পূর্বানুবৃত্তি: আরণ্যক যোদ্ধার দলটি ছত্রভঙ্গ হয়ে গেলেও তাদের নেতা সমানে যুদ্ধ করে যাচ্ছিল কৃষ্ণের সঙ্গে। তাকে সামান্য পর্যবেক্ষণ করেই ধীমান বাসুদেব অনুমান করে ফেলেন তরুণটির পরিচয়। তার পর তাকে কথার ছলে বিভ্রান্ত করে ছিন্ন করেন তার ধনুক। অসিযুদ্ধ করতে করতে তাঁরা চলে যান পাহাড়ের অন্তরালে। কিছু ক্ষণ পর বেরিয়ে আসেন একা কৃষ্ণ। অন্য দিকে, পাঞ্চাল রাজ দ্রুপদকে যুদ্ধে পরাস্ত ও বন্দি করতে ব্যর্থ হয়ে হস্তিনাপুরে ফিরে আসে একশত কুরুকুমার।
কৃপাচার্য শকুনির দিকে না তাকিয়েই বললেন, “বলো হে দূত, সত্যই কি ততটাই অনিবার্য ছিল যুদ্ধপরিস্থিতি?”
দূত বিনীত ভাবে জানায়, “আচার্যবর, সবচেয়ে বিপজ্জনক ছিল পাঞ্চালরাজ দ্রুপদের শৌর্য! তিনি তাঁর বাহিনীকে একেবারে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন। ওই সঙ্কীর্ণ রণক্ষেত্রেই তাঁর অতি-দ্রুত বিচরণ প্রতিপক্ষের চোখে ধাঁধা সৃষ্টি করছিল, এমন চক্ষের নিমেষে তিনি স্থান পরিবর্তন করতে-করতে অস্ত্র নিক্ষেপ করছিলেন যে, মনে হচ্ছিল অন্তত দশ জন দ্রুপদ যুদ্ধ করছেন! ধনুর্যুদ্ধে কেউ তাঁকে দমিত করতে পারেননি, অঙ্গরাজও নন!”
“হ্যাঁ, দ্রুতপদে যুদ্ধ করেন বলেই নাম দ্রুপদ,” গঙ্গাপুত্র কঠিন মুখে বলেন ও শির-সঞ্চালন করেন, “এই ব্যক্তিকে পরাস্ত করতে হলে চমৎকারী অস্ত্র নয়, প্রয়োজন শ্রেষ্ঠ পর্যায়ের লঘুহস্ত-শরক্ষেপণ-সামর্থ্য ও গতি! রাধেয়র তা নেই। ওই সূতপুত্রকে আমি পর্যবেক্ষণ করেছি; গুরুগৃহে সে শিক্ষা হয়তো পেয়েছে অনেক, কিন্তু পরবর্তী পর্যায়ে আত্মতৃপ্তির কারণে সেগুলির অভ্যাস ও প্রয়োগে তার ন্যূনতা রয়ে গিয়েছে। সে দাম্ভিক, তাই নিজের ক্ষমতাকে অধিক জ্ঞান করে, ইদানীং অনুশীলনও করে কম। সঙ্কট-মুহূর্তে যোগ্য প্রতিদ্বন্দ্বীর বিরুদ্ধে তার সফল হওয়া কঠিন।”
শকুনি ভ্রুভঙ্গি করলেন মাত্র, কথা বাড়ালেন না। অস্ত্রবিদ্যার মূল্যায়ন নিয়ে ভীষ্মের বিরুদ্ধে তর্ক বাতুলতা। রাজা ধৃতরাষ্ট্র একটি শ্বাস ফেলে বললেন, “তা হলে... শেষ পর্যন্ত আমার পুত্রেরা ব্যর্থ হল? দ্রুপদ তাদের একেবারে নগরের বাইরে বিতাড়ন করে পাঠিয়ে দিল?”
“আজ্ঞে, হ্যাঁ, মহারাজ!” দূতের স্বর নেমে গেল কিছুটা, “সেই পর্যন্ত দেখেই আমি দ্রুত অশ্বারোহণে...”
দূতের কথা সমাপ্ত হওয়ার আগেই দ্বিতীয় এক বার্তাবহ সবেগে প্রবেশ করে। দ্রুত শ্বাসপ্রশ্বাসের সঙ্গে, কিঞ্চিৎ উত্তেজিত-উল্লসিত কণ্ঠে জানায়, “মহারাজের জয়, হস্তিনার জয়! কুরুকুলের আজ মহাগৌরবের দিন!”
স্তম্ভিত সভার হতবাক মুখগুলির দিকে এক বার তাকিয়ে নিয়ে সে আবার সহর্ষে ঘোষণা করে, “জয়, জয় হস্তিনাপুর! পুনরায় যুদ্ধ হয়েছে, পাঞ্চালরাজ্য বিজিত হয়েছে, রাজা দ্রুপদ বন্দি!”
৩৪
“সখা! হে আমার বাল্যবন্ধু দ্রুপদ!”
নিরস্ত্র, মুকুটহীন দ্রুপদ নতশিরে দাঁড়িয়ে আছেন দ্রোণের সামনে। কেশপাশ অবিন্যস্ত, দেহে বহু অস্ত্রক্ষত, কবচ বিপর্যস্ত। ঘন ঘন শ্বাস পড়ছে তাঁর, চক্ষু রক্তাভ, আননও লোহিতবর্ণ। মুষ্টিদ্বয় মাঝে মাঝে দৃঢ়বদ্ধ হচ্ছে, আবার শিথিল হয়ে পড়ছে পরক্ষণেই।
মুক্ত তরবারি হাতে দ্রুপদের পিছনেই দাঁড়িয়ে অর্জুন। নিকটেই গদাধারী ভীমসেন। দ্রুপদকে বন্দি করে নিয়ে এসেছেন তাঁরাই। মাদ্রীনন্দনদের নিয়ে যুধিষ্ঠির রয়েছেন সম্মানজনক দূরত্বে। বয়োজ্যেষ্ঠদের নিজস্ব আলাপনে তিনি অংশ নেবেন না। যুদ্ধেও তিনি অংশ নেননি, নগরদ্বারের বাইরে গুরুর সঙ্গে অপেক্ষা করছিলেন।
দ্বিতীয় পর্বের যুদ্ধ, যা পট পরিবর্তন করে দিয়েছিল অপরাহ্ণের আগেই, তা অধিক ক্ষণ স্থায়ী হয়নি। কৌরবদের বিতাড়িত করে নগরদ্বারের কাছেই যখন পাঞ্চালবাহিনী উল্লাস করছিল, তখনই ভীম ও অর্জুন তাদের আক্রমণ করেন। ভীমসেনের একক পদাতি-যুদ্ধের পদ্ধতি ভয়ঙ্কর, কৃতান্তের মতো গদা-ঘূর্ণনে রথ অশ্ব গজ মনুষ্য সমস্ত কিছুই তিনি একেবারে পিণ্ড পাকিয়ে ফেলছিলেন। সেই প্রবল ত্রাস ও বিশৃঙ্খলার মধ্যে অর্জুন তাঁর অমোঘ শরজালে ছিন্নবিচ্ছিন্ন করে দিচ্ছিলেন শত্রুসেনাদের। নকুল-সহদেবকে চক্ররক্ষার দায়িত্ব দিয়ে, তিনি পবনবেগে রথের দিক পরিবর্তন করতে-করতে বাণ নিক্ষেপ করছিলেন। অবিশ্বাস্য তাঁর হস্তলাঘব, কখন শরসন্ধান করছেন কখন ক্ষেপণ করছেন— যেন দু’য়ের মধ্যে কোনও অন্তর নেই! পাঞ্চালের রথীরা সকলে পরাভূত হলেন অচিরেই। এমনকি বিদ্যুৎগতি দ্রুপদ পর্যন্ত অল্পক্ষণ বাণ-বিনিময়ের পরেই অশ্ব-সারথি-রথচক্র-ধনু সব হারালেন— কৃপাণহস্তে অর্জুন তাঁর ভগ্নরথে লাফিয়ে উঠে বন্দি করে নিয়ে এলেন অপেক্ষমাণ গুরুর সমক্ষে।
না, পার্থ অতি সুভদ্র; প্রয়োজনের অতিরিক্ত এতটুকু নিগ্রহ করেননি, বরং বিনীত ভাবে বলেছেন যে, পাঞ্চালরাজের সঙ্গে তাঁর বৈর নেই, তিনি শুধু গুরুবাক্য পালন করছেন।
অতএব মহাপ্রতাপশালী পাঞ্চালরাজ এখন দীন ব্রাহ্মণের করুণাধীন! সেই ব্রাহ্মণ, যে আবার কুরু-ভৃত্য! চিরশত্রু কুরুবংশের কুমারেরাই নির্জিত করল সমগ্র পাঞ্চালকে! হায় ভাগ্য! এ কলঙ্ক কি কখনও মুছবে?
দ্রোণ তাঁর বাল্যবন্ধুর সেই অধোমুখ ভঙ্গিটি কয়েক মুহূর্ত নিরীক্ষণ করলেন। তার পর অতি কোমলস্বরে ও মৃদুহাস্যে বললেন, “কিন্তু, এ আমি কী সম্বোধন করছি, হায়! হে দ্রুপদ! এখনও কি তোমাকে সখা-সম্ভাষণ করতে পারব আমি? সখ্য যে সমানে-সমানে হয়! তুমি এক রাজ্যহীন বন্দি ক্ষত্রিয়, আমি আমার বাহিনী দিয়ে তোমার রাজ্য জয় করে নিয়েছি, এখন সমগ্র পাঞ্চালরাজ্য আমার। তোমার সঙ্গে মিত্রতা করি কী ভাবে বলো দেখি!”— খুব যেন উদ্বিগ্ন হয়েছেন এমন মুখভঙ্গি করলেন দ্রোণ।
দ্রুপদ এক বার চোখ তুলেই নামিয়ে নিলেন আবার। তাঁর রক্তিম মুখ ক্রমশ পাংশু হয়ে আসছে। ক্রোধ ক্রমশ গ্লানিতে পরিণত হচ্ছে। দ্রোণের শ্লেষবাক্যগুলি যেখানে গিয়ে বিদ্ধ হচ্ছে, সেখানে বিষলিপ্ত শাণিত শর ভেদ করলেও এত জ্বালা হত না! চিবুক লৌহকঠিন, দন্তের চাপে অধর যেন ছিন্ন হয়ে যাবে— দ্রুপদ শ্বাস চেপে দাঁড়িয়ে রইলেন। আজ দ্রোণের দিন!
দ্রোণ তাঁর বান্ধবের সেই দাহটুকু অনুভব করছিলেন পূর্ণমাত্রায়। আবারও তেমনই মধুক্ষরা স্বরে তিনি বলতে লাগলেন, “তোমার রাজ্য ধন সব এখন পরহস্তগত। এমনকি, প্রাণটুকুও শত্রুর কৃপার অধীন। এমন সর্বহারা আকিঞ্চনের সঙ্গে আমি, বর্তমান পাঞ্চালাধিপতি ভারদ্বাজ দ্রোণ তো সমানে-সমানে বন্ধুত্ব করতে পারছি না হে পৃষতনন্দন। বুঝতেই পারছ, তোমার চেয়ে ভাল এ তত্ত্ব আর কে বুঝবে! কিন্তু, ভীত হয়ো না। তুমি আমার বাল্যক্রীড়ার সঙ্গী, তোমার সঙ্গে মিত্রতাই আমার কাম্য। তখনও ছিল, এখনও। তাই আমি স্থির করেছি, তোমার মতো নিঃস্ব নির্ধনকে আমি আমার সম-পর্যায়ে উঠিয়ে আনব— তা হলে আর বন্ধুত্বে বাধা নেই!”
কয়েক মুহূর্ত নিঃশব্দ নতশির দ্রুপদের দিকে তাকিয়ে থেকে দ্রোণ আবার বললেন, “যাও, আমার এই অধিকৃত সমগ্র পাঞ্চালরাজ্য থেকে অর্ধভাগ কৃপা করে তোমাকে দিলাম! সম্পূর্ণই দিতাম— আমি দরিদ্র বিপ্র, রাজ্য নিয়ে কী করি। কিন্তু ভেবে দেখলাম, তোমার সঙ্গে বন্ধুত্বটি অক্ষুণ্ণ রাখার জন্যই একটু সমান-সমান থাকা আমার নিজের পক্ষে প্রয়োজন। তাই অর্ধভাগ, গঙ্গার উত্তরভাগের অহিচ্ছত্র পর্যন্ত আমি রেখে দিলাম। আমার প্রতিনিধি-রূপে পুত্র অশ্বত্থামা ওখানকার শাসক হোক। দক্ষিণাংশ, কাম্পিল্য সহ চর্মন্বতী পর্যন্ত— তোমাকে দান করলাম, এখন থেকে তুমি ঐ অর্ধের নৃপতি।... কী, সখা? এখন ঠিক আছে?”
এখনও নির্বাক দ্রুপদ। শ্বাস ফেললেন কয়েক বার। তা দেখে দ্রোণের কণ্ঠে আবার ছদ্ম-বিনয়ের শ্লেষ প্রকট হল, “বন্ধুত্ব স্বীকার করছ কি না, সেটুকু অন্তত মুখ ফুটে জানিয়ে যাও প্রবল-পরাক্রমী পাঞ্চালেশ্বর! শুনেছ বোধ হয়, ঋষিশ্রেষ্ঠ দ্বৈপায়ন ব্যাস তাঁর মহাভারত-মহাকাব্যে সমগ্র আর্যজাতির অতীত-বর্তমান গ্রথিত করে রাখছেন! সেই চিরস্থায়ী ইতিবৃত্তে দ্রুপদ-মিত্র হিসেবে দরিদ্র দ্রোণ স্বীকৃত থাকবে কি না, তা নিয়ে বড়ই চিন্তিত হে আমি... তোমার মুখের বাক্যটুকু না পেলে...”
দ্রুপদ সহসা মুখ তুললেন। নিষ্পলক দৃষ্টিতে কয়েক মুহূর্ত তাকিয়ে থাকলেন ব্রাহ্মণের দিকে। তার পর, অসাড় ওষ্ঠাধর যেন বহু আয়াসে প্রসারিত করে একটু হাস্যভঙ্গি করলেন। যেন মৃতের মুখে লেগে-থাকা হাসি। প্রথম বারের চেষ্টায় তাঁর স্বরস্ফুর্তি হল না। কাশলেন দু’বার। অবশেষে শুষ্ককণ্ঠে বললেন, “আপনি মহান। আপনার বন্ধু হতে পেরে ধন্য হলাম। চিরকাল আপনার এই কৃপা ও মহত্ত্ব স্মরণে থাকবে।”
দ্রুপদের কণ্ঠস্বরে এমন কিছু ছিল যা দ্রোণকে এক লহমার মধ্যে কঠিন করে তুলল। মুহূর্ত-পূর্বের শ্লেষ-রসাক্ত বাচনের পরিবর্তে তাঁর স্বরেও ফণা তুলল তিক্ত ও নীরস দার্ঢ্য, “হ্যাঁ হে। স্মরণ নামক বস্তুটি দুর্বল হলে নানা সমস্যা! কাম্পিল্যসভায় তুমি সেই বিস্মরণ-রোগের শিকার হয়েছিলে পৃষতনন্দন। তা, কী করি, আমি ব্রহ্মতেজোহীন বিপ্র, উপবীত ছিন্ন করে শাপ-টাপ দিলেও তো কোনও কাজ হত না। ফলে, ওই লগ্নটিকে নিরন্তর স্মরণে জাগরূক রাখা, স্মৃতির হোমাগ্নিতে অহর্নিশ সমিধ নিক্ষেপ করা ভিন্ন আমারও আর উপায় ছিল না, মিত্র! এবং, দেখতেই পাচ্ছ, সেই স্মরণ-পথ বেয়ে আজ কী গন্তব্যে এসে উপনীত হল দরিদ্র দ্রোণ! ভুলে গেলে কি আর এই দিন দেখাতে পারতাম তোমাকে? বিস্মরণ কোনও কাজের কথা নয়।”
“ঠিক! আমিও... আমিও... ভুলব না!” অতি অস্ফুটে বললেন পাঞ্চালাধিপতি।
৩৫
মগধেশ জরাসন্ধ সভায় বসে আছেন, কিন্তু মস্তকটি অবনত। যেন গ্রীবা আর ভার বহন করতে পারছে না! বৃষস্কন্ধ শরীরটিও যেন ন্যুব্জ। সাধারণত তাঁর সিংহাসনে উপবেশনের ভঙ্গিটি খুবই দৃপ্ত হয়ে থাকে। আসনের দুই প্রসারিত বাহুর উপর নিজের বলিষ্ঠ দু’টি হাত স্থাপন করে তিনি মেরুদণ্ড সোজা রেখে বসেন, উন্নতশির। কিন্তু আজ হাত দুটিও ক্রোড়ে ন্যস্ত। শিথিল, অবসন্ন, নিরুদ্যম।
প্রধান অমাত্য করঞ্জাক্ষ কর্তব্য পালন করছিলেন। রাজাকে নিত্যনৈমিত্তিক বিবরণী দিতে হয়, স্বরাজ্যের বা পররাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ সমাচার সব। ধীমান নৃপতি জরাসন্ধ আর্যাবর্তের রাজনৈতিক প্রবাহ সম্পর্কে সদা-অবগত ও সতর্ক থাকতেই পছন্দ করেন। সুতরাং, সভার প্রারম্ভেই তিনি সার্বিক সংবাদ-চুম্বক শ্রবণ করতে চান। সমগ্র দেশের কোথায় কী ঘটমান, কী পরিবর্তন হচ্ছে, ঘটনাবর্তে কী কী সম্ভাবনার আভাস— দূত, বার্তা-সংগ্রাহক, গুপ্তচর, গূঢ়-আধিকারিক সকলে কী কী তথ্য আহরণ করে এনেছে, সব তাঁকে জানাতে হয়। যেগুলি তিনি উপযুক্ত বিবেচনা করেন, সেগুলির বিশদ বিবরণ চান, পরবর্তী কালে মন্ত্রণাগারে সেগুলির বিশ্লেষণ চলে। এটি দীর্ঘদিনের প্রথা।
সম্প্রতি মগধরাজ সভায় কিঞ্চিৎ অনিয়মিত। অনেক দিন পর আজ উপস্থিত হয়েছেন। অমাত্যপ্রধান একটি দীর্ঘ সমাচার-তথ্য-পঞ্জি নিয়ে তাঁর সম্মুখে দাঁড়িয়ে পাঠ করে চলেছেন, যেমন রীতি।
বিচিত্র সংবাদ সব। জম্বুদ্বীপ বড়ই ঘটনাবহুল ইদানীং।
সৌবীর দেশে এক অজানা ব্যাধির প্রাদুর্ভাবে সহস্র প্রজার মৃত্যু হচ্ছিল, হিমালয় থেকে দুর্লভ ওষধি সংগ্রহ করে রাজ-চিকিৎসকেরা সেই দুর্গ্রহ রোধ করেছেন।
পাঞ্চালরাজ দ্রুপদ তাঁর অর্ধরাজ্য হারিয়েছেন কুরুর রাজপুত্রদের কাছে। আচার্য দ্রোণের পুত্র এখন উত্তর-পাঞ্চালের শাসক। আবার, এই অপমানের প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য দ্রুপদ এক মারণযজ্ঞ করতে চাইছেন। গঙ্গা-যমুনা তীরবর্তী তপোবনবাসী ঋষিদের সঙ্গে তাঁর আলোচনা চলছে।
বেত্রকীয় নগরের রাজা তাঁর প্রজাদের পরম বিপদ দেখেও নির্লিপ্ত। অতি সম্প্রতি তাঁর অধীন একচক্রা নগরে এক অতিকায় ও বলশালী অনার্য, যার নাম বক রাক্ষস— নিরীহ প্রজাদের খাদ্য লুণ্ঠন ও নির্বিচারে হত্যা শুরু করেছে।