়েছে বিশ্বকাপের পারস্য অভিযান। ম্যাচ গড়াপেটার মতোই সবাই বলতে শুরু করেছে বিশ্বকাপ আয়োজন ছিল ‘ফিক্সড’। ঘুষের বিনিময়ে ব্লাটাররা কাপের উপহার তুলে দিয়েছেন তেলের টাকায় ভাসতে থাকা ধনকুবেরদের হাতে। বিশ্বের সব চেয়ে বড় গ্যাস সরবরাহকারী দেশের অর্থবল প্রলুব্ধ করেছে কর্তাদের।

মাঠের মধ্যে ব্রাজ়িল বনাম আর্জেন্টিনা, ফ্রান্স বনাম জার্মানি বা স্পেন বনাম ইংল্যান্ড শুরু হওয়ার অনেক আগে মাঠের বাইরে বেজে গিয়েছে যুদ্ধের দামামা। লাতিন আমেরিকা বনাম ইউরোপ মাঠের দ্বৈরথ শুরু হবে কী, মাঠের বাইরে পশ্চিম এশিয়া বনাম ইউরোপ বাগ্‌যুদ্ধের ঝনঝনানি শুরু হয়ে গিয়েছে অনেক আগেই। নতুন শব্দই বেরিয়ে পড়েছে— ‘স্পোর্টসওয়াশিং’। কী তার মানে? না, কোনও দেশ হয়তো দুর্নীতি, অন্যায়, কালোবাজারি, মানবাধিকার লঙ্ঘন বা অন্ধকার জগতে ডুবে আছে। বিশ্বের চোখে তীব্র ভাবে ঘৃণিত, সমালোচিত, নিন্দিত। তা হলেও বড় কোনও খেলার আয়োজন করে ফেলো। যাতে ভিতরের ঘন অন্ধকার ঢেকে দেওয়া যায় বাইরের ঝলমলে আলোকসজ্জায়। বলা হয়, রাশিয়া এবং ভ্লাদিমির পুতিন এই ‘স্পোর্টসওয়াশিং’-এর মাস্টার। নিজেদের দেশে এমন একটা সময়ে সোচি শীতকালীন অলিম্পিক্স ও বিশ্বকাপ ফুটবল তিনি নিয়ে আসেন, যখন বহির্বিশ্বে রাশিয়া নিন্দিত। তিনি নিজেও প্রবল ভাবে কোণঠাসা। তেমনই এ বারে ঝড় উঠেছে, নিজেদের পাহাড়প্রমাণ দুর্নীতি, অণুবীক্ষণের তলায় পড়া সামাজিক অবস্থান সকলের চোখে ধুয়েমুছে সাফ করে দিতে বিশ্বকাপকে হাতিয়ার করছে কাতার। তা-ও ব্লাটারদের পটিয়ে, ঘুষ খাইয়ে। জটায়ু শুনলে হয়তো নামই দিয়ে ফেলতেন, মরুভূমিতে মরীচিকা! নামেই বিশ্বকাপ, কাছে গিয়ে দেখবে ছলনা!

পাল্টা বক্তব্যও আছে। যেমন, যারা এ সব বেশি ছড়াচ্ছে, সেই ইংল্যান্ডের ফুটবলে বেশির ভাগ ক্লাবের মালিক বা লগ্নিকারীই তো পশ্চিম এশিয়ার। মেসি, নেমার, এমবাপেদের প্যারিস সঁ জরমঁ থেকে শুরু করে ফুটবল আকাশে নতুন তারা আর্লিং হালান্ডের ম্যাঞ্চেস্টার সিটি— সবই সেখানকার ধনকুবেরদের টাকায় চলছে। তখন তো বলা হয় না কেন দুর্নীতির দেশের অর্থে, সামাজিক অন্যায়কে প্রশ্রয় দেওয়া শেখদের টাকায় ইপিএল-এর ক্লাব চলছে? ক্যালিফর্নিয়া থেকে কলকাতা গর্জন উঠতে পারে নেমারের ব্রাজিল বা মেসির আর্জেন্টিনার নামে। কিন্তু ঘটনা হচ্ছে, অনেক দিন ধরেই ফুটবলের পাওয়ারহাউস ইউরোপ। সেরা সব ক্লাব ইউরোপে। ক্লাব স্তরে সেরা সব প্রতিযোগিতা হয় ইউরোপে। বিশ্বকাপেও কি চলছে না একচেটিয়া ইউরোপের শাসন? গত চল্লিশ বছরে লাতিন আমেরিকার দেশ বিশ্বকাপ জিতেছে মাত্র তিন বার। ১৯৮৬-তে দিয়েগো মারাদোনার অবিশ্বাস্য ফুটবল কাপ জেতায় আর্জেন্টিনাকে। ১৯৯৪-তে চ্যাম্পিয়ন হয় দুঙ্গার ব্রাজিল। কিন্তু কাপ জিতলেও মন জেতেনি তাদের রক্ষণাত্মক ফুটবল। ২০০২-এ বিশ্বজয়ী রোনাল্ডো-রিভাল্ডোর ব্রাজিল। এর বাইরে সবই ইউরোপের দেশ। গত দু’দশকে যখনই ইউরোপীয় মহাশক্তির মুখে পড়েছে ব্রাজিল বা আর্জেন্টিনা, তাদের গালিভারের সামনে লিলিপুটের মতো দেখিয়েছে।

এ বারও কাতারে ব্রাজিল, আর্জেন্টিনাকে নিয়ে যথারীতি আবেগের বলয় উপস্থিত। গরিষ্ঠ মত, অনেক দিন পরে জেতার মতো দল ব্রাজ়িল। নেমার-সহ দুর্ধর্ষ ন’জন ফরোয়ার্ড রয়েছে। কাতারে তাঁদের নিয়ে নবরত্ন সভা বসাতে চলেছেন তিতে, এমনই পূর্বাভাস। ভিনিসিয়াস জুনিয়র, রাফাইনা, অ্যান্টনি, রিচার্লিসন, গ্যাব্রিয়েল মার্তিনেল্লির মতো দুর্দান্ত সব প্রতিভার উত্থান স্বপ্ন দেখাচ্ছে সাম্বার পুরনো গৌরব ফেরানোর। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, ফ্রান্স, স্পেন, ইংল্যান্ড বা জার্মানির মুখোমুখি হলে জেতার মতো গোলাবারুদ আছে তো নেমারদের? ফ্রান্সের এমবাপে এবং বালঁ দ্যর জয়ী বেঞ্জেমার জুটি ফালাফালা করে দিতে পারে বিশ্বের যে কোনও রক্ষণকে। সেই আক্রমণের ঝড় সামলানোর মতো দক্ষতা ৩৯ বছরের দানি আলভেস ও ৩৮ বছরের থিয়াগো সিলভাকে নিয়ে তৈরি ব্রাজিল ডিফেন্সের আছে তো? ২০১৮-তে শেষ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালেও তারা হেরেছে ইউরোপের দেশ বেলজিয়ামের কাছে। বেলজিয়াম এ বারও দারুণ দল। কেভিন দ্য ব্রুইন, এডেন অ্যাজ়ারদের সোনার প্রজন্মের সামনে শেষ সুযোগ বিশ্বকাপ জেতার। রাশিয়ায় দ্য ব্রুইনদের কাছে হারার পর থেকে গত চার বছরে মাত্র এক বারই ইউরোপের কোনও দলের মুখোমুখি হয়েছে ব্রাজিল। চেক প্রজাতন্ত্রের বিরুদ্ধে তারা জেতে ৩-১। কিন্তু কাতারে চেকদের চেয়েও অনেক ভয়ঙ্কর সব ইউরোপীয় মহাশক্তি অপেক্ষা করবে। কাপ জয়ের কুড়ি বছরের অপেক্ষার অবসান ঘটাতে গেলে, ষষ্ঠ বার বিশ্বজয়ের স্বপ্ন পূরণ করতে হলে অগ্নিপরীক্ষা দিতে হবে নেমারদের।

তেমনই কাতারে লিয়োনেল মেসির শেষ ব্যালে। ক্লাব স্তরে সব কিছু জিতেও মেসির ট্রফি ক্যাবিনেটে নেই বিশ্বকাপ। দেশের জার্সিতে তিনি একমাত্র জিততে পেরেছেন ২০২১-এর কোপা আমেরিকা। আর্জেন্টিনাকে ঘিরে আরও বেশি আবেগের স্রোত তৈরি হতে যাচ্ছে এ বার, কারণ এই প্রথম বিশ্বকাপ হবে আর তিনি— দিয়েগো মারাদোনা পৃথিবীতে নেই। আর্জেন্টিনায় ‘পরদেশি’ আচরণ পেয়ে আসা মেসি কি পারবেন কিছুটা হলেও দেশের মন জয় করতে? অদৃশ্য গ্যালারি থেকে হয়তো চোখ রাখবেন মারাদোনাও। আর্জেন্টিনার কি ট্রফি জেতার মতো দল আছে? পণ্ডিতরা বলছেন, আছে। মেসির সঙ্গে আছেন অ্যাঙ্খেল দি’মারিয়া। নীরবে কাজ করে যান। কোপা আমেরিকা জয়েও ফাইনালে গোল ছিল তাঁর। আছেন নিকোলাস ওটামেন্ডি। এসে গিয়েছেন পাওলো দিবালা, মার্কোস অ্যাকুনা, নিকোলাস ট্যাগলিয়াফিকোর মতো নতুন সব তারকা।

নীল-সাদা জার্সির ভক্তরা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, ২০১৯ থেকে এই দলটা হারেনি। কিন্তু ঘটনা হচ্ছে, গত চার বছর কারা কী করল, তার উপর ভিত্তি করে বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন ঠিক হয় না। ঠিক হয় আগামী চার সপ্তাহ কারা দারুণ ছন্দে থাকবে, তার উপরে। ব্রাজিল যেমন কুড়ি বছর কাপ জেতেনি, তেমনই আর্জেন্টিনা জেতেনি ২৮ বছর। শেষ বার তারা বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয় সেই বেঁটেখাটো জিনিয়াসের ফুটবল-দর্পে। মেসিরা এই বিশ্বকাপে প্রথম ম্যাচ খেলতে নামার দু’দিন পরেই যাঁর দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী। মেসির বিদায়ী বাসর আর দিয়েগো-স্মরণের যৌথ আবেগে ভাসতে পারে ফুটবল দুনিয়া।

আর আবেগকে যদি সরিয়ে রেখে ভাবা যায়? যদি বাস্তব ফুটবলবুদ্ধির প্রিজ়মে দেখা হয়? এই সংশয়ই ফুটে উঠবে যে, ইউরোপীয় মহাশক্তির সামনে ফের স্বপ্নভঙ্গ হবে না তো লাতিন আমেরিকার দুই প্রধানের? তা ছাড়া ফুটবল-শিল্প দেখতে হলে যেতে হবে রিয়ো দে জেনেইরো বা বুয়েনোস আইরেস, এই প্রাচীন ফুটবল প্রবাদও ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়েছে স্পেনের মতো ইউরোপীয় দেশ। জ়াভি, ইনিয়েস্তারা তিকিতাকার রডোডেনড্রন ফুটিয়েছেন ২০১০ বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকায়। ইয়োহান ক্রুয়েফের মন্ত্রে তৈরি পাসিং ফুটবলের প্রদর্শনীতে স্পেন সে বার সম্মোহিত করে দেয় ফুটবলপ্রেমীদের। সেই ক্রুয়েফ, যিনি রাইনাস মিশেলসের টোটাল ফুটবলে দীক্ষিত। ডি’স্টেফানো, ইউসেবিয়ো, ফেরেঙ্ক পুসকাস, জর্জ বেস্টদের মতোই যাঁর জীবনে বিশ্বকাপ থেকে গিয়েছে অধরা। কিন্তু অবসরের পরে ফুটবলকে পাল্টে দিয়েছিলেন কোচ হিসেবে। ক্রুয়েফ বলেছিলেন, “ফুটবলে টেকনিক মানে এক হাজার বার পায়ে বল নাচানো নয়। এই জাগলারি যে কেউ অনুশীলন করে রপ্ত করতে পারে। তা হলে তো সার্কাসে নাম লেখালেই হয়। টেকনিক হল ওয়ান টাচে বল পাস করা। নিখুঁত গতিতে, নির্ভুল নিশানায়, সতীর্থের নির্দিষ্ট পায়ে।” ব্রাজিলের ছিল ‘হোগো বোনিতো’। সুন্দর ফুটবল। স্পেন নিয়ে আসে তিকি-তাকা। রেডিয়ো কমেন্ট্রি করার সময় এক ধারাভাষ্যকার বলে উঠেছিলেন, “আহা, বল নিয়ে কী সুন্দর খেলা করছে ওরা! তিকি-তাকা, তিকি-তাকা।” সেই থেকে এমন নামকরণ হয়ে যায়। যার আসল উদ্ভাবক ক্রুয়েফ। আয়াখ্‌স আমস্টারডাম এবং পরে বার্সেলোনায় কোচ থাকাকালীন তিনি এই পাসিং ফুটবলের ল্যাবরেটরি তৈরি করেন। তাঁর পরে সেই পরম্পরা সফল ভাবে এগিয়ে নিয়ে যান পেপ গুয়ার্দিওলা। বিশ্বকাপ বোধনের লগ্নে রাখঢাক না রেখে বলে ফেলা যায়, ফুটবলের ভরকেন্দ্র এখন ইউরোপ। তা সে যতই বিশ্বের সব চেয়ে জনপ্রিয় তিন ফুটবল তারকা— মেসি, নেমার এবং রোনাল্ডো লাতিন আমেরিকা থেকে আসুন না কেন। তিন জনের কেউ তাঁদের নিজেদের দেশে লিগে খেলেন না, বরং মহাতারকা হয়ে উঠেছেন ইউরোপের দেশে খেলে। একটি সংস্থা এ বছরেই রিপোর্ট তৈরি করেছে যে, বিশ্বের সবচেয়ে বিত্তশালী প্রথম ২০টি ক্লাব কারা। দেখা যাচ্ছে, ২০টি ক্লাবই ইউরোপের। এর মধ্যে একটি ক্লাব ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডই শুধু আরব ধনকুবেরদের টাকায় চলে না। জিকো-সক্রেটিসের সময়েও ব্রাজিলের ঘরোয়া ফুটবল ঝলমল করত নিজেদের দেশের তারকার জৌলুসে। এখনও সেখানে ঘরোয়া প্রতিযোগিতায় সিট ফাঁকা পড়ে থাকে না। ফুটবলকে ঘিরে এখনও পাগল হয় ব্রাজিলীয়রা। কিন্তু নেমারের মতো মহাতারকাকে নিজের দেশের স্যান্টোস-এর হয়ে খেলতে দেখতে চাওয়া মানে দিবাস্বপ্ন দেখা। কাতারে যে ব্রাজিল দল খেলতে এসেছে, তার নব্বই শতাংশ ইউরোপের লিগে চুটিয়ে খেলছে। পাল্টা প্রশ্ন তাই উঠছেই যে, ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে যখন কাতারের ধনকুবেররা টাকা ঢালেন, তখন তো তা মানবাধিকার লঙ্ঘন করা দেশের টাকা হয় না! গড়াপেটা করে পাওয়া বিশ্বকাপের দেশ হয় না!

সহস্র এক আরব্য রজনীতে শাসক শাহরিয়ারকে তাঁর স্ত্রী শেহেরজাদের শোনানো সেই দুই বিখ্যাত গল্পের মতোই দু’ধরনের মতামত তৈরি হয়ে গিয়েছে কাতার নিয়ে। বহির্বিশ্ব ব্লাটারদের দুর্নীতি প্রসঙ্গ টেনে আখ্যা দিচ্ছে, ‘আলিবাবা ও চল্লিশ চোর’। আর কাতার-পন্থীদের পাল্টা উদাহরণ ‘আলাদিনের আশ্চর্য প্রদীপ’। যার ছোঁয়ায় ভোজবাজির মতো নাকি আরব্য রূপকথার অঞ্চলে পাল্টে যাচ্ছে সব কিছু। কোনও স্টেডিয়াম ছিল না? রাতারাতি বানিয়ে ফেলো সাতটি বিলাসবহুল স্টেডিয়াম। গরমে পুড়বে ইউরোপের দল, সমর্থকেরা? বেশ, স্টেডিয়ামের ভিতরে এসি বসিয়ে দাও। এই প্রথম ফুটবল বিশ্বকাপ হবে এয়ারকন্ডিশনড স্টেডিয়ামে। এর মধ্যে কয়েকটি স্টেডিয়াম আবার ‘ইউজ় অ্যান্ড থ্রো’-র মতো ব্যবহার করা হবে। বিশ্বকাপ হয়ে গেলেই আর রাখা হবে না।

শুধু তা-ই নয়, বিশ্বকাপ চলাকালীন পুরো কার্নিভাল মেজাজ এনে ফেলতে চেয়েছেন উদ্যোক্তারা। এক দিকে ফুটবল চলবে, অন্য দিকে ফুটবলকে ঘিরে চলবে উৎসব। এক মাস ধরে বিশ্বের সব নামীদামি তারকারা এসে পারফর্ম করবেন। আল বিদা পার্কে ফ্যান ফেস্টিভ্যাল চলবে। সেখানে ফুটবলভক্তদের বিনামূল্যে প্রবেশাধিকার থাকবে, জায়ান্ট স্ক্রিনে ৬৪টি ম্যাচের প্রত্যেকটি দেখানো হবে। তিনটি জ়োন রয়েছে তার মধ্যে। লাইভ, ফুড, প্লে। যার যে রকম ইচ্ছা ঘোরো। খেলা দেখতে পারো, খাওয়াদাওয়া করো অথবা বাচ্চাদের ছেড়ে দাও গেম জ়োনে। কত লোক সেখানে এক সঙ্গে থাকতে পারে? চল্লিশ হাজার! ভুল লেখা হয়নি। চল্লিশ হাজার-ই!

দোহায় ব্যস্ততম রাস্তার ছয় কিলোমিটারের একটি অংশকে বেছে নেওয়া হয়েছে সেরা কার্নিভালের জন্য। সেখানে লাইভ শো চলতে থাকবে। এক সঙ্গে সত্তর হাজার মানুষ এখানে জড়ো হতে পারেন, থাকবে ১৫০টি ফুড কাউন্টার। চারটি লাইভ স্টেজের সঙ্গে থাকবে বেদুইন ভিলেজ। যেখানে প্রত্যেক দিন চলবে চোখ-ধাঁধানো জলরাশির প্রদর্শনী— ‘ওয়েলকাম টু কাতার’। তৈরি হচ্ছে সাংস্কৃতিক ভিলেজ। ২২টি দেশের কনসার্ট, চিত্রকলা প্রদর্শনী এবং নানা ইভেন্ট চলবে সারা ক্ষণ। আর্জেন্টিনা, গ্রেট ব্রিটেন থেকে শুরু করে আরব দেশের নানা জনপ্রিয় ব্যান্ড আনা হচ্ছে মনোরঞ্জনের জন্য। ষাট হাজার দর্শক ধরবে এমন বুলেভার্ডে চলবে ‘লাইট অ্যান্ড সাউন্ড শো’। থাকবে আইস স্কেটিং রিঙ্ক, আইস ব্যালে প্রদর্শনী। আলাদা জায়গায় চলবে মিউজ়িক ফেস্টিভ্যাল। একটি স্টেডিয়ামের পাশেই সমুদ্রসৈকতে চলবে ওয়াটার স্পোর্টস। সেখানে বসে দেখা যাবে কাতারের বিখ্যাত দিগন্তরেখা। আরব্য রজনীর অনুকরণে আঠাশটি সেট বানানো হচ্ছে, যেখানে পারফর্ম করতে আসছেন আন্তর্জাতিক সব তারকা। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আমেরিকান র‌্যাপার লিল বেবির সঙ্গে থাকছেন কানাডিয়ান তারকা এবং নাচের জন্য ভারতে জনপ্রিয় হয়ে ওঠা নোরা ফতেহি। কাতার বিশ্বকাপের অফিশিয়াল গানের ভিডিয়োতেও অংশ নিয়েছেন সুপারহিট নোরা।

মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রশ্ন কাতারের বিরুদ্ধে ওঠা খুবই ন্যায়সঙ্গত। কিন্তু পাল্টা প্রশ্ন উঠেছে, বাকি ৩১টি অংশগ্রহণকারী দেশগুলির কী অবস্থা, সেটাই বা কে বিচার করবে? যদি কাতারের সমকামী নীতি নিয়ে প্রশ্ন ওঠে, তা হলে সেনেগাল, মরক্কো, টিউনিসিয়াদের নিয়ে কী করা হবে? এই তিন দেশেও যে সমকামিতা নিষিদ্ধ। অথবা কী বলা হবে ঘানা নিয়ে? যেখানকার সংসদে নতুন বিল পাশ করানোর পরিকল্পনা চলছে। কী সেই বিল? না, সমকামীদের প্রতি সহানুভূতি, সমর্থন দেখালেও হাজতবাসের সাজা মিলতে পারে! অথবা ক্যামেরুন? যেখানে পারস্পরিক সম্মতিতে সমকামীদের যৌন সংসর্গের সাজাও হতে পারে ভয়ঙ্কর। বাদ যাবে না ফুটবলের বড় দেশগুলিও। নেমারের দেশ ব্রাজিলের নাম পুলিশ-হত্যায় খুব উপরের দিকে রয়েছে। আর্জেন্টিনায় সরকার এবং আইনি ব্যবস্থার বিরুদ্ধে বার বার উঠছে দুর্নীতির অভিযোগ। পশ্চিম এশিয়ায় প্রথম বার বিশ্বকাপ কেন হবে, এই প্রশ্ন যেমন উঠছে, তেমনই পাল্টা মত রয়েছে যে, বিশ্বের এই প্রান্তে ফুটবল-সহ সব খেলাই খুব জনপ্রিয়। দিয়েগো মারাদোনা কোচিং করিয়ে গিয়েছেন আমিরশাহিতে। জ়িনেদিন জ়িদান পশ্চিম এশিয়ার কোচিং অ্যাকাডেমিতে ফুটবল শিখিয়েছেন। রজার ফেডেরার টেনিস খেলে গিয়েছেন শেখদের আমন্ত্রণে। সেই কত বছর আগে শারজাকে ক্রিকেট মানচিত্রে তুলে এনেছিলেন আব্দুল রহমান বুখাতির। ভারত, পাকিস্তান তো বটেই খেলে গিয়েছে অস্ট্রেলিয়া, ওয়েস্ট ইন্ডিজ়ও। ক্রিকেটে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ হয়েছে সংযুক্ত আমিরশাহিতে। তবে ফুটবলের মহামেলা এই প্রথম।

কাতার কি তৈরি? এই প্রশ্ন তুলেছে অনেক দেশ। ফুটবলপ্রেমীরা অবশ্য গলা মিলিয়ে বলবেন, আমরা তৈরি। যে বিশ্বকাপ ফুটবল হাসায়, কাঁদায়, রক্তাক্ত করে, উৎসবে ভরিয়ে দেয় আবার মুহূর্তে করে দিয়ে যেতে পারে শূন্য হৃদয়, তার জন্য আমরা তৈরি। যে বিশ্বকাপ নতুন মুখকে বসিয়ে দেয় তারকার আসনে আর অবলীলায়, নির্মম ভাবে কেড়ে নিতে পারে রাজার সিংহাসন— তার আবেগে, রুদ্ধশ্বাস নাটকীয়তায় ভেসে যেতে আমরা তৈরি। যে বিশ্বকাপ ’৮২-তে হলুদ জার্সির ভক্তদের শোকস্তব্ধ করে দিয়ে গিয়েছিল! চল্লিশ বছর আগে সে দিনও প্রচণ্ড গরম ছিল বার্সেলোনায়। ব্রাজিলের সোনার প্রজন্মকে ঘিরে স্বপ্ন দেখেছিল বিশ্বের সব প্রান্তের ফুটবলপ্রেমীরা। জিকো-সক্রেটিসের জাদু ফিরিয়ে এনেছিল পেলে-গ্যারিঞ্চাদের সুন্দর ফুটবলের স্মৃতি। তাঁদের মন্ত্র ছিল, ফুটবলটা ধরে কেউ দু’টো টাচের বেশি দেবে না। সেই ব্রাজিল দল সম্পর্কে বলা হত, চোখ বেঁধে দিলেও ওঁরা সঠিক নিশানায় বল পাস করে দিতে পারেন। এমনই মোহময়ী ছিল সেই ফুটবল যে, ব্রাজিলের রাস্তায়-রাস্তায় হলুদ জার্সি পরে ফুটবল খেলার হিড়িক পড়ে যায় আবার। কে জানত, সব উৎসব ভেস্তে দেওয়ার জন্য অলক্ষে তৈরি হচ্ছেন ইটালির এক সুযোগসন্ধানী স্ট্রাইকার! যিনি কি না ম্যাচ গড়াপেটার দায়ে অভিযুক্ত হয়ে নির্বাসিত ছিলেন দু’বছর। বিশ্বকাপের মাত্র আট সপ্তাহ আগে মুক্ত হন। কিন্তু ওই যে লিখলাম, বিশ্বকাপের মঞ্চে কখন কে রাজা হয়, কে হয় ফকির কেউ জানে না। পাওলো রোসির হ্যাটট্রিক সে দিন কার্যত হৃদ্‌স্পন্দন থামিয়ে দিয়েছিল ব্রাজিল-ভক্তদের। মারা যাওয়ার আগে দার্শনিক সক্রেটিস বলে গিয়েছিলেন, “আর কখনও ওই ম্যাচটা দেখিনি আমি। দেখতে চাইও না। পাওলো রোসির তিনটি টাচে সে দিন ফুটবলের মৃত্যু হয়েছিল।” জিকো-সক্রেটিসদের ফুটবল মানে ছিল বেদুইনদের ফুটবল। হারলে হারব, কিন্তু নিজেদের ভঙ্গি ছাড়ব না। সেই ফুটবল কি ফিরিয়ে আনতে পারবেন নেমাররা? আমরা তৈরি।

’৮২-তে ফুটবল শিল্পের ভক্তদের নিঃস্ব করে দিয়েছিল যে বিশ্বকাপ, তা-ই আবার দু’হাত ভরে দিয়ে গেল ’৮৬-তে। পাল্টে যাওয়া দুনিয়ায় এখন ফিরে তাকিয়ে কি বিশ্বাস হবে, প্রায় একক ঐশ্বর্যে আর্জেন্টিনাকে জেতানো দিয়েগো মারাদোনার মতো সুপারস্টারও তখন পেতেন না একার ঘর? ডিফেন্ডার হুলিয়ো ছিলেন তাঁর রুমমেট। অমর হয়ে আছে ছিয়াশি বিশ্বকাপ জেতার পরে তাঁর ফাঁস করা কাহিনি, “রাতে বাথরুম যাওয়ার থাকলে পা টিপে টিপে যেতাম। মারাদোনা ঘুমোচ্ছে, পাছে ওর ঘুমে ব্যাঘাত ঘটে। দিয়েগোকে ঘিরেই যে স্বপ্ন দেখছিলাম আমরা। ওকে সুস্থসবল, হাসিখুশি রাখতে না পারলে যে কাপ জেতা যাবে না, সবাই জানতাম।” মেক্সিকোয় সে বার বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার গোটা দলের জন্য আয়োজকেরা বরাদ্দ করেন একটিমাত্র টেলিফোন। ঘরে টেলিভিশন? প্রশ্নই নেই। ডাইনিং রুমে থাকত একটি টিভি। দেখতে হলে সেখানেই আসতে হত মারাদোনাদের।

ফিরে তাকিয়ে কাতারকে তো স্বর্গ মনে হবে। এ বারে গরম নিয়ে প্রশ্ন উঠছে? তা হলে ছিয়াশির মেক্সিকোয় কী ঘটেছিল? দুপুরবেলায় ম্যাচ করানো হচ্ছিল টিভি সম্প্রচার থেকে ফিফার কোষাগার ভরানো হবে বলে। এখন যেমন ব্লাটার, তখন ছিলেন হোয়াও হ্যাভেলাঞ্জ। ফিফা চলত তাঁর কথায়। মারাদোনা তীব্র প্রতিবাদ করেছিলেন। তাঁর সতীর্থ ভালদানো বলেছিলেন, “আমরা ফুটবলের কথা বলি। ওরা (কর্তারা) বলে টাকার কথা।” কত এগিয়ে গিয়েছে পৃথিবী। কত পরিবর্তন ঘটেছে। কিন্তু বিশ্বকাপ অমরত্ব দিয়ে গিয়েছে তারকাদের, তাঁদের কাহিনিকে। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে মারাদোনার ‘হ্যান্ড অব গড’ গোলের বল এখনও বিক্রি হচ্ছে রেকর্ড অর্থে। কে বলবে চোট্টামির গোল। দিয়েগোর দুষ্টুমির ছোঁয়াটুকু পেতেও কত অধীর মানুষ। তাঁর সেই শতাব্দীর সেরা গোল দেখে আজও বাঁধনহারা হয় ফুটবল হৃদয়। একের পর এক ইংরেজ ফুটবলারকে পরাস্ত করে এগিয়ে যাওয়া সেই অপ্রতিরোধ্য মারাদোনাকে দেখে কে বলবে, মেক্সিকোয় সে বার এবড়োখেবড়ো, জঘন্য সব মাঠে খেলা হচ্ছিল! ব্রাজিলকে শেষ করে দিয়ে জ়িনেদিন জ়িদানের হেড। বিশ্বকাপ হাতে ধরে থাকা জিজুর ছবি ফ্রান্সে অভিবাসী সমাজের জয়ের ছবি। আবার বিশ্বকাপ ফাইনালে মাতেরাজ্জিকে মারা তাঁর ঢুঁসো। বা রবের্তো বাজ্জোর পেনাল্টি মিস। ডোপ পরীক্ষায় ধরা পড়ে বিশ্বকাপ মঞ্চ থেকে কাঁদতে কাঁদতে বিদায় মারাদোনার।

কখনও স্বপ্নপূরণ, কখনও স্বপ্নভঙ্গ। কখনও নায়ক, কখনও খলনায়ক। ভাঙাগড়ার বিশ্বকাপ, হাসি-কান্নার বিশ্বকাপ। কাতারেও কেউ কাঁদবে, কেউ হাসবে। মেসি, রোনাল্ডো, নেমারদের সঙ্গে আরও কত তারকার শেষ দৃশ্যের মঞ্চ হতে যাচ্ছে কাতার। টমাস মুলার, লুকা মদ্রিচ, দি’মারিয়া, লুইস সুয়ারেস, বেঞ্জেমা, রবার্ট লেয়নডস্কিদেরও বিদায়ী সঙ্গীত আসন্ন। কত বিশ্বকাপ-কিংবদন্তি পৃথিবী ছেড়ে চলে গিয়েছেন গত কয়েক বছরে! বিরাশির নায়ক পাওলো রোসি, ট্র্যাজিক হিরো সক্রেটিস, ছিয়াশির রাজপুত্র দিয়েগো মারাদোনা। উপরেও কি বিশ্বকাপ হয়? রোসিকে দেখে কি বললেন সক্রেটিস? তিনি, মারাদোনা সেই ছোট শর্টসে অবলীলায় বল নাচিয়ে চলেছেন?

পশ্চিম এশিয়ার প্রথম বিশ্বকাপ নিশ্চয়ই নতুন নায়ক খুঁজে দেবে। যেমন ১৯৫৮-র সুইডেন জন্ম দিয়েছিল পেলে-গ্যারিঞ্চার। যেমন চার বছর আগের রাশিয়া উপহার দিয়েছিল এমবাপেকে। যখনই কোনও দল বিশ্বকাপ জিতেছে, চমক দেখিয়েছে নতুন মুখ। ঝলমল করেছে তরুণ রক্তের উদ্যম। এ বার কাতার মাতাবেন কে? স্পেনের পেদ্রি? ব্রাজিলের ভিনিসিয়াস জুনিয়র? আর্জেন্টিনার লাউতারো মার্তিনেস? নাকি চিরতরে টানেলে হারিয়ে যাওয়ার আগে বাজিমাত করে বাজিগর হয়ে উঠবেন মেসি, রোনাল্ডোদের কেউ? কাকে নিয়ে লেখা হবে ফুটবলের নতুন আরব্য রজনী?

কাতার তৈরি কি না ভাবার আর সময় নেই। আমরা তৈরি। বেদুইন মনটা যেন মানে না কোনওই বাঁধন। চলো, ফুটবলের মহোৎসবে ভেসে যাই। রাত সাড়ে ন’টা বাজতে আর কত ক্ষণ!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement