বিশ্বাস করতেন পিয়ারলেস-এর কর্ণধার সুনীলকান্তি রায়। বিপদেও অম্লান থাকত মুখের হাসি। ‘বাঙালি ব্যবসাবিমুখ’ এই মিথ ভেঙে ব্যবসায় বাঙালিয়ানার অভিজ্ঞান মিশিয়েছেন এই নিখাদ বাঙালি ভদ্রলোক। সকলকে সঙ্গে নিয়ে চলাই ছিল তাঁর কর্ম সংস্কৃতির মূল মন্ত্র।
Bengali Story

সঙ্কট কেটে বেরনোর রাস্তা খুঁজে পাওয়াই আসল

বাঙালির শিল্প বা ব্যবসাচর্চার ইতিহাস তর্কাতীত নয়। ‘বাঙালি ব্যবসাবিমুখ’, এই মিথ ভেঙে উল্টে ব্যবসায় বাঙালিয়ানার অভিজ্ঞান মিশিয়েছেন সুনীলকান্তি।

Advertisement

দেবপ্রিয় সেনগুপ্ত, ঋজু বসু

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ মে ২০২২ ০৫:৩৯
Share:

কর্ণধার: সুনীলকান্তি রায়। তাঁর নেতৃত্বের ধরন ছিল নিচু তারে বাঁধা

আক্ষরিক অর্থেই পিঠ তখন দেওয়ালে ঠেকে গিয়েছে। সুপ্রিম কোর্টে মামলার রায় ও রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের নির্দেশিকার চাপে তাঁর স্বপ্ন বহন করে নিয়ে যাওয়ার পথটাই যেন কাঁটায় ভরপুর। চার্লি চ্যাপলিন মার্কা সংক্ষিপ্ত গোঁফের আড়ালে তবু স্মিত হাসছেন রায়সাহেব।

Advertisement

গাড়ি নিয়ে সটান মঠে রওনা হলেন। না, কোনও অলৌকিক বিভূতির খোঁজে নয়। তাঁর গন্তব্য বেলুড় মঠ। সেখানে পরম সুহৃদ স্বামী আত্মস্থানন্দের সঙ্গে খানিক ক্ষণের হৃদয়খোলা আলাপচারিতা। পিয়ারলেস কর্তা সুনীলকান্তি রায়কে মহারাজ কোনও অলৌকিক উপদেশ দেননি। স্রেফ সত্যের পথ আঁকড়ে থাকতে বললেন। আর দরকারে পিয়ারলেসকে টানতে কোনও যোগ্য পেশাদার সাহায্য নিতে পরামর্শ দেন। স্মিত হাসি মুখে নিয়েই ফিরে এলেন রায়সাহেব। এ সবই সিকি শতক আগের কথা (১৯৯৬)। তার পরে যা ঘটল, তা সবার জানা! পিয়ারলেসের অধিনায়ক সুনীলকান্তি ওরফে এস কে রায়ের পুত্র জয়ন্তের কথায়, “জীবনে সঙ্কটটা কোনও বড় কথা নয়। সঙ্কট ঠেলে বেরনোর রাস্তা বার করাটাই আসল। ইট’স নট হাউ বিগ ইউ ফল, বাট হাউ বিগ ইউ রাইজ় আফটার দ্য ফল!” তাঁর বাবার কাছে শেখা সব থেকে জরুরি বিদ্যের মধ্যে এটাও পুত্রের মনে গেঁথে।

সেই দিনগুলোর সঙ্গে যেন কিছুটা আয়লাধ্বস্ত জনপদের মিল পান জয়ন্ত। যার উপরে ফতোয়া জারি হয়েছে, পরের বছর ঘূর্ণিঝড় আসার আগেই ম্যাজিকের মতো সব কিছু আগের তুলনায় ভাল অবস্থায় ফেরাতে হবে। জয়ন্ত বলেন, “রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের ১০০০-১২০০ কোটির বিপুল নেগেটিভ নেটওয়ার্ক সাত বছরের মধ্যে পুষিয়ে পজ়িটিভ করতে বলা হয়েছিল পিয়ারলেসকে। সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়ানো মুখের কথা নয়! স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া বা কর্পোরেট জগতের আরও কিছু বিশিষ্ট বাঙালি মাথাকে বাবা কাজে লাগালেন। ধ্রুবনারায়ণ ঘোষ, সুষীমমুকুল দত্ত, ডি বসুরা হাল ধরেন। তাতেই কিস্তিমাত!” বাবার কাছে সঙ্কটে মাথা ঠান্ডা রেখে শ্রদ্ধেয় অগ্রজদের পরামর্শ নেওয়া, খোলা মনে যোগ্যতম মানবসম্পদ খুঁজে তার জুতসই প্রয়োগ, এ সবই শেখার, বুঝেছেন পুত্র।

Advertisement

বাঙালির শিল্প বা ব্যবসাচর্চার ইতিহাস তর্কাতীত নয়। ‘বাঙালি ব্যবসাবিমুখ’, এই মিথ ভেঙে উল্টে ব্যবসায় বাঙালিয়ানার অভিজ্ঞান মিশিয়েছেন সুনীলকান্তি। যে বাঙালিয়ানা সবাইকে নিয়ে চলতে শেখায়। এস কে রায়ের মধ্যে এক ধরনের ‘৩৬০ ডিগ্রি অ্যাপ্রোচ’ খুঁজে পেতেন অনেকেই। দরকার হলে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের ডেপুটি গভর্নর, রাজ্য সরকারের সিএমও, ডিসট্রিবিউটর, সাধারণ গ্রাহক সবার সঙ্গে খোলাখুলি কথা বলবেন পিয়ারলেসের ক্যাপ্টেন। কাউকে অন্ধকারে রাখবেন না। এই সহজ, সরল পথ চলাই এস কে রায়ের সাফল্যের রোডম্যাপ। ৯০ বছর আগে অবিভক্ত বাংলার নারায়ণগঞ্জে শুরু হওয়া ‘এক টাকার বিমা কোম্পানির’ ব্যাটন নিয়ে যেতে এই স্পর্ধাটুকুই মূলধন। এস কে রায়ের বাবা রাধাশ্যাম রায়ের হাতে প্রতিষ্ঠার পরে এক টাকাতেও প্রিমিয়াম হত পিয়ারলেসে। রাধাশ্যাম ও তাঁর বড় ছেলে ভূদেবকান্তির যোগ্য উত্তরাধিকারী ছোট ছেলে সুনীলকান্তি প্রতিষ্ঠানের স্বাভাবিক বিস্তারের পথে হেঁটেছেন। গ্রাহকের আস্থা অর্জন করে এক-এক করে তাঁর যাবতীয় প্রয়োজন সুচিকিৎসা, আবাসন থেকে রসনাতৃপ্তির বিনোদনেও তিনি মনোযোগী হয়েছিলেন। পর পর গড়ে উঠছিল পিয়ারলেস হাসপাতাল, পিয়ারলেস-ইন হোটেল বা বেঙ্গল পিয়ারলেস। এ দেশে কলকাতা-কেন্দ্রিক একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যসমষ্টি হিসেবে গড়ে ওঠা তো বটেই নানা ঝড়ঝাপটায় কান্ডারির মতো পিয়ারলেসের সাম্রাজ্য অটুট রেখেছেন এস কে রায়।

রুডইয়ার্ড কিপলিংয়ের সুবিখ্যাত ‘ইফ’ কবিতাটির নানা লাইন ঘুরেফিরে মনে আসবেই সদ্যপ্রয়াত এই নিরভিমানী বাঙালি শিল্পস্থপতিকে নিয়ে নানা আলোচনায়। মানুষটা কী সহজে প্রণব মুখোপাধ্যায় বা পড়শি রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে অন্তরঙ্গ আলাপ জমাতে পারেন। আবার তিনিই লেক মার্কেটের ‘আনাজওয়ালি মেয়ে’র খাঁচার টিয়া হারানোর গল্প শুনে সঙ্গে সঙ্গে তাঁর জন্য নতুন পোষা পাখির বন্দোবস্ত করে ফেলেন। একেই বোধহয় কিপলিং রাজারাজড়াদের সঙ্গে মিশেও ‘কমন টাচ’ না-খোয়ানো বুঝিয়েছিলেন! ‘পিয়ারলেস ভবন’ থেকে বেরিয়েই তেলেভাজাওয়ালা ভগবান দাসের ডালার দিকে তাকালেও কোনও কোনও সহকর্মীর রায়সাহেবের কথা মনে পড়ে যায়। ওই তেলেভাজা-বিক্রেতাও রায়সাহেবকে ভুলতে পারেন না। পিয়ারলেসের কর্মচারীরা অনেকেই পেঁয়াজি, বেগুনি খান। রায়সাহেব সবার স্বাস্থ্যচিন্তা করে ভগবানের তেলেভাজার জন্য একটা কাচের শো-কেসকরে দিয়েছিলেন।

বহু বছরের সহযোগী এবং সুহৃদদের গল্পও ফুরোতে চায় না এই মানুষটিকে নিয়ে। তিনি বেঙ্গল ন্যাশনাল চেম্বারের সভাপতি থাকাকালীন এক বার রানিগঞ্জে যাওয়ার পথেও বিচিত্র তেলেভাজা-অভিযান। হঠাৎ খেয়াল, নিজে রাস্তার ধারের চপ খাবেন, সঙ্গী অন্য শিল্পপতিদেরও খাওয়াবেন। বিএমডব্লিউ, মার্সিডিজ, অডির সাঁজোয়া বাহিনী আচমকা এক চপওয়ালার গা ঘেঁষে থেমে গেল। সেই বিক্রেতা ভয়ে সব ছেড়ে পালাতে পারলে বাঁচেন। রায়সাহেবের নেতৃত্বে তাঁকে বুঝিয়ে চপ সেবন চলল। কখনও নবাগত কোনও যুবককে চাকরির ইন্টারভিউ শেষেই নিজের গাড়িতে লিফ্ট দিয়েছেন। নিজের রক্তে শর্করা! তবে অফিসের সহকর্মীদের রসগোল্লা খাওয়ার প্রতিযোগিতা ঘটিয়ে বিজয়ীকে রায়সাহেব সোনার হাতঘড়িও উপহার দিয়েছেন। এক বার এক পিওনকে অভব্যতার জন্য চাকরি থেকে বরখাস্ত করলেন। কিন্তু পিয়ারলেসের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর ভার্গব লাহিড়ীকিছু দিন বাদে টের পেলেন, লোকটির ছেলে-মেয়ের পড়াশোনার খরচ চুপিচুপি রায়মশাই-ই বহনকরে চলেছেন।

বিলাস বলতে খানিক ফিশ ফ্রাই আসক্তি। স্নেহভাজন অধস্তন সহকর্মীকে বকুনির পরে সান্ত্বনা দিতে বা রামকৃষ্ণ মিশনের কোনও প্রিয় সন্ন্যাসী হঠাৎ অফিসঘরে উদয় হলেও রায়সাহেব অবধারিত ফিশ ফ্রাইয়ের শরণ নেবেন। শেষ দেড় দশকের ছায়াসঙ্গী এগজ়িকিউটিভ সেক্রেটারি গৌতম রায় দেখেছেন, অবসরে স্যর একটু বাংলা সিরিয়াল দেখবেন, গোপাল ভাঁড়ের কার্টুন দেখে হাসবেন। ময়দানের ফুটবল, ইস্টবেঙ্গল ক্লাব নিয়েও উৎসাহ। এই ফুটবলপ্রেমের স্বাক্ষর পিয়ারলেস ক্লাবে। এখানেও নিখাদ বাঙালিয়ানার ছোঁয়াচ!

১৯৯২-এ হোটেল ব্যবসায় হাত দেওয়ার পরে ফোর স্টার হোটেলে সম্পূর্ণ বাঙালি রেস্তরাঁ পত্তনের জেদে এই লোকটি অনড় থাকবেন, এতে আশ্চর্যের কিছু নেই। পিয়ারলেস ইন-এর ‘আহেলী’ গত এক দশকে নানা আউটলেট খুলেছে। আর দামি হোটেলের অতিথিদের বাইরে রেস্তরাঁর বাঙালি রান্নার স্বাদগন্ধ পৌঁছে দিতে চালু হয়েছে স্ট্রিট ফুড কর্নারের আদলে ‘আহেলী এক্সপ্রেস’। কষা মাংস, ডাব চিংড়ির পুরের রোলও সেখানে মজুত।

বাঙালির বাণিজ্যসাধনার এই রায়মঙ্গল গাথা পড়তে পড়তে এস কে রায়ের ইউএসপি-র দু’টি দিক মাথায় আসে। তাঁর ‘সিম্পলিসিটি’ এবং সবার ভাল চাওয়া। বাণিজ্যে স্নাতক সুনীলকান্তি ১৯ বছরের বড় দাদা পিতৃপ্রতিম ভূদেবকান্তি রায়ের অভিভাবকত্বে পিয়ারলেসের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন ১৯৬৮ নাগাদ। তাঁর নিজের ভাষায়, কাজ শিখতে অষ্টপ্রহর দাদার ‘লগে লগে’ থাকতেন। এ ভাবেই কাজ শিখতে হয়। নিজের প্রতিষ্ঠানে খামোখা নেতাগিরি করার তিনি কখনও চেষ্টাই করেননি। এস কে রায়ের দর্শন বলতে হাতে-কলমে কাজ শিখে ‘সার্ভেন্ট লিডারশিপ’ অনুশীলন। নিজেকে বরাবর প্রতিষ্ঠানের অন্যতম কর্মীই ভেবে এসেছেন। ১৯৮৪-তে অকৃতদার বড়দা ভূদেবকান্তির প্রয়াণ। কিন্তু এস কে রায় খাতায়-কলমে কোম্পানির এমডি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছেন ১৯৯৬-এ। তখন কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠান। ভার্গব বা পিয়ারলেসের স্বাধীন ডিরেক্টর দীপক মুখোপাধ্যায়রা বার বার বলেন, এস কে রায়ের নেতৃত্বে কাজে ‘ফ্রি হ্যান্ড’-এর কথা। সুনীলকান্তি বুঝতেন, যিনি কাজ করেন তাঁর ভুলও হয়! এবং জানতেন, কী ভাবে কাজে স্বাধীনতা দিতে হয়! প্রতিষ্ঠানের সঙ্কটপর্বে এটা মাথায় রেখেই চমৎকার ভারসাম্য এবং বৈচিত্র এনে বোর্ড অব ডিরেক্টর্স সাজিয়েছিলেন।

রায়চরিত পাঠের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় প্রসঙ্গে দু’কথা বলা দরকার। একুশ শতকে এসে নানা ঘটনার জেরে পিয়ারলেসের স্বল্প সঞ্চয়ের ব্যবসা এক সময়ে বন্ধ করে দিতে হয়। রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক তাঁদের সুনামের কথাই বলেছিল। কিন্তু সার্বিক পরিস্থিতির জেরে অন্য ব্যবসার পথে হাঁটতে বাধ্য হন রায়সাহেব। তখনও গ্রাহকদের ২০ হাজার কোটি টাকার বেশি প্রাপ্য মেটাতে অবহেলা করেননি। গ্রাহকদের স্বার্থ, ডিস্ট্রিবিউটরদের দায়বদ্ধতার প্রতি সুবিচারে কোথাও ফাঁক রাখেননি। এখন সুনীলকান্তির পদাঙ্ক অনুসারী জয়ন্ত বলেন, “ব্যবসার মধ্যে এই সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি বাবা কখনও ভোলেননি। যে কোনও ঝড়ে সবাইকে নিয়ে চলতেন। আর মাথা ঠান্ডা রেখে সঙ্কটে পানকৌড়ির মতো জল ঝাড়তে ঝাড়তে এগোন।” পুরনো প্রকল্পের বদলে তৈরি পিয়ারলেস ফিনান্সিয়াল প্রডাক্টের দায়িত্বভার জয়ন্তকেই দিয়েছিলেন সুনীলকান্তি। তার আগে পিয়ারলেসের ৩০টি শাখায় টুকটুক করে তাঁকে বাজিয়ে নিয়েছেন। জয়ন্তর কথায়, “এও বাবার শিক্ষা— ইউ ওনলি কাম টু দ্য ডান্স ফ্লোর, হোয়েন ইউ নো হাউ টু ডান্স।” জয়ন্তকে কার্ডিফে ম্যানেজমেন্ট পড়তে, কন্যা দেবশ্রীকে হোটেল ম্যানেজমেন্ট পড়তে সুইটজ়ারল্যান্ডে পাঠিয়েছিলেন সুনীলকান্তি। বাবার নিচু তারে বাঁধা নেতৃত্বের ধাত ছেলেমেয়েরাও রপ্ত করেছেন।

নরম মনের শিল্পস্থপতি সুনীলকান্তি মানুষ চিনতেও ভুল করতেন না। নিজে স্বামী বীরেশ্বরানন্দজির কাছে দীক্ষিত। কিন্তু কোনও কোনও বাবাজিকে দেখে পরে অন্তরঙ্গ পরিসরে বলতেন, এ কিন্তু ভণ্ড! দেবতার মতো শ্রদ্ধা করতেন বড়দা ভূদেবকান্তিকে। বড়দার শেষ সময়ে ভাই সুনীলকান্তির স্ত্রী শিখাই প্রাণপণে সেবা করেন। এস কে রায়ের পণ, দিনভর ব্যস্ত রুটিনেও পরিবারের সবার সঙ্গে অন্তত এক বেলা খেতে বসা চাই। ছেলেমেয়েকেও এটাই শিখিয়েছিলেন! মেয়ে দেবশ্রী বলছেন, “বাবার কাছে দাদা এবং আমার মধ্যে ফারাক ছিল না। দৃঢ় ভাবে মনে করতেন, দাদার মতো আমাকেও নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে!” আবার জীবিকা, জীবনের ভারসাম্য অটুট আছে তো! মেয়ে পারিবারিক দায়িত্ব ভোলে কি না যাচাই করতে সটান দেবশ্রীর শ্বশুরবাড়িতে গিয়েই খবর নিয়েছেন।

তবে জীবন মানে শুধুই লাভ-ক্ষতির হিসেব বা টাকার পিছনে ছোটা নয়। তাই মানুষের পাশে থাকার তাগিদ। সেটা শুধু চেক লিখে হাত ধুয়ে ফেলা নয়! আয়লার পরে রামকৃষ্ণ মিশনের সঙ্গে এস কে রায় নিজেও দুর্গত এলাকায় চলে যান। বি কে রায় ফাউন্ডেশন নামের একটি ট্রাস্ট এমন অনেক কাজের শরিক। বরাহনগরে অসহায় প্রবীণদের জন্য রায়সাহেবের বৃদ্ধাশ্রম ‘মিলন তীর্থ’ও গড়ে ওঠে। তাতে প্রবীণদের পরিচর্যায় পিয়ারলেসের হোটেল, হাসপাতালের সেবার অভিজ্ঞতা কাজে লেগেছে।

সুনীলকান্তির পুরনো বন্ধু, বেঙ্গল ন্যাশনাল চেম্বারের প্রাক্তন সভাপতি সমীর ঘোষ মনে করেন, এস কে রায়ের ইন্ধনেই এ বাংলায় পদ্মার ইলিশ বা ঢাকাই জামদানি আমদানির পথ খুলে যায়। সল্টলেকে উদ্যোগপতি বা অন্ত্রপ্রনর ডেভলপমেন্ট ইনস্টিটিউটের বিকাশেও রায়সাহেবের উজ্জ্বল ভূমিকা। মিতভাষী এস কে রায় খামোখা বকবক পছন্দ করতেন না। বহু প্রভাবশালীর সামনেও ব্যবসা প্রসঙ্গে অল্প কয়েকটি শব্দেই মিটিংয়ে সারকথাটি বুঝিয়ে দিতে তিনি ছিলেন তুখোড়।

নানা ঠোক্কর খেয়ে ঘাত-প্রতিঘাতে এগিয়েছে এই পিয়ারলেস স্থপতির জীবন। ছাঁটা গোঁফ খচিত মুখের হাসি-হাসি ভাবটা দেখে তা বোঝা যেত না। তবে কঠিন সময় শেষে কদাচিৎ তাঁকে ‘ঠাকুর আছেন’ বলতে শুনেছেন ঘনিষ্ঠরা। জীবনরস রসিক চ্যাপলিনের আদলে গোঁফের শোভা এমন হার না-মানা বঙ্গসন্তানকেই মানায়!

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তেফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement