নিঃসঙ্গ: মার্সেল প্রুস্ত। সাহিত্যের জন্যই নিজেকে সরিয়ে নিয়েছিলেন সমাজ থেকে । ছবি: গেটি ইমেজেস।
এক জন জিনিয়াসের কাজ সহজে মানুষের স্বীকৃতি ও প্রশংসা পায় না, কারণ তাঁর কাজ অন্যদের সঙ্গে মেলে না, একমাত্র যারা বিরল মনের অধিকারী তাঁরাই সেই কাজের সমঝদার হতে পারেন।’ লিখেছিলেন মার্সেল প্রুস্ত। বিশ শতকের উপন্যাসে যিনি যুগান্তকারী অবদান রেখেছেন, সাহিত্যের ইতিহাসে যার উচ্চাকাঙ্ক্ষা বোধহয় তুলনাহীন, সেই প্রুস্তের দেড়শো বছর পূর্ণ হল গত ১০ জুলাই।
জীবনের শেষ বারো বছর তিনি প্রায় নিঃসঙ্গ জীবন কাটিয়েছেন, স্বেচ্ছায় ঘরবন্দি হয়ে থেকেছেন, শুধুমাত্র এমন একটি উপন্যাস লিখবেন বলে, যা লেখার কথা তিনি ছাড়া আর কেউ কখনও কল্পনাও করতে পারেননি। জীবনকে যে এত গভীর ভাবে দেখা যায়, এত খুঁটিয়ে বিশ্লেষণ করা যায়, সমাজ ও মানুষের ভিতরে যে এই ভাবে তন্নতন্ন করে অন্বেষণ চালানো যায়, প্রুস্তই তা প্রথম দেখালেন। তাঁর উপন্যাস যেন ভাষার এক অবিস্মরণীয় স্থাপত্য, তিলে তিলে নিজেকে ক্ষয় করে যাকে তিনি রেখে গেছেন ভবিষ্যতের পাঠকের জন্য।
প্রুস্তের জীবন এবং উপন্যাস যেন একাকার হয়ে গেছে। কোন জীবন কাটালে এক জন লেখক ওই স্তরের একটি উপন্যাস লিখতে পারেন, কতটা সাধনা থাকলে এক জন শিল্পী নিজের প্রতি অমন নির্মম হয়ে উঠতে পারেন, সমস্ত সামাজিক প্রলোভন থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে একদম ডুবে যেতে পারেন নিজের সৃষ্টির জগতে, তা শুধুমাত্র ওই উপন্যাসটি পাঠ করলেই বোঝা সম্ভব। এই উপন্যাসের ঘটনাবলি ও চরিত্র খুব কম। গদ্য এবং উপস্থাপনাই এই উপন্যাসের মূল সম্পদ। এ প্রসঙ্গে একটি চিঠিতে প্রুস্ত লিখেছিলেন, ‘এই প্রথম আমি মনের দিকে তাকিয়েছি। আমার জীবনের শূন্যতা আমি উপলব্ধি করেছি।’
মার্সেল প্রুস্তের জন্ম হয়েছিল ১৮৭১ সালের ১০ জুলাই প্যারিস শহরের কাছে ওত্যইয়ে। ১৮৮১ সালের বসন্তে, প্রুস্তের তখন নয় বছর বয়স, রাস্তায় হেঁটে ফেরার সময় তাঁর প্রবল হাঁপের টান ওঠে। এই শ্বাসকষ্টের জন্যই ক্রমে তিনি বাইরের জীবন থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছিলেন। ফলে এই দীর্ঘ নিঃসঙ্গতা তাঁকে তাঁর মহাকাব্যিক উপন্যাস লেখার প্রয়োজনীয় সময় দিয়েছিল। চার পাশে সব কিছু সম্পর্কে একটা গভীর সচেতনতা, কাব্যগুণসম্পন্ন লেখার ক্ষমতা যা প্রায়ই বেদনাবোধের সঞ্চার করে, হয়ে ওঠে তাঁর লেখার বৈশিষ্ট্য।
ছোটবেলা থেকেই প্রুস্ত ছিলেন আবেগপ্রবণ। স্কুল জীবনে দু’বছর ফরাসি কবি স্তেফান মালার্মে ছিলেন তাঁর ইংরেজির শিক্ষক। ১৮৯৬ সালের জুনে প্রুস্তের প্রথম গল্পগ্রন্থ ‘প্লেজার্স অ্যান্ড ডেজ়’ তাঁর নিজের খরচে প্রকাশিত হয়। এই বইয়ের ভূমিকা লিখেছিলেন, নোবেল-বিজয়ী ফরাসি ঔপন্যাসিক আনাতোল ফ্রাঁস। এর পরই প্রুস্ত ফরাসি বুদ্ধিজীবী মহলের কেন্দ্রে চলে আসেন। সামাজিক আদবকায়দা ও নাটকীয়তার দিকে প্রশ্নাতীত ভাবে তাঁর আকর্ষণ ছিল। কিন্তু ধীরে ধীরে সময় ও শক্তির এই অপব্যয়, সামাজিক জীবনের ফাঁপা দম্ভ ও ফাঁকিবাজি করে সাফল্য অর্জনের চেষ্টা তাঁকে ভাবাতে থাকে। প্রুস্ত উপলব্ধি করলেন, এমন একটা লেখা তাঁকে লিখতে হবে, যা শুধুমাত্র তাঁর পক্ষেই সম্ভব এবং শুধু এই লেখার জন্যই তাঁকে বাঁচতে হবে।
স্বাস্থ্যের জন্য দুশ্চিন্তা, ক্রমশ বেড়ে ওঠা মৃত্যুভয়, লেখক হওয়ার তীব্র আকাঙ্ক্ষা এবং ঠিক কোন লেখাটা কী ভাবে লিখলে তাঁর প্রতিভাকে প্রকাশ করতে পারবেন, এই অনিশ্চয়তা তাঁকে ক্রমশ আরও বেশি করে নিঃসঙ্গতার দিকে ঠেলে দিচ্ছিল। নিজের মানসিক চাপ ও আশঙ্কাকে তিনি লিপিবদ্ধ করলেন চার বছর ধরে একটু একটু করে লেখা একটি নভেলের কিছু অংশে। ১৮৯৫-৯৯ সময়কালে লেখা আত্মজীবনীমূলক সুদীর্ঘ উপন্যাস ‘জঁ সাঁত্যই’–এ দেখা যায় এক জন যুবকের করুণ অথচ রোমাঞ্চকর জীবনের কিছু টুকরো ছবি। ৮০০ পৃষ্ঠার মতো লেখার পরও প্রুস্ত পাণ্ডুলিপিটি বাতিল করে দেন। প্রুস্তের মৃত্যুর অনেক পরে অসমাপ্ত ‘জঁ সাঁত্যই’ প্রকাশিত হয় ১৯৫২ সালে। পাণ্ডুলিপিটি পাওয়া গেছিল একটি টুপির বাক্সের মধ্যে।
ত্রিশ বছর বয়সেই প্রুস্তের খামখেয়ালি ব্যবহার প্রবল হয়ে ওঠে। বিকেলের দিকে ঘুম থেকে উঠতেন, ভোরবেলা ঘুমোতে যেতেন। ১৯০৫ সালে মায়ের মৃত্যুর পরের চার বছরে তাঁর জীবন একেবারে বদলে গেল। প্রুস্ত বুঝেছিলেন, নিঃসঙ্গতা লেখকের দৃষ্টিকে স্বচ্ছ করে। এই সময় থেকেই তাঁর লেখা আরও বেশি করে আত্মজীবনীমূলক হয়ে ওঠে। তিনি ঘরের দেওয়ালগুলিতে কর্ক কাঠের আস্তরণ আর দরজায় ভারী পর্দা লাগিয়েছিলেন। সব সময় জানলা বন্ধ রাখতেন যাতে নীচের রাস্তা থেকে কোনও শব্দ বা গন্ধ আসতে না পারে। যে ঘরে তিনি লিখতেন ও ঘুমোতেন সেটি যেন ছিল ভূগর্ভস্থ সমাধির মতো। সে ঘর দূষণমুক্ত করার জন্য অনবরত ধোঁয়া দেওয়া হত।
১৯০৯ সালের জানুয়ারি মাসে হঠাৎই এক দিন চায়ের কাপে কিছু শুকনো রুটি— উপন্যাসে যেটা কেক হয়ে গেছে— ডোবানোর সঙ্গে সঙ্গে অতীতের ঘুমন্ত এক অধ্যায় অপ্রত্যাশিত ভাবে তাঁর সামনে উন্মোচিত হল। ‘এগেইস্ট স্যঁৎ বুভ’ নামের গদ্যগ্রন্থের ভূমিকায় এই আশ্চর্য ঘটনার বিবরণ লিখতে গিয়ে আরও অনেক পূর্বস্মৃতি তাঁর মনে পড়ে গেল। তাঁর মনে হল, যেন এক সম্পূর্ণ নতুন বইয়ের জন্য কাজ করছেন। ১৯০৯ সাল থেকেই এই বইয়ের চিন্তা প্রুস্তের মনোজগৎ অধিকার করে বসে এবং জীবনের অবশিষ্ট বছরগুলোয় একচ্ছত্র অধিকার চালিয়ে যায়।
১৯১০ সাল থেকেই প্রুস্ত তাঁর নিজের ঘরে স্বেচ্ছানির্বাসিত হলেন এবং সম্পূর্ণ ভাবে তাঁর স্বপ্নের উপন্যাসের জন্য কলম ধরলেন। এই মহা-উপন্যাসই, ‘আ লা রশেরশ দু ত্ঁ প্যেরদু’ (রিমেমব্রেন্স অব থিংস পাস্ট/ ইন সার্চ অব লস্ট টাইম’)। ১৯০৬–১০, এই সময়ের মধ্যেই তাঁর উপন্যাসের কাঠামো মোটামুটি তৈরি হয়ে গিয়েছিল। অবশ্য গ্রীষ্মের ছুটিগুলো কাটাতে তিনি নর্মান্ডির কাবুর্গের সমুদ্র-উপকূলে যেতেন। এই অঞ্চলটাই পরে তাঁর উপন্যাসে ‘বালবেক’ নামে এসেছে। এই সময় প্রুস্ত সারা রাত ধরে লিখতেন এবং কলম চালাতেন উত্তেজিত ভাবে। অবশ্য মাঝেমধ্যে তিনি মিউজ়িক হল বা আর্ট গ্যালারিতে যেতেন।
জীবনের শেষ দিনগুলোয় প্রুস্তের কাছে অসুস্থতাকে ছাপিয়ে বড় হয়ে উঠেছে উপন্যাসটি শেষ করার অদম্য তাগিদ। তাঁর জীবনের শেষ দু’বছর ছিল মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই। ১৯২২ সালের অক্টোবর মাসের প্রথম দিকে এক কুয়াশার রাতে বেরিয়ে তাঁর ঠান্ডা লাগে এবং ব্রঙ্কাইটিস হয়। নভেম্বরে, জীবনের শেষ মাসে, তিনি তাঁর পরিচারিকা সিলেস্তেকে দিয়ে শপথ করিয়ে নিয়েছিলেন যে, তিনি কোনও ডাক্তার ডাকতে পারবেন না। ১৮ তারিখ, বিকেল চারটের সময় হাঁপানি, ব্রঙ্কাইটিস, প্রোটিন ও ভিটামিনের স্বল্পতা এবং পুষ্টির অভাবে মাত্র একান্ন বছর বয়সে মারা যান এই লেখক।
প্রুস্ত লিখতে চেয়েছিলেন সেই স্বর্গের কথা, যে স্বর্গকে আমরা হারিয়ে ফেলেছি। তিনি মনে করতেন, একটি নতুন দেশকে আবিষ্কারের থেকেও জরুরি হল একটি নতুন চোখকে আবিষ্কার। এই চোখ জীবনের সেই সব অভিজ্ঞতা প্রত্যক্ষ করবে, যেগুলি আমাদের প্রত্যেকের জীবনে ঘটে, অথচ যাদের আমরা খেয়ালই করি না। জীবনের এই অপ্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতাই প্রুস্তের রচনার বিষয়। অতি তুচ্ছ দৈনন্দিনতার মধ্যেও তাই তিনি আবিষ্কার করে চলেন দুর্লভ সৌন্দর্য ও নান্দনিকতা, কবিতা ও ছবি, সঙ্গীত–গন্ধ-স্বাদ-স্পর্শ। এই কারণেই প্রুস্ত অনন্য। সতীনাথ ভাদুড়ী লিখেছিলেন, ‘জীবনের আপাত–তুচ্ছ ঘটনাগুলোর উপর এত গুরুত্ব তাঁর আগে আর কেউ দেননি।’
প্রুস্তের কাছে শিল্পী হচ্ছেন তিনিই, যার নিজের কাছে সর্বদা এই জিজ্ঞাসাই আছে, ‘আমাদের সত্যিকারের জীবন কী?’ বাস্তব জগতের একটা জোরালো পুনর্নির্মাণ এই উপন্যাস। মাত্র তিনটি জায়গার কথা ঘুরেফিরে এসেছে, শতাব্দীর প্রথম ভাগের প্যারিস, কমব্রে নামে একটি ছোট প্রাদেশিক শহর, বাস্তবে যে জায়গার নাম ‘ইলিয়ার্স’ এবং নর্মান সমুদ্রতীরবর্তী ভ্রমণের উপযোগী স্বাস্থ্যকর স্থান বালবেক, বাস্তবে যা আসলে ‘কাবুর্গ’।
প্রুস্তের উপন্যাসে মোট সাতটি খণ্ড রয়েছে। ‘সোয়ানস ওয়ে’ (সোয়ানের পথ) প্রকাশিত হয় ১৯১৩ সালে। গোড়াতেই নামহীন ও বয়সহীন এক জন কথক নিজের কথা বলতে আরম্ভ করে। পরে এক সময় জানা যায়, এই কথকের নামও মার্সেল। শৈশবের একটা স্মৃতির কথা তার মনে পড়ে। মার্সেল সেই রাতে অপেক্ষা করে ছিল মায়ের কাছ থেকে তার প্রাপ্য চুম্বনের জন্য। কিন্তু বাড়িতে অতিথি শার্ল সোয়ান এসেছেন এবং তাঁকে ছেড়ে মা আসতে পারছেন না। মায়ের চুম্বন ছাড়াই আজ তাকে রাত কাটাতে হবে, এই আশঙ্কায় মার্সেলের দুঃখ-ভারাক্রান্ত হৃদয় বিপন্ন বোধ করতে থাকে। মায়ের কাছ থেকে ‘শুভরাত্রির চুম্বন’ না পাওয়ায় শিশুটির মনে যে ভয়ানক বিপর্যয় নেমে আসে, প্রুস্ত তার সবিস্তার বর্ণনা দিয়েছেন।
এই খণ্ডের কেন্দ্রে রয়েছে ইহুদি সোয়ান এবং ওদেত্তের সম্পর্ক। সোয়ানের মনের মতো মেয়ে নয় ওদেত্তে, তবু ওই অতি সাধারণ হেঁয়ালি-ভরা নারীর আকর্ষণ থেকে নিজেকে ফেরাতে পারে না শিল্পের জহুরি সোয়ান। ওদেত্তে অভিজাত সমাজে ঘোরাফেরা করে এবং ধনী পুরুষেরা তাঁর প্রণয়াসক্ত হয়। জনৈক প্রত্যক্ষদর্শীর মনে হয়, ‘ওর মতো মেধাবী এক জন পুরুষ কেন এ রকম একটা মেয়ের জন্য কষ্ট পাচ্ছে, তা সত্যিই আমার কাছে অস্বাভাবিক লাগে। বুদ্ধিমান মানুষ তখনই অসুখী হতে পারে, যদি যার জন্য সে কষ্ট পাচ্ছে সে তার যোগ্য হয়।’ ওদেত্তের প্রতি সোয়ানের ঈর্ষা হয়, তা এক সময় দমেও যায়, তারা বিয়ে করে এবং তাদের একটি মেয়ে হয়। সোয়ানের মনে হয়, ‘আমরা যাকে ভালবাসা বা ঈর্ষা বলি, তা আসলে কোনও একক, ধারাবাহিক ও অবিভাজ্য আবেগ নয়। সেই প্রেম ও ঈর্ষা আসলে অজস্র প্রেমের সমাহার, নানা ধরনের ঈর্ষার যোগফল, তারা সবাই ক্ষণজীবী, আর সংখ্যায় অজস্র ও অবাধ বলেই তাদের এক বলে ভ্রম হয়, ধারাবাহিক বলে মনে হয়।’
এর পর এই উপন্যাসের বাকি খণ্ডগুলোও একে একে প্রকাশিত হতে থাকে। সোয়ানের মতো মার্সেলের জীবনেও আসে একের পর প্রেম। সোয়ান এবং ওদেত্তের মেয়ে জিলবার্তেই মার্সেলের জীবনের প্রথম প্রেম। বারো বছর বয়সে প্রুস্ত ভালবেসেছিলেন মারি দ্য বেনারদাকি নামে একটি মেয়েকে। মারির প্রতি তীব্র অনুরাগ শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়। ‘জিলবার্তে’ চরিত্রটির মধ্য দিয়ে আসলে সেই হারিয়ে যাওয়া মেয়েটির ছবিই নিখুঁত ভাবে এঁকেছেন প্রুস্ত। মার্সেল অবশেষে অনুভব করে, যে জিলবার্তে স্বপ্নে আসে আর যাকে বাস্তবে দেখা যায়, তারা মোটেই এক নয়। প্রেম হল কল্পনার এমন এক অহংসর্বস্বতা, যা ভালবাসার পাত্র-পাত্রীর উপস্থিতিতে বেঁচে থাকে না, থাকে অনুপস্থিতিতে।
মার্সেলের জীবনে আর এক ভালবাসার নারী, ডাচেস দ্য গুয়েরমাঁত। ডাচেসের প্রগাঢ় নীল চোখ, অনুপম দৈহিক গড়ন, যেন তিনি কোনও ঐতিহাসিক রোমান্সের নায়িকা। ক্রমে ডাচেসের প্রিয় অতিথিদের অন্যতম বলে স্বীকৃতি পায় মার্সেল। এই পরিচয়ের সূত্রেই অভিজাত সমাজের অন্তঃসারশূন্যতা তার কাছে স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
পনেরো-ষোলো বছরের মার্সেল বালবেকে ঘুরতে গিয়ে এক দল তরুণীকে দেখে আকৃষ্ট হয়, যারা সব সময় অস্থিরচিত্তে সাইকেল নিয়ে ঘোরাঘুরি করত। এদেরই অন্যতম আলবের্তিন সিমোনেত, ঠাকুমা মারা যাওয়ার পর যার সান্নিধ্যে মার্সেল শুশ্রূষা খুঁজতে চেয়েছিল। আলবের্তিন মার্সেলের সঙ্গে প্যারিসের অ্যাপার্টমেন্টে উঠে আসে। তাদের মধ্যে শারীরিক সম্পর্ক হয়। কিন্তু এই প্রেমও স্থায়ী হয় না, আলবের্তিন শেষ পর্যন্ত মার্সেলের অজ্ঞাতসারে নিজের জিনিসপত্র গুছিয়ে চলে যায়। সে বালবেকে ফিরে যায়, সেখানে ঘোড়ার পিঠ থেকে পড়ে তার মৃত্যু হয়। আলবের্তিনের শেষ চিঠি থেকে জানা যায়, সে মার্সেলের কাছে ফিরে আসতে চেয়েছিল।
উপন্যাসের শেষ দিকে দেখা যায়, জিলবার্তে-সোয়ানের বিয়ে সুখের হয়নি এবং যুদ্ধে তার স্বামী মারা গিয়েছে। মার্সেল পারির বাইরে একটা স্যানাটোরিয়ামে দীর্ঘ দিন কাটায়। প্যারিসে ফিরে সে আবিষ্কার করে, সে এমন একটা লক্ষ্যে পৌঁছেছে, যা সে তরুণ বয়সেই ত্যাগ করেছিল। সে একটি উপন্যাস লিখেছে। তার ভুলে ভরা জীবনই তার উপন্যাসের বিষয়বস্তু। আগাগোড়া এই উপন্যাসে সে স্মৃতির পুনরুদ্ধার ও পুনরাবিষ্কার করে যেতে চেয়েছে। এই উদ্দেশ্যে সমাজ-জীবনের অসাড়তা থেকে নিজেকে সে দূরে সরিয়ে নিয়েছে, এমনকি মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করার জন্য শিল্পকেই সে হাতিয়ার হিসাবে তুলে নিয়েছে...