ছবি: কুনাল বর্মণ।
পূর্বানুবৃত্তি: এক অচেনা যুবক দেখা করতে এসেছে অমরেন্দ্রনাথের সঙ্গে। বাড়ির লোকের সন্দেহ, ছেলেটি পুলিশের চর। অমরেন্দ্রনাথ তার সঙ্গে দেখা করে জানতে পারেন ছেলেটির নাম দীনেশ মজুমদার। তার কথা অমরেন্দ্রনাথের অজানা ছিল না। তিনি ছেলেটির কাছে জানলেন চন্দননগরে ব্রিটিশ পুলিশের সঙ্গে যোগসাজশ করে এখন ফরাসি পুলিশও বিপ্লবীদের ধরিয়ে দিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। ফলে সেখানে থাকা আর স্বদেশিদের পক্ষে নিরাপদ নয়। অমরেন্দ্রনাথ তার থাকার ব্যবস্থা করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। সেই বাড়িতেই সারাদিন বিশ্রাম নেওয়ার পর মন্মথ বিশ্বাসের সঙ্গে তাকে রওনা হতে হয়। যাওয়ার পথে মন্মথ বিশ্বাসের সঙ্গে অনেক কথা হয়য় দীনেশের। সে রাসবিহারী বসুকে চিনত এবং তাঁর মুখেই শুনেছিল বসন্ত বিশ্বাসের কথা। কালীঘাটের অশ্বিনী গাঙ্গুলি লেনে অমরেন্দ্রনাথের পিসির বাড়িতে থাকার ব্যবস্থা হয়েছে দীনেশের। সেখানে সুকুমার নামে এক যুবকের হাতে দীনেশকে তুলে দিয়ে ফিরে আসেন মন্মথ বিশ্বাস।
বাড়ির মালিক শচীন্দ্রনাথ সেন অমরেন্দ্রনাথের পরিচিত। কংগ্রেস করেন। কংগ্রেসের উপরমহলের লোক বলে অমরেন্দ্রনাথকে খাতিরও করেন। কিন্তু ভাড়ার ব্যাপারে ওই এক কথা, “আমি পুরো বাড়ি আপনাকে ছেড়ে দিচ্ছি। ভাড়াও অন্যকে দিলে যা নিতাম, তার চেয়ে কম নিচ্ছি। শুধু আমার একটাই শর্ত, যাঁরা থাকবেন, তাঁরা যেন বিবাহিত হন। অর্থাৎ, আমি একটি পরিবারকে ভাড়া দিতে চাইছি, বুঝলেন কি না?”
অমরেন্দ্রনাথ ঘাড় নেড়েছিলেন। মনে মনে বলেছিলেন, ‘তুমি যেমন বুনো ওল, আমিও তেমন বাঘা তেঁতুল।’
অমরেন্দ্রনাথ সম্মতিসূচক ঘাড় নাড়তে খুশি হয়ে ভদ্রলোক বলে চলেছেন, “আসলে কী জানেন, মাঝেমধ্যেই উটকো ছেলে-ছোকরারা ভাড়া নিতে আসে। দেখলেই বুঝতে পারি— সব সন্ত্রাসবাদী। সাহেব মেরে এ বাড়িতে লুকিয়ে থাকতে চাইছে। বাড়ি ফাঁকা থাকলে থাক, কিন্তু ওদের দেব না।”
“সে তো নিশ্চয়ই,” বলে ঘন ঘন মাথা নাড়েন অমরেন্দ্রনাথ। তার পর বলেন, “আপনি আমার উপর বিশ্বাস রাখতে পারেন, শচীন্দ্রবাবু। আমার এক আত্মীয়ের পরিবার আপনার এই বাড়িতে ভাড়া থাকবে। মল্লিকপুরে ওদের নিজেদের বাড়ি। কিন্তু, ওই বোঝেন তো সব। শরিকি বিবাদ। তিন ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে গ্রামের বাড়ি ছেড়ে কলকাতায় চলে আসতে চাইছেন।”
“কী নাম ভদ্রলোকের? মানে, বামুন না কায়েত, সেটা জানতে চাইছিলাম। অবশ্য কায়েত হলেও অসুবিধে নেই তেমন...” ভদ্রলোকের মুখে হাসি।
অমরেন্দ্রনাথও হাসতে হাসতে উত্তর দেন, “কুলীন ব্রাহ্মণ। নাম নারায়ণদাস বন্দ্যোপাধ্যায়। বিসম্বাদ মিটে গেলে মল্লিকপুর ফিরে যাবেন।”
“হ্যাঁ হ্যাঁ, মাঝখানে আপনি আছেন যখন, তখন আর চিন্তা কী। আপনি নারায়ণবাবুকে নিয়ে আসুন। বাড়ির চাবি আমি দিয়ে দেব।”
দীনেশের সঙ্গে অমরেন্দ্রনাথের আলাপ অল্প দিনের। মাত্র কয়েক মাসের। কিন্তু এইটুকু সময়ের মধ্যেই মানুষটা কেমন যেন তার নিজের লোক হয়ে উঠেছে। সে জানে, এ বাড়িও নিরাপদ নয়। এক দিন না এক দিন এই ডেরার কথাও জানবে পুলিশ। সে দিন তাকে কেউ বাঁচাতে পারবে না। অবধারিত মৃত্যু। তবে বিনা যুদ্ধে সে হার মানবে না। কিছুতেই না।
হঠাৎ একটা কাশির দমক আসে। তার খাটের ধারে একটা কুঁজো রাখা আছে। সেখান থেকে একটা ঘটিতে জল গড়িয়ে খেয়ে খানিকটা ধাতস্থ হয়। হঠাৎ মনে হয়, দরজার কাছে কে যেন দাঁড়িয়ে। দীনেশ দরজার দিকে খানিকটা এগোতেই মেয়েটিকে দেখতে পায়। মেয়েটির নাম স্বর্ণপ্রভা। এই মেয়েটিকে দেখলেই দীনেশের নিজের মায়ের কথা মনে পড়ে যায়। দু’জন অসমবয়সি মহিলা, অথচ কেন যে স্বর্ণপ্রভার সঙ্গে তার মায়ের এত মিল পায় দীনেশ, কে জানে! মেয়েটির শ্যামলা রং, কিন্তু চোখ দুটো খুব উজ্জ্বল ও গভীর। তার মায়ের চোখের গভীরতাও তাকে স্পর্শ করত।
এক-এক সময় নিজেকে অপরাধী মনে হয় দীনেশের। দেশের কথা ভাবতে গিয়ে মায়ের প্রতি সে অবিচার করেছে। খুব ইচ্ছে করে বসিরহাটের বাড়ি গিয়ে মায়ের সঙ্গে দেখা করে আসে। কিন্তু তা যে আর সম্ভব নয়। এই মেয়েটি তাকে তার মায়ের মতোই যত্ন করে। ওষুধ না খেলে বকুনি দেয়। নিজের হাতে ওষুধ খাইয়ে যায়। কাশি হলে, পিঠে হাত বুলিয়ে দেয়। দীনেশ ভাবে, ‘কেন এ সব করে... ও কি জানে না যে, আমার রোগটা সংক্রামক... আমার থেকে ওরও হতে পারে?’
“তুমি আবার এসেছ স্বর্ণ? এত বার করে বলছি, যক্ষ্মা ছোঁয়াচে রোগ, আমার থেকে তুমিও আক্রান্ত হতে পার, তাও শুনছ না কেন?” দীনেশ বলে দরজায় দাঁড়ানো মেয়েটিকে উদ্দেশ্য করে।
মেয়েটির মুখে হালকা হাসির রেখা দেখা যায়। সে বলে, “মাসিমা জিজ্ঞেস করে পাঠাল, ডিমের ঝোল খাবেন, না সেদ্ধ।”
“সেদ্ধ ডিম খেয়ে খেয়ে মুখে অরুচি ধরে গেছে। তুমি বরং মাসিমাকে আজ ডিমের ঝোল করতেই বলো,” বলে দীনেশ আগের প্রসঙ্গে চলে যায়। বলে, “আমার প্রশ্নের উত্তর কিন্তু আমি পেলাম না।”
“আপনার প্রশ্নের উত্তর দিতে আমি বাধ্য নই, দীনেশদা। আপনিও তো জানতেন, আপনি পুলিশের হাতে ধরা পড়তে পারেন, আপনার জেল, এমনকি ফাঁসিও হতে পারে, তাও তো এই হত্যাকাণ্ডে নিজেকে জড়ালেন। কেন করলেন? ভিতর থেকে একটা তাগিদ অনুভব করেছিলেন বলেই, তাই না? আমিও ওই তাগিদটা অনুভব করি বলেই আসি। আমার যক্ষ্মা হলেও আসব। মৃত্যুর আগে পর্যন্ত আসব,” কথাগুলো বলতে বলতে স্বর্ণপ্রভা দীনেশের বিছানার কাছে একটা চেয়ারে এসে বসে।
দীনেশ অবাক হয়ে দেখে পঁচিশোর্ধ্ব স্বর্ণপ্রভাকে। তার পর বলে, “আচ্ছা স্বর্ণ, ছাত্রী সংঘে তোমাদের যখন আমি লাঠি খেলা শেখাতাম, তখন তো তুমি এত কথা বলতে না! কেমন একটা গুটিয়ে রাখতে নিজেকে।”
স্বর্ণপ্রভা হাসে। মাথার চুলগুলো সামনে এসে বিরক্ত করছিল। দু’হাতে তাদের পিছনে পাঠিয়ে, হাসতে হাসতেই বলে, “খুব অল্প দিনই আপনাকে লাঠি খেলার মাস্টারমশাই হিসেবে পেয়েছিলাম। কিছুতেই দু’হাতে লাঠি ঘোরানোর কায়দাটা রপ্ত করতে পারছিলাম না। এক দিন আপনি খুব বকলেন। আমার চোখে জল এসে গেল, সঙ্গে জেদও। শিখেই ছাড়লাম। খুব ইচ্ছে ছিল, আপনার কাছে পিস্তল থেকে গুলি ছোড়াটাও শিখে নেব।”
“ভাগ্যিস শেখোনি! তা হলে এত দিনে জেলে থাকতে অথবা আমার মতো পালিয়ে পালিয়ে বেড়াতে হত,” দীনেশ বলল।
সশব্দে হেসে উঠল স্বর্ণপ্রভা। বলল, “পিস্তল চালাতে জানি, দীনেশদা। শুধু সুযোগ আসেনি প্রয়োগ করার।”
দীনেশ হাঁ করে চেয়ে থাকল স্বর্ণপ্রভার দিকে। সে অবাক হচ্ছিল এই ক’বছরে মেয়েটির পরিবর্তন দেখে। বলল, “কে শেখাল? নিশ্চয়ই ছাত্রী সংঘের কেউ নয়! কল্যাণীদি বা কমলা দাশগুপ্ত নিশ্চয়ই তোমাকে হাতে ধরে ওই শিক্ষা দেননি।”
কয়েক মুহূর্ত চুপ করে থেকে স্বর্ণপ্রভা উত্তর দেয়। বলে, “ছাত্রী সংঘে এই ইচ্ছের কথা জানানোর আমার সাহস ছিল না। ওখানে প্রধানত লাঠি খেলা, সহবৎ ও শৃঙ্খলাবোধের শিক্ষাই আমি পেয়েছি।”
“তা হলে?”
“পার্ক সার্কাস ময়দানে কংগ্রেসের অধিবেশনে স্বেচ্ছাসেবিকা হিসেবে যখন কাজ করছিলাম, তখন লীলাদির নজরে পড়ি।”
“লীলাদি মানে, লীলা রায়?”
“হ্যাঁ। লীলাদি আমাকে ঢাকায় নিয়ে যেতে চাইলেন। আমিও রাজি হয়ে গেলাম। কারণ আমি জানতাম, লীলাদির দীপালি সংঘে মেয়েদের অস্ত্রশিক্ষাও দেওয়া হয়।”
“বাঃ! বেশ ইন্টারেস্টিং তো!”
“হ্যাঁ দীনেশদা, দীপালি সংঘে মেয়েদের ট্রেনিংটাই ছিল অন্য রকম। লীলাদি বলতেন, মেয়েদের কাজ শুধু রান্না করা ও সন্তান মানুষ করা-ই নয়। দরকার পড়লে, পুরুষদের পাশাপাশি মেয়েদেরও অস্ত্র হাতে লড়তে হবে। আমার খুব উৎসাহ দেখে, লীলাদি প্রীতিদির উপর আমাকে এই শিক্ষা দেওয়ার ভার দিলেন।”
“প্রীতিদি... কে প্রীতিদি?”
“প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার। নামটা সম্ভবত শুনে থাকবেন। চট্টগ্রামে ইউরোপিয়ান ক্লাব আক্রমণ করতে গিয়ে শহিদ হন। পুলিশের নির্যাতন থেকে বাঁচতে পটাশিয়াম সায়নাইড খেয়ে আত্মহত্যা করেন। মাউজ়ার পিস্তল থেকে কী ভাবে গুলি ছুড়তে হয়, তিনি আমাকে হাতে ধরে শিখিয়েছেন। আমার দুঃখ, আমার হাতে ওই অস্ত্রটি নেই। থাকলে...”
“থাকলে কী করতে?”
“আপনাদের পাশে থাকতে পারতাম।”
“এই তো পাশে আছ।”
স্বর্ণপ্রভা একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল। তার পর উঠে দাঁড়িয়ে বলল, “আমি আসি, দীনেশদা।”
“আচ্ছা, এসো।”
দরজা পর্যন্ত গিয়ে ফিরে আসে স্বর্ণপ্রভা। তার মুখ-চোখ কী রকম পাল্টে যায়।
দীনেশ বিছানা থেকে উঠে পড়ে। বলে, “কী হল স্বর্ণ? ফিরে এলে যে?”
“আমার কেমন ভয় করছে, দীনেশদা,” স্বর্ণপ্রভা বলল। তার চোখে-মুখে ভয়ের আভাস দেখতে পেল দীনেশ। তবু স্বর্ণপ্রভার এ কথায় হেসে উঠল সে। বলল, “একটু আগে তো বলছিলে, রিভলভার থাকলে আমাদের পাশে থেকে ব্রিটিশ পুলিশের সঙ্গে লড়তে। তা হলে এখন ভয় পাচ্ছ কেন?”
“হ্যাঁ বলেছিলাম,” স্বর্ণপ্রভা উত্তর দিল, “রিভলভার থাকলে, অন্য কথা। ওটি নেই যখন, তখন তো দাদাদের বিপদের কথা ভেবে ভয় হবেই।”
দীনেশ বলল, “বুঝলাম। এখন বলো, কেন ভয় করছে তোমার?”
স্বর্ণপ্রভা গলাটাকে খাদে নামিয়ে বলল, “মনে হয়, এই আস্তানার খবর পুলিশ জেনে গেছে।”
“কী করে বুঝলে?”
“দু’দিন ধরে দু’জন লোককে দেখছি এই বাড়ির উপর নজর রাখতে। তাদের মধ্যে এক জন আজ মেসোর সঙ্গে কথা বলেছে।”
“তাই নাকি? কী কথা হয়েছে, সেটা মেসোর থেকে জেনেছ?”
“জেনেছি বইকি। মেসোকে জিজ্ঞেস করা হয়েছে, মেসো এই বাড়ির মালিক কি না।”
“মেসো কী বলেছেন?”
“সত্যিটাই বলেছেন, বলেছেন উনি ভাড়াটে।”
“আর কোনও কথা হয়নি?”
“হয়েছে। লোকটা জানতে চেয়েছে, কত দিন ধরে মেসো এ বাড়িতে আছেন।”
“মেসো কি ওদের এই কথাটারও ঠিকউত্তর দিয়েছেন?”
“না। এ বার উল্টে মেসোই তাকে জিজ্ঞেস করেছেন, তিনি কে— এবং কেনই বা তাঁকে এই সব প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। মেসো রেগে যেতে, বেগতিক দেখে লোকটি কেটে পড়ে। মেসো হয়তো তোমাদের সতর্ক করতে উপরে আসবেন।”
“সতর্ক থেকেও কোনও লাভ নেই। লড়াই অনিবার্য। মেসোকে বলো যে, কষ্ট করে সিঁড়ি ভেঙে যেন উপরে না আসেন।”
“ওরা পুলিশের লোক, না দীনেশদা?”
“হ্যাঁ, কোনও সন্দেহ নেই।”
“তোমরা পালাতে পারো না?”
“সেই চেষ্টা এক বার করতে হবে। কিন্তু পালিয়েই বা যাব কোথায়?”
“আমি তোমাকে বেলঘরের একটা ঠিকানা দিতে পারি। পালিয়ে সেখানে গিয়ে আশ্রয় নিতে পারো।”
“বেলঘরে তোমার কে থাকে স্বর্ণ?”
“কেউ না...” বলে এক রকম দৌড়েই ঘর থেকে বেরিয়ে গেল স্বর্ণপ্রভা।
স্বর্ণপ্রভার এই রকম আচরণে যথেষ্ট অবাক হল দীনেশ। একটু চুপ করে বসে থেকে পরবর্তী পদক্ষেপের উদ্দেশ্যে আলোচনার জন্য পাশের ঘরের দিকে অগ্রসর হল সে।
সে ঘরে খুব মন দিয়ে ‘বিজলী’র একটা প্রবন্ধ পড়ছিল জগদানন্দ। পাশেই আধশোয়া হয়ে বসে ছিল নলিনী। দীনেশ এসে খবরটা দিতে দু’জনেই এক সঙ্গে বলে উঠল, “কে জানাল পুলিশকে? নীচের ঘরের মেসোমশাই নয় তো?”
দীনেশ প্রতিবাদ করে উঠল। বলল, “কী পাগলের মতো কথা বলছ? উনি যদি পুলিশকে বলতেই যাবেন আমাদের কথা, তা হলে এত ঝুঁকি নিয়ে বাড়িওয়ালার কাছে আমাদের মিথ্যে পরিচয় দিয়ে এই বাড়ি ভাড়া নিতেন না। পুলিশ আমাদের হাতকড়া পরালে, ওঁকে কিন্তু ফুলের তোড়া দিয়ে বরণ করবে না। নাস্তানাবুদ করে ছাড়বে।”
নলিনী ফস করে একটা সিগারেট ধরিয়ে ফেলল। একটা টান দিয়ে বলে উঠল, “তা হলে পুলিশ জানল কী করে? আমরা তো এ বাড়ি থেকে এক দিনও বেরোইনি।”
“আমরা না বেরোলেও, বাইরে থেকে অনেকে এসেছে। গত রাতেই তো অমরদা এসেছিলেন,” দীনেশ যুক্তি দেয়।
নলিনী বলে, “তা বটে।”
জগদানন্দ বলে, “তা হলে কী করণীয়? এসকেপ? না কি কমব্যাট?”
“বলছি, মন দিয়ে শোনো,” বলে দীনেশ ঘরের একমাত্র চেয়ারটিতে বসে পড়ল। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কথা বলতে তার কষ্ট হচ্ছিল।
“তোমার কি শরীর খারাপ লাগছে?” নলিনী বলল। তার কণ্ঠস্বরে যথেষ্ট উদ্বেগ। অনেকগুলো দিন সে দীনেশের সঙ্গে কাটিয়েছে চন্দননগরে।
দীনেশ তার কথায় হাসল। ম্লান হাসি। বলল, “খারাপ লাগলেই বা কী করি— এখন যে শিয়রে শমন। যাক, যা বলছিলাম... আমাদের এই ডেরা পাল্টাতে হবে। কোথায় যাব, এটা জানি না, তবে যাব এটা নিশ্চিত।”
জগদানন্দ বলল, “আমারও তা-ই মনে হয়।”
নলিনীর সিগারেট শেষ হয়েছিল। শেষ অংশটুকু ছাইদানে গুঁজে বলল, “যাব বললেই যাওয়া যায় না, পালিয়ে কোথায় উঠবে সেটাও আগে থেকে ভেবে রাখতে হবে।”
“একদম ঠিক কথা,” দীনেশ সমর্থন করল। তার পর বলল, “স্বর্ণপ্রভা বেলঘরের একটা ঠিকানা দেবে বলেছিল। ওর থেকে ঠিকানাটা নিয়ে নিতে হবে। আর একটা কথা, পালাতে হবে আজই।”
“আজ রাতে?” জগদানন্দ বলল।
“না, রাতে পালালে অন্য সমস্যা হয়। কুকুরের চিৎকারে লোকে চোর বলে সন্দেহ করে গণপিটুনি দেয়। রাতে হবে না।”
“তা হলে?” নলিনী বলে।
“ভোররাতে। কলকাতা পুরোপুরি জেগে ওঠার আগে আমরা তিন জন পগার পার। পুলিশ এসে দেখবে খাঁচা ফাঁকা! পাখিরা ফুড়ুৎ!” বলে হো হো করে হেসে উঠল দীনেশ।
দীনেশের সঙ্গে হাসিতে যোগ দিল নলিনীআর জগদানন্দ।
ক্রমশ