বহমান: ‘রাজা লিয়ার’ নাটকের দৃশ্যে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। প্লেগের সময় ঘরবন্দি অবস্থায় ‘কিং লিয়র’ নাটকটি লিখেছিলেন শেক্সপিয়র
কার্ফু-র সঙ্গে বাঙালি পরিচিত। ১৯৯২ সালে ৬ ডিসেম্বরের নানা অভিজ্ঞতা তো মুখে মুখে ফেরে। কিন্তু ‘জনতা কার্ফু’? এত দিন ছিল না, তবে এ বছর ২২ মার্চের পর তা পাকাপাকি ভাবে বাঙালির শব্দভাণ্ডারে জায়গা করে নিল। যেমন একমাত্র টিনটিনের কমিকসে পড়ে আসা ‘কোয়রান্টিন’ শব্দটা এখন ধনী-দরিদ্র সকলের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। তেমনই ‘লকডাউন’ আর কেবল কাশ্মীরে সীমাবদ্ধ থাকল না, ছড়িয়ে গেল গোটা দেশে, বিশ্বে। আসলে, যে কোনও মহামারি বা অতিমারি জনজীবনকে এমন ভাবে প্রভাবিত করে যে বুলি খানিক পাল্টে যেতে বাধ্য। পিছিয়ে যাই প্রায় ৭০০ বছর আগেকার ইংল্যান্ডে। বিউবোনিক প্লেগ বা ‘ব্ল্যাক ডেথ’-এর সময় ইংরেজি ভাষার পাল্টে যাওয়ার গল্পও অনেকটা এ রকমই।
ইউরেশিয়া ভূখণ্ডের বুক চিরে চলে গিয়েছে কতগুলো রাস্তা। দুর্গম পাহাড়, জঙ্গল, নদী পেরনো সেই সব রাস্তা ধরে বাণিজ্য চলে পূর্ব এশিয়া থেকে পশ্চিম ইউরোপ। আবার উল্টো পথেও। এগুলির নাম রেশম পথ বা সিল্ক রুট।
চতুর্দশ শতক। পূর্ব এশিয়ার চিন দেশে বিউবোনিক প্লেগ নামে এক রোগ দেখা দিল। মাছি থেকে ইঁদুরে ছড়ায় সেই রোগ, ইঁদুর থেকে মানুষে। চিন দেশে অবশ্য বেশি ছড়াল না রোগটি। কিন্তু সেই রোগ নিয়ে দক্ষিণ-পশ্চিম ইংল্যান্ডের ডরসেট কাউন্টির ওয়েইমাউথ শহরে হাজির হলেন এক নাবিক। সেই রেশম পথ ধরে।
জুন ১৩৪৮। লন্ডনের বাসিন্দারা প্লেগে আক্রান্ত হতে শুরু করলেন। হঠাৎই শয়ে শয়ে যাজক মারা যেতে শুরু করলেন। আসলে, কেউ অসুস্থ হলেই তাঁদের ডাক পড়ে, সমাজের সেটাই নিয়ম, প্লেগের ক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম হল না। মরণাপন্ন হলেও সাধারণ মানুষ যাজকদেরই শরণাপন্ন হতেন। আর মারা যাওয়ার পর শেষকৃত্যও তাঁদেরই দায়িত্ব। অতএব দেখা গেল, ইংল্যান্ডের গোটা যাজক সম্প্রদায়ের বেশির ভাগই এই নতুন সংক্রামক রোগের কবলে পড়ছেন এবং মারা যাচ্ছেন। যাঁরা সে যাত্রায় কোনও মতে প্রাণে বাঁচলেন, তাঁরা পালালেন অন্যত্র। ছোঁয়াছুঁয়ির ভয় তখনও ছিল। রবীন্দ্রনাথের ‘অভিসার’ কবিতায় ছিল না?— “নিদারুণ রোগে মারী-গুটিকায় ভরে’ গেছে তা’র অঙ্গ।/ রোগমসী ঢালা কালী তনু তা’র/ ল’য়ে প্রজাগণ, পুর-পরিখার/ বাহিরে ফেলেছে, করি পরিহার/ বিষাক্ত তা’র সঙ্গ।”
এক বর্ষায় লন্ডন শহরে প্লেগের আবির্ভাব হয়েছিল। পরের গ্রীষ্মে দেখা গেল, গোটা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে সেই রোগ। শুধু যাজকরা নন, অভিজাত সমাজের বহু সদস্যও মারা গেলেন। এক একটা ধনী পরিবারের সব সদস্যকে নিয়ে নিল প্লেগ। বিলাসবহুল জীবন— নতুন রোগের সঙ্গে যুঝে ওঠা গেল না।
মহামারি বা অতিমারি কালের নিয়মে নিজেই এক সময় শক্তি হারিয়ে ফেলে। ইংল্যান্ডেও সে বারের শীতে আস্তে আস্তে ঝিমিয়ে গেল বিউবোনিক প্লেগ। কিন্তু তত দিনে সমাজের সম্ভ্রান্ত অংশের অনেকটা ফাঁকা হয়ে গিয়েছে। কেবল অনেকটাই বেঁচে গিয়েছেন গরিব চাষিরা। তাঁরা সারা বছরই প্রতিকূল পরিবেশ সামলে কৃষিকাজ করেন। দেখা গেল, তাঁদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি, মৃত্যুর হারও কম। প্লেগ-পূর্ব ইংল্যান্ডে তাঁরা শুধু সংখ্যায় বেশি ছিলেন, প্লেগ-উত্তর সময় সামাজিক জোরও বাড়ল। রাজকাজে সে প্রভাব পড়েছিল। তবে সবচেয়ে জরুরি কথা, তাঁদের ভাষা ইংরেজি হঠাৎ করেই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিল গোটা সমাজে। শাসকের কাছেও।
আর যাঁদের সংখ্যা কমল? সবচেয়ে সঙ্কট দেখা দিল যাজক সমাজে। এক সঙ্গে এত জ্ঞানীগুণী লোক আর কোথায় পাওয়া যাবে? অগত্যা কিছু ল্যাটিন না জানা স্থানীয় লোককে যাজক করা হল। ধর্মীয় উপাসনা এবং সামাজিক অনুষ্ঠান সবই শুরু হল স্থানীয় ইংরেজি ভাষায়। সমস্যা তৈরি হল অভিজাত সমাজেও। যে হেতু নর্মান রাজারা তখন ইংল্যান্ড শাসন করতেন, তাই অভিজাত সমাজ ছিল ফরাসিভাষী। জাত ফরাসি নয়, নর্মান ফ্রেঞ্চ। কিন্তু সেটাই রাজভাষা। টাকাপয়সা করতে গেলে বা সমাজে উঁচু জায়গা পেতে হলে, সেই ‘প্রেস্টিজ ল্যাংগোয়েজ’ শিখতে-বলতে হত। প্লেগের পরে তাঁদের সঙ্গে সঙ্গে লোপ পেল তাঁদের ভাষার গরিমাও। ইংরেজি ছাড়া সেই জায়গা নেওয়ার মতো আর কেউ রইল না।
ইংরেজি কাদের ভাষা ছিল? চতুর্দশ শতকের ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জে এই ভাষা বলত মূলত কেল্ট এবং অ্যাংলো-স্যাক্সনরা। খ্রিস্টীয় প্রথম শতক থেকেই এই দ্বীপপুঞ্জে বাস করত কেল্টরা। মাঝে চার শতকের রোমান শাসন গিয়েছে। কেল্টরা থেকে গিয়েছে প্রজা হয়ে। এর পর বিভিন্ন জার্মানিক জনগোষ্ঠী সেখানে এসেছে। তাদের মধ্যে অ্যাঙ্গল, স্যাক্সন ও জুট জনজাতি মিলে গঠন করেছে ইংল্যান্ড। এরা সকলেই ইংরেজিভাষী। অবশ্য সেই ইংরেজি এখনকার চেয়ে অনেক আলাদা। এর নাম ওল্ড ইংলিশ। ‘Eald’ (Old), ‘Brodor’ (Brother), ‘Hus’ (House), ‘Riht’ (Right) জাতীয় কিছু শব্দ চেনা চেনা লাগে। ঈষৎ অন্য চেহারায় এগুলো আজও টিকে আছে। কিন্তু ‘Uhtceare’ বা ‘Expergefactor’-এর মতো শব্দগুলো এখন অজানা। এ সব আসলে অনেক কাল আগেই ইংরেজি শব্দকোষ থেকে হারিয়ে গিয়েছে। ১০৬৬ সালে জনজাতিদের সুখ-শান্তি ভঙ্গ করে ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জে হামলা করে নর্মানরা। অ্যাংলো-স্যাক্সন রাজা হ্যারল্ড গডউইনস-কে হেস্টিংসের যুদ্ধে পরাজিত করেন নর্মান রাজা উইলিয়াম দ্য কংকারার। ইংল্যান্ডে সিংহাসনে বসেন উইলিয়াম। শাসক হয়েই প্রশাসন ও বিচার বিভাগে ইংরেজি পাল্টে ফরাসির আমদানি করেন। ইংরেজি হয়ে যায় দ্বিতীয় শ্রেণির ভাষা— চাষির ভাষা।
ল্যাটিন আর ফরাসি বলা প্রথম শ্রেণির জোরটাই যখন আর সমাজে থাকল না, তখন সেই শ্রেণির ভাষাই বা থাকে কী করে? ধর্ম আর রাজকাজে ইংরেজি চালু হওয়ায় এমনিতেই তার প্রতিপত্তি বেড়ে গিয়েছিল। ১৩৬২ সালে পার্লামেন্টে আইন পাশের মাধ্যমে নর্মান ফ্রেঞ্চ থেকে ইংরেজি হয়ে গেল বিচার বিভাগের ভাষা।
এই কাহিনি অবশ্য সকলে মানেন না। অনেকে বলেন, অভিজাত সমাজে মৃত্যুর হার অনেক কম ছিল। তাঁদের যত্ন নেওয়ার লোক অনেক বেশি ছিল। চিকিৎসা পাওয়ার সুযোগও। বরং মাঠে-ঘাটে কাজ করা, অতি কষ্টে দিন কাটানো গরিব চাষিদের মধ্যে স্বাভাবিক কারণে প্লেগের মড়ক লেগেছিল। কিন্তু ইংরেজির পুনর্জন্ম নিয়ে কোনও ব্যাখ্যা এই পাল্টা গল্পটা দিতে পারে না।
তবে, এটা সকলেই মানেন যে ‘ব্ল্যাক ডেথ’-এর পর ইংল্যান্ডের সমাজের চেহারা অনেকটাই পাল্টে গিয়েছিল। গরিব চাষিদের জোর তখন অনেকটাই বেশি। তাঁরা নিজেদের মতো করে নিজেদের দাবিদাওয়ার কথা বলছেন। নিজেদের ভাষায়। প্লেগের পর সম্ভ্রান্ত শ্রেণিটাই সমাজ থেকে হাওয়া হয়ে গিয়েছে, কাজেই তখন সেখানে বাধ্যত অনেকগুলো বদল এসেছে। অভিজাতদের বিশাল বিশাল বাড়ি তখন ফাঁকা পড়ে। হু-হু করে পড়ছে জমির দাম। শ্রমিকের সংখ্যাও কমেছে, কাজেই মজুরি বেড়েছে। সেটা বুঝতে পেরে হাজার হাজার লোক শহরের পথে পাড়ি জমাতে শুরু করেন একটু বেশি আয়ের খোঁজে। কিন্তু গ্রামের সামন্তপ্রভুরা এত সহজে মৌরসিপাট্টা ছেড়ে দেওয়ার বান্দা নন। তাঁরা বেশি মজুরি দিয়েই রাখতে চাইলেন ভূমিদাসদের। কিন্তু দাসপ্রথার মতো অন্যায় ব্যবস্থায় কেউ স্বেচ্ছায় থাকলেন না। শুরু হল প্রভুদের জোরজুলুম। যেন-তেন-প্রকারেণ পুরনো ব্যবস্থা টিকিয়ে রাখার চেষ্টায় ফল হল উল্টো। ১৩৮১ সালে ইংল্যান্ডে আছড়ে পড়ল ভয়ানক কৃষক বিদ্রোহ। শেষ পর্যন্ত এই বিদ্রোহ থামিয়েছিলেন রাজা দ্বিতীয় রিচার্ড। অদ্ভুত এক কৌশলে— চাষিদের সঙ্গে ইংরেজি ভাষায় বাক্য বিনিময় করেছিলেন তিনি। তাতেই কৃষকদের ক্ষোভ অনেকখানি প্রশমিত হয়ে যায়।
তবু, রাজন্যবর্গের প্রভাব এড়ানো কঠিন। নব উদ্ভূত ভাষাটির সঙ্গে ওল্ড ইংলিশের মিল থাকল সামান্যই। ঢুকে পড়ল প্রচুর ফরাসি শব্দ। ইদানীং ‘Able’, ‘Car’, ‘Different’, ‘Fine’, ‘Journey’-র মতো যে শব্দগুলো আমরা প্রায়ই ব্যবহার করে থাকি, এ সবই আসলে ফরাসি থেকে আগত, জন্ম সেই সময়। ‘Détente’ বা ‘Coup d’état’-এর মতো শব্দগুলো তো শুনলেই ফরাসি বলে চেনা যায়। শাসক যেহেতু তখনও নর্মান, তাই শাসকের অলিন্দে সব কিছু ফরাসি থেকে ইংরেজি হয়ে গেল, এমন বলা যাবে না। সেটা হতে আরও অনেকটা সময় লেগেছিল।
দ্বিতীয় রিচার্ডের পর ইংল্যান্ডের মসনদে বসলেন চতুর্থ হেনরি। তাঁর মাতৃভাষা ফরাসি নয়, ইংরেজি। নর্মান আগ্রাসনের পর তিনিই প্রথম রাজা, যিনি ফরাসির বদলে ইংরেজি বলেন। এর পরের রাজা পঞ্চম হেনরি ইংরেজিতে চিঠিপত্রও লেখা শুরু করেন। এর প্রায় দু’শতক পরে, ১৬০৬ সালের ২৬ ডিসেম্বর, রাজা প্রথম জেমস এবং অভিজাতমণ্ডলীর সামনে অভিনীত হল শেক্সপিয়রের নতুন নাটক ‘কিং লিয়র’। আসলে ‘Leir’ নামে একটি পুরনো নাটক ছিল, অভিনয় করত অন্য একটি দল। পরে আর এক প্লেগের সময় ঘরবন্দি শেক্সপিয়র এই নাটকটিকেই নতুন করে লিখলেন। পুরনো নাটকে রাজা লিয়রের ছোট মেয়ে কর্ডেলিয়া তাঁর উন্মাদ বাবাকে উদ্ধার করেন। শেক্সপিয়রের নতুন নাটকে কর্ডেলিয়া মারা যায়। শেক্সপিয়রের তখন ৪২ বছর বয়স। নাটকের মঞ্চে তিনি আর নামেন না। কিন্তু দলের কে কী রকম অভিনয় করেন, সে সব তাঁর নখদর্পণে। হ্যামলেট এবং ওথেলো-র যশস্বী অভিনেতা রিচার্ড বারবেজ তত দিনে অনেক পরিণত। তাঁকে দেওয়া হল বৃদ্ধ, উন্মাদ রাজা লিয়রের চরিত্র। রবার্ট আর্মিন এই দলে কমেডিয়ানের ভূমিকায় নামতেন। তাঁকে বোকা বা ‘Fool’ হিসেবে রাখা হল রিচার্ড বারবেজের সমান গুরুত্ব দিয়ে। এই ভাবে ক্রমশ নাটকের ধারাই বদলে গেল প্লেগ-আক্রান্ত লন্ডনে, তৈরি হল বিশ্বখ্যাত ট্র্যাজেডি ‘কিং লিয়র’।
১৬১১ সালে ইংরেজি ভাষায় প্রকাশিত হয় ‘কিং জেমস বাইবেল’। এই সাহিত্যকীর্তির মহিমা এক কথায় অতুলনীয়। এই একখানা বই-ই ইংরেজি-বলা জগতের মূল চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করেছিল। আজও ইংরেজি সংস্কৃতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আকর বলে মনে করা হয় একে। যে ভাষা প্রায় তিনশো বছরেরও বেশি সময় ধরে সমাজে দ্বিতীয় শ্রেণির ভাষা হয়ে টিকে ছিল, তার এত দ্রুত সমৃদ্ধি ঘটল যে এমন অসামান্য একখানা বাইবেল অনূদিত হয়ে গেল।
এই বাইবেলের গুরুত্ব কতটা, বোঝা যায় প্রখ্যাত ইংরেজ লেখক রিচার্ড ডকিন্সের এক মন্তব্যে। তাঁর মতে, যাঁর মাতৃভাষা ইংরেজি হওয়া সত্ত্বেও এই বইটা পড়া নেই, তাঁকে বর্বরতুল্য বললেও ভুল হয় না! নাস্তিক ডকিন্স মনে করেন, নীতি-উপদেশ নয়, মহান সাহিত্যকীর্তি হিসেবে প্রত্যেক ইংরেজ শিশুর এই বই অবশ্যপাঠ্য। ওই সময়টা আধুনিক ইংরেজির সলতে পাকানোর পর্বই বটে। যেমন, ষোড়শ শতকে ইংরেজিতে ভাষা পেয়েছিল একটা নতুন ধ্বনি: ‘J’।
ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জের মানুষের ইংরেজির প্রতি বরাবরের এই টান দেখে বোঝা যায়, প্রায় তিনশো বছর নর্মান রাজত্বের পরেও সাধারণ দ্বীপবাসীর কাছে ফরাসি বিদেশি ভাষা হয়েই থেকে গিয়েছিল। মাতৃভাষা পুনরুদ্ধারের সেই আশ্চর্য সুযোগটা করে দিয়েছিল ‘ব্ল্যাক ডেথ’। প্রায় ২৫ লক্ষ নাগরিকের মৃত্যু হয়েছিল, মোট জনসংখ্যার অর্ধেক ফাঁকা হয়ে গিয়েছিল, কিন্তু ইংরেজিকে বাঁচিয়ে দিয়ে গিয়েছিল মহামারি বিউবোনিক প্লেগ।