ছবি: মহেশ্বর মণ্ডল
এবার দার্জিলিঙে ক’দিন ঠাসা ভিড়, ঠান্ডাটা এখনও সহ্যের মধ্যে তাই রাত ন’টাতেও মানুষজন গিজগিজ করছে ম্যালে। আরও আধ ঘণ্টাখানেক পরে আস্তে আস্তে ফাঁকা হবে ম্যাল আর ম্যাল সংলগ্ন রাস্তা। এর পরেও অবশ্য ম্যালের ধারে ধারে পাইন কাঠের বেঞ্চে হাতে গোনা কয়েক জন পর্যটক জড়সড় হয়ে বসে থাকে ঠান্ডা উপভোগ করবার জন্য। তাদের মধ্যে এক চাদরের ভিতর যুগলও থাকে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা শীত উড়িয়ে উষ্ণতা ভাগ করে নিতে এদের জুড়ি মেলা ভার। পুজোর ছুটিতে দার্জিলিং মধ্যবিত্ত বাঙালির হ্যাপি ডেস্টিনেশন। পাহাড় এখন শান্ত, তপ্ত বালিতে খই ফোটার মতো করে ক্ষোভে ফুটছে হাতে গোনা ক’জন, তবে এত মানুষের আনন্দের কাছে তা তুচ্ছ। তাই ঢল নেমেছে মানুষের।
পাঁচটা মোটরবাইকে দশ জনের হুজুগে বাঙালি ছেলেমেয়ের একটা গ্রুপ এ বারও কলকাতা থেকে চলে এসেছে। শেষ দুপুরে ঘোড়া জ্যোতিকে নিয়ে আসার সময় পিডব্লিউডি বাংলোর কাছে এই টিমটাকে কল্যাণ প্রথম দেখেছে। মেয়েরাও লম্বা লম্বা সিগারেট টেনে গলগল করে ধোঁয়া ছাড়ছিল। কল্যাণ এক বার ভেবেছিল বলবে, ম্যালে সিগারেট খাওয়া নিষেধ। কিন্তু ওদের চেহারা দেখে পিছিয়ে এসেছে। মাথায় লাল ঝুঁটিওয়ালা একটি ছেলে ইয়া লম্বা একটা ক্যামেরা নিয়ে ঢালের কিনারায় দাঁড়িয়ে কাঞ্চনজঙ্ঘার ছবি তুলছিল। চুলের বাহার দেখার মতো, কানের উপর চুল কামানো, মাথার মাঝ বরাবর ইঞ্চি তিনেক জায়গা জুড়ে লালচে কোঁকড়ানো চুল সোজা শিয়ালের লেজের মতো নেমে গিয়েছে ঘাড় ছাড়িয়ে।
আম বাঙালির চাইতে এই হুজুগে পার্টি ভাল। এরা দামাদামি করে না, টাকা পয়সার ব্যাপারে উদাসীন, যেমনটা উদাসীন নিজেদের জামাকাপড় আর আশেপাশের মানুষজনের ব্যাপারে। একটা রেস্তরাঁ থেকে একটু আগেই নেমে আসতে দেখেছে এদের, কল্যাণ তখন দুটো বাচ্চাকে ঘোড়ার পিঠে বসিয়ে সানসেট লাউঞ্জের দিক থেকে কিউরিও শপের দিকে আসছিল। এই দলের একটি মেয়েকে দেখে কল্যাণ কিছুটা বিভোর। লম্বাটে চেহারার সঙ্গে মানানসই লম্বাটে মুখ, লাবণ্য চুঁইয়ে পড়ছে মুখ থেকে। ছোট্ট কপালের পিছনেই একরাশ কোঁকড়ানো চুল, খুব আকর্ষণীয় বড় বড় উজ্জ্বল চোখ দুটি। কল্যাণ ওর নাম দিল সিলভিয়া। সেই প্রথম যৌবন থেকে পূর্ণিমা রাতের কাঞ্চনজঙ্ঘা, শীতের তিস্তা, পাইনের সূচালো পাতা থেকে ঝরে পড়া শিশির কিংবা নীল প্রজাপতি— যা কিছু সুন্দর দেখে এসেছে, তাদের সঙ্গেই জুড়ে নেয় সিলভিয়াকে। খুব ইচ্ছে করে সিলভিয়াকে এক বার ছুঁয়ে দেখবে, সত্যি না কি কল্পনা!
আজ কোজাগরী পূর্ণিমা। ম্যালের পিছনে চাঁদের আলোয় ভাসছে কাঞ্চনজঙ্ঘা। রাত সাড়ে ন’টা, পাহাড়ে অনেকটাই রাত। ফাঁকা ম্যালে কবি ভানু ভক্তর স্ট্যাচুর নীচে হুজুগে দলের একটি মেয়ে ওদেরই দলের একটি ছেলেকে জড়িয়ে ধরে চক করে একটা চুমু খেল। কল্যাণের গা চিড়বিড় করে ওঠে। ছেলেটি সিড়িঙ্গে, পিছন থেকে কামানো মাথা, কপালের উপর কার্টুনের মতো চুলের ছাঁট, ফ্যাটফেটে ফর্সা মুখে মৌচাকের মতো লম্বা দাড়ি। অন্য একটি ছেলে মোবাইলে কথা শেষ করে দ্রুত কী একটা কানে কানে বলাবলি করল নিজেদের মধ্যে, তার পর দুড়দাড় করে দৌড়াল ম্যাল রোড ধরে। দেখে সাময়িক একটা কৌতূহল জাগে কল্যাণের মনে। কিন্তু তখনই খদ্দের পেয়ে যায় সে।
রাতের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে শীত, এ বার ঘোড়া নিয়ে বাড়ি ফেরার সময়। টুকটাক যা বাজার করার কাজের ফাঁকে ফাঁকে করে নিয়েছে। ম্যাল রোড পেরিয়ে ডান দিকে ঘুরে ও নেমে যাবে ভুটিয়া বস্তিতে, ওর ছোট্ট বাড়িতে। বৌ ভাবনা আর সাত বছরের ছেলে পালডেন অপেক্ষা করে আছে। প্রত্যাশার চাইতে আজ বেশি রোজগার হয়েছে। তাই কাজের ফাঁকে কল্যাণ একটা পাঁইট কিনে এনেছে। কয়েকটা হালকা চুমুকও দিয়েছে। অনেকটাই অবশিষ্ট আছে বোতলে। জ্যোতি আজ খেটেছে খুব। তাই স্যাডল খুলে নিজের কাঁধে তুলে নেয় কল্যাণ। লাগাম ছেড়ে দিতেই জ্যোতি হাঁটতে থাকে ম্যাল রোডের চেনা রাস্তায়।
পিডব্লিউডি বাংলোর কাছে আসতেই ওই দলটাকে দেখতে পায় সে। পাহাড়ের কিনারায় দাঁড়িয়ে নীচে তাকিয়ে ‘অ্যাম্বুলেন্স বুলাও’, ‘ফায়ার ব্রিগেড বুলাও’ বলে চেঁচামেচি জুড়ছে। সিলভিয়া নেই সে দলে। তড়িঘড়ি এগিয়ে যায় কল্যাণ। নীচের ঝোপ থেকে কাতরানোর ক্ষীণ আওয়াজ আসছে একটি মেয়ের। ধক করে ওঠে ওর বুক। সিলভিয়া পড়ে গিয়েছে নীচে! ধাঁই করে বুদ্ধি খুলে যায় কল্যাণের। স্যাডলের সঙ্গে জ্যোতিকে বাঁধার জন্য হাত দশেকের একটা দড়ি পেঁচিয়ে রাখা থাকে। দ্রুত হাতে দড়ি খুলে সে ছুড়ে দেয় নীচে, তার পর বলে, ‘‘টর্চ হ্যায় ক্যা কিসিকে পাস?’’ একটি মেয়ে মোবাইল ফোনের সুইচ অন করে আলো জ্বালে। নীচে পড়ে যাওয়া সিলভিয়াকে দেখা যাচ্ছে না। কল্যাণ চেঁচায়, ‘‘রস্সি পকড়ো।’’
‘‘আরে কাহাঁ রস্সি পকড়ো ভাই, দেখাই যাচ্ছে না, ফায়ার ব্রিগেড কো বুলাও’’, উত্তেজিত ভাবে বলে দলের একটি ছেলে।
চোখ বুঝতেই সিলভিয়ার যন্ত্রণাক্লিষ্ট মুখ ভেসে ওঠে কল্যাণের মনে। নাড়িয়ে দেয় কল্যাণকে। নিজের কোমরে পেঁচিয়ে দড়ি বাঁধে, অন্য প্রান্ত ধরিয়ে দেয় ছেলেদের হাতে। পিছন ফিরে আগাছা ধরে নামতে থাকে কল্যাণ। এ বার দড়িতে টান পড়ে, যতটা নীচে ভেবেছিল তার চেয়ে বেশি নীচে পড়েছে সিলভিয়া। তা হলে কি কল্যাণ ফিরে আসবে? ও কি কাপুরুষ? একটা মেয়ের কাতরানো আওয়াজ পিছনে ফেলে উঠে আসবে? এই হট্টগোলের মধ্যেই পুলিশ এসে হাজির।
কল্যাণ ঝুলন্ত অবস্থায় চেঁচিয়ে জানায়, তার দড়ি ছোট, তাই নামতে পারছে না। পুলিশ আসামির কোমরে বাঁধার দড়ি বার করে আনে গাড়ি থেকে, জুড়ে দেয় কল্যাণের দড়ির সঙ্গে, কল্যাণ নেমে যায় নীচে।
বড় একটা পাথরের উপর চিত হয়ে পড়ে আছে সিলভিয়া, গলার স্কার্ফ আর গায়ের জ্যাকেট উপরে ঝোপের কাঁটায় আটকে ছেঁড়া খাতার মতো ঝুলছে সে। গায়ের টি-শার্ট ছিঁড়ে গিয়েছে কয়েক জায়গায়। ফুটফুটে জ্যোৎস্নায় কল্যাণ বিন্দু বিন্দু রক্ত দেখে কাঁধের কাছে। এক মুহূর্ত দাঁড়িয়ে থাকে ঝকঝকে চেহারার দিকে তাকিয়ে, পদ্মপাতার মতো বিশাল চোখের পাতা দুটো বন্ধ, সুন্দর মুখ বেঁকেচুরে গিয়েছে যন্ত্রণায়। বেঁচে আছে তো! এক মুহূর্তে বুকটা কেঁপে যায়। সে ঝুঁকে পড়ে সিলভিয়ার মুখের উপরে— নিঃশ্বাস কি থেমে আছে? কিসের যেন এক অদ্ভুত ঝাঁঝালো গন্ধ, ঠিক বুঝতে পারে না কল্যাণ। ইতস্তত করে কান ঠেকায় সিলভিয়ার বাঁ দিকের বুকে। হাসি খেলে যায় কল্যাণের ঠোঁটে, হৃৎস্পন্দন শুনতে পায়। জ্ঞান হারিয়েছে। এখনই হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া দরকার। কোমর জড়িয়ে ধরে ওকে তুলে ধরার চেষ্টা করে। কাদার তালের মতো গড়িয়ে পড়ার আগে ওকে কাঁধে তুলে নেয়। হাত বাড়িয়ে উপরের ঝোপে ঝুলতে থাকা স্কার্ফ টেনে নিয়ে শক্ত করে বেঁধে নেয় নিজের শরীরের সঙ্গে। সিলভিয়ার শরীরের উষ্ণতা সে টের পায় নিজের শরীরের ভিতর। প্রত্যাশার চাইতেও বেশি পাওয়া কল্যােণর। পুলিশের বাড়ানো দড়ি ধরে দাঁতে দাঁত চেপে উঠে আসে উপরে। সবাই মিলে ধরাধরি করে ওকে নামিয়ে নেয় কল্যাণের কাঁধ থেকে। পুলিশের গাড়ি আর বাইক বাহিনী ছুটে চলে হাসপাতালের দিকে।
জ্যোতিকে নিয়ে ভুটিয়া বস্তির রাস্তায় হাঁটা দেয় কল্যাণ। তখন উঠতি যৌবন, এমনই এক জ্যোৎস্না রাতে ভাবনাকে প্রথম নিয়ে গিয়েছিল লেবংয়ের রাস্তায় পাইন বনে। আলো-আঁধারিতে প্রথম দেখেছিল ওর ধবধবে সাদা শরীর। সেদিনকার মতোই রোমাঞ্চ ফিরে আসে কল্যাণের। সিলভিয়াকে নিয়ে সে কল্পনায় বিভোর। কাঞ্চনজঙ্ঘার তুষার ছুঁয়ে আসা ঠান্ডা বাতাস ছুঁয়ে যায় কল্যাণকে। ফিরে আসে বাড়ি। ভাগ্যিস জ্যোতি ছিল ওর সঙ্গে, তাই পথ হারিয়ে যায়নি।
মাঝরাতে দরজার কড়া নাড়ার আওয়াজ পায় কল্যাণ। সিলভিয়া ওকে ডাকছে পাইন বনে, আরও স্পষ্ট ওর ডাক। ভাবনার জোরালো ধাক্কা খেয়ে সে উঠে বসে বিছানায়। কেউ সত্যিই ডাকছে দরজায়। দরজা খুলে অবাক। একরাশ বিরক্তি নিয়ে দাঁড়িয়ে জনা দুই পুলিশ, এক্ষুনি যেতে হবে সদর থানায়।
‘‘কেন?’’
‘‘বড়বাবু বুলায়া।’’ ঘুম ছুটে যায় কল্যাণের। মনে মনে ভেবে নেয় বিগত কয়েক দিনের নিজের কাজকর্মগুলো। নাহ! তেমন অন্যায় কিছু করেছে বলে মনে পড়ছে না।
‘‘তুনে কিসকো দেখা আলভিরাকো ধাক্কা দেতে হুয়ে?’’ হুঙ্কার ছাড়ে বড়বাবু।
বড়বাবুর হুঙ্কার বুঝতে একটু সময় লাগে ওর, এবং সেই সঙ্গে সে জানতে পারে তার সিলভিয়ার আসল নাম। ‘‘ম্যায়নে কাঁহা দেখা! পহেলে সে হি নীচে থি ওহ লড়কি’’, একই কথা বার বার বলে কল্যাণ।
স্বপ্নের রেশ কেটে গিয়েছে থানায় ঢুকেই। এখন শুধু চিন্তা, পুলিশের হাত থেকে কী ভাবে নিষ্কৃতি পাবে! পুলিশের আলোচনা আর হুজুগে দলের কথা শুনে মনে হল, কেউ আলভিরাকে ধাক্কা দিয়েছে পিছন থেকে। কোজাগরী পূর্ণিমার আলো মাখা কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতেই বিভোর ছিল সে, আর ঠিক ওই সময়েই...
‘‘নহি স্যর, ম্যায় বাদ মে আয়া উধার,’’ কল্যাণের এক কথা।
‘‘ঠিক হ্যায়, তুমি কি অন্য কিছু দেখেছ? মানে নীচে নামার আগে, কিংবা যখন উপরে এলে ওই মেয়েটিকে নিয়ে?’’
‘‘না স্যর।’’
‘‘ক্যা বেকুব হ্যায়, কোই ক্রাইম করে তো আঁখোমে দিখাই দেতা হ্যায়।’’ কল্যাণ পড়েছে মহা ফ্যাসাদে, ফুটফুটে জ্যোৎস্নায় আলভিরাকে নিয়ে সে ব্যস্ত ছিল, কারও চোখে তাকায়নি!
‘‘স্যর, উহাঁ পুলিশ থা ম্যায়নে যব উপর আয়া।’’ পাশে দাঁড়িয়ে ছোট দারোগা ঘাড় নেড়ে কল্যাণের এই কথাকে সমর্থন করে।
রাত গড়ায় আর রাতের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে হুঙ্কার বাড়ে বড়বাবুর। কল্যাণ থানার মেঝেয় বসে থাকে দেওয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে। দলের ছেলেমেয়েগুলোও থানাতে বসে। ওদের কথা থেকে বুঝতে পারে, নীলেশ নামের ওদের মধ্যে সবচেয়ে সাদামাটা ছেলেটির বান্ধবী এই আলভিরা। বাকি দুটি মেয়ে পুষ্প আর কনিষ্কা এসকর্ট সার্ভিসের। নির্দিষ্ট কারও বান্ধবী নয়। সঙ্গে এসেছে দলটার, টাকা রোজগার আর মুফতে দেদার ফুর্তি। এদের নিয়েই ঘোঁট পাকিয়েছে সমস্যা। বড়বাবুর টেবিলের উল্টো দিকে টানা বেঞ্চে লাইন দিয়ে বসে আছে ছেলেমেয়েগুলো। মেয়ে দুটোর মাথা ঝুলে পড়েছে ঘাড় থেকে, ছেলেদের চোখে ফাঁকা দৃষ্টি। বড়বাবুর সামনে তো সব্বাই হাজির, তা হলে চোখ দেখে কেন বুঝতে পারছেন না, কে আলভিরাকে পিছন থেকে ধাক্কা দিয়েছে!
নীলেশ যেন বিড়বিড় করে এক বার বলল, ‘‘চাঁদের গায়ে হাঁটতে চাইত আলভিরা। পূর্ণিমার চাঁদ আলভিরার কাছে ফ্যান্টাসি। বিশেষ করে...’’ নিজের হুঙ্কারের মধ্যে কথাটা বড়বাবু শুনতে পেল বলে মনে হল না কল্যাণের।
এই দলের আরও একটি মেয়ে আর তিনটি ছেলে ভানুভক্তের স্ট্যাচুর নীচে ম্যালে ঘুরছিল, তার পর ফোন পেয়ে দুড়দাড় করে ছুটেছে। তার মানে ওরা সন্দেহের বাইরে। চুমু খাওয়া মেয়ে আর ছেলেটিকে বিলক্ষণ চিনেছে পারছে কল্যাণ। সে এত ক্ষণে বুঝে গিয়েছে, কিছু একটা না বললে থানা থেকে ছাড়া পাওয়া মুশকিল। উঠে দাঁড়ায়, বুকে সাহস এনে এগিয়ে যায় বড়বাবুর দিকে। কানের কাছে ঝুঁকে ফিসফিস করে।
চটাং করে তুড়ি মেরে উঠে দাঁড়ায় বড়বাবু। ঘাড় নেড়ে বলে, ‘‘বিপদে পড়ে তুম ভি ডিটেকটিভ বন গিয়া!’’ চোখে খুশির ঝিলিক, আধা কেস সল্ভড। বাকি আধা, ক্রুর চোখে বেঞ্চে বসা বাকি চার জনের মুখে সার্চলাইট ফেলার মতো দেখে নেয়, নীলেশ কি তবে সন্দেহের বাইরে?
যাগগে বাব্বা, দারোগার ভাষাতেই আধা কেস কল্যাণই সল্ভ করে দিয়েছে, বাকি আধা পুলিশ করুক! এ বার বড়বাবুর কাছে মিনমিন করে বলে সে, ‘‘স্যর, এ বার আমি যাই, ভাবনা নিশ্চয়ই খুব দুশ্চিন্তায় আছে!’’
‘‘ভাবনা কে?’’ খেঁকিয়ে ওঠে বড়বাবু।
‘‘মেরা বিবি।’’
‘‘ওহ! যাও।’’
ছাড়া পেয়ে থানার বাইরে আসে কল্যাণ। মাঝরাতের শীত ঝাঁপিয়ে পড়ে ওর উপরে, সঙ্গে সঙ্গে মনে পড়ে যায় সিলভিয়ার মায়াবি চোখ দুটো। যদি চিরদিনের মতো বন্ধ হয়ে যায়? কেঁপে যায় ওর শরীর। কেন একটা অচেনা মেয়ের মৃত্যুভয় চেপে বসেছে তার মনে? গুলিয়ে যাচ্ছে বাড়ির রাস্তা। পাঁইটে একটা চুমুক মারলে ভাল হত! নিদেনপক্ষে একটা সিগারেট। আরে, জ্যাকেটের পকেটেই তো আছে একটা, কাঁধ থেকে সিলভিয়াকে গাড়িতে নামিয়ে রাখতেই ওর জ্যাকেটের পকেট থেকে রাস্তায় পড়ে গিয়েছিল, ওটা তুলে নিজের পকেটে রেখেছে।
অ্যাঁ! এ তো মণিপুরি গাঁজা সিগারেটের ভিতরে। এক টান দিয়ে কল্যাণ বিলক্ষণ চিনেছে সিলভিয়ার সুন্দর মুখের সেই কটু গন্ধ! মনে পড়ে যায় থানায় নীলেশের কথাটা। ‘আকাশের গায়ে হেঁটে চাঁদনি রাতে কাঞ্চনজঙ্ঘায় উঠলে মন্দ হয় না, সিগারেট টানতে টানতে আলভিরা নাকি বিড়বিড় করছিল, বিশেষ করে...’ সিলভিয়াকে তাদের দলের কেউ ধাক্কা দেয়নি, পড়ে গিয়েছে এই মণিপুরি কিক খেয়ে!
ছ্যাঃ থু! প্রবল আক্রোশে লম্বা সিগারেটা টুকরো টুকরো করে ছিঁড়ে ফেলে কল্যাণ। তার পর হঠাৎ কী মনে হতে, সেই টুকরোগুলো নিয়ে দৌড়ে যায় থানার দিকে। সে যে খুঁজে পেয়েছে আততায়ীকে।