দাবি করা হয়েছিল, ‘ইতিহাস ফিরে দেখা’-র অনুষ্ঠান। সেটাই বদলে গেল মর্মান্তিক দুর্ঘটনায়। টেক্সাস বিমানবন্দরে এয়ার শো চলাকালীন মাঝ আকাশে ভয়াবহ দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে দু’টি বিমান। একটির সঙ্গে আর একটি বিমান সজোরে ধাক্কা খেয়ে ভেঙে পড়েছে। ছিটকে বেরিয়ে এসেছে আগুনের ফুলকিও।
এই দুর্ঘটনায় অন্তত ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। বিমানচালকরা জীবিত আছেন কি না, স্পষ্ট করে জানাননি কর্তৃপক্ষ। তবে বিমান দু’টির মধ্যে থাকা সকল কর্মীরই মৃত্যুর আশঙ্কা করা হচ্ছে।
দুর্ঘটনার মুহূর্তের ভিডিয়ো প্রকাশ্যে এসেছে। সমাজমাধ্যমে তা রাতারাতি ভাইরাল হয়ে গিয়েছে। ভিডিয়োয় দেখা গিয়েছে, কী ভাবে এয়ার শো চলাকালীন একটি বিমানকে পাশ থেকে উড়ে এসে ধাক্কা দিয়েছে অপর বিমানটি।
দুর্ঘটনাগ্রস্ত বিমান দু’টি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কার। মাঝ আকাশে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বোয়িং বি-১৭ বম্বার বিমানকে ধাক্কা মেরেছে পি-৬৩ কিংকোবরা বিমান।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এই বি-১৭ বম্বার বিমান ব্যবহৃত হত। এমনকি জার্মানিকে পর্যুদস্ত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল এই ধরনের বিমান। টেক্সাসের এয়ার শো-তে সেই বিমানই ওড়ানো হচ্ছিল।
বম্বার বিমানটি আকারে বেশ বড়। এয়ার শো চলাকালীন আকাশে নিজের গতিপথ ধরে সোজা এগোচ্ছিল বিমানটি। তাকে পাশ থেকে এসে ধাক্কা মারে কিংকোবরা বিমান।
পি-৬৩ কিংকোবরা বিমানটিও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তৈরি করা হয়েছিল। এই যুদ্ধবিমান আকারে অনেকটাই ছোট। এয়ার শো চলাকালীন বিমানটি নিয়ন্ত্রণ হারায়।
বাজ পাখির মতো এক পাশ থেকে উড়ে এসে বড় বম্বার বিমানটিকে সজোরে ধাক্কা মারে কিংকোবরা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এই বিমান মূলত ব্যবহার করত সাবেক সোভিয়েত রাশিয়া।
শনিবার টেক্সাসের ডালাস এগ্জিকিউটিভ বিমানবন্দরে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ব্যবহৃত বিমান নিয়ে এয়ার শো-এর আয়োজন করা হয়েছিল। সেখানেই দুর্ঘটনা ঘটে।
জানা গিয়েছে, বম্বার বিমানটিতে চালক-সহ ৪ থেকে ৫ জন বিমানকর্মীর বসার ব্যবস্থা ছিল। দুর্ঘটনায় সকলেরই মৃত্যু হয়েছে বলে আশঙ্কা।
পি-৬৩ কিংকোবরা বিমানটিতে চালক এক জনই ছিলেন। সেই সঙ্গে এয়ার শো চলাকালীন বিমানে আর কত জন উঠেছিলেন, তা জানা যায়নি।
ভিডিয়োতে দেখা যায়, আকাশে বম্বার বিমানটি কিছু দূর এগোনোর পর পাশ থেকে উড়ে আসে আর একটি বিমান। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সোজা সেই বিমান ধাক্কা খায় বম্বারের সঙ্গে। সঙ্গে সঙ্গে দু’টি বিমানই ভেঙে আকাশ থেকে নীচে পড়ে যায়।
মাঝ আকাশেই দেখা যায় ভাঙাচোরা বিমানের নানা অংশ টুকরো টুকরো হয়ে ছড়িয়ে পড়ছে নীচে। দেখা যাচ্ছে আগুনের ফুলকিও। নীচে পড়ে যাওয়ার পর আগুন জ্বলছিল বিমানগুলির ধ্বংসাবশেষে।
দ্রুত উদ্ধারকারী দল ঘটনাস্থলে ছুটে যায়। ডালাসের মেয়র এরিক জনসন জানিয়েছেন, কী ভাবে এমন দুর্ঘটনা ঘটল, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
তাঁর কথায়, ‘‘আপনারা অনেকেই দেখেছেন, আমাদের শহরে এয়ার শো চলাকালীন একটি ভয়ানক দুর্ঘটনা ঘটে গিয়েছে। এখনও অনেক কিছুই আমাদের অজানা। জাতীয় পরিবহণ নিরাপত্তা বোর্ড এবং ডালাস পুলিশ ও দমকল বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছে গিয়েছে।’’
টেক্সাস বিমানবন্দরে এই এয়ার শো দেখতে অনেকে হাজির হয়েছিলেন। তাঁদের মধ্যেই কারও ক্যামেরায় এই ভয়ানক দুর্ঘটনার দৃশ্য ধরা পড়েছে। সমাজমাধ্যমে যে ছবি দেখে অনেকেই আতঙ্কিত।