Jyotipriya Mallick

দুর্নীতির গঙ্গাসাগর, সব শাখা এসে মিশেছে একটি জায়গায়: জ্যোতিপ্রিয়ের জামিনের বিরোধিতায় ইডি

রেশন দুর্নীতিতে অভিযুক্ত বালুর জামিনের বিরোধিতা করে আদালতে ইডি মন্তব্য করেছে যে, এই দুর্নীতির এফআইআরে প্রথমে তাঁর নাম ছিল না। কিন্তু তদন্ত করতে গিয়ে একাধিক নথি ইডির হাতে এসেছে।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৬:৪৯
Share:

জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। — ফাইল চিত্র।

রাজ্যের প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক হলেন ‘দুর্নীতির গঙ্গাসাগর’। নদীর শাখা-প্রশাখা যেমন সাগরে মেশে, তেমনই দুর্নীতিকারীদের গন্তব্যস্থলও ছিলেন তিনি। রেশন দুর্নীতিকাণ্ডে অভিযুক্ত জ্যোতিপ্রিয়ের জামিনের বিরোধিতা করে আদালতে এমনটাই দাবি করল এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় ঘনিষ্ঠমহলে বালু বলে পরিচিত। সেই বালুকে দুর্নীতির ‘রিং মাস্টার’ বলেও দাবি করেছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা।

Advertisement

শনিবার বিচারভবনে জ্যোতিপ্রিয়ের জামিনের মামলার শুনানি ছিল। এর আগের শুনানিতে বালুর আইনজীবী জামিনের আবেদনে তাদের ‘সাবমিশন’ করেছিল। শনিবার, দ্বিতীয় দিন ইডি সেই জামিনের বিরোধিতা করে তাদের বক্তব্য জানাল। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার আইনজীবী আদালতে সওয়াল করে বললেন, ‘‘জ্যোতিপ্রিয় হলেন দুর্নীতির গঙ্গাসাগর। এই দুর্নীতিকে যদি পাখির মতো উপর থেকে দেখা যায়, তা হলে দেখা যাবে, গঙ্গাসাগরে যেমন নদীর বিভিন্ন শাখা-প্রশাখা এসে মেশে, তেমন এই ক্ষেত্রে দুর্নীতির একাধিক শাখা গিয়ে মিশেছে মন্ত্রীর কাছে। তদন্ত করতে গিয়ে এ সব দেখা গিয়েছে।’’ ইডির আরও দাবি, ‘ভুয়ো’ সংস্থা থেকে শুরু করে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের মালিকানা, সর্বত্রই জ্যোতিপ্রিয়ের লোক রয়েছেন।

রেশন দুর্নীতিতে অভিযুক্ত বালুর জামিনের বিরোধিতা করে আদালতে ইডি আরও মন্তব্য করেছে যে, এই দুর্নীতির এফআইআরে প্রথমে তাঁর নাম ছিল না। কিন্তু তদন্ত করতে গিয়ে একাধিক নথি ইডির হাতে এসেছে। তা থেকে দেখা যাচ্ছে যে, এফআইআরে রাজ্যের প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রীর নাম না থাকলেও এই দুর্নীতির ‘রিং মাস্টার’ তিনি। ইডির আইনজীবী সওয়াল করে বলেন, ‘‘ষড়যন্ত্রকারীরা প্রকাশ্যে আসেন না, নেপথ্যে থেকেই পরিচালনা করেন। এই দুর্নীতি চালনা করেছিলেন জ্যোতিপ্রিয়। যখন রেশন দুর্নীতি হয়েছে, তখন তিনি ক্ষমতাশালী (মন্ত্রী) ছিলেন।’’

Advertisement

গত ১১ ডিসেম্বর এর আগের শুনানিতে জ্যোতিপ্রিয়কে ‘কিংপিন’ বলে আদালতে দাবি করেছিল ইডি। তাদের আরও দাবি ছিল, রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী জামিন পেয়ে গেলে গোটা তদন্ত প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করতে পারেন। যদিও জ্যোতিপ্রিয়ের আইনজীবী তাঁর ‘প্রভাবশালী’ হওয়ার তত্ত্ব খারিজ করেছিলেন। এই প্রসঙ্গে বিচারক প্রশ্ন তুলেছিলেন, ‘‘উনি তো এখন আর মন্ত্রী পদে নেই। তা হলে কী করে এত প্রভাব খাটাবেন?’’ ইডি যদিও জ্যোতিপ্রিয়ের আইনজীবীর দাবি উড়িয়ে দিয়েছিল। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার আইনজীবী সওয়াল করে বলেন, ‘‘কেউ কিং হন, কেউ কিংমেকার। এমনও মামলা রয়েছে, দীর্ঘ দিন ধরে যেখানে অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে না। কিংমেকারেরা আসলে এতটাই ক্ষমতাশালী। জ্যোতিপ্রিয় জামিন পেলে পুরো মামলাটিকে প্রভাবিত করতে পারেন।’’ শনিবার ইডি দাবি করল, তিনি দুর্নীতিকাণ্ডের ‘রিং মাস্টার’।

গত বছর ২৭ অক্টোবর রেশন দুর্নীতিকাণ্ডে জ্যোতিপ্রিয়কে গ্রেফতার করেছিল ইডি। গ্রেফতারির পরে প্রথমে অসুস্থ হয়ে পড়েন তৎকালীন মন্ত্রী। হাসপাতালে কিছু দিন থাকতে হয় তাঁকে। সেখান থেকে সুস্থ হয়ে জেলে যান তিনি। সেই থেকে জেলে রয়েছেন। বিচারভবনে জামিনের আবেদন করেছেন। সেই জামিনের বিরোধিতা করছে ইডি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement