২০১৯। সে বছর লোকসভা নির্বাচনের প্রচারে গিয়ে কর্নাটকের একটি সভায় রাহুল গান্ধী বলেছিলেন, ‘‘সব চোরেদের পদবি এক, মোদী।’’ এই মন্তব্যের জেরে বৃহস্পতিবার রাহুলকে ২ বছরের জেলের সাজা শুনিয়েছে গুজরাতের সুরত জেলা আদালত। তারই ভিত্তিতে ভারতীয় সংবিধানের ১০২(১)-ই অনুচ্ছেদ এবং জনপ্রতিনিধিত্ব আইন (১৯৫১)-র ৮ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী শুক্রবার রাহুলের সাংসদ পদ খারিজ করেছেন লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লা। যা ঘিরে সরগরম জাতীয় রাজনীতি।
যাঁর অভিযোগের ভিত্তিতে রাহুলকে শেষমেশ সাংসদ পদ খোয়াতে হল, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ‘ঘনিষ্ঠ’ বলে পরিচিত সেই বিজেপি নেতা এই মুহূর্তে চর্চার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। তাঁর নাম পূর্ণেশ মোদী।
বর্তমানে গুজরাতের সুরত পশ্চিম কেন্দ্রের বিধায়ক পূর্ণেশ। এই বিজেপি নেতার রাজনীতিতে উত্থান বেশ চমকপ্রদ। সেই কাহিনিই এখানে তুলে ধরা হল।
১৯৬৫ সালে জন্ম পূর্ণেশের। মোদীর অত্যন্ত ‘কাছের’ বলেই পরিচিত তিনি। মোদীর সঙ্গে তাঁর কিছু ক্ষেত্রে মিলও রয়েছে। মোদীর মতোই দারিদ্রকে সঙ্গী করে বেড়ে ওঠা পূর্ণেশের। প্রথম দিকে চা বিক্রি করতেন তিনি। ছোটবেলায় চা বিক্রি করেছিলেন প্রধানমন্ত্রীও।
শুধু চা বিক্রিই নয়, রোজগারের জন্য একটা সময় দিনমজুরের কাজও করেছেন পূর্ণেশ। আইন নিয়ে পড়াশোনার প্রতি তাঁর বরাবরই ঝোঁক ছিল। সেই সূত্রেই আইন নিয়ে পড়াশোনা করেছিলেন তিনি। পরে একটি ল’ফার্মে শিক্ষানবিশ হিসাবে কাজে যোগ দিয়েছিলেন। দ্য প্রিন্ট সূত্রে এই কথা জানা গিয়েছে।
এলএলবি-র পাশাপাশি বি.কম ডিগ্রিও রয়েছে পূর্ণেশের। তবে শুধুমাত্র আইনি দুনিয়ার গণ্ডিতে নিজেকে বেঁধে রাখেননি নিজেকে। পরে রাজনীতির দিকে ঝোঁকেন।
একাধিক সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৯৮৪ সালে বিজেপিতে যোগ দেন তিনি। প্রথম থেকেই বিজেপির একনিষ্ঠ সদস্য পূর্ণেশ। তাঁর কর্মীদের কথায়, ‘‘দলের প্রতি পূর্ণেশ অঙ্গীকারবদ্ধ।’’
বিজেপিতে একাধিক দায়িত্ব সামলেছেন পূর্ণেশ। কখনও হয়েছেন বিজেপির বুথ আহ্বায়ক, আবার কখনও হয়েছেন সে দলের ওয়ার্ড প্রধান। সুরত পুরসভার কর্পোরেটর হিসাবেও কাজ করেছেন তিনি।
২০১০ সাল থেকে পর পর দু’বার সুরত বিজেপির প্রধান হিসাবেও দায়িত্ব সামলেছেন পূর্ণেশ। তাঁর কঠোর পরিশ্রম এবং দলের প্রতি নিষ্ঠার সুবাদে বরাবরই নরেন্দ্র মোদী এবং অমিত শাহের ‘গুড বুকে’ রয়েছেন পূর্ণেশ।
২০০১ সালে যখন ভূমিকম্প হয়েছিল, সেই সময় সুরত থেকে কচ্ছ পর্যন্ত দলের ত্রাণ দলের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন পূর্ণেশ। সেই সময় বিজেপির জাতীয় সাধারণ সম্পাদক ছিলেন মোদী। বিজেপির কর্মীরা জানিয়েছেন, পূর্ণেশের কাজে তখন মুগ্ধ হয়েছিলেন মোদী। এমনকি, এ জন্য পূর্ণেশের পিঠ চাপড়ে দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী।
দীর্ঘদিন দলের কাজ করে নেতৃত্বের সুনজরে নিজেকে জায়গা করে নিয়েছিলেন পূর্ণেশ। এর পর ২০১৩ সালে প্রথম বার বিধায়ক হিসাবে নির্বাচিত হন পূর্ণেশ।
সেই সময় বিজেপি বিধায়ক কিশোর বাঁকাওয়ালার মৃত্যু হয়। ফলে উপনির্বাচন হয়েছিল। উপনির্বাচনে কাকে প্রার্থী করা হবে, এই নিয়ে সে সময় গুজরাত বিজেপিতে জোর চর্চা চলেছিল। বিজেপির আনন্দীবেন পটেলকে প্রার্থী করার দাবি জানিয়েছিলেন অনেকে। কিন্তু চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেন গুজরাতের তদানীন্তন মুখ্যমন্ত্রী মোদী।
উপনির্বাচনে প্রার্থী করা হয়েছিল পূর্ণেশকে। উপনির্বাচনে জিতে ২০১৩ সালে প্রথম বার বিধায়ক হিসাবে নির্বাচিত হন তিনি।
২০১৭ সালেও সুরত পশ্চিম কেন্দ্র থেকে নির্বাচিত হন পূর্ণেশ। ১ লক্ষেরও বেশি ভোটে জিতেছিলেন তিনি।
পরবর্তী কালে গুজরাতের সভাপতি সিআর পটিলের সঙ্গে খুব একটা ‘মধুর’ সম্পর্ক ছিল না পূর্ণেশের। ২০২১ সালে গুজরাতের মন্ত্রিসভায় রদবদলের সময় পূর্ণেশের অন্তর্ভুক্তিতে চমকে গিয়েছিলেন অনেকে। শোনা যায়, বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্বের কথাতেই শেষমেশ পূর্ণেশকে মন্ত্রী করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
সে রাজ্যের পরিবহণ, আবাসন, সড়ক, পর্যটন দফতরের দায়িত্বে ছিলেন পূর্ণেশ। ২০২২ সালে বিধানসভা নির্বাচনে সুরত পশ্চিম কেন্দ্রে জয়ের ধারা অটুট রাখেন তিনি।
ওই কেন্দ্রে ১ লক্ষেরও বেশি ভোটে জেতেন তিনি। তবে এ বার আর মন্ত্রিসভায় ঠাঁই হয়নি পূর্ণেশের।
সুরতের আদাজান এলাকায় পরিবারের বাকি সদস্যদের সঙ্গে থাকেন পূর্ণেশ। তাঁর বিরুদ্ধে কোনও ফৌজদারি মামলা নেই।
গুজরাত বিজেপিতে যথেষ্ট সুনাম রয়েছে পূর্ণেশের। সে রাজ্যের রাজনীতির বাইরে সে ভাবে দেখা যায়নি তাঁকে। ২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচনের প্রচারে রাহুলের মন্তব্যকে হাতিয়ার করে আসরে নামেন তিনি। তার পরই জাতীয় রাজনীতিতে ভেসে আসে পূর্ণেশের নাম।
সেই ঘটনায় রাহুল গান্ধীকে সাজা ঘোষণা এবং তাঁর সাংসদ পদ খারিজের পর নতুন করে আবার চর্চায় এসেছেন পূর্ণেশ।