১৯৮০ সালের ১৬ অগস্ট। ইস্টবেঙ্গল ডিফেন্ডারের কড়া ট্যাকলে ধরাশায়ী মোহনবাগানের ফরোয়ার্ড। প্রতিবাদে তাঁর চূড়ান্ত অখেলোয়াড়ি আচরণ। রেফারির সামলানোয় একটু ভুল সিদ্ধান্ত। লেগে গেল আগুন। চার দশক পেরিয়েও সেই কষ্টের স্মৃতি অম্লান।
East Bengal

history: কলকাতা ময়দানের কালো দিন

Advertisement

অর্ণব সাহা

শেষ আপডেট: ১৫ অগস্ট ২০২১ ০৯:০০
Share:

উদ্ধারকার্য: ইডেন গার্ডেন্সে সেই ম্যাচে এক আহত ব্যক্তিতে মাঠের বাইরে নিয়ে আসার চেষ্টা করছেন মেডিক্যাল ইউনিটের কর্মীরা

আশির দশকের গোড়ায় মান্না দে-র কণ্ঠে অভূতপূর্ব জনপ্রিয়তা পায় এই গানটি— ‘খেলা ফুটবল খেলা/ খোকা দেখতে গেল/ সেই সকালবেলা... নিমেষেতে খেলার মাঠের আজ/ বদলে গেল রূপ/ রণক্ষেত্র আর কাকে বলে/ খোকা ভয়ে চুপ/ প্রাণের ভয়ে ছুটল মানুষ/ সবাই দিশেহারা/ সারা মাঠে বয়ে গেল রক্তগঙ্গার ধারা/ হাজার লোকের পায়ের চাপে/ হারিয়ে গেল খোকা...’। গীতিকার ছিলেন সত্য বন্দ্যোপাধ্যায়। গানটির নেপথ্যে আছে কলকাতার ফুটবল ময়দানের এক কলঙ্কিত ইতিহাস। ১৯৮০ সালের ১৬ অগস্ট কলকাতার ইডেন গার্ডেন্স-এ চির-প্রতিদ্বন্দ্বী মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গলের ম্যাচে অস্বাভাবিক উত্তেজনা সৃষ্টি হয় এবং দুই দলের সমর্থকদের উন্মত্ত সংঘর্ষে পদপিষ্ট হয়ে ১৬ জন দর্শকের মৃত্যু হয়। এদের কয়েক জনের নাম হল— নবীন নস্কর, কার্তিক মাজি, কল্যাণ সামন্ত, অলক দাস, ধনঞ্জয় দাস, রবীন আদক, সমীর দাস প্রমুখ। এই ময়দানি সংঘাতের পিছনে সামাজিক ইতিহাসের এক গভীর পর্যায় লুকিয়ে আছে।

Advertisement

কী ঘটেছিল সে দিন ইডেন গার্ডেন্সে? লিগের বড় ম্যাচ। খেলার দ্বিতীয়ার্ধের দশ মিনিটের মাথায় মোহনবাগানের সবচেয়ে ক্ষিপ্র ফরোয়ার্ড বিদেশ বসুকে ট্যাক্‌ল করে মাটিতে ফেলে দেন ইস্টবেঙ্গলের ডিফেন্ডার দিলীপ পালিত। বিদেশ বসু মাটি থেকে উঠে চূড়ান্ত অখেলোয়াড়ি আচরণ করেন— তিনি দিলীপ পালিতকে সজোরে লাথি মারেন। রেফারি সুধীন চট্টোপাধ্যায় দু’জনকেই লাল কার্ড দেখিয়ে মাঠের বাইরে বার করে দিলেও মোহনবাগানের পক্ষে ফ্রি-কিকের বদলে বল ড্রপ দিয়ে খেলা শুরু করে দেন। এই ঘটনায় স্টেডিয়ামে আগুন জ্বলে যায়। ইডেন গ্যালারির একটা নির্দিষ্ট অংশে দুই দলের উত্তেজিত সমর্থকের দল হাতাহাতি এবং ইট ছোড়াছুড়ি শুরু করে। ইট, লোহার রড, কংক্রিটের ভাঙা অংশ যথেচ্ছ ছোড়াছুড়ি চলতে থাকে। দর্শকেরা উন্মাদের মতো স্টেডিয়ামের বাইরে বেরিয়ে আসতে শুরু করে। কিন্তু তখন সব ক’টা গেট কোনও অজ্ঞাত কারণে বন্ধ ছিল। সংবাদপত্রের প্রত্যক্ষদর্শীর চোখে ধরা পড়েছিল সেই উন্মাদনা। প্রাণ বাঁচাতে কেউ ছুটছিল আকাশবাণী ভবন, কেউ বা বিশাল স্কোর বোর্ডের দিকে। ভিড়ের চাপে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন শয়ে শয়ে দর্শক। অনেকেই তাঁদের শরীর মাড়িয়েই চলে যান। আহতদের মিছিলে ইডেনের সবুজ ঘাস জায়গায় জায়গায় লাল হয়ে ওঠে। গ্যালারিতে যখন এই তাণ্ডব, পুলিশ নিষ্ক্রিয় দর্শক হিসেবে বসে ছিল। লাল কার্ড দেখানোর পর আরও পঁচিশ মিনিট ধরে এই উন্মত্ততা চলতেই থাকে। অতঃপর পুলিশ গ্যালারির দিকে ছুটে যায় ঝামেলা থামাতে। লাঠিচার্জ করে নির্বিচারে। যাঁরা স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে আহত দর্শকদের টেনে নামাচ্ছিলেন, তাঁদের উপরেও লাঠির বাড়ি পড়ে। গোটা ইডেন যুদ্ধক্ষেত্রের চেহারা নেয়। রণজি স্ট্যান্ডের ঠিক সামনে ইডেনের ফেন্সিং-এর ধারে তখন অজস্র পুলিশ। তাদের পিছনে অসংখ্য মানুষের আর্ত চিৎকার। ‘জল জল’ ধ্বনি ভেসে আসছিল। কয়েকজন যুবক ডেকচি করে জল নিয়ে আহতদের মুখে দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু তাঁদেরও পিঠে পড়ছিল পুলিশের লাঠি। তবু অসীম ধৈর্যে ওঁরা পুলিশের চোখরাঙানি উপেক্ষা করে বন্ধ গেট খুলে আহত মানুষকে মাঠের বাইরে নিয়ে আসার চেষ্টা চালান। আকাশবাণী প্রান্তে তখন অজস্র মানুষ লুটিয়ে পড়ছেন, কাতরাচ্ছেন। ওই দিন মাঠেই তেরো জন দর্শক পদপিষ্ট হয়ে মারা যান। পরে হাসপাতালে আরও তিন জনের মৃত্যু হয়। পরদিন সংবাদপত্রের শিরোনাম হয়— ‘কলকাতার নতুন ঘাতক: অবশেষে খেলার মাঠেই মৃত্যু, নিহত তেরো, আহত শত শত, বড় খেলার মর্মান্তিক ফল’।

ওই দিন খেলার শেষে উন্মত্ত দর্শকরা এরিয়ান তাঁবু তছনছ করে। চেয়ার-টেবিল সহ টেন্টের আসবাবপত্র ভাঙা হয়। আইএফএ-র তৎকালীন সম্পাদক এরিয়ানস ক্লাবের কর্মকর্তা হওয়ার জন্যই এই আক্রমণ বলে মনে করা হয়। ক্লাবের সমস্ত ছবি নষ্ট করা হয়, ফুটো করে দেওয়া হয় তাঁবু। পরদিন খবরের কাগজের রিপোর্টে ফুটে ওঠে হাসপাতালে তরতাজা সব যুবকের লাশের ছবি— ‘রাত ন’টায় সুখলাল কারনানি হাসপাতালের এমারজেন্সি ওয়ার্ডের সামনের চত্বর ছাপিয়ে উদ্বিগ্ন লোকের ভিড়... তরতাজা দশটি যুবকের লাশ। সবচেয়ে কম বয়স যার তার বয়স পনেরো-ষোল... মৃতদেহ শনাক্ত করার জন্য দীর্ঘ লাইন। উদ্বিগ্ন আত্মীয়রা মৃতের সারিতে তন্ন তন্ন করে খুঁজছেন তখনও বাড়িতে না-ফেরা ভাই বা ছেলের মুখ... পুলিশ ভ্যানের উপরে উঠে তখন পুলিশের এক এসআই চিৎকার করে আহতদের নাম পড়ছেন। সামনে শ’দুয়েক লোকের ভিড়...’

Advertisement

পুলিশি ব্যর্থতা, টিকিটের কালোবাজারি, অপ্রতুল নিরাপত্তা এবং খেলোয়াড়দের অনিয়ন্ত্রিত আচরণের মধ্যেই কলকাতার ময়দানি ইতিহাসের এই ট্র্যাজিক দিনটির উৎস খুঁজলে চলবে না। হিংসার এই গণ-মনস্তত্ত্বের কারণ ও চরিত্র ছিল অনেক বেশি গভীর। ষাটের দশকের তীব্র রাজনৈতিক আন্দোলন ও সামাজিক অস্থিরতা, সত্তরের গোড়ায় নকশাল আন্দোলন ও তার ব্যর্থতা বাংলার যুবসমাজে এক গভীর হতাশা আর অনিশ্চয়তার জন্ম দিয়েছিল। হাজার হাজার কোণঠাসা মরিয়া যুবকের নৈরাজ্য ও বিশৃঙ্খলার তালিম তাদের হাতে ব্যাটবল না তুলে পাইপগান, বোমা বাঁধার দিকে ঠেলে দিল। দুঃসহ বর্তমান ও অন্ধকার ভবিষ্যতের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে ক্রুদ্ধ যুবসমাজের এই অংশটিই সে দিন ফুটবল মাঠে বেপরোয়া হিংসার মধ্যে দিয়ে নিজেদের কিচ্ছু না-হয়ে-উঠতে-পারা জীবনের অস্বাভাবিক চরিতার্থতা খুঁজতে চেয়েছিল। সত্তর দশকের ফুটবল মাঠের দর্শক-সংস্কৃতি এরই প্রত্যক্ষ ফল। এই সময় মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গল খেলাকে কেন্দ্র করে দু’দলের সমর্থকদের উত্তেজনা ও সংঘাত এক চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছিল। রাত-দিন ধরে টিকিটের লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা, সামান্য কারণেই বচসা বা মারামারি, যা নিয়ন্ত্রণ করতে ঘোড়সওয়ার নামাতে হত, সে রকম ঘটনার আকছার বিবরণ পাওয়া যায় সত্তরের ময়দানের ইতিহাসে। ১৯৭৫ সালে এই প্রধান দু’দলের লিগ ম্যাচের আগে এ রকমই এক ঘটনায় টিকিটের লাইনে মারামারির জেরে দু’জন অজ্ঞান এবং চার জন আহত হন। পরের বছর ফের টিকিটের লাইনে অশান্তির কারণে শক্তিপদ দে নামে এক ব্যক্তি মারা যান। ১৯৭৫ সালের শিল্ড ফাইনালে ইস্টবেঙ্গল মোহনবাগানকে ৫-০ গোলে হারায়। সেই পরাজয় সহ্য করতে না পেরে পঁচিশ বছরের যুবক উমাকান্ত পালধি আত্মহত্যা করে। সুইসাইড নোটে সে যা লিখে যায়, তাও খুবই বিস্ময়কর— “সামনের জন্মে মোহনবাগানের ভালো ফুটবলার হয়ে এই পরাজয়ের শোধ নিতে চাই।” ১৯৭৭-এর লিগ ম্যাচেও ইস্টবেঙ্গলের কাছে ২-০ গোলে পরাজিত হবার পর জনৈক মোহনবাগানের সমর্থক কীটনাশক খেয়ে আত্মহত্যা করার চেষ্টা করেন। অর্থাৎ খেলা জিনিসটা আর নিছক খেলা থাকছে না, হয়ে দাঁড়াচ্ছে এক ধরনের জীবনযুদ্ধের ক্ষুদ্র সংস্করণ। ষাটের দশকেই এই লক্ষণগুলো প্রবল হতে শুরু করেছিল। সত্তরে সেটাই তুঙ্গে ওঠে। প্রখ্যাত অভিনেতা ও ফুটবলপ্রেমী অনিল চট্টোপাধ্যায় সেদিন আক্ষেপ করে বলেছিলেন— “না, মাঠে কেন যাব বলুন? খেলার মাঠে এখন যেসব ঘটনা-দুর্ঘটনা ঘটছে বলে জানতে পারছি, যত দিন না পর্যন্ত জানব মাঠে খেলাটা খেলাই থাকছে, সেখানে গেলে আমার নিরাপত্তার কোনও অভাব হবে না, তত দিন পর্যন্ত কেন আমি মাঠে যাব?... ঘেরা মাঠটা ইট-পাটকেল ছোড়ার জন্য, কুৎসিত গালিগালাজ করার জন্য, খেলার নামে মাথাগরম করার জন্য নয়।”

বিশেষ করে মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গল ম্যাচে, এই ধারাবাহিক অশান্তির পিছনে গণ-মনস্তত্ত্বের এক ইতিহাস লুকিয়ে আছে। তা হল, ঘটি-বাঙাল দ্বন্দ্ব। সেই তিরিশের দশকের কলকাতার ময়দান থেকে বাহিত হয়ে স্বাধীনতাকালীন ও স্বাধীনতা-পরবর্তী এবং আরও পরে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের কারণে পূর্ববঙ্গ থেকে আগত শরণার্থীর স্রোতের সঙ্গে এই দ্বন্দ্বের অঙ্গাঙ্গি যোগ। ১৯২৫ সালে ইস্টবেঙ্গল কলকাতা লিগের প্রথম বিভাগে উঠলে মোহনবাগান কর্মকর্তা এবং সমর্থকেরা তা ভাল ভাবে নেননি। যদিও ইস্টবেঙ্গলে বহু ঘটি এবং মোহনবাগানে অনেক বাঙাল খেলোয়াড় গোড়া থেকেই ছিলেন। কিন্তু দুই দলের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ এবং পূর্ববঙ্গ— এই দুই উপপ্রাদেশিকতার টানাপড়েন বরাবরই ছিল। ১৯৪৬ সালে তীব্র সাম্প্রদায়িক উত্তেজনার দিনগুলোতেও খেলার ময়দানে ঘটি-বাঙাল দ্বন্দ্বের ঘাটতি হয়নি। ওই বছর দু’দলের ফিরতি লিগ ম্যাচ গোলশূন্য শেষ হয় এবং ইস্টবেঙ্গল লিগ জয় করে। মাঠে ও মাঠের বাইরে দর্শকদের মধ্যে ব্যাপক হাঙ্গামা হয়। ইস্টবেঙ্গল সমর্থকেরা মোহনবাগান তাঁবু আক্রমণ করে। আইএফএ সভাপতি মেজর স্ট্যানহোপ হস্তক্ষেপ করেন এবং হিংসা রোধে দুই দলকেই উদ্যোগী হতে বলেন। এই দ্বন্দ্ব আরও তীব্র আকার ধারণ করে ১৯৪৭-এর দেশভাগের পর থেকে। তখন থেকেই পূর্ববঙ্গ থেকে ভিটেহারা অজস্র মানুষের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গীয় বাঙালির স্বার্থের সংঘাত প্রকট হয়। পূর্ববঙ্গীয়দের জীবনসংগ্রাম ও আত্মমর্যাদার প্রতীক হয়ে ওঠে ফুটবল মাঠের লড়াই। ১৯৪৯ থেকে ১৯৫৩ পর্যায়ে কলকাতা ফুটবল লিগে মোহনবাগানের বিরুদ্ধে ইস্টবেঙ্গলের ধারাবাহিক জয় এক ধরনের সাংস্কৃতিক বিজয়ের অস্ত্র হয়ে ওঠে।

পঞ্চাশ থেকে ষাটের দশক পর্যন্ত এই দু’দলের খেলাকে কেন্দ্র করে ময়দানে দাঙ্গা-হাঙ্গামা সামলাতে পুলিশকে নিয়মিত লাঠিচার্জ বা টিয়ারগ্যাসের শেলও ফাটাতে হত। ১৯৫১ সাল থেকে আইএফএ তাদের আয়োজিত খেলা সামলানোর জন্য নিয়মিত পুলিশি প্রহরার ব্যবস্থা করে। ১৯৫৫ সাল নাগাদ মুখ্যমন্ত্রী বিধানচন্দ্র রায় কলকাতা ফুটবলে হিংসা এবং বিশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে হস্তক্ষেপ করতে বাধ্য হন। স্বাধীনতা-পরবর্তী দু’টি দশকে উদ্বাস্তুরা কমিউনিস্ট পার্টির ছাতার নীচে আশ্রয় নেন। আর খেলার ময়দানে তাঁদের আশাভরসার সমার্থক হয়ে ওঠে ইস্টবেঙ্গল ক্লাব।

১৯৭১-এ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষিতে আবার শরণার্থীর ঢল নামে এই বাংলায়। গোটা সত্তর দশক তাই ঘটি-বাঙালের লড়াইয়ের এক নতুন অধ্যায়। ১৯৭৫-এর শিল্ড ফাইনালে ইস্টবেঙ্গলের কাছে গো-হারা হারের পর সেই যন্ত্রণাক্লিষ্ট রাতের স্মৃতিচারণ করেছেন ফুটবলার সুব্রত ভট্টাচার্য— ‘ম্যাচের শেষে প্রায় ঘণ্টাতিনেক কেটে গেছে। ঘড়িতে রাত নটা বাজে। তাঁবুর ফাঁক দিয়ে দেখলাম তখনও হাজার জনতা তাঁবু ঘিরে রেখেছে। পেছনের দরজা দিয়ে কোনওরকমে পালিয়ে গঙ্গার কাছে রেস্তোরাঁয় গিয়ে বসে রইলাম। আমার সঙ্গে ছিল প্রসূন ব্যানার্জি। রাত আড়াইটের সময় পুলিশের গাড়ি নিয়ে এসে শৈলেন মান্না আমাদের উদ্ধার করে ইলিয়ট রোডের মেসে নিয়ে গেলেন।’

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পাল্টায় ঘটি-বাঙাল দ্বন্দ্বের রূপ। আশির দশকে পৌঁছে স্বাধীনতা-পরবর্তী দ্বিতীয় বা তৃতীয় প্রজন্মের উদ্বাস্তু পরিবারের বাঙালদের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট ক্রমশ ধূসর হয়। ক্রমশ বহু ঘটি ইস্টবেঙ্গল সমর্থক এবং বহু বাঙালই মোহনবাগান সমর্থকে পরিণত হয়। ওপার বাংলা থেকে আসা বিপুল জনগোষ্ঠী ক্রমশ এপার বাংলার সমাজের মূলস্রোতে মিশে যেতে থাকে। ১৯৮০ সালের ১৬ অগস্ট যে বিরোধের হিংস্র চেহারা দেখা গিয়েছিল, তাও ক্রমশ মিলিয়ে যায় দুই ক্লাব-গোষ্ঠীতে। ঠিক যেন আর্জেন্টিনার রিভারপ্লেট-বোকা জুনিয়রস, স্পেনের বার্সেলোনা-রিয়াল মাদ্রিদ বা ইতালির এসি মিলান-ইন্টার মিলান বা ইংল্যান্ডের ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেড-আর্সেনালের মতো চির-প্রতিদ্বন্দ্বী তারা। এই অন্তহীন রেষারেষির কিন্তু শেষ হয় না। একুশ শতকেও তাদের এই যুদ্ধ চিংড়ি আর ইলিশের লড়াই রূপে বহমান থাকে। পুরনো ঘটি-বাঙাল দ্বন্দ্ব বিশ্বায়িত অর্থনীতির দুনিয়ায় নতুন চেহারায় আত্মপ্রকাশ করে।

তথ্যঋণ: কৌশিক বন্দ্যোপাধ্যায় ও ধ্রুব কর

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement