তিনি ‘সাইলেন্ট সুনীল’। কুখ্যাত গ্যাংস্টার। পুলিশ যখন তাঁকে হন্যে হয়ে খুঁজছে, তাঁর ঠিক সপ্তাহখানেকের মধ্যে তাঁকে দেখা গেল একটি রক্তদান শিবিরে।
শুধু রক্তদান শিবিরই নয়, বিজেপি সাংসদ তেজস্বী সূর্য, পিসি মোহন এবং বেশ কয়েক জন বিজেপি নেতার সঙ্গেও ‘সাইলেন্ট সুনীল’কে দেখা গিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তার পর থেকেই কর্নাটকের রাজ্য রাজনীতি সরগরম। প্রশ্ন উঠছে, যে গ্যাংস্টারকে পুলিশ খুঁজে পাচ্ছে না, তাঁকে রক্তদান শিবির, নেতাদের সঙ্গে কী ভাবে দেখা যাচ্ছে।
বিজেপি নেতাদের সঙ্গে কুখ্যাত গ্যাংস্টারের ছবি প্রকাশ্যে আসতেই অস্বস্তিতে কর্নাটক বিজেপি। বেঙ্গালুরু সেন্ট্রালের বিজেপি সাংসদ পিসি মোহন সোমবার এ প্রসঙ্গে বলেন, “রবিবার রক্তদান শিবিরে সুনীলের সঙ্গে এক মঞ্চ শেয়ার করার বিষয় নিয়ে অনুতপ্ত আমরা। বিষয়টি ভুল হয়েছে।” অন্য দিকে, বিজেপি বিধায়ক উধয় গারুদাচারের দাবি, সুনীল তাঁর বন্ধু ঠিকই। কিন্তু তিনি যে মোস্ট ওয়ান্টেড দুষ্কৃতী ‘সাইলেট সুনীল’ সেটা জানতেন না।
বিজেপি নেতাদের সঙ্গে ‘সাইলেন্ট সুনীল’-এর ছবি প্রকাশ্যে আসার পরই জল্পনা শুরু হয়েছে তা হলে কি এ বার বিজেপিতে যোগ দিচ্ছেন এই গ্যাংস্টার? যদিও সুনীল নিজেই দাবি করেছেন, আগামী বিধানসভা নির্বাচনে তিনি প্রার্থী হবেন। চমরাজপেট থেকে নির্বাচন লড়বেন। তবে বিজেপির টিকিটে লড়বেন কি না তা এখনও ঠিক হয়নি।
১৯৭০-এর দশকে বেঙ্গালুরুর কুখ্যাত দুষ্কৃতীদের মধ্যে ছিলেন এমপি জয়রাজ, রামচন্দ্রন কোতওয়াল। তার পর মুথাপ্পা রায়। নব্বইয়ের দশকে এঁদের দৌরাত্ম্য শেষ হতেই আর এক গ্যাংস্টারের উদয় হয় বেঙ্গালুরুতে। তিনি সুনীল কুমার ওরফে ‘সাইলেন্ট সুনীল’।
২০০ সালের শেষের দিক থেকে সাইলেন্ট সুনীল-রাজ শুরু হয়। ২০০৫ সালে প্রথম পুলিশের নজরে আসেন সুনীল।
২০০০ সাল থেকে তাঁর অপরাধ কাজকর্ম শুরু হলেও পুলিশের নজরে আসেননি শুধুমাত্র নিশ্চুপে নেটওয়ার্ক চালিয়ে যাওয়ার জন্য। অপরাধ করেই বেশ কিছু দিনের জন্য বেপাত্তা হয়ে যেতেন।
সুনীল প্রথমে ‘সুপারি কিলার’ হিসাবে কাজ শুরু করেন। খুনের জন্য ছোটখাটো দুষ্কৃতীদের ভাড়া করতেন। তার পর নিজেই খুনের ‘কনট্র্যাক্ট’ নিতেন। আর ছোটখাটো দুষ্কৃতীরা তাঁর সেই অপরাধের দায় নিয়ে জেল খাটতেন।
২০০৫ সালে ওয়েক্কিনা কন্নু রাজেন্দ্র নামে এক ব্যক্তিকে খুনের ঘটনায় সুনীলের নাম প্রকাশ্যে আসে। সম্প্রতি বেঙ্গালুরু পুলিশ ৮৩ জন দুষ্কৃতীর একটি তালিকা জারি করেছে। তার মধ্যে সাইলেন্ট সুনীলের নামও রয়েছে। যত বারই পুলিশ সুনীলকে গ্রেফতার করতে গিয়েছে, তত বারই ব্যর্থ হয়েছে। সূত্রের খবর, সুনীলের নেটওয়ার্ক এতটাই পোক্ত যে, পুলিশ অভিযানের খবর তাঁর কাছে আগেই পৌঁছে যায়।
সুনীলের বিরুদ্ধে খুন, ডাকাতি, চুরি এবং অপহরণ-সহ ১৫টি মামলা রয়েছে। গত ২৩ নভেম্বর একটি মামলায় পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করতে গিয়েছিল। কিন্তু তার আগেই পালিয়ে যান তিনি। তার পরই বিজেপি নেতাদের সঙ্গে একটি রক্তদান শিবিরে সুনীলের ছবি প্রকাশ্যে আসে।
কেন তাঁর নাম ‘সাইলেন্ট সুনীল’ হল? বেঙ্গালুরুর বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, খুব নিশ্চুপে অপরাধ কাজকর্ম করেন সুনীল। পুলিশ সূত্রে খবর, কোনও অপরাধে গ্রেফতার হলে জেরার সময় একটি কথাও বলেন না। যদিও বা বলেনও, এক কথায় উত্তর দেন। কম কথা বলার জন্য পুলিশ মহলেও সুনীল ‘সাইলেন্ট সুনীল’ নামেই পরিচিত।
পুলিশ সূত্রে খবর, কোনও অপরাধের পর তার কোনও প্রমাণ রাখেন না সুনীল। যার ফলে অপরাধের প্রমাণ খুঁজতে গিয়ে পুলিশকেও বেশ বেগ পেতে হয়। ২০১৭ সালে নিজের জীবনী নিয়ে একটি ছবির ট্রেলার প্রকাশ করেন। ছবিটির নাম ছিল ‘সাইলেন্ট সুনীলা’। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে দাবি করা হয়েছে, সুনীল পায়রা পুষতে খুব ভালবাসেন।