ছবি: প্রসেনজিৎ নাথ
আজ প্রায় মাসদুয়েক হল ভুবনপুরের মূল বাজারের পশ্চিম দিকের নেতাজি পল্লির একতলা, দেড়তলা কিংবা দোতলা বাড়ির ছাদগুলো বড় আনন্দে আছে। মনখারাপের পাথরগুলো সরে যাওয়ায় হারানো খুশির আলো আবার দিব্যি ঢুকছে। এমনিতে নেতাজি পল্লির বৈশিষ্ট্য তেমন কিছু নেই। শহুরে কিংবা আধা-শহুরে এলাকায় সাবেক ডাঙালপাড়া, বারুইপাড়া, বামুনপাড়া ইত্যাদির বদলে দু’-চারটে নেতাজি পল্লি, রবীন্দ্র পল্লি কিংবা অরবিন্দ পল্লির নামই ইদানীং ট্রেন্ড। সে সব এলাকায় বনেদি কিংবা হালফ্যাশনের বাড়িগুলোয় ঘোষবাবু, বোসবাবু, চ্যাটার্জিবাবু কিংবা সান্যালবাবুরা থাকেন। তাঁরা কেউ সরকারি-বেসরকারি অফিসে চাকরি করেন, কেউ স্কুল-কলেজের মাস্টার কিংবা প্রফেসর, আবার কেউ কেউ ব্যবসাদার। চাকরি থেকে বছর কয়েক আগে রিটায়ার করে পেনশন খাচ্ছেন এমন লোকও আছেন। আর পাঁচটা সাধারণ বাঙালি ভদ্রলোকের মতো নেতাজি পল্লির বাসিন্দারাও সুখে-দুঃখে ঘরসংসার করেন, অল্পবিস্তর পিএনপিসি করেন, আপদে-বিপদে প্রতিবেশীর পাশে দাঁড়ান। ঘোষবাবু আর বোসবাবুর ফ্যামিলির মধ্যে যেমন বাটি চালাচালির পরিমাণটা একটু বেশিই। এ বাড়ি লাউচিংড়ি পাঠাল তো ও বাড়ি থেকে মুড়িঘণ্ট-ভর্তি বাটি ফেরত এল। আবার বড়িপোস্তর বদলে হয়তো কচুশাক।
চ্যাটার্জিগিন্নির সঙ্গে আবার সান্যালগিন্নির সখ্য বেশি। পাশাপাশি দুই বাড়ির লাগোয়া জানলার দু’প্রান্তে দাঁড়িয়ে চ্যাটার্জিগিন্নি হয়তো জিজ্ঞেস করেন, “কী দিদি, ঘরের কাজ মিটল?”
সান্যালগিন্নি কপালের ঘাম মুছে বলেন, “আর বলবেন না, কাজের মেয়েটা ডুব মেরেছে। রান্নাবান্না, ঘর ঝাঁটমোছ, বাসনমাজা, কাপড়কাচা একা হাতে কি আর সামাল দেওয়া যায়? বয়স বাড়ছে তো।”
চ্যাটার্জিগিন্নি সহানুভূতির সুর তোলেন, “তা একটা রান্নার মেয়ে রেখে দিন না।”
সান্যালগিন্নি ঠোঁট উল্টোন, “রাখার চেষ্টা কি আর করিনি? কিন্তু কত্তার আবার হাজার ন্যাকামো! বলেন যার তার হাতে রান্না খাব না!”
সাংসারিক গৌরচন্দ্রিকার পালা সাঙ্গ করে চ্যাটার্জিগিন্নি সরাসরি ব্রেকিং নিউজ়ে চলে যান, “খবর শুনেছেন তো? বসাকবাড়ির কেচ্ছা?”
নিষিদ্ধ খবরের রোমাঞ্চই আলাদা। সান্যালগিন্নি হাঁকপাক করে ওঠেন, “কী কেচ্ছা ভাই?”
“আরে শোনেননি? বসাকবাড়ির মেজ তরফের বড় মেয়েটা, সেই যে ফর্সা, লম্বা, মলি না পলি কী যেন নাম, গত পরশু নাকি একটা ফোরটোয়েন্টি ছোঁড়ার সঙ্গে ভেগেছে।”
“ছি ছি! কী লজ্জা! কী লজ্জা! আমি তো কিছু জানতেই পারিনি।”
“আমিই কি ছাই জানতাম? নেহাত উনি এসে বললেন তাই।”
বাড়ির কর্তাদের মধ্যে এ জাতীয় রসালাপ কম। চ্যাটার্জিবাবু সান্যালবাবুকে দেখলেই হাহাকার করে ওঠেন, “কাল জেতা ম্যাচটা কী ভাবে হাতছাড়া হয়ে গেল ভাবুন তো! ও রকম লোপ্পা ক্যাচ, ইজ়ি স্ট্যাম্পিং কেউ মিস করে। স্রেফ গট আপ! ম্যাচ ফিক্সিং করে সর্বনাশ করে দিল!”
সান্যালবাবু মাথা নাড়েন, “ক্রিকেটার তো নয়, এক-একটা ক্রিমিন্যাল। ওই জন্যই আমি ক্রিকেট দেখা বন্ধ করে দিয়েছি। রিয়াল মাদ্রিদ আর বার্সেলোনার ম্যাচগুলো দেখি।”
সেনবাবু আবার দাশবাবুকে দেখে জিজ্ঞেস করেন, “কেমন আছেন? আর্থ্রাইটিসের ব্যথা কমল? শুগার চেক করালেন না কি এর মধ্যে?”
“এই তো গত সোমবারই করালাম, ফাস্টিং একশো পনেরো, পিপি দেড়শো।”
“তা হলে তো দিব্যি পোষ মানিয়ে রেখেছেন,” সেনবাবুকে চিন্তিত লাগে, ‘‘আমার প্রেশারটা এমন ছোটলোক যে কিছুতেই কন্ট্রোলে আসছে না। বিলেত ফেরত ডাক্তারের দু’রকম ট্যাবলেট খাচ্ছি, অথচ উপরেরটা সেই যে একশো আশিতে গ্যাঁট হয়ে বসে আছে, নো নড়নচড়ন। নেহাত নীচেরটা বেগড়বাঁই করে না বলে টিকে আছি।”
নেতাজি পল্লির বাসিন্দাদের মতো নেতাজি পল্লির ছাদগুলোর মধ্যেও হৃদ্যতা কিছু কম নেই। দোলপূর্ণিমার গভীর রাতে টসটসে হলুদ চাঁদটা যখন দুধ জ্যোৎস্নায় স্নান করাচ্ছিল নেতাজি পল্লিকে; ঈশান কোণ থেকে অসময়ে উঠে আসা শিরশিরে হাওয়ায় গাছের পাতাগুলো যখন ঘুম ভেঙে কেঁপে উঠছিল, তখন ঘোষবাবুর বাড়ির ছাদ পাশের বোসবাবুর বাড়ির ছাদকে ডেকে বলল, “ঘুমোলে না কি ভায়া?”
বোসবাবুর ছাদ ছোট্ট একটা হাই তুলে বলে, “না, একটু ঝিমুনি এসেছিল। কিছু বলছ?”
“রংখেলা কেমন লাগল? ছেলেছোকরাদের মাতন দেখলে?”
“শুধু ছেলেছোকরা কেন? বুড়ো ধাড়িদের মাতনই বা কম কিসে?”
“আমার কী ভেবে মনটা খারাপ লাগছে জানো?” ঘোষবাবুর ছাদের গলায় আক্ষেপ ঝরে পড়ে, “সারা দিন ধরে কম রং তো খেলা হল না! রাস্তা, ফুটপাত, ঘরের বারান্দা, বাইরের চাতাল, কুয়োতলা, সব জায়গায় রঙের ছোপ, পাড়ার নেড়িকুত্তাগুলোকে পর্যন্ত পিচকিরি থেকে রং ছিটিয়েছে, অথচ আমাদের দিকে এক আঁজলা আবিরও কেউ ছুড়ল না।”
“যা বলেছ! এতটা ফালতু, অপাঙ্ক্তেয় হয়ে যাব, ভাবিনি।”
ঘোষবাবুর ছাদ যথেষ্ট উষ্মা প্রকাশ করে, “এক বার ভাবো, বাড়ির মধ্যে ছাদটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, আর তাকেই কি না এত অবহেলা! এক বার যদি আমরা সবাই হুড়মুড় করে ভেঙে পড়ি, বাঁচবি কেউ?”
এদের গলার আওয়াজ পেয়ে আশপাশের ছাদগুলোও জেগে ওঠে। সান্যালবাবুর ছাদ বলে, ‘‘প্রতিটি ঘরের কেমন যত্ন নিচ্ছে দেখো। বেডরুম, ডাইনিং, কিচেন, বাথরুম, দামি টাইলস, মার্বেল— জেল্লা কত! খালি ছাদটার দিকে হুঁশ নেই।”
চ্যাটার্জিবাবুর ছাদ গলাখাঁকারি দেয়, “হুঁশ থাকবে কী করে? ছাদে আসে কেউ? ওই কাজের মেয়েটা সকালে এক বার ভেজা জামাকাপড় মেলতে আসে... ব্যস!”
দাশবাবুর ছাদ মাথা নাড়ে, “আমার তো তাও নয়। কী এক ছাতার ওয়াশিং মেশিন কিনেছে, জামাকাপড় ওতেই কাচে, ওতেই শুকোয়।”
সেনবাবুর ছাদ দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে, “অথচ কী দিন ছিল এক সময়! সরগরম হয়ে থাকত, মনে আছে?”
“মনে নেই আবার?” স্পষ্ট আক্ষেপ ঝরে পড়ে ঘোষবাবুর ছাদের গলায়, “গরমের দিনে কত রাত অবধি চাটাই পেতে শুয়ে থাকত বাড়ির লোকেরা। আর এখন কী যে এক সব্বোনেশে এসি বসেছে ঘরে ঘরে।”
বোসবাবুর ছাদ বলে, “শীতের দুপুরগুলো মনে করো। বাড়ির মেয়ে-বৌরা সব মাদুর পেতে চুল শুকোচ্ছে। বড়ি, কুলের আচার রোদে দিয়েছে, বাচ্চাগুলো হুটোপুটি করছে।”
সান্যালবাবুর ছাদ মনে করিয়ে দেয়, “এক বার পয়লা জানুয়ারিতে আমার এখানেই সবাই মিলে পিকনিক করল, খেয়াল আছে? সারা দিন কত আনন্দ! কত খাওয়াদাওয়া!”
এই ধরনের আক্ষেপ আর হা-হুতাশের মধ্যেই কেটে যাচ্ছিল দিনগুলো। কিন্তু মাসদুয়েক আগে রাতারাতি ভোল বদলে গেল। কী এক প্রাণঘাতী, দারুণ সংক্রামক রোগের জন্য রাজ্য জুড়ে, দেশ জুড়ে মায় গোটা পৃথিবী জুড়ে লকডাউন। বাড়ির বাইরে পা রাখার জো নেই কারও। অফিস-আদালত বন্ধ, স্কুল-কলেজ বন্ধ, বাজার-দোকান টিমটিমে। টানা তিনটে দিন ঘোষবাবু টিভি দেখলেন, মোবাইলে ফেসবুক ঘাঁটলেন, একে তাকে ফোন করলেন তার পর এক সময় বিরক্ত হয়ে, হাঁপিয়ে উঠে গিন্নিকে বললেন, “চলো, ছাদে যাই। খোলা হাওয়ায় একটু হাঁটি।”
ঘোষ দম্পতি ছাদে উঠে অবাক। বোস দম্পতি, সান্যাল দম্পতিরাও হাজির। হাজির বাড়ির কচিকাঁচারাও। ব্যস, ছাদে ছাদেই আড্ডা, গলাবাজি। পুরুষদের আড্ডায় উঠে এল কেন্দ্র ও রাজ্যের ভ্রান্ত নীতি আর মহিলারা আক্ষেপ করতে লাগলেন অধরা চৈত্র সেলের জন্য।
মাঝরাতে এক ছাদ অন্য ছাদকে বলল, “আচ্ছা জব্দ! সেই তো ছাদে আবার উঠতেই হল তোদের।”
অন্য ছাদ প্রসন্ন হেসে বলল, “কত দিন পর আবার এতগুলো লোক! ভারী ভাল লাগছে কিন্তু।”
সান্যালবাবুর ছাদ বলে, “সেনবাবুর নাতিটা তো বেশ বড় হয়ে গেছে! শেষ যখন দেখেছিলাম তখন তো হামা দিত।”
সেনবাবুর ছাদ বলে, “আমি তো সান্যালবাবুর ছোট মেয়েকে দেখে অবাক। একা একা পায়চারি করছিল। একদম লেডি! এই তো সে দিন ফ্রক পরে ঘুরত।”
চ্যাটার্জিবাবুর ছাদ মুচকি হেসে বলে, “শুধু মেয়েটার পায়চারি করাটাই নজরে পড়ল? ঘোষবাবুর মেজ ছেলেও যে ঠিক সেই সময়ই এক্সারসাইজ় করতে ছাদে ওঠে, সেটা নজরে পড়েনি?”
বোসবাবুর ছাদ বলে, “তার মানে এই ছাদে আমি আর ওই ছাদে তুমি?”
“আবার কী? লটঘট অনেক দিন ধরেই চলছে। মাঠেঘাটে, সিনেমা, রেস্তরাঁ ঘোরাঘুরি তো বন্ধ। অগত্যা...”
সেনবাবুর ছাদ বোসবাবুর ছাদকে বলে, “আপনার ওখানেই এক বার বিয়ের বাসর হয়েছিল না?”
“তাও ত্রিশ-বত্রিশ বছর আগের কথা। এ বাড়ির বড় মেয়ে রাঙার বিয়ে। ভাড়া করা অনুষ্ঠানবাড়ি তখন আর কোথায়? খাওয়াদাওয়া হয়েছিল ও দিকের মাঠে। বিয়ে আর বাসর আমার এখানেই।”
ঘোষবাবুর ছাদ বলে, “রাঙার বর শুনেছি ভাল গান গাইত?”
“হ্যাঁ। সে দিন অনেক রাত অবধি গানবাজনা চলেছিল,” বোসবাবুর ছাদ স্মৃতি রোমন্থন করতে থাকে, “রাত যখন অনেক গভীর হল, বিয়েবাড়ির লোকজন এ দিক ও দিক শুয়ে ঘুমিয়ে পড়ল, রাঙা আর ওর বর তখন খোলা হাওয়ায় একটু দাঁড়াবে বলে প্যান্ডেলের ফাঁক দিয়ে গলে উত্তর দিকের ওই কোণে গিয়ে দাঁড়াল। নারকেল গাছটা তখনও এত বড় হয়নি। জোরে বাতাস বইলে পাতাগুলো আমার কারনিশে ঝাপটা মেরে যেত। নতুন বর-বৌ যখন কিনারায় দাঁড়াল তখন ত্রয়োদশীর জ্যোৎস্না নারকেলপাতার আঁচল চুঁইয়ে-চুঁইয়ে ওদের উপর পড়ছে। এক সময় হাতে মিলল হাত...”
চ্যাটার্জিবাবুর ছাদ ফোড়ন কাটে, “ঠোঁটে মিলল ঠোঁট...”
“হতে পারে। তবে আমি আর দেখিনি। হাজার হোক, গুরুজন তো।”
সান্যালবাবুর ছাদ বলে, “এমন কত স্মৃতি আছে! বড়কত্তা যখন মারা গেলেন, তুলসীতলায় মৃতদেহ শোয়ানো ছিল। খুব চেয়েছিলাম ছাদে এক বার ওঁকে নিয়ে আসুক, শেষ বারের মতো ওঁর স্পর্শ পাই। তা আমাদের কথা শুনবেই বা কে?”
আস্তে আস্তে দিন যায়, সপ্তাহ গড়ায়, মাসও পেরোয়। ঘোষ-বোস-সান্যাল-সেনবাবুরা অধৈর্য হয়ে ওঠেন। বিড়বিড় করেন, “আর কত দিন! কবে শেষ হবে এমন দিন?”
ঘোষবাবুর ছেলে হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ পাঠায়, “কবে তোমায় আবার বাইকে চাপিয়ে ঘুরতে যাব, সোনা?”
জবাবে সোনা, মানে সান্যালবাবুর ছোট মেয়ে একটা কান্নার ইমোজি পাঠায়। বড় অসহায় লাগে দু’জনেরই।
নেতাজি পল্লির ছেলেছোকরার দল অন্যান্য বছর বেশ ঘটা করে পঁচিশে বৈশাখ পালন করে। পাড়ার ছোট মেয়েরা নাচে, বড় মেয়েরা গান গায়, ছেলেপুলের দল আবৃত্তি করে আর বয়স্করা রবীন্দ্রদর্শন নিয়ে ভারিক্কি বক্তৃতা দেন। এ বার লকডাউনের অভিশাপে রবীন্দ্রনাথের ছবিতে একটাও মালা উঠল না; চন্দনের ফোঁটা পড়ল না। বরং রাতদুপুরে নেতাজি পল্লির ছাদগুলো ফিসফিস করে একে অপরকে বলল, “এ বার রবীন্দ্রজয়ন্তী পালন করার দায়িত্ব কিন্তু আমাদের।”
“কী ভাবে?”
“কী ভাবে আবার? আমরা ওঁর গান গাইব, কবিতা বলব, নাচটা অবশ্য সম্ভব নয়।”
ভরাট গলায় বোসবাবুর ছাদ গাইল, “আজ জ্যোৎস্নারাতে সবাই গেছে বনে।” সান্যালবাবুর ছাদ আবৃত্তি করল ‘আফ্রিকা’। শোনার জন্য অনেক উঁচু হয়ে যাওয়া নারকেল গাছগুলো পাতা ঝুঁকিয়ে নেমে এল। মোবাইল টাওয়ারের মাথায় লটকে থাকা চাঁদটা কান পাতল। হালকা হাওয়ায় উড়ে যেতে যেতে কয়েক টুকরো স্লেটরঙা মেঘ কিছু ক্ষণের জন্য থমকে রইল। রাতচরা পাখি ডানা গুটিয়ে এসে বসল ছাদের আলিশায়।
আরও মাসদুয়েক পরে এক বিকেলে সান্যালবাবু গলা চড়িয়ে বলেন, “খবর শুনেছেন? লকডাউন উঠে যাচ্ছে! সামনের সপ্তাহ থেকেই আবার সব কিছু খুলে যাচ্ছে।”
ঘোষবাবু বলেন, “আপনার মুখে ফুলচন্দন। ঘরে বসে থেকে থেকে দমবন্ধ হয়ে যাচ্ছিল।”
বোসবাবু জানান, “আপনারা তো তা হলে আসল খবরটাই শোনেননি। সায়েন্টিস্টরা তো এই ইনফেকশনের ভ্যাকসিন বানিয়ে ফেলেছেন। খুব শিগগির বাজারে আসবে।”
আশাতীত ভাল খবরটা শুনে একটা সমবেত হর্ষধ্বনি উঠল। এ বার হয়তো তা হলে বন্দিদশা থেকে মুক্তি!
অনেক দিন পর ঘোষ-বোস-সেন-সান্যালবাবুদের বাড়ির লোকজন বড় নিশ্চিন্তে ঘুমোন। গিন্নিরা ভগবানকে ডেকে বলেন, “রক্ষা করো, আমাদের একটু দেখো ঠাকুর।”
সে রাতে কুয়াশার মতো মিহি, গুঁড়ো গুঁড়ো বৃষ্টিতে ভিজছিল ছাদগুলো। এক ছাদ অন্য ছাদকে বলে, “ঘুমোলে না কি?”
“নাঃ, ঘুম কি আর আসে!”
“সুখের দিন তা হলে ফুরোল?”
“তাই তো শুনলাম, এক বার ভ্যাকসিন বেরিয়ে গেলে রোগ পালাতে আর ক’দিন?”
“আর রোগ পালালে ছাদে আসবেই বা কে?”
নেতাজি পল্লির ছাদগুলো দীর্ঘশ্বাস ফেলে আর তাদের ভগবানের কাছে প্রার্থনা করে, “আমাদেরও একটু দেখো ঠাকুর।”